ঢাকা ১০:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
পার্বতীপুরে সেচ মৌসুম গভীর নলকূপের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, বিপাকে কৃষকরা মোংলায় ফ্যামিলি সাইকেল র‍্যালি নরসিংদীতে বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় মা-ছেলেসহ ৪ জনের মৃত্যু জামালপুরে ধানের বাজার মধ্যস্বত্বভোগীরদের দখলে রানীশংকৈলে জিপিএ—৫ পাওয়া ৪ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণের বাধা অর্থিক সংকট কালিয়াকৈরে এক নারী মাদক ব্যবসায়ী হেরোইনসহ গ্রেফতার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উৎযাপন উপলক্ষে সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে হারানো টাকা মালিকের হাতে ফেরত দিয়ে দিষ্টান্ত স্হাপন করলো পুলিশ ফুলবাড়ীতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কতৃক মসজিদ পরিস্কার অভিযান ফুলবাড়ীতে ভুট্টা বোঝাই ট্রলির চালক নিজ গাড়িতে চাপা পড়ে নিহত

সিলেটে ধিরে ধিরে বিলিন হয়ে যাচ্ছে কাঠের তৈরি ঘানিশিল্প

আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে নিত্যনতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কারে মানুষের জীবন-মান সহজ হচ্ছে। বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে স্বল্প খরচ ও স্বল্প সময়ে অধিক উৎপাদনের কারণে গ্রামবাংলার আবহমান ঐতিহ্য সরিষা ভাঙ্গানোর কাঠের ঘানিতে তেল তৈরির প্রক্রিয়াটি এখন বিলুপ্তির পথে। তেমনি সিরেটের গড়ে উঠছে যান্ত্রিক মেশিনের তৈরি ঘানি।একসময় সিরেটের বিভিন্ন এলাকায় কাঠের তৈরি ঘানি দিয়ে ভেজালমুক্ত সরিষার খাঁটি তেল তৈরি করতে দেখা যেত।

টানা ঘানির ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ আর বাতাসে ভেসে আসা সরিষা তেলের মাতাল করা ঘ্রাণ নজর কাটত পথচারীদের তবে এখন সেই চিত্রের আর দেখা কাঠের তৈরি একটি ঘানি বিকল হয়ে পরে আছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে শস্য থেকে কাঠের তৈরি ঘানি দিয়ে মহামায়া বিশ্বাস সরিষার তেল তৈরি করে আসছিলেন। কিন্তু কাঠের তৈরি ঘানিটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ও নতুন ঘানি তৈরির জন্য গাছের ঠুম না পাওয়া এবং আর্থিক সংকটের জন্য সারাতে পারছেনা এই ঘানিটি। তাছাড়া বাজারে আজকাল অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতির ঘানি তৈরি হচ্ছে যা কিনার সামর্থ্য তাদের নেই আর এই যন্ত্রপাতির ঘানির সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে না পারায় ছিটকে পরছেন অনেকে।
মহামায়া বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি বলেন, ৫০ বছর আগে আমি এই তেল গাছ দিয়ে তেল তৈরি করার কাজ শুরু করেছিলাম। আমার বয়স যখন ১২ বছর তখন আমার বিয়ে হয় কালী কুমার বিশ্বাসের সাথে। আর বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে শস্য সংগ্রহ করে তেল গাছ ঘুরিয়ে খাঁটি সরিষার তেল তৈরি করা শুরু করি। তিনি বলেন আমি যখন এই কাজটি শুরু করি তখন আমরা ভাড়াটিয়া বাসায় থাকতাম।খাঁটি সরিষার তেল নিতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসত।আর এই পদ্ধতিতে তেল তৈরি করে বিক্রয় করে আমি নিজে বাড়ি করেছি।সংসারের খরচ চালিয়েছি। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছি দুই ছেলে কে বিয়ে করিয়েছি।
তিনি আর বলেন, এক সময় বাড়িতে অল্প পরিসরে স্থানীয় কাঠমিস্ত্রির হাতে কাঠের তৈরি ঘানি বানিয়ে নিজেই ঘানি টানিয়ে খাঁটি সরিষার তেল তৈরি করতাম। ঘানিতে ভাঙা তেলের কদরও ছিল অনেক। সরিষার খাঁটি তেল তরিতরকারিসহ সব ধরনের রান্নার কাজে ব্যবহার হতো। এককথায় ঘানির সরিষার তেল ছাড়া সে সময় রান্নাতে যেন গৃহিণীরা আর অন্যকিছু চিন্তাই করতেন না। তেল বের করার পর পেষাই করা সরিষার অবশিষ্টাংশকে বলে খইল। এই ঘানির খলই পশুখাদ্য ও জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করতে অনেকে কিনে নিত। কিন্তু এখন কাঠের তৈরি ঘানি দিয়ে উৎপাদিত সরিষার তেলের দাম অনেক বেশি হওয়ায় লোকেরা বাজারের অন্যান্য তেলের দিকে ঝুঁকছে। আমাদের ঘানি দিয়ে উৎপাদিত প্রতি লিটার খাঁটি সরিষার তেল ৭শ টাকা করে বিক্রি করতে হয় তানাহলে আমাদের পোষায়না। তাছাড়া বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রের সাহায্যে বাজারে অতি সহজে ও কম সময়ে সরিষার তেল তৈরি হচ্ছে যা তারা আমাদের চেয়ে কমদামে বিক্রি করে।
এক লিটার সরিষার তেল তৈরি করতে প্রায় সারাদিন লেগে যায়,তাছাড়া এখন তেল তৈরি করার জন্য সরিষা আমাদেরকে অনেক দাম দিয়ে কিনে আনতে হয়। তাই আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে নিত্যনতুন যন্ত্রপাতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছিনা বলে এই পেশা থেকে সরে পরেছি। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে জানান তিনি।
হোমিও চিকিৎসক বিবেকানন্দ মজুমদার বলেন, শীতকালে কিংবা ঠাণ্ডাজনিত যেকোন উপসর্গে সরিষার তেল দারুণ ফলদায়ক। এই তেল সর্দিকাশিতে শরীরে মালিশ করলে দারুণ উপকার পাবেন,এতে কোন সন্দেহ নেই। তাছাড়া এতেল নাবিতে দিলে বিভিন্ন রোগের কাজ করে। কিন্তু প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারা, সরিষা দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে কাঠের তৈরি ঘানি দিয়ে সরিষার তেল ভাঙানোর এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।

আরো খবর.......

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পার্বতীপুরে সেচ মৌসুম গভীর নলকূপের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, বিপাকে কৃষকরা

সিলেটে ধিরে ধিরে বিলিন হয়ে যাচ্ছে কাঠের তৈরি ঘানিশিল্প

আপডেট টাইম : ১০:৫৭:১৭ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২২

আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে নিত্যনতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কারে মানুষের জীবন-মান সহজ হচ্ছে। বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে স্বল্প খরচ ও স্বল্প সময়ে অধিক উৎপাদনের কারণে গ্রামবাংলার আবহমান ঐতিহ্য সরিষা ভাঙ্গানোর কাঠের ঘানিতে তেল তৈরির প্রক্রিয়াটি এখন বিলুপ্তির পথে। তেমনি সিরেটের গড়ে উঠছে যান্ত্রিক মেশিনের তৈরি ঘানি।একসময় সিরেটের বিভিন্ন এলাকায় কাঠের তৈরি ঘানি দিয়ে ভেজালমুক্ত সরিষার খাঁটি তেল তৈরি করতে দেখা যেত।

টানা ঘানির ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ আর বাতাসে ভেসে আসা সরিষা তেলের মাতাল করা ঘ্রাণ নজর কাটত পথচারীদের তবে এখন সেই চিত্রের আর দেখা কাঠের তৈরি একটি ঘানি বিকল হয়ে পরে আছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে শস্য থেকে কাঠের তৈরি ঘানি দিয়ে মহামায়া বিশ্বাস সরিষার তেল তৈরি করে আসছিলেন। কিন্তু কাঠের তৈরি ঘানিটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ও নতুন ঘানি তৈরির জন্য গাছের ঠুম না পাওয়া এবং আর্থিক সংকটের জন্য সারাতে পারছেনা এই ঘানিটি। তাছাড়া বাজারে আজকাল অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতির ঘানি তৈরি হচ্ছে যা কিনার সামর্থ্য তাদের নেই আর এই যন্ত্রপাতির ঘানির সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে না পারায় ছিটকে পরছেন অনেকে।
মহামায়া বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি বলেন, ৫০ বছর আগে আমি এই তেল গাছ দিয়ে তেল তৈরি করার কাজ শুরু করেছিলাম। আমার বয়স যখন ১২ বছর তখন আমার বিয়ে হয় কালী কুমার বিশ্বাসের সাথে। আর বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে শস্য সংগ্রহ করে তেল গাছ ঘুরিয়ে খাঁটি সরিষার তেল তৈরি করা শুরু করি। তিনি বলেন আমি যখন এই কাজটি শুরু করি তখন আমরা ভাড়াটিয়া বাসায় থাকতাম।খাঁটি সরিষার তেল নিতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসত।আর এই পদ্ধতিতে তেল তৈরি করে বিক্রয় করে আমি নিজে বাড়ি করেছি।সংসারের খরচ চালিয়েছি। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছি দুই ছেলে কে বিয়ে করিয়েছি।
তিনি আর বলেন, এক সময় বাড়িতে অল্প পরিসরে স্থানীয় কাঠমিস্ত্রির হাতে কাঠের তৈরি ঘানি বানিয়ে নিজেই ঘানি টানিয়ে খাঁটি সরিষার তেল তৈরি করতাম। ঘানিতে ভাঙা তেলের কদরও ছিল অনেক। সরিষার খাঁটি তেল তরিতরকারিসহ সব ধরনের রান্নার কাজে ব্যবহার হতো। এককথায় ঘানির সরিষার তেল ছাড়া সে সময় রান্নাতে যেন গৃহিণীরা আর অন্যকিছু চিন্তাই করতেন না। তেল বের করার পর পেষাই করা সরিষার অবশিষ্টাংশকে বলে খইল। এই ঘানির খলই পশুখাদ্য ও জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করতে অনেকে কিনে নিত। কিন্তু এখন কাঠের তৈরি ঘানি দিয়ে উৎপাদিত সরিষার তেলের দাম অনেক বেশি হওয়ায় লোকেরা বাজারের অন্যান্য তেলের দিকে ঝুঁকছে। আমাদের ঘানি দিয়ে উৎপাদিত প্রতি লিটার খাঁটি সরিষার তেল ৭শ টাকা করে বিক্রি করতে হয় তানাহলে আমাদের পোষায়না। তাছাড়া বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রের সাহায্যে বাজারে অতি সহজে ও কম সময়ে সরিষার তেল তৈরি হচ্ছে যা তারা আমাদের চেয়ে কমদামে বিক্রি করে।
এক লিটার সরিষার তেল তৈরি করতে প্রায় সারাদিন লেগে যায়,তাছাড়া এখন তেল তৈরি করার জন্য সরিষা আমাদেরকে অনেক দাম দিয়ে কিনে আনতে হয়। তাই আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে নিত্যনতুন যন্ত্রপাতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছিনা বলে এই পেশা থেকে সরে পরেছি। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে জানান তিনি।
হোমিও চিকিৎসক বিবেকানন্দ মজুমদার বলেন, শীতকালে কিংবা ঠাণ্ডাজনিত যেকোন উপসর্গে সরিষার তেল দারুণ ফলদায়ক। এই তেল সর্দিকাশিতে শরীরে মালিশ করলে দারুণ উপকার পাবেন,এতে কোন সন্দেহ নেই। তাছাড়া এতেল নাবিতে দিলে বিভিন্ন রোগের কাজ করে। কিন্তু প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারা, সরিষা দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে কাঠের তৈরি ঘানি দিয়ে সরিষার তেল ভাঙানোর এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।