মিটফোর্ডের পৌনে তিন কোটি টাকা উধাও। ক্যাশিয়ারকে আটকে রেখে মেলানো হচ্ছে হিসাব
- আপডেট টাইম : ০৮:৩৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২২
- / ২৩৯ ৫০০০.০ বার পাঠক
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড) রোগীদের সেবার বিনিময়ে আদায় করা পৌনে ৩ কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে তোলপাড় চলছে।
টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ধরা পড়ার পর গত বুধবার থেকে হাসপাতালের ক্যাশিয়ার আব্দুস সাত্তারকে অফিসে আটকে রেখে হিসাব মেলাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তিনি আজ রোববারের মধ্যে টাকা জমা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তাঁকে দু’জন আনসার সদস্য সার্বক্ষনিক পাহারা দিচ্ছেন। আব্দুস সাত্তার সাংবাদিকদের বলেন, টাকার পরিমাণ ১ কোটির মতো হবে। হিসাব না মেলানো পর্যন্ত তাঁকে হাসপাতালের প্রশাসনিক অফিসে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে রোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সেবার বিনিময়ে ইউজার ফি হিসেবে ৫ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এই টাকার মধ্যে সরকারি কোষাগারে ২ কোটি ২৬ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা জমা দেওয়া হয়নি। সূত্রের দাবি, এই টাকা হাসপাতালের সাত্তার, একাউন্ট্যান্ট জাহেদুর রহিম, সহকারী পরিচালক মফিজুর রহমান মোল্লা ও উপপরিচালক ডা. মো. আলী হাবীবের যোগসাজশে গত ৪ মাসে আত্মসাৎ করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী আদায় করা টাকা প্রতিদিনির্ধারিত কোডে ব্যাংকে জমা হওয়ার পর ভাউচারে স্বাক্ষর করে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও উপপরিচালকের কপি সংরক্ষণ করার কথা। কিন্তু টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
বিষয়টি গত মঙ্গলবার হাসপাতালের পরিচালক টের পাওয়ার পর থেকে ওই ক্যাশিয়ারকে অফিসে আটকে রেখে হিসাব চূড়ান্ত করতে মৌখিক নির্দেশ দেন। এর আগে হাসপাতাল থেকে দেড় কোটি টাকার মেশিন উধাও হওয়ার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জাহেদুর রহিম বলেন, তাঁর সন্দেহ হওয়ার পর নিজেই গত ফেব্রুয়ারি মাসে উপপরিচালকের কাছে দরখাস্ত করেছেন। কিন্তু বিষয়টি কেউ পাত্তা দেননি। প্রতিদিন টাকার চালান ব্যাংকে জমা হওয়ার পর ভাউচারে স্বাক্ষর থাকার কথা থাকলেও তা আপনি করেননি কেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো দায়িত্ব দেয়নি। তারপরও গত সেপ্টেম্বরে আমি একটি চালানে সই করেছি।’
এদিকে অভিযুক্ত আব্দুস সাত্তার বলেন,
আমার উপর মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
এখনো প্রমাণ হয়নি কে টাকা সরিয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র আমাকে জিম্মি করে আমার কাছ থেকে হিসাব চাওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়। আমাকে আমার পরিবারের সাথেও যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না। যার কারণে আমি অসুস্থ হয়ে এখন হাসপাতালে ভর্তি আছি। আমি বলেছি হিসাব কমপ্লিট করে দেবো কিন্তু আমাকে আমার পদ থেকে অপসারণ করিয়ে সেই পদে অন্য একজনকে বহাল তবিয়তে রেখেছে। আমি শঙ্কায় আছি আমার নথিপত্র চুরি হয়ে যাবে এবং আমাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাশিদুন নবী বলেন, এখনও টাকার অঙ্ক সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারিনি। এ নিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। দায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।