ঢাকা ০৮:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
রায়পুরে দেশীয় শিল্প ও পণ্য মেলায় ভ্রাম্যমান আদালত, নগদ অর্থদণ্ড কালিয়াকৈরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের উঠান বৈঠক ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত  মোংলায় জলবায়ু ন্যায্যতার গণসংলাপে বক্তারা : সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা দিন অভিনব কায়দায় কুমড়া শাকের আড়ালে গাঁজা পাচারকালে ডিএনসি- কুমিল্লার হাতে ১৩ কেজি গাঁজাসহ আটক ০২ নারী মঠবাড়ীয়া সাফলেজা কচুবাড়ীয়া বসত ঘর ভাঙচুর লুটপাট ও যখম এর অভিযোগ আঃ খালেক হাওলাদার গংদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির আখড়া বরগুনার পাসপোর্ট অফিস, দালাল ছাড়া মিলছে না পাসপোর্ট কাশেমপুর থানায় অভিযোগ করতে গিয়ে বিট্টিমরাই স্কুল ছাত্র মোঃ রাব্বি নিজ খালাকে আটকিয়ে ? ওসি সাইফুল ইসলাম মোটা অংকের টাকার বিনিময় তাদের আসামি করে গ্রেফতার দেখান আনন্দবাজারকে ডা. শফিকুর রহমান কোনও রাজনৈতিক দলকে খারিজ বা সরিয়ে দেয়ার ইচ্ছা জামায়াতের নেই রাজনৈতিক দলগুলো যদি বলে যে তারা সংস্কার চায় না, তাহলে এখনই নির্বাচন দিয়ে দেবো: ড. ইউনূস দেশবাসীকে ফের কাঁদালেন শহিদ নাফিজের মা

মুক্তি দিবস ও শহিদ লে. সেলিম

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ১০:৩১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২১
  • / ৩৩৪ ৫০০০.০ বার পাঠক

সময়ের কন্ঠ রিপোর্ট।।

প্রতিবছর ৩০ জানুয়ারি মিরপুর মুক্তি দিবস পালিত হয়ে আসছে। ১৯৭২-এর এই দিনে মিরপুরকে মুক্ত করতে গিয়ে লে. সেলিম ৪১ জন সামরিক বাহিনীর সদস্য, শতাধিক পুলিশ ও মুক্তিযোদ্ধা জীবন উৎসর্গ করেন। জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে লে. সেলিমই যুদ্ধ পরিচালনা করে মুক্ত করেন অবরুদ্ধ মিরপুর।

৩০ জানুয়ারি ’৭২-এর সারাটা দিন এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজের শেষ রক্তবিন্দুটুকু ঝরিয়ে যুদ্ধ করে বিজয়ের পথ খুলে দেন সেলিম। এভাবেই ৩১ জানুয়ারি প্রভাতে মুক্ত হয় অবরুদ্ধ মিরপুর। ৪ ডিসেম্বর (১৯৭১) আখাউড়া যুদ্ধে লে. বদি শহিদ হলে লে. সেলিম দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্রাভো কোম্পানির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং আখাউড়া যুদ্ধজয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। অতঃপর শত্রুসেনাদের ঘাঁটির পর ঘাঁটি চুরমার করে ঢাকার কাছে ডেমরায় আসেন সেলিম। ১৬ ডিসেম্বর পড়ন্ত বেলায় তিনি বীর বাংলার মাটিতে প্রবেশ করেন।বঙ্গবন্ধু হুকুম করেছিলেন অবরুদ্ধ মিরপুরে অবাঙালি এবং লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানিদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করার। ক্যাপ্টেন হেলাল মোর্শেদ, লে. সেলিম, ডিএসপি লোদীসহ ৩০০ পুলিশ এবং ১৪০ সৈনিক মিরপুরে প্রবেশ করে ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২-এ।

মেজর জেনারেল মঈনুল ভোরের কাগজে দেওয়া তার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি লে. সেলিমকে মিরপুরে নামিয়ে দিয়ে এসেছিলেন ওইদিন। ৩০ জানুয়ারি বেলা ১১টায় ঘটনাস্থলে সেলিম পৌঁছানো মাত্রই গোলাগুলি শুরু হয়। ওই সময় ১২ নম্বর পানির ট্যাংকের পেছন থেকে প্রথম গুলি ছোড়া হয়। রাস্তার অপর পাশে কাঁঠাল গাছের ফাঁক দিয়ে একটা গুলি এসে সেলিমের বুকের ডান পাশে লাগে। সেলিম প্রথমটায় লুটিয়ে পড়লে তাকে একটি ঘরে নিয়ে যান হেলাল মোর্শেদ। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে এলে উঠে দাঁড়ান সেলিম। কিংবদন্তি বীরদের মতো নিজের শার্ট দিয়ে বেঁধে ফেলেন তার বুক। ঐশ্বরিক শক্তি যেন ভর করে তার দেহে।

সৈন্যদের তিনি জানান, ‘আমি বেঁচে থাকতে তোমাদের ছেড়ে যাচ্ছি না।’ ঠা-ঠা গুলিতে লাল হয়ে ওঠে তার স্টেনগান। মুক্ত হয় মিরপুর।

বিকালের দিকে জীবিত সেনাদের নিয়ে কালাপানির ঢালের কাছে তিনি দাঁড়ান। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ফ্যাকাশে ও ক্লান্ত সেলিম। তবু তিনি সবাইকে উৎসাহ জুগিয়েছেন বিল পার হয়ে ক্যান্টনমেন্টের দিকে যেতে। নিজে পানিতে নামেননি; বুকের ক্ষত পানিতে ডুবে যাবে এ কারণে।

ক্লান্ত শরীরটা একটি গাছের আড়ালে রেখে একটা একটা করে গুলি চালাচ্ছিলেন ঘাতকের দিকে। কভার ফায়ার দিয়ে সহযোদ্ধাদের সরে যেতে সাহায্য করছিলেন তিনি। হয়তো ভাবছিলেন সাহায্য আসবে। সেদিন রাতে চাঁদ ছিল মেঘে ঢাকা। ঝিরঝির করে বৃষ্টি ঝরছিল। না, কেউ তাকে উদ্ধার করতে যায়নি। একসময় আকাশের ফ্যাকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বীরনক্ষত্র সেলিম চিরবিদায় নেন পৃথিবী থেকে।

সেলিমের মৃত্যুর পর আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি, স্তুতি এবং অনেক কিছু ছিল; কিন্তু এর কিছুই যেমন শহিদ সেনাদের ছুঁতে পারেনি, তেমনি তা তাদের পরিবারের ধরাছোঁয়ায় আসেনি। সেলিমের মৃত্যুর পর কয়েক টুকরা হাড় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তার পরিবারকে। চেনা যায় না, বোঝা যায় না এমন হাড়ের স্তূপ দেখতে চাননি লে. আনিস (ডা. এম এ হাসান)। ক্যান্টনমেন্টের দাফনকৃত ওই হাড়ের নমুনার সঙ্গে বাবার দাঁত, মায়ের রক্ত ও চুলের ডিএনএর মিল পাননি ফরেনসিক অ্যানথ্রোপলজি নিয়ে কাজ করা ডা. হাসান। (সংক্ষেপিত)

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

মুক্তি দিবস ও শহিদ লে. সেলিম

আপডেট টাইম : ১০:৩১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২১

সময়ের কন্ঠ রিপোর্ট।।

প্রতিবছর ৩০ জানুয়ারি মিরপুর মুক্তি দিবস পালিত হয়ে আসছে। ১৯৭২-এর এই দিনে মিরপুরকে মুক্ত করতে গিয়ে লে. সেলিম ৪১ জন সামরিক বাহিনীর সদস্য, শতাধিক পুলিশ ও মুক্তিযোদ্ধা জীবন উৎসর্গ করেন। জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে লে. সেলিমই যুদ্ধ পরিচালনা করে মুক্ত করেন অবরুদ্ধ মিরপুর।

৩০ জানুয়ারি ’৭২-এর সারাটা দিন এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজের শেষ রক্তবিন্দুটুকু ঝরিয়ে যুদ্ধ করে বিজয়ের পথ খুলে দেন সেলিম। এভাবেই ৩১ জানুয়ারি প্রভাতে মুক্ত হয় অবরুদ্ধ মিরপুর। ৪ ডিসেম্বর (১৯৭১) আখাউড়া যুদ্ধে লে. বদি শহিদ হলে লে. সেলিম দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্রাভো কোম্পানির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং আখাউড়া যুদ্ধজয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। অতঃপর শত্রুসেনাদের ঘাঁটির পর ঘাঁটি চুরমার করে ঢাকার কাছে ডেমরায় আসেন সেলিম। ১৬ ডিসেম্বর পড়ন্ত বেলায় তিনি বীর বাংলার মাটিতে প্রবেশ করেন।বঙ্গবন্ধু হুকুম করেছিলেন অবরুদ্ধ মিরপুরে অবাঙালি এবং লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানিদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করার। ক্যাপ্টেন হেলাল মোর্শেদ, লে. সেলিম, ডিএসপি লোদীসহ ৩০০ পুলিশ এবং ১৪০ সৈনিক মিরপুরে প্রবেশ করে ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২-এ।

মেজর জেনারেল মঈনুল ভোরের কাগজে দেওয়া তার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি লে. সেলিমকে মিরপুরে নামিয়ে দিয়ে এসেছিলেন ওইদিন। ৩০ জানুয়ারি বেলা ১১টায় ঘটনাস্থলে সেলিম পৌঁছানো মাত্রই গোলাগুলি শুরু হয়। ওই সময় ১২ নম্বর পানির ট্যাংকের পেছন থেকে প্রথম গুলি ছোড়া হয়। রাস্তার অপর পাশে কাঁঠাল গাছের ফাঁক দিয়ে একটা গুলি এসে সেলিমের বুকের ডান পাশে লাগে। সেলিম প্রথমটায় লুটিয়ে পড়লে তাকে একটি ঘরে নিয়ে যান হেলাল মোর্শেদ। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে এলে উঠে দাঁড়ান সেলিম। কিংবদন্তি বীরদের মতো নিজের শার্ট দিয়ে বেঁধে ফেলেন তার বুক। ঐশ্বরিক শক্তি যেন ভর করে তার দেহে।

সৈন্যদের তিনি জানান, ‘আমি বেঁচে থাকতে তোমাদের ছেড়ে যাচ্ছি না।’ ঠা-ঠা গুলিতে লাল হয়ে ওঠে তার স্টেনগান। মুক্ত হয় মিরপুর।

বিকালের দিকে জীবিত সেনাদের নিয়ে কালাপানির ঢালের কাছে তিনি দাঁড়ান। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ফ্যাকাশে ও ক্লান্ত সেলিম। তবু তিনি সবাইকে উৎসাহ জুগিয়েছেন বিল পার হয়ে ক্যান্টনমেন্টের দিকে যেতে। নিজে পানিতে নামেননি; বুকের ক্ষত পানিতে ডুবে যাবে এ কারণে।

ক্লান্ত শরীরটা একটি গাছের আড়ালে রেখে একটা একটা করে গুলি চালাচ্ছিলেন ঘাতকের দিকে। কভার ফায়ার দিয়ে সহযোদ্ধাদের সরে যেতে সাহায্য করছিলেন তিনি। হয়তো ভাবছিলেন সাহায্য আসবে। সেদিন রাতে চাঁদ ছিল মেঘে ঢাকা। ঝিরঝির করে বৃষ্টি ঝরছিল। না, কেউ তাকে উদ্ধার করতে যায়নি। একসময় আকাশের ফ্যাকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বীরনক্ষত্র সেলিম চিরবিদায় নেন পৃথিবী থেকে।

সেলিমের মৃত্যুর পর আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি, স্তুতি এবং অনেক কিছু ছিল; কিন্তু এর কিছুই যেমন শহিদ সেনাদের ছুঁতে পারেনি, তেমনি তা তাদের পরিবারের ধরাছোঁয়ায় আসেনি। সেলিমের মৃত্যুর পর কয়েক টুকরা হাড় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তার পরিবারকে। চেনা যায় না, বোঝা যায় না এমন হাড়ের স্তূপ দেখতে চাননি লে. আনিস (ডা. এম এ হাসান)। ক্যান্টনমেন্টের দাফনকৃত ওই হাড়ের নমুনার সঙ্গে বাবার দাঁত, মায়ের রক্ত ও চুলের ডিএনএর মিল পাননি ফরেনসিক অ্যানথ্রোপলজি নিয়ে কাজ করা ডা. হাসান। (সংক্ষেপিত)