ঢাকা ০৮:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাজধানী দিনরাত

  • সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৩:১৮ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২১
  • ২৭৩ ০.০০০ বার পাঠক

সময়ের কন্ঠ রিপোর্ট।।

জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি এসে মাঘ শুরু হয়, এ জানা কথাই। ঢাকার বাসিন্দারা মাঘ না এলে শীতকে ঠিক পাত্তা দিতে চান না। ভারি পশমি কাপড়গুলো দেরাজেই তোলা থাকে, নামাতে চান না। এবারের মাঘ আসার আগে সংক্ষিপ্ত ‘বসন্ত’ এসেছিল সেটি ভালই উপভোগ করেছেন ঢাকাবাসী। এবার মাঘে শীত বাড়তে শুরু করে মূলত হঠাৎ বৃষ্টির কারণে। রীতিমতো ঝমঝম বৃষ্টি। ঘর থেকে বেরুনোর আগে গুগল আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে বেরুলে ভাল। বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। তা ছাড়া বোঝাও যায় দিনভর তাপমাত্রার ওঠানামা কেমন থাকবে। বৃষ্টির পূর্বাভাস জেনে জামার ওপর বাড়তি একটা পাতলা সোয়েটার চাপিয়ে অফিসে রওনা হয়েছিলাম। যথারীতি কোট তো আছেই। তবে মিনি ছাতা নিতে ভুলিনি। হাঁটার পথটুকু যেন না ভিজে উঠি তার প্রস্তুতি। তার পরও ঢাকার তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রীর নিচে নামেনি। ওদিকে ইউরোপ-আমেরিকায় অস্বাভাবিক তুষারপাত হয়ে চলেছে এবার। কোথাও কোথাও তুষারঝড়ও হয়েছে। এমনকি সাহারা মরুভূমিতে প্রচুর বরফ পড়ছে। আর ঢাকায় নিদেনপক্ষে একটা শৈত্যপ্রবাহও হলো না। দশের কাছাকাছিই এলো না তাপমাত্রা। কিন্তু এই মনোরম শীতই মহাবিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে শুধু বায়ুদূষণের কারণে। ঢাকার বাতাসের মান ক্রমেই নিচে নেমে চলেছে।

ঢাকায় মারাত্মক বায়ুদূষণ

বায়ুদূষণ যেভাবে বাড়ছে এবং তা কমানোর জন্য সক্রিয় উদ্যোগ অনুপস্থিত থাকছে তাতে মনে হচ্ছে এটি ভয়ঙ্কর নীরব ঘাতক হয়ে উঠতে পারে আগামী দিনগুলোয়। এলার্জি, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগসহ নানা রোগের কারণ হবে এই বায়ুদূষণ। পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বায়ুদূষণের জন্য ২০টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে : ১. ইটভাঁটি ২. রাস্তা নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ ও মেরামত ৩. সেবা সংস্থাগুলোর নির্মাণকাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ৪. বড় উন্নয়ন প্রকল্প (এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল) ৫. সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ৬. সড়ক বা মহাসড়কের পাশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বালু উত্তোলন ও সংগ্রহ, ট্রাক বা লরিতে বালু, মাটি, সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী উন্মুক্ত অবস্থায় পরিবহন ৭. রাস্তায় গৃহস্থালি ও পৌর বর্জ্য স্তূপাকারে রাখা ও বর্জ্য পোড়ানো ৮. ড্রেন থেকে ময়লা তুলে রাস্তায় ফেলে রাখা, ৯. ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে গিয়ে ধুলাবালি ছড়ানো ১০. বিভিন্ন সড়কের পাশে থাকা অনাবৃত স্থান ১১. ফুটপাথ ও রাস্তার আইল্যান্ডের মাঝের ভাঙ্গা অংশের মাটি ও ধুলা ১২. ফিটনেসবিহীন পরিবহন থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর ধোঁয়া ১৩. বিভিন্ন যানবাহনের চাকায় লেগে থাকা কাদামাটি ১৪. বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কলোনির ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো, ১৫। বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল ও বাণিজ্যিক ভবনের আবর্জনা ও ধুলাবালি রাস্তায় ফেলে দেওয়া, ১৬. ঢাকা শহরের দূষণপ্রবণ এলাকার ধুলা ১৭. হাসপাতালের বর্জ্য রাস্তায় ফেলা ১৯. অধিক সালফারযুক্ত ডিজেল ব্যবহার ও ২০. জনসচেতনতার অভাব।

প্রতিটি কারণ ধরে ধরে সমাধান করতে হবে। এ জন্য বড় উদ্যোগ নেয়া চাই। দরকার বড় বাজেট এবং আইনের কঠোর নজরদারি ও প্রয়োগ।

বিচিত্র প্রতারক

প্রতারণা কত প্রকার ও কী কী, এ নিয়ে লিখতে গেলে রীতিমতো একখানা ঢাউশ বই হয়ে যাবে। ঢাকা কালে কালে প্রতারকদের শহর হয়ে উঠেছে। বাঙালীর ঘটে এতই বুদ্ধি, বলা ভাল কুবুদ্ধি। ‘ডিবি পুলিশ’ পরিচয়ে ৯০ ভরি সোনা লুটের অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা ও তাঁর দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। গত মঙ্গলবার ওই কর্মকর্তা ও তাঁর দুই সহযোগীকে আদালতের নির্দেশে তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া কর্মকর্তার নাম এসএম সাকিব হোসেন। তিনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার সহকারী পরিচালক। তাঁর অপর দুই সহযোগী হলেন কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম ও সোর্স হারুন। এসএম সাকিব হোসেন ৩৪তম বিসিএসে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে নিয়োগ পান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গেও ছিলেন জড়িত। এসব ব্যক্তির জন্যই দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামও বৃদ্ধি পায় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সেজে যারা নানা অপকর্ম ও অপরাধ করেন তাদের সামান্যতমও ছাড় দেয়া যাবে না।

বিয়ে উৎসব

জানুয়ারিতে বিয়ের হিড়িক পড়বে সে তো জানা কথাই। কিন্তু বিয়ে উৎসব। পাঁচ তারকা হোটেল প্রত্যেক বছরই বিয়ে উৎসবের আয়োজন করে। শুনলে মনে হয় সেখানে বোধহয় দলে দলে জুটির বিয়ে পড়ানো হয়। আদতে তা নয়। এটি বিয়ে-পণ্যের উৎসব। মানে বিয়ের সামগ্রীর মেলা। বিয়ে মানে বিলক্ষণ নানা আচার-অনুষ্ঠান। আর আচার-অনুষ্ঠান মানেই সাজগোজ, খাওয়া দাওয়া, ছবি তোলা, আরও কত কী! বিয়েসংশ্লিষ্ট সব কিছু নিয়েই আয়োজিত হয়েছে দুই দিনের বিয়ে উৎসবের। ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি এই উৎসব অনুষ্ঠিত হলো ঢাকার লা মেরিডিয়ান হোটেলে। উৎসবের আয়োজক এ্যাঞ্জেলিকা ইভেন্ট সল্যুশন।

উৎসবে ৪৫টি স্টলে ছিল বিয়ের সামগ্রী। আকর্ষণীয় মূল্যে পাওয়া গেছে হোটেল লা মেরিডিয়ানের তৈরি মজাদার খাবার। উৎসবের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে ছিল দম্পতি প্রতিযোগিতা, ওয়েডিং ফ্যাশন শো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পেশাদার ফটোগ্রাফারদের মাধ্যমে ছবি তোলার ব্যবস্থাও ছিল। করোনাকালে এ ধরনের আয়োজনের ভেতর দিয়ে আবারও সুরক্ষা বজায় রেখে সামাজিক মেলামেশার সুযোগ মিলেছিল। একটু হাওয়া বদল, খাওয়া বদল। মন্দ নয়।

বইমেলা, বই কেনা

জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বাংলা একাডেমিতে একুশের বইমেলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলে। এবার ফেব্রুয়ারিতে যে বইমেলা হচ্ছে না সেটি পরিষ্কার। পরেও হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় আছে। এ নিয়ে সামজিক মাধ্যমে লেখকদের হাহাকার, আফসোস চলছেই। পাঠকদের খুব একটা তাপ-উত্তাপ নেই। সে যাক। ঢাকার বড় বুকশপ বলতে শাহবাগের পাঠক সমাবেশ আর বাংলা মোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনে বাতিঘর। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের নিচতলা ও দোতলায় ছোটখাটো বইমেলাও হয়ে গেল সম্প্রতি। গিয়ে দেখলাম ঠিক মেলা নয়। প্রদর্শনী। বুক সেলফগুলোতেই বই রাখা আছে। ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ছাড়ের বই কেনার সুযোগ থাকলেও খুব বেশি পাঠক/ ক্রেতার ভিড় নেই। আর সত্যি বলতে কি খুব চলে এমন নতুন বইও বিশেষ নেই। গত বছর ফেব্রুয়ারির বইমেলার পর ১০ মাসে যেসব বই বেরিয়েছে সেগুলো যদি প্রদর্শন নাই করা হলো তবে সেই আয়োজন কতটা আর আকর্ষণীয় হবে। অবশ্য বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রকাশিত প্রচুর বই কেনার সুযোগ ছিল। এর অধিকাংশই চিরায়ত বই।

পাঠক সমাবেশে গিয়ে মনে হলো ছোটখাটো মেলা প্রাঙ্গণেই ঢুকে পড়েছি। সম্ভবত বিদেশী বইয়ের এত বড় প্রদর্শনকেন্দ্র গোটা দেশে আর নেই। পেঙ্গুইনের সদ্য প্রকাশিত বইও এখানে পাঠক পাবেন। পাঠক সমাবেশে পাঠদের সমাবেশ হয় বটে, তবে লেখকদের সমাবেশই বোধহয় বেশি। কয়েক সারি সোফা রেখে দেয়া আছে। দু-পাঁচজন লেখক এসে সেখানে বসেন। প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এসে শুধোয়, স্যার চা দিই। চায়ের সঙ্গে বিস্কুট বা চানাচুর-মুড়িও পরিবেশন করা হয়। ছোট পর্দায় বইয়ের প্রদর্শনী চলে। আর সারাক্ষণই বেজে চলে রবীন্দ্রসঙ্গীত অথবা মিষ্টি বাজনা। আশি পেরুনো দুজন লেখক এসছিলেন পাঠক সমাবেশে শনিবার সন্ধ্যায়। এরা হলেন লালন বিশেষজ্ঞ আনোয়ারুল করীম ও রবীন্দ্রচর্চার জন্য খ্যাতিমান আমিনুল ইসলাম বেদু। দুই লেখক নাকি সারাদিনই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। করোনা নিয়ে তাদের আতঙ্ক নেই, আছে সাবধানতা।

আমরা আশির দশকে ছাত্রজীবনে সাহিত্যের পুরনো বইয়ের খোঁজে নিউমার্কেটের উল্টো দিকে নীলক্ষেতের দোকানগুলোয় যেতাম। এখন কী অবস্থা। ফেসবুকে এই লেখায় উঠে এসেছে সমকালীন করুণ বাস্তবতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন লিখেছেন…

গতকাল সন্ধ্যায় আমার বড় কন্যা বিয়াংকাকে নিয়ে গিয়েছিলাম নীলক্ষেত আর নিউমার্কেটে। উদ্দেশ্য শেক্সপিয়ারের ‘মেজার ফর মেজার’ বইটি কেনা। বিয়াংকা বিজ্ঞানের ছাত্রী, তথাপি ও এ-লেভেলে ইংরেজী সাহিত্য নিয়েছে। সাহিত্যের প্রতি তার ভালবাসা একদম ছোটবেলা থেকে। প্রচুর গল্প ও কবিতার বই পড়েছে এবং নিজে কিছু লেখালেখিও করে। নীলক্ষেতে বইয়ের দোকানগুলো ঘুরে একটি অভিজ্ঞতা হলো : দোকানে সজ্জিত বইগুলোর মধ্যে একটি বড় অংশই হলো গাইড বই, দ্রুত নানা ভাষা শিক্ষার বই ইত্যাদি। ঠিক যেন পাড়ার মুদি দোকান। ওইসব দোকানও আজকাল রং-বেরঙের প্লাস্টিক প্যাকেট দিয়ে এমনভাবে ভরা থাকে যে, দোকানদারকেও দেখা যায় না। সবকিছুই এখন প্যাকেটজাত। এসব দেখে বাঙালীর সাইকি বোঝা যায়। এই বাঙালী এখন আর জ্ঞানার্জনে আগ্রহী নয়। কেবল শর্টকাট পথে একটা সার্টিফিকেট বাগিয়ে, গাইড বই মুখস্থ করে একটা চাকরি বাগানোই মঞ্জিলে মাকসুদ।

নীলক্ষেতে আসলে আমাদের কাক্সিক্ষত বই পাইনি। পরে বলাকার পাশে রাফি প্লাজার তিন তলায় ফ্রেন্ডস বুক শপে গেলাম। মনে হলো সাহিত্যের ছাত্রদের জন্য যেন এক টুকরো স্বর্গ। কাক্সিক্ষত বইটি পেলাম। কিন্তু বিয়াংকা যেমন চাচ্ছিল, তেমন না। তার পরও ওটাসহ আরও কিছু বই ওখান থেকে কিনে নিউ মার্কেটে যাই। অনেক অনেক দিন পরে নিউ মার্কেটে গেলাম। গিয়ে আমি শকড! এ কী? অনেক বইয়ের দোকান নাই হয়ে গেছে। সেই সব জায়গায় এখন খাবারের দোকান, কসমেটিকসের দোকান, চশমার দোকান ইত্যাদি। অথচ জনসংখ্যা বাড়ছে, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়ছে; কিন্তু বইয়ের দোকান কমছে। এ কী?

গেলাম পুরনো পরিচিত জিনাত বুক শপ লিমিটেডে। বই কেনা হয়নি, কিন্তু দোকানের মালিকের সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টার মতো কথা হয়েছে। ফয়সল সাহেব একজন আলোকিত মানুষ। মনে হলো, ওনার সঙ্গে লম্বা সময় গল্প করা যায়। বলছিলেন, এক সময় তার দোকানে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার বা তারও বেশি টাকার বই বিক্রি হতো। মনে রাখতে হবে, তখনকার ১০ হাজার টাকার মান কিন্তু আজকের ৫০ হাজার কিংবা তার চেয়েও বেশি। বললেন, ‘আজকে সারা দিনে এখন পর্যন্ত ২ হাজার টাকার বইও বিক্রি হয়নি। মানুষ এখন আর বই কিনে না। তারা দামি মোবাইল সেট কিনে, ট্যাব কিনে, দামি রেস্টুরেন্টে খায়; কিন্তু বই কেনার সময় কৃপণতা।’ তিনিও বললেন, এই দেশের মানুষ এখন পড়তে চায় না। ততটুকুই পড়ে, যতটুকু কাজে লাগবে মনে করে। অথচ ইন দ্য লং রানে সব পড়াই যে কাজে লাগে- এই বোধ জন্মানোর শিক্ষাটা ছোটবেলা থেকেই পায় না।

আরো খবর.......

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজধানী দিনরাত

আপডেট টাইম : ১২:৩৩:১৮ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২১

সময়ের কন্ঠ রিপোর্ট।।

জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি এসে মাঘ শুরু হয়, এ জানা কথাই। ঢাকার বাসিন্দারা মাঘ না এলে শীতকে ঠিক পাত্তা দিতে চান না। ভারি পশমি কাপড়গুলো দেরাজেই তোলা থাকে, নামাতে চান না। এবারের মাঘ আসার আগে সংক্ষিপ্ত ‘বসন্ত’ এসেছিল সেটি ভালই উপভোগ করেছেন ঢাকাবাসী। এবার মাঘে শীত বাড়তে শুরু করে মূলত হঠাৎ বৃষ্টির কারণে। রীতিমতো ঝমঝম বৃষ্টি। ঘর থেকে বেরুনোর আগে গুগল আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে বেরুলে ভাল। বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। তা ছাড়া বোঝাও যায় দিনভর তাপমাত্রার ওঠানামা কেমন থাকবে। বৃষ্টির পূর্বাভাস জেনে জামার ওপর বাড়তি একটা পাতলা সোয়েটার চাপিয়ে অফিসে রওনা হয়েছিলাম। যথারীতি কোট তো আছেই। তবে মিনি ছাতা নিতে ভুলিনি। হাঁটার পথটুকু যেন না ভিজে উঠি তার প্রস্তুতি। তার পরও ঢাকার তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রীর নিচে নামেনি। ওদিকে ইউরোপ-আমেরিকায় অস্বাভাবিক তুষারপাত হয়ে চলেছে এবার। কোথাও কোথাও তুষারঝড়ও হয়েছে। এমনকি সাহারা মরুভূমিতে প্রচুর বরফ পড়ছে। আর ঢাকায় নিদেনপক্ষে একটা শৈত্যপ্রবাহও হলো না। দশের কাছাকাছিই এলো না তাপমাত্রা। কিন্তু এই মনোরম শীতই মহাবিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে শুধু বায়ুদূষণের কারণে। ঢাকার বাতাসের মান ক্রমেই নিচে নেমে চলেছে।

ঢাকায় মারাত্মক বায়ুদূষণ

বায়ুদূষণ যেভাবে বাড়ছে এবং তা কমানোর জন্য সক্রিয় উদ্যোগ অনুপস্থিত থাকছে তাতে মনে হচ্ছে এটি ভয়ঙ্কর নীরব ঘাতক হয়ে উঠতে পারে আগামী দিনগুলোয়। এলার্জি, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগসহ নানা রোগের কারণ হবে এই বায়ুদূষণ। পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বায়ুদূষণের জন্য ২০টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে : ১. ইটভাঁটি ২. রাস্তা নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ ও মেরামত ৩. সেবা সংস্থাগুলোর নির্মাণকাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ৪. বড় উন্নয়ন প্রকল্প (এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল) ৫. সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ৬. সড়ক বা মহাসড়কের পাশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বালু উত্তোলন ও সংগ্রহ, ট্রাক বা লরিতে বালু, মাটি, সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী উন্মুক্ত অবস্থায় পরিবহন ৭. রাস্তায় গৃহস্থালি ও পৌর বর্জ্য স্তূপাকারে রাখা ও বর্জ্য পোড়ানো ৮. ড্রেন থেকে ময়লা তুলে রাস্তায় ফেলে রাখা, ৯. ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে গিয়ে ধুলাবালি ছড়ানো ১০. বিভিন্ন সড়কের পাশে থাকা অনাবৃত স্থান ১১. ফুটপাথ ও রাস্তার আইল্যান্ডের মাঝের ভাঙ্গা অংশের মাটি ও ধুলা ১২. ফিটনেসবিহীন পরিবহন থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর ধোঁয়া ১৩. বিভিন্ন যানবাহনের চাকায় লেগে থাকা কাদামাটি ১৪. বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কলোনির ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো, ১৫। বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল ও বাণিজ্যিক ভবনের আবর্জনা ও ধুলাবালি রাস্তায় ফেলে দেওয়া, ১৬. ঢাকা শহরের দূষণপ্রবণ এলাকার ধুলা ১৭. হাসপাতালের বর্জ্য রাস্তায় ফেলা ১৯. অধিক সালফারযুক্ত ডিজেল ব্যবহার ও ২০. জনসচেতনতার অভাব।

প্রতিটি কারণ ধরে ধরে সমাধান করতে হবে। এ জন্য বড় উদ্যোগ নেয়া চাই। দরকার বড় বাজেট এবং আইনের কঠোর নজরদারি ও প্রয়োগ।

বিচিত্র প্রতারক

প্রতারণা কত প্রকার ও কী কী, এ নিয়ে লিখতে গেলে রীতিমতো একখানা ঢাউশ বই হয়ে যাবে। ঢাকা কালে কালে প্রতারকদের শহর হয়ে উঠেছে। বাঙালীর ঘটে এতই বুদ্ধি, বলা ভাল কুবুদ্ধি। ‘ডিবি পুলিশ’ পরিচয়ে ৯০ ভরি সোনা লুটের অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা ও তাঁর দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। গত মঙ্গলবার ওই কর্মকর্তা ও তাঁর দুই সহযোগীকে আদালতের নির্দেশে তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া কর্মকর্তার নাম এসএম সাকিব হোসেন। তিনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার সহকারী পরিচালক। তাঁর অপর দুই সহযোগী হলেন কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম ও সোর্স হারুন। এসএম সাকিব হোসেন ৩৪তম বিসিএসে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে নিয়োগ পান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গেও ছিলেন জড়িত। এসব ব্যক্তির জন্যই দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামও বৃদ্ধি পায় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সেজে যারা নানা অপকর্ম ও অপরাধ করেন তাদের সামান্যতমও ছাড় দেয়া যাবে না।

বিয়ে উৎসব

জানুয়ারিতে বিয়ের হিড়িক পড়বে সে তো জানা কথাই। কিন্তু বিয়ে উৎসব। পাঁচ তারকা হোটেল প্রত্যেক বছরই বিয়ে উৎসবের আয়োজন করে। শুনলে মনে হয় সেখানে বোধহয় দলে দলে জুটির বিয়ে পড়ানো হয়। আদতে তা নয়। এটি বিয়ে-পণ্যের উৎসব। মানে বিয়ের সামগ্রীর মেলা। বিয়ে মানে বিলক্ষণ নানা আচার-অনুষ্ঠান। আর আচার-অনুষ্ঠান মানেই সাজগোজ, খাওয়া দাওয়া, ছবি তোলা, আরও কত কী! বিয়েসংশ্লিষ্ট সব কিছু নিয়েই আয়োজিত হয়েছে দুই দিনের বিয়ে উৎসবের। ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি এই উৎসব অনুষ্ঠিত হলো ঢাকার লা মেরিডিয়ান হোটেলে। উৎসবের আয়োজক এ্যাঞ্জেলিকা ইভেন্ট সল্যুশন।

উৎসবে ৪৫টি স্টলে ছিল বিয়ের সামগ্রী। আকর্ষণীয় মূল্যে পাওয়া গেছে হোটেল লা মেরিডিয়ানের তৈরি মজাদার খাবার। উৎসবের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে ছিল দম্পতি প্রতিযোগিতা, ওয়েডিং ফ্যাশন শো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পেশাদার ফটোগ্রাফারদের মাধ্যমে ছবি তোলার ব্যবস্থাও ছিল। করোনাকালে এ ধরনের আয়োজনের ভেতর দিয়ে আবারও সুরক্ষা বজায় রেখে সামাজিক মেলামেশার সুযোগ মিলেছিল। একটু হাওয়া বদল, খাওয়া বদল। মন্দ নয়।

বইমেলা, বই কেনা

জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বাংলা একাডেমিতে একুশের বইমেলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলে। এবার ফেব্রুয়ারিতে যে বইমেলা হচ্ছে না সেটি পরিষ্কার। পরেও হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় আছে। এ নিয়ে সামজিক মাধ্যমে লেখকদের হাহাকার, আফসোস চলছেই। পাঠকদের খুব একটা তাপ-উত্তাপ নেই। সে যাক। ঢাকার বড় বুকশপ বলতে শাহবাগের পাঠক সমাবেশ আর বাংলা মোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনে বাতিঘর। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের নিচতলা ও দোতলায় ছোটখাটো বইমেলাও হয়ে গেল সম্প্রতি। গিয়ে দেখলাম ঠিক মেলা নয়। প্রদর্শনী। বুক সেলফগুলোতেই বই রাখা আছে। ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ছাড়ের বই কেনার সুযোগ থাকলেও খুব বেশি পাঠক/ ক্রেতার ভিড় নেই। আর সত্যি বলতে কি খুব চলে এমন নতুন বইও বিশেষ নেই। গত বছর ফেব্রুয়ারির বইমেলার পর ১০ মাসে যেসব বই বেরিয়েছে সেগুলো যদি প্রদর্শন নাই করা হলো তবে সেই আয়োজন কতটা আর আকর্ষণীয় হবে। অবশ্য বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রকাশিত প্রচুর বই কেনার সুযোগ ছিল। এর অধিকাংশই চিরায়ত বই।

পাঠক সমাবেশে গিয়ে মনে হলো ছোটখাটো মেলা প্রাঙ্গণেই ঢুকে পড়েছি। সম্ভবত বিদেশী বইয়ের এত বড় প্রদর্শনকেন্দ্র গোটা দেশে আর নেই। পেঙ্গুইনের সদ্য প্রকাশিত বইও এখানে পাঠক পাবেন। পাঠক সমাবেশে পাঠদের সমাবেশ হয় বটে, তবে লেখকদের সমাবেশই বোধহয় বেশি। কয়েক সারি সোফা রেখে দেয়া আছে। দু-পাঁচজন লেখক এসে সেখানে বসেন। প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এসে শুধোয়, স্যার চা দিই। চায়ের সঙ্গে বিস্কুট বা চানাচুর-মুড়িও পরিবেশন করা হয়। ছোট পর্দায় বইয়ের প্রদর্শনী চলে। আর সারাক্ষণই বেজে চলে রবীন্দ্রসঙ্গীত অথবা মিষ্টি বাজনা। আশি পেরুনো দুজন লেখক এসছিলেন পাঠক সমাবেশে শনিবার সন্ধ্যায়। এরা হলেন লালন বিশেষজ্ঞ আনোয়ারুল করীম ও রবীন্দ্রচর্চার জন্য খ্যাতিমান আমিনুল ইসলাম বেদু। দুই লেখক নাকি সারাদিনই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। করোনা নিয়ে তাদের আতঙ্ক নেই, আছে সাবধানতা।

আমরা আশির দশকে ছাত্রজীবনে সাহিত্যের পুরনো বইয়ের খোঁজে নিউমার্কেটের উল্টো দিকে নীলক্ষেতের দোকানগুলোয় যেতাম। এখন কী অবস্থা। ফেসবুকে এই লেখায় উঠে এসেছে সমকালীন করুণ বাস্তবতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন লিখেছেন…

গতকাল সন্ধ্যায় আমার বড় কন্যা বিয়াংকাকে নিয়ে গিয়েছিলাম নীলক্ষেত আর নিউমার্কেটে। উদ্দেশ্য শেক্সপিয়ারের ‘মেজার ফর মেজার’ বইটি কেনা। বিয়াংকা বিজ্ঞানের ছাত্রী, তথাপি ও এ-লেভেলে ইংরেজী সাহিত্য নিয়েছে। সাহিত্যের প্রতি তার ভালবাসা একদম ছোটবেলা থেকে। প্রচুর গল্প ও কবিতার বই পড়েছে এবং নিজে কিছু লেখালেখিও করে। নীলক্ষেতে বইয়ের দোকানগুলো ঘুরে একটি অভিজ্ঞতা হলো : দোকানে সজ্জিত বইগুলোর মধ্যে একটি বড় অংশই হলো গাইড বই, দ্রুত নানা ভাষা শিক্ষার বই ইত্যাদি। ঠিক যেন পাড়ার মুদি দোকান। ওইসব দোকানও আজকাল রং-বেরঙের প্লাস্টিক প্যাকেট দিয়ে এমনভাবে ভরা থাকে যে, দোকানদারকেও দেখা যায় না। সবকিছুই এখন প্যাকেটজাত। এসব দেখে বাঙালীর সাইকি বোঝা যায়। এই বাঙালী এখন আর জ্ঞানার্জনে আগ্রহী নয়। কেবল শর্টকাট পথে একটা সার্টিফিকেট বাগিয়ে, গাইড বই মুখস্থ করে একটা চাকরি বাগানোই মঞ্জিলে মাকসুদ।

নীলক্ষেতে আসলে আমাদের কাক্সিক্ষত বই পাইনি। পরে বলাকার পাশে রাফি প্লাজার তিন তলায় ফ্রেন্ডস বুক শপে গেলাম। মনে হলো সাহিত্যের ছাত্রদের জন্য যেন এক টুকরো স্বর্গ। কাক্সিক্ষত বইটি পেলাম। কিন্তু বিয়াংকা যেমন চাচ্ছিল, তেমন না। তার পরও ওটাসহ আরও কিছু বই ওখান থেকে কিনে নিউ মার্কেটে যাই। অনেক অনেক দিন পরে নিউ মার্কেটে গেলাম। গিয়ে আমি শকড! এ কী? অনেক বইয়ের দোকান নাই হয়ে গেছে। সেই সব জায়গায় এখন খাবারের দোকান, কসমেটিকসের দোকান, চশমার দোকান ইত্যাদি। অথচ জনসংখ্যা বাড়ছে, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়ছে; কিন্তু বইয়ের দোকান কমছে। এ কী?

গেলাম পুরনো পরিচিত জিনাত বুক শপ লিমিটেডে। বই কেনা হয়নি, কিন্তু দোকানের মালিকের সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টার মতো কথা হয়েছে। ফয়সল সাহেব একজন আলোকিত মানুষ। মনে হলো, ওনার সঙ্গে লম্বা সময় গল্প করা যায়। বলছিলেন, এক সময় তার দোকানে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার বা তারও বেশি টাকার বই বিক্রি হতো। মনে রাখতে হবে, তখনকার ১০ হাজার টাকার মান কিন্তু আজকের ৫০ হাজার কিংবা তার চেয়েও বেশি। বললেন, ‘আজকে সারা দিনে এখন পর্যন্ত ২ হাজার টাকার বইও বিক্রি হয়নি। মানুষ এখন আর বই কিনে না। তারা দামি মোবাইল সেট কিনে, ট্যাব কিনে, দামি রেস্টুরেন্টে খায়; কিন্তু বই কেনার সময় কৃপণতা।’ তিনিও বললেন, এই দেশের মানুষ এখন পড়তে চায় না। ততটুকুই পড়ে, যতটুকু কাজে লাগবে মনে করে। অথচ ইন দ্য লং রানে সব পড়াই যে কাজে লাগে- এই বোধ জন্মানোর শিক্ষাটা ছোটবেলা থেকেই পায় না।