ঢাকা ১০:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৯৯০ ইলা লালালালা: সবুজ ঘাসের লাল দ্রোহের সুর যার কন্ঠে তরুণ আইনজীবী সাইফুলকে যেভাবে হত্যা করা হয় গাজীপুরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতিত অতিষ্ঠ জনসাধারণ সমাবেশে গিয়ে টাকা না পেয়ে বাড়ি ঘেরাও, ৫ প্রতারক আটক অভিনব সিন্ডিকেট: সয়াবিন তেলের সঙ্গে চাল-ডাল কেনা বাধ্যতামূলক! সব ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করলেন হাসনাত ডেপুটি রেজিস্ট্রার হয়েও নার্সিং ইনস্টিটিউট ব্যবসা নিলুফার ইয়াসমিনের অভিযোগ তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তলব পুলিশ প্রশাসনের নীতিগত পরিবর্তন হলেও এসআই মিজানের অসাধু নীতির পরিবর্তন হয়নি

আওয়ামী লীগ দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিচ্ছে

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৬:২৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি ২০২১
  • / ৩৪০ ৫০০০.০ বার পাঠক

  • সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় লাল সবুজের নিশান নিয়ে আওয়ামী লীগ ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়ি’ বেয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতিতে অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা অনেকটাই এড়াতে পেরেছে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য বেগম রওশন আরা মান্নানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নের লিখিত জবাবে আরও জানান, ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক্স এ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের ‘রয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল ২০২১’ রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি দেশ হবে । এ রিপোর্টে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বে কোন্ দেশের অর্থনীতি কি হারে বাড়বে তারই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী ২০৩৫ সাল নাগাদ ১৯৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ধাপ উপরে উঠে ২৫ নম্বরে পৌঁছে যাবে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

সংসদ নেতা বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের মানুষের বর্তমান মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৬ সালে ছিল মাত্র ৫৪৩ ডলার। তিনি বলেন, কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষনীয়। কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান দশম। বাংলাদেশ আজ চালে উদ্বৃত্ত দেশ। ২০১৯ সালে বিশ্বে মাছের উৎপাদনে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। এসব সাফল্য অর্জিত হয়েছে সরকারের সঠিক ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কারণে।

একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না ॥ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম সুলতানা নাদিরার প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না- এ লক্ষ্য সামনে রেখে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ২ শতাংশ খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদানপূর্বক একক গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহনির্মাণ করে দেয়ার কার্যক্রম চলছে। পর্যায়ক্রমে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৫২২ পরিবারকে গৃহনির্মাণ ও ব্যারাকের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে।

তিনি জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত ও নদী ভাঙ্গন কবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ১৯৯৭ সাল হতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৩ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৬০০ পরিবারের জন্য বিশেষ ডিজাইনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পটি জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ পুনর্বাসন প্রকল্প।

বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার দেবে ইউনেস্কো ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ‘ইউনেস্কো, বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্য ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। গত ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের শরৎকালীন ২১০তম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যা জাতিসংঘের কোন অঙ্গসংস্থা কর্তৃক এই প্রথমবারের মতো আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করা হলো।

সংসদ নেতা জানান, প্রতি দুই বছর অন্তর এ পুরস্কার প্রদান করা হবে, যার আর্থিক মূল্যমান ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। সমসাময়িককালে বহুল আলোচিত ও চর্চিত বিষয় ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’ অঙ্গনে এই আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তিত হলো। সৃজনশীল অর্থনীতি বিষয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি জুরি বোর্ড পুরস্কার বিজয়ী মনোনয়ন করবেন। জুরি বোর্ডের সদস্য নির্বাচন করবেন ইউনেস্কো মহাপরিচালক। সৃজনশীল অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার প্রদান করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, বিশেষ করে যুব সমাজের উন্নয়নে সংস্কৃতিকর্মী, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কর্তৃক গৃহীত ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগকে স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে সমাজের অনগ্রসর নারী, অভিবাসী ও প্রবাসী জনগোষ্ঠীর সৃজনশীল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রাধান্য দেয়া হবে। প্রথমবারের মতো এই পুরস্কার ২০২১ সালের নবেম্বরে অনুষ্ঠেয় ইউনেস্কোর ৪১তম সাধারণ সভা চলাকালে প্রদান করা হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে এ অর্জন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। মহাপরিচালক ম্যাডাম অড্রে আযুলেসহ ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার ॥ বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গার প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার। দেশকে ডিজিটালাইজড এবং মধ্যম আয়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে রূপকল্প-২০২১, দেশকে উন্নত দেশের কাতারে শামিলকরণের লক্ষ্যে রূপকল্প-২০৪১ এবং দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ তে উচ্চতর পর্যায়ের ৩টি জাতীয় অভীষ্ট এবং বদ্বীপ সংশ্লিষ্ট ৬টি নির্দিষ্ট অভীষ্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। বদ্বীপ সংশ্লিষ্ট অভীষ্টসমূহ উচ্চতর পর্যায়ের অভীষ্ট অর্জনে অবদান রাখবে। উচ্চতর পর্যায়ের ৩টি জাতীয় অভীষ্ট হচ্ছে- ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ, উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন এবং ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জন।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন ব্রত হিসেবে নিয়েছি ॥ সরকারী দলের অপর সদস্য হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বানাতে চেয়েছিলেন। আমরাও সেটাকে আমাদের ব্রত বানিয়েছি। কোন্ তালিকায় আমাদের কি অবস্থান তার চাইতে আমাদের কাছে মুখ্য হলো আমার দেশের মানুষের মুখের হাসি। আমরা পৃথিবীর বুকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের গর্বিত বাঙালী হিসেবে মাথা উঁচু করে থাকতে চাই।

তিনি জানান, ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক এ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিআইবিআর) গত ২৫ ডিসেম্বর ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল-২০২১-এ যে অর্থনৈতিক সূচক প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশ ২০২০ সালে ৪১তম, ২০২৫ সালে ৩৪তম, ২০৩০ সালে ২৮তম এবং ২০৩৫ সালে ২৫তম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে মর্মে উপস্থাপন করা হয়েছে।

চাকরিচ্যুত প্রবাসীদের নতুন কর্মসংস্থান ॥ বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী অধ্যুষিত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে কোভিডকালে চাকরিচ্যুত প্রবাসীদের সার্বিক কল্যাণে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে ফোনে যোগাযোগসহ পত্র প্রেরণ করা হয়। ওই পত্রে তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হয়। এগুলো হলো- চাকরিচ্যুত প্রবাসী কর্মীদের ন্যূনতম খাদ্য ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, চাকরিচ্যুত কর্মীদের যাবতীয় দেনা-পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থাসহ ছয় মাসের বেতন-ভাতা প্রদানপূর্বক দেশে ফেরত প্রেরণ এবং প্রবাসী শ্রমিকদের বিদেশে কর্মসংস্থান এবং ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ওসব দেশে কোভিড-১৯ রিকভারি এ্যান্ড রেসপন্ড ফান্ড গঠনের সুপারিশ।

তিনি জানান, করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসা প্রবাসীদের মধ্যে যারা পুনরায় সেসব দেশে ফেরত যেতে ইচ্ছুক, তাদের পুনরায় সেসব দেশে বা অন্য দেশে প্রেরণ ও পুনর্বাসনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

আওয়ামী লীগ দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিচ্ছে

আপডেট টাইম : ০৬:২৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি ২০২১
  • সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় লাল সবুজের নিশান নিয়ে আওয়ামী লীগ ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়ি’ বেয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতিতে অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা অনেকটাই এড়াতে পেরেছে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য বেগম রওশন আরা মান্নানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নের লিখিত জবাবে আরও জানান, ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক্স এ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের ‘রয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল ২০২১’ রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি দেশ হবে । এ রিপোর্টে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বে কোন্ দেশের অর্থনীতি কি হারে বাড়বে তারই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী ২০৩৫ সাল নাগাদ ১৯৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ধাপ উপরে উঠে ২৫ নম্বরে পৌঁছে যাবে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

সংসদ নেতা বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের মানুষের বর্তমান মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৬ সালে ছিল মাত্র ৫৪৩ ডলার। তিনি বলেন, কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষনীয়। কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান দশম। বাংলাদেশ আজ চালে উদ্বৃত্ত দেশ। ২০১৯ সালে বিশ্বে মাছের উৎপাদনে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। এসব সাফল্য অর্জিত হয়েছে সরকারের সঠিক ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কারণে।

একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না ॥ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম সুলতানা নাদিরার প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না- এ লক্ষ্য সামনে রেখে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ২ শতাংশ খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদানপূর্বক একক গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহনির্মাণ করে দেয়ার কার্যক্রম চলছে। পর্যায়ক্রমে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৫২২ পরিবারকে গৃহনির্মাণ ও ব্যারাকের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে।

তিনি জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত ও নদী ভাঙ্গন কবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ১৯৯৭ সাল হতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৩ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৬০০ পরিবারের জন্য বিশেষ ডিজাইনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পটি জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ পুনর্বাসন প্রকল্প।

বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার দেবে ইউনেস্কো ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ‘ইউনেস্কো, বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্য ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। গত ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের শরৎকালীন ২১০তম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যা জাতিসংঘের কোন অঙ্গসংস্থা কর্তৃক এই প্রথমবারের মতো আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করা হলো।

সংসদ নেতা জানান, প্রতি দুই বছর অন্তর এ পুরস্কার প্রদান করা হবে, যার আর্থিক মূল্যমান ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। সমসাময়িককালে বহুল আলোচিত ও চর্চিত বিষয় ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’ অঙ্গনে এই আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তিত হলো। সৃজনশীল অর্থনীতি বিষয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি জুরি বোর্ড পুরস্কার বিজয়ী মনোনয়ন করবেন। জুরি বোর্ডের সদস্য নির্বাচন করবেন ইউনেস্কো মহাপরিচালক। সৃজনশীল অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার প্রদান করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, বিশেষ করে যুব সমাজের উন্নয়নে সংস্কৃতিকর্মী, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কর্তৃক গৃহীত ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগকে স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে সমাজের অনগ্রসর নারী, অভিবাসী ও প্রবাসী জনগোষ্ঠীর সৃজনশীল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রাধান্য দেয়া হবে। প্রথমবারের মতো এই পুরস্কার ২০২১ সালের নবেম্বরে অনুষ্ঠেয় ইউনেস্কোর ৪১তম সাধারণ সভা চলাকালে প্রদান করা হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে এ অর্জন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। মহাপরিচালক ম্যাডাম অড্রে আযুলেসহ ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার ॥ বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গার প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার। দেশকে ডিজিটালাইজড এবং মধ্যম আয়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে রূপকল্প-২০২১, দেশকে উন্নত দেশের কাতারে শামিলকরণের লক্ষ্যে রূপকল্প-২০৪১ এবং দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ তে উচ্চতর পর্যায়ের ৩টি জাতীয় অভীষ্ট এবং বদ্বীপ সংশ্লিষ্ট ৬টি নির্দিষ্ট অভীষ্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। বদ্বীপ সংশ্লিষ্ট অভীষ্টসমূহ উচ্চতর পর্যায়ের অভীষ্ট অর্জনে অবদান রাখবে। উচ্চতর পর্যায়ের ৩টি জাতীয় অভীষ্ট হচ্ছে- ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ, উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন এবং ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জন।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন ব্রত হিসেবে নিয়েছি ॥ সরকারী দলের অপর সদস্য হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বানাতে চেয়েছিলেন। আমরাও সেটাকে আমাদের ব্রত বানিয়েছি। কোন্ তালিকায় আমাদের কি অবস্থান তার চাইতে আমাদের কাছে মুখ্য হলো আমার দেশের মানুষের মুখের হাসি। আমরা পৃথিবীর বুকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের গর্বিত বাঙালী হিসেবে মাথা উঁচু করে থাকতে চাই।

তিনি জানান, ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক এ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিআইবিআর) গত ২৫ ডিসেম্বর ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল-২০২১-এ যে অর্থনৈতিক সূচক প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশ ২০২০ সালে ৪১তম, ২০২৫ সালে ৩৪তম, ২০৩০ সালে ২৮তম এবং ২০৩৫ সালে ২৫তম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে মর্মে উপস্থাপন করা হয়েছে।

চাকরিচ্যুত প্রবাসীদের নতুন কর্মসংস্থান ॥ বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী অধ্যুষিত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে কোভিডকালে চাকরিচ্যুত প্রবাসীদের সার্বিক কল্যাণে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে ফোনে যোগাযোগসহ পত্র প্রেরণ করা হয়। ওই পত্রে তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হয়। এগুলো হলো- চাকরিচ্যুত প্রবাসী কর্মীদের ন্যূনতম খাদ্য ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, চাকরিচ্যুত কর্মীদের যাবতীয় দেনা-পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থাসহ ছয় মাসের বেতন-ভাতা প্রদানপূর্বক দেশে ফেরত প্রেরণ এবং প্রবাসী শ্রমিকদের বিদেশে কর্মসংস্থান এবং ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ওসব দেশে কোভিড-১৯ রিকভারি এ্যান্ড রেসপন্ড ফান্ড গঠনের সুপারিশ।

তিনি জানান, করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসা প্রবাসীদের মধ্যে যারা পুনরায় সেসব দেশে ফেরত যেতে ইচ্ছুক, তাদের পুনরায় সেসব দেশে বা অন্য দেশে প্রেরণ ও পুনর্বাসনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে।