ঢাকা ০১:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে যেতে নির্বাহী আদেশে ট্রাম্পের সই নাসিরনগর উপজেলা সদরে দিনে-দুপুরে ফ্ল্যাটে চুরি হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে. ড. রেজাউল করিম মঠবাড়ীয়া আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৫ইং ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয় টাঙ্গাইল সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের হস্তক্ষেপে মামলা প্রত্যাহার হওয়া টাঙ্গাইলবাসী খুশি! সভাপতি/সম্পাদকের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ অনিয়মের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান সিইসির পুলিশ, র‌্যাব, আনসারের নতুন পোশাক চুড়ান্ত নাইজেরিয়ায় ট্যাংকার ট্রাক বিস্ফোরণে নিহত অন্তত ৮৬ অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করা প্রতিবেদন প্রত্যাহার ব্রিটিশ এমপিদের যুবদল নেতাকে পিটিয়ে আহত করেছে স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতা

বিলুপ্তির পথে জনপ্রিয় বুনোফল ‘কাঁটাবহরী’

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৭:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ মে ২০২২
  • / ৭৫৩ ৫০০০.০ বার পাঠক

মাইনুদ্দিন আল আতিক।।

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে জনপ্রিয় একটি বুনোফল ‘কাঁটাবহরী’। এক সময়ে গ্রামগঞ্জের বন-জঙ্গলে বা ঝোপঝাড়ের পাশে এ ফলের গাছ হরহামেশাই দেখা যেতো। এখন আর আগের মতো চোখে পরে না। গভীর জঙ্গলে খুঁজলে দু-একটি গাছের দেখা মেলে। এ গাছ ঝোপালো এবং শাখা কাঁটাযুক্ত। এ কারণেই মূলত ফলটির নাম কাঁটাবহরী দেয়া হয়েছে। অনেকে অবশ্য বঁইচি নামেও চিনে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Flacourtia indica, পরিবার Selicaceae। ইংরেজি নাম Governors Plum। বর্তমানে অযত্ন, অবহেলা এবং বন উজাড় হওয়ায় কাঁটাবহরী অনেকটা বিলুপ্তির পথে।
জানা গেছে, কাঁটাবহরী বা বঁইচি গাছ ঝোপঝাড়ের পাশে বা জঙ্গলের মাঝে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয়। এ গাছে সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পাঁচ পাপড়িযুক্ত ক্ষুদ্রাকৃতির ফুল ধরে। পরে আঙ্গুরের মতো গোলাকার সবুজ রঙের ফল হয়। যা পাঁকতে শুরু করে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে। পাঁকলে এর রঙ রক্তবেগুনি আকার ধারণ করে। অনেকটা কালো জামের মতো। এ ফল খেতে অম্ল ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত। বঁইচি গাছের মূলের রস নিউমোনিয়া এবং পাতার নির্যাস জ্বর, কফ ও ডায়রিয়া নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। পাতা ও মূল অনেকে সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করেন। বাকলের অংশ তিলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বাতের ব্যথা নিরাময়ে মালিশ তৈরি করা হয়।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের মম্বিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ সিরাজুল ইসলাম ধ্রুববাণীকে বলেন, ‘এক সময় আমাদের এইদিকে প্রচুর পরিমাণ কাঁটাবহরী গাছ ছিলো। এখন সচরাচর দেখা যায় না। জঙ্গলে কিছু গাছ আছে, তাও এখন বিলুপ্তির পথে।’

উপজেলার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের মেহেরপুর গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় এ ফল খেয়েছি। অনেক মজাদার একটি ফল। তবে বর্তমানে আমাদের এলাকায় এ ফলের গাছ নেই বললেই চলে।’
ধুলাসার ইউনিয়নের গঙ্গামতি গ্রামের বাসিন্দা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কাঁটাবহরী গাছ এখনো কিছু আছে। তাও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। তবে এ গাছ রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিত।’
মহিপুর ইউনিয়নের নিজশিববাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা কবি মোঃ বেল্লাল হাওলাদার বলেন, ‘মুরুব্বিদের কাছে শুনেছি এই গাছের পাতা শ্লেষ্মা, কাঁশি আমাশয় এবং হজমের সমস্যাসহ ডায়রিয়াতে অনেক উপকারী।’
অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মোঃ আব্দুল মালেক মাস্টার ধ্রুববাণীকে বলেন, ‘বঁইচি বা কাঁটাবহরী আমাদের দেশের বিলুপ্তপ্রায় একটি ফল। একসময় গ্রামগঞ্জে ক্ষেতের পাশে, ঝোপঝাড়ে এ ফল প্রচুর পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন আর চোখে পরে না। এটি অনেক ভেষজগুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। গ্রামের মানুষ এর গুণাগুণ সম্পর্কে না জানায় এবং বন উজাড় হওয়ায় বর্তমানে কাঁটাবহরী বিলুপ্তির পথে। দশ-বিশ বছর পর হয়তো এই ফলটিকে আর আমাদের দেশে দেখাই যাবে না।’
প্রচুর পুষ্টি ও ওষুধিগুণসম্পন্ন বিপন্নপ্রায় এ উদ্ভিদটি রক্ষায় সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি।
আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বিলুপ্তির পথে জনপ্রিয় বুনোফল ‘কাঁটাবহরী’

আপডেট টাইম : ১১:৪৭:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ মে ২০২২

মাইনুদ্দিন আল আতিক।।

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে জনপ্রিয় একটি বুনোফল ‘কাঁটাবহরী’। এক সময়ে গ্রামগঞ্জের বন-জঙ্গলে বা ঝোপঝাড়ের পাশে এ ফলের গাছ হরহামেশাই দেখা যেতো। এখন আর আগের মতো চোখে পরে না। গভীর জঙ্গলে খুঁজলে দু-একটি গাছের দেখা মেলে। এ গাছ ঝোপালো এবং শাখা কাঁটাযুক্ত। এ কারণেই মূলত ফলটির নাম কাঁটাবহরী দেয়া হয়েছে। অনেকে অবশ্য বঁইচি নামেও চিনে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Flacourtia indica, পরিবার Selicaceae। ইংরেজি নাম Governors Plum। বর্তমানে অযত্ন, অবহেলা এবং বন উজাড় হওয়ায় কাঁটাবহরী অনেকটা বিলুপ্তির পথে।
জানা গেছে, কাঁটাবহরী বা বঁইচি গাছ ঝোপঝাড়ের পাশে বা জঙ্গলের মাঝে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয়। এ গাছে সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পাঁচ পাপড়িযুক্ত ক্ষুদ্রাকৃতির ফুল ধরে। পরে আঙ্গুরের মতো গোলাকার সবুজ রঙের ফল হয়। যা পাঁকতে শুরু করে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে। পাঁকলে এর রঙ রক্তবেগুনি আকার ধারণ করে। অনেকটা কালো জামের মতো। এ ফল খেতে অম্ল ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত। বঁইচি গাছের মূলের রস নিউমোনিয়া এবং পাতার নির্যাস জ্বর, কফ ও ডায়রিয়া নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। পাতা ও মূল অনেকে সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করেন। বাকলের অংশ তিলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বাতের ব্যথা নিরাময়ে মালিশ তৈরি করা হয়।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের মম্বিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ সিরাজুল ইসলাম ধ্রুববাণীকে বলেন, ‘এক সময় আমাদের এইদিকে প্রচুর পরিমাণ কাঁটাবহরী গাছ ছিলো। এখন সচরাচর দেখা যায় না। জঙ্গলে কিছু গাছ আছে, তাও এখন বিলুপ্তির পথে।’

উপজেলার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের মেহেরপুর গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় এ ফল খেয়েছি। অনেক মজাদার একটি ফল। তবে বর্তমানে আমাদের এলাকায় এ ফলের গাছ নেই বললেই চলে।’
ধুলাসার ইউনিয়নের গঙ্গামতি গ্রামের বাসিন্দা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কাঁটাবহরী গাছ এখনো কিছু আছে। তাও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। তবে এ গাছ রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিত।’
মহিপুর ইউনিয়নের নিজশিববাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা কবি মোঃ বেল্লাল হাওলাদার বলেন, ‘মুরুব্বিদের কাছে শুনেছি এই গাছের পাতা শ্লেষ্মা, কাঁশি আমাশয় এবং হজমের সমস্যাসহ ডায়রিয়াতে অনেক উপকারী।’
অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মোঃ আব্দুল মালেক মাস্টার ধ্রুববাণীকে বলেন, ‘বঁইচি বা কাঁটাবহরী আমাদের দেশের বিলুপ্তপ্রায় একটি ফল। একসময় গ্রামগঞ্জে ক্ষেতের পাশে, ঝোপঝাড়ে এ ফল প্রচুর পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন আর চোখে পরে না। এটি অনেক ভেষজগুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। গ্রামের মানুষ এর গুণাগুণ সম্পর্কে না জানায় এবং বন উজাড় হওয়ায় বর্তমানে কাঁটাবহরী বিলুপ্তির পথে। দশ-বিশ বছর পর হয়তো এই ফলটিকে আর আমাদের দেশে দেখাই যাবে না।’
প্রচুর পুষ্টি ও ওষুধিগুণসম্পন্ন বিপন্নপ্রায় এ উদ্ভিদটি রক্ষায় সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি।