সম্পদ পরিশুদ্ধ করে জাকাত।ইসলামের
- আপডেট টাইম : ০৭:২৩:৪৩ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ৮ এপ্রিল ২০২২
- / ১৯৩ ৫০০০.০ বার পাঠক
- সময়ের কন্ঠ রিপোর্ট।।ইসলামের মৌলিক পাঁচ ভিত্তির মধ্যে অন্যতম ‘জাকাত’। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন-‘এবং তোমরা আল্লাহতায়লার সন্তুষ্টির জন্য জাকাত আদায় করো। অতঃপর তিনি তা দ্বীগুণ করে দেবেন। (সূরা রুম-৩৯)। জাকাত আদায়ের ব্যাপারে বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ পাক জাকাত দেওয়া ফরজ করেছেন যেন তোমাদের অবশিষ্ট সম্পদকে নির্দোষ বা নির্বিঘ্ন করে দিতে পারেন’। (আবু দাউদ শরিফ)। জাকাতের আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা। জাকাত যেহেতু অর্থ সম্পদকে পুঁজিবাদের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করে, মানুষের মন-মস্তিষ্ককে গর্ব-অহংকার, লোভ-লালসা ও কৃপণতার মলিনতা থেকে পরিচ্ছন্নতা রাখে। নিজের উপার্জিত সম্পদে সমাজের অবহেলিত শ্রেণির দাবি-দাওয়া পূরণে উৎসাহ জোগায় এ জন্য ইসলামের এ তৃতীয় স্তম্ভের নামকরণ হয় জাকাত। শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ মুসলমান গরিবকে আল্লাহর ওয়াস্তে পুরোপুরি মালিক বানিয়ে দেওয়াকে জাকাত বলে।
শরিয়তের পরিভাষায় জাকাত হচ্ছে একটি আর্থিক ইবাদত। নিজের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ গরিব মিসকিন ও অভাবী লোকদের মধ্যে বণ্টন করাকে জাকাত বলা হয়। এটি নামাজ রোজার মতোই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। দ্বিতীয় হিজরিতে মদিনায় জাকাত ফরজ হয়। মহান আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল কুরআনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৮২ জায়গায় এ জাকাতের কথা বলেছেন। জাকাত শব্দ দ্বারা ৩০ বার, আল ইনফাক শব্দ দ্বারা ৪৩ বার, আস সাদাকাহ শব্দ দ্বারা ৯ বার জাকাতের কথা বোঝানো হয়েছে।
এত বার যে বিষয়টি সম্পর্কে মহান রব বলেছেন অবশ্যই বিষয়টি খুবই গুরুত্বের দাবি রাখে। কিন্তু আমাদের অনেককে দেখা যায় যে, ইসলামের এ মহান হুকুমটির প্রতি খেয়াল করি না। আমরা ভাবি আমাদের সম্পদ কমে যাবে। আসলে জাকাত দিলে সম্পদ কমবে না বরং বৃদ্ধি পাবে। জাকাত দিলে যে সম্পদ বৃদ্ধি পাবে তা মহান আল্লাহ নিজেই বলেছেন : আল্লাহতায়ালা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন আর দান সদকাকে বৃদ্ধি করেন। আল্লাহতায়ালা অকৃতজ্ঞ পাপীষ্ঠ ব্যক্তিদের কখনো পছন্দ করেন না।
ধনী সম্পদশালী ব্যক্তিরা মনে করেন যে জাকাতের দ্বারা সম্পদ কমে যায় তা নিছক ভুল ধারণা। কেননা আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ওয়াদা করেছেন যে, ‘জাকাত আদায়ের ফলে তিনি বান্দার সম্পদ দ্বিগুণ করে দেবেন’। জাকাত অস্বীকারকারীকে শরিয়ত কাফির বলে আখ্যা দিয়েছে। কেননা ফরজের বিধান অস্বীকার করা কুফুরির অন্তর্ভুক্ত। যে তা আদায় না করবে সে ফাসিক আর যে আদায় করতে বিলম্ব করবে সে গুনাহগার তার সাক্ষী গ্রহণযোগ্য নয়। (আলমগীরি : তরিকুল ইসলাম বাংলা ২য় খণ্ড,পৃ. ২৬৫)।
কুরআনে কারিমের অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, যা কিছু তোমরা সুদের ওপর দাও (তা তো এ জন্যই দাও) যেন অন্য মানুষদের মালের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বৃদ্ধি পায়, আল্লাহতায়ালার দৃষ্টিতে তা বাড়ে না। অপরদিকে যে জাকাত তোমরা দান করো তা যেহেতু একান্তভাবে আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশে দান করো! তাই বৃদ্ধি পায়। এরাই হচ্ছে সেসব লোক যারা জাকাতের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে নিজেদের সম্পদ বহুগুণে বাড়িয়ে নেয়।
আলোচ্য আয়াতগুলোর মাধ্যমে বুঝা গেল যে, জাকাত মূলত সম্পদের স্থায়িত্বের জন্য দেওয়া। এটি সম্পদকে স্থায়ী ও বহুগুণে বৃদ্ধি করে। কিন্তু আমরা ভাবি মনে হয় আমার সম্পদ কমে যাচ্ছে। আসলে সম্পদ কমে না বরং বাড়ে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। (বুখারি)। অন্য হাদিসে এসেছে : জাবীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (সা.) বলেছেন যখন তোমাদের কাছে জাকাত আদায়কারী আসবে তখন সে যেন তোমাদের কাছ থেকে তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যায়। (মুসলিম)।
জাকাত দেবেন কাকে
মহান আল্লাহ বলেন : নিশ্চয়ই সদকা (জাকাত) হলো ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়ের কর্মচারী, মুয়াল্লিফাতুল কুলুব (ওইসব অমুসলিম যাদের অন্তর জয় করা প্রয়োজন), দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য, ঋণ মুক্তির জন্য, আল্লাহর পথে, মুসাফিরদের জন্য। (সূরা তাওবা, আয়াত ৬০)।
যাদের ওপর জাকাত ফরজ
মনে রাখতে হবে যে কোনো মুমিনের ওপর নামাজ রোজার মতো জাকাত ফরজ নয়। তবে জাকাত ফরজ হয় কিছু শর্ত সাপেক্ষে এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের ওপর। যাদের কাছে বাৎসরিক যাবতীয় খরচের পর ৭.৫০ (সাড়ে সাত) তোলা পরিমাণ স্বর্ণের সমমূল্যের সম্পদ কিংবা ৫২.৫০ (সাড়ে বায়ান্ন) তোলা পরিমাণ রৌপ্য বা রৌপ্যের সমমূল্যের সম্পদ গচ্ছিত থাকে তাদের ওপরই জাকাত ফরজ। গচ্ছিত সম্পদের ২.৫০ শতাংশ জাকাত দিতে হবে।
মনে রাখতে হবে জাকাত দেওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময় নির্ধারিত নেই। যখনি নিসাব পরিমাণ মালের এক বছর পূর্ণ হবে তখনই জাকাত দেওয়া কর্তব্য। আর না হয় এমতাবস্থায় ইন্তেকাল করলে গুনাহগার বলে গণ্য হবে।
লেখক : ইমাম ও খতিব : বাইতুন নূর জামে মসজিদ শ্রীপুর, গাজীপুর