সংবাদ শিরোনাম ::
জাল দলিল রেজিষ্ট্রি, দালাল চক্রের দেড় কোটি টাকা ভাগাভাগি, জাল দলিল বাতিলে মামলা
সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
- আপডেট টাইম : ০১:০৩:১৫ অপরাহ্ণ, শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২
- / ৪২০ ৫০০০.০ বার পাঠক
ওমর ফারুক, মোংলা প্রতিনিধি।।
জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের মালিকানাধীন জমির জাল দলিল রেজিষ্ট্রি করিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ‘ডরিন পাওয়ার হাউজ এন্ড টেকনোলজিস লিঃ’ এর বিরুদ্ধে। মোংলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের সানবান্দা এলাকায় অবসারপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব আব্দুস সাত্তার মিয়ার সতের দশমিক সাত নয় তিন আট একর অথার্ৎ প্রায় ৩৫ বিঘা জমি দালাল চক্র ডরিন প্রতিষ্ঠানের নামে জাল দলিল করে দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এ জাল দলিল হয়েছে ডরিন পাওয়ার হাউজ এন্ড টেকনোলজিস লি: এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঝিনাইদাহ-০২ আসনের এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকীর নামে। দালালদের সহায়তায় ভূয়া মালিক সেজে ওই প্রতিষ্ঠানকে অন্যের জমির জাল দলিল রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মো: আব্দুল সত্তার হাওলাদার। এদিকে এই জাল দলিল বাতিলের জন্য ইতিমধ্যে আদালতে মামলা করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ ও জমির প্রকৃত মালিক অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব আব্দুস সাত্তার মিয়া। আব্দুস সাত্তার মিয়া বাদী হয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারী বুধবার বাগেরহাট আদালতে এই মামলা দায়ের করেন। ভূয়া মালিক সেজে জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের জমি বিক্রি ও রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার তুঘলকি কান্ডে সংশিষ্টদের মাঝে বা্যপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এমন কান্ডে সর্বমহলে প্রশ্ন উঠেছে কিভাবে জালিয়াতি করে অন্যের জমির মালিক সেজে বিক্রি ও রেজিষ্ট্রি করে দিয়ে প্রতারক মো: আব্দুল ছত্তার হাওলাদার এবং দালাল হাসমত চক্র হাতিয়ে নিলো দেড় কোটি টাকা।
সরেজমিন খোঁজ খবরে জানা গেছে, গত ১৫ ডিসেম্বর উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের সানবান্দা গ্রামের সানবান্দা মৌজার অন্র্‘ভুক্ত অবসারপ্রাপ্ত সরকারী আমলা আব্দুস সাত্তার মিয়ার প্রায় ৩৫ বিঘা জমি জালিয়াতি করে জাল দলিল করা হয়। দালাল চক্রের মুল হোতা মোংলা পৌর শহরের ময়লাপোতা এলাকার বাসিন্দা মোঃ হাসমত আলী প্রকৃত মালিক আব্দুস সাত্তার মিয়ার জায়গায় বরিশালের মো: আব্দুল ছত্তার হাওলাদারকে দিয়ে ওই জমি ডরিন পাওয়ার হাউজ এন্ড টেকনোলজিস লিঃ এর কাছে বিক্রি করান। ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা মূল্যে ওই জমির রেজিষ্ট্রি হয়। ডরিন পাওয়ার হাউজ এন্ড টেকনোলজিস লিঃ’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহজীব আলম সিদ্দিকীর নামে রেজিষ্ট্রি হয় জমিটি। তাহজীব আলম সিদ্দিকী ঝিনাইদাহ-০২ আসনের বর্তমান এমপি।
এ বিষয়ে ডরিন পাওয়ার হাউজ এন্ড টেকনোলজিস লিঃ ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহজীব আলম সিদ্দিকী দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মনজুরুল নাসিম বলেন, দালাল হাসমত আলী ও রিয়াদ চক্রের খপ্পড়ে পড়ে আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি, তারা আমাদের এই ভুল জমি কিনে দিয়েছেন এবং এরজন্য তারাই দায়ী। কারণ আমরা তো তাদেরকে জমির টাকা দিয়েছি। আমাদের ম্যানেজমেন্ট বসে তাদের (দালাল) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিবেন বলেও জানান তিনি।
জালজালিয়াতির মাধ্যমে জমি রেজিষ্ট্রির বিষয়টি স্বীকার করে দালাল হাসমত আলী বলেন, এনিয়ে সামনাসামনি কথা বলবো বলে ফোন রেখে দেন।
আর অপর দালাল রিয়াদকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মোংলা উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার মোঃ জুবায়ের হোসেন বলেন, ডরিন পাওয়ার হাউজ এন্ড টেকনোলজিস লিঃ এর নামে জমিটির দলিল রেজিষ্ট্রি হয়ে যাাওয়ার পরে জানতে পেরেছি যে ওই কথিত দলিলটি জাল হয়েছে। পরবতর্ীতে বিভিন্ন মাধ্যমে জালজালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে সংশ্লিষ্ট দলিল লেখক (মহুরী) আবুল কালাম শেখকে গত ২৬ জানুয়ারী কারণ দশার্নো নোটিশ করা হয়েছে।
দলিল লেখক আবুল কালাম শেখ বলেন, দলিল তৈরীর পর রেজিষ্ট্রি আগ মুহুর্তে সমুদয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব সাব রেজিষ্ট্রারের। কিন্তু তিনি সেটি পুংখানুপুঙ্খুভাবে না দেখে উল্টো আমাকে অভিযুক্ত করে কারণ দশার্নো নোটিশ দিয়েছেন। মুলত এ দায় কার।
অপরদিকে জালজালিয়াতি প্রক্রিয়ায় ডরিন পাওয়ার হাউজ টেকনোলজিস লি: এর নামে যে দলিল হয়েছে তার বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হলেও দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে এক কোটি ৪৩ লাখ টাকা। জালজালিয়াতি করে দলিল রেজিষ্ট্রি করিয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেয়া প্রায় দেড় কোটি টাকার পুরোটাই দালালচক্র ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে আত্নসাৎ করেছেন। এরপর জাল দলিলের বিষয়টি চারিদকে জানাজানি হওয়ার পর পুরো বিষয়টি ধঁামাচাপা দিতে দালাল চক্রের মূল হোতা হাসমত আলী নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, শুধুই ১৫ ডিসেম্বরের এ জাল দলিলই নয় হাসমতের বিরুদ্ধে এমন জালজালিয়াতির আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। জমি কেনা-বেচা ও সরকারী চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হাসমত বহু মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে আসছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তার এমন কর্মকান্ডের কারণে বিভিন্ন সময়ে উপজেলা ভূমি ও সাব রেজিষ্ট্রি কার্যালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে থাকছেন তিনি। প্রতারক হাসমত গং চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবী ভুক্তভোগীদের।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্ ও ভারপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) কমলেশ মজুমদার বলেন, যেহেতু আমিও বিষয়টি জেনেছি সেহেতু এ দলিলের নামপত্তন/নামিজারি হবেনা। এ ঘটনায় একটি মামলাও হয়েছে জেনেছে। ঘটনাটি সাব রেজিষ্ট্রার আমাকে বললে আমি তাকে উভয় পক্ষকে ডাকতে বলেছি। আর সাব রেজিষ্ট্রার আমাকে বলেছেন, এসবের সাথে তিনি জড়িত নন। তারা সাব রেজিষ্ট্রারকে ভুল বলেছে ও বুঝিয়েছে। আর কাগজপত্র দিয়ে যে রেজিষ্ট্রি দিয়েছে সে তো এ এলাকার লোক নয়, বরিশালের। প্রথমত ছবি দেখে আর দ্বিতীয়তস্থানীয় না হয়ে দূরের হওয়াতে তাকে চিনতে পারেননি সাব রেজিষ্ট্রার। আর এ দলিল যে লিখেছে তাকে শোকজসহ তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এছাড়া এ জালজালিয়াতির ঘটনায় দালাল হাসমতের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ইউএনও। তিনি আরো বলেন, এসব অভিযোগের কারণেই অনেক আগে থেকেই হাসমতকে এসিল্যান্ড অফিস ও আমার (ইউএনও) অফিসে আসা বন্ধ করা হয়েছে।
আরো খবর.......