ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক মামলার শিকার হয়ে দিশেহারা সাংবাদিক ও জনপ্রিয় কলাম লেখক সাইয়েদ ইকরাম শাফী
- আপডেট টাইম : ০৬:২৩:২২ অপরাহ্ণ, শনিবার, ৮ জানুয়ারি ২০২২
- / ৪০৮ ৫০০০.০ বার পাঠক
সময়ের কণ্ঠ রিপোর্ট:
ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলার শিকার হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাংবাদিক ও জনপ্রিয় কলাম লেখক সা্ইয়েদ ইকরাম শাফী। বিগত ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ইং তারিখে মাঝরাতের পর সাংবাদিক সাইয়েদ ইকরাম শাফীর গ্রামের বাড়ী চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানার কুমিরা নিউ রাজাপুর গ্রাম থেকে তাকে ফেরারী আসামীর মতো ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ে যাবার সময় তাকে বলা হয়েছিল, আপনার ফেসবুক আইডি সার্চ করে আপনাকে ছেড়ে দেয়া হবে। এরপর তার ফেসবুক আইডিতে কিছু না পেয়ে তাকে চরম অপমান, গালাগাল ও শারীরিক—মানসিক নির্যাতন করা হয়। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরও তাকে বিন্দুমাত্র সম্মান করা হয়নি। তাকে ফেরারী আসামীর মতো আটক করে প্রায় ৪২ ঘন্টা পর ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করা হয়। কিছুদিন কারাগারে থেকেই তিনি জানতে পারেন তাকে আরো দুটি মামলায় জড়ানো হয়। এরমধ্যে একটি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলা। অন্যটি সীতাকুন্ড থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা। সাংবাদিক সাইয়েদ ইকরাম শাফী অত্যন্ত সৎ ও সাদাসিধে জীবনযাপন করেন। তার আর্থিক অবস্থা মোটেও ভাল নয়। পৈত্রিক ভিটাবাড়ী ছাড়া তার নিজের সম্পদ বলতে কিছুই নেই। বড় ভাই—বোনরা ধারকর্জ করে তার জামিন করান। বিগত ২৭ নভেম্বর, ২০১৯ইং তারিখে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েও তিনি কোথাও স্বস্তি পাচ্ছেন না। কারণ তিনটি মামলার হাজিরা দিতে দিতে তিনি এখন চরমভাবে দিশেহারা। তিনি আরো বলেন, আমি জীবনে কারো বিন্দুমাত্র ক্ষতি করিনি। দেশের জন্য ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য সাংবাদিকতা—লেখালেখি করেছি। আমিতো কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য নই। জীবনে কোনোদিন কোনো রাজনৈতিক তৎপরতায় জড়িত ছিলাম না। তবুও কেন আমাকে এসব ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে সীমাহীন দুঃখ—দুর্দশায় নিক্ষেপ করা হয়েছে? আমার অপরাধ কি? আমি দীর্ঘদিন যাবৎ দৈনিক দিনকাল, দৈনিক ইনকিলাব ও যায় যায় দিন পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখছি। ২৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে প্রধানমন্ত্রী দূরের কথা কোনো ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে কটুক্তি করে কোনোদিন কিছু লিখিনি। তবুও কেন এ ধরণের মামলায় জড়িয়ে আমার মতো একজন নিরীহ সাংবাদিককে কষ্ট দেয়া হচ্ছে? সাংবাদিক সাইয়েদ ইকরাম শাফীকে আটক করার সে রাতের সংক্ষিপ্ত ঘটনা তার নিজের মুখে শুনুন:
আমি রাতের খাবার খেয়ে সবে মাত্র ঘুমিয়েছি। এমন সময় প্রচন্ড আওয়াজে বিভিন্ন লোকজনের নাম ধরে ডাকাডাকি করছে একদল লোক। তাদের ডাকাডাকিতে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমার ঘরের দরজায় প্রচন্ড আওয়াজে নক করা হচ্ছে। নক করার আওয়াজ পেয়ে আমি ঘুম থেকে ওঠে দরজা খুলে দেই। আমি বলি এতো রাতে আপনারা কারা? জবাবে তারা বলে আমরা পুলিশের লোক। আমি বলি আমার এখানে কেন? তারা বলে আপনি কি ফেসবুক ব্যবহার করেন? আমি জবাব দেই, হ্যা প্রত্যেক সচেতন মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে। আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে আমিও ব্যবহার করি তো। তারা বলে আপনার সেলফোনটা দেন। জবাবে বলি আমি নর্মাল সেলফোন ব্যবহার করি। ওটাতে ফেসবুক ইউজ করা যায় না। তারা বলে আপনি কোথায় ফেসবুক ব্যবহার করেন? আমি বলি পিসিতে। ঢাকা থেকে আসলে মাঝে মাঝে একটা অফিসে বসি। সেখানেই কিছু সময় ফেসবুক ব্যবহার করি। তারা বলে চলেন, আপনার সে অফিসে যাব। আমি বলি সে অফিসের চাবি আমার কাছে থাকে না। কারণ অফিসটা আমার নয়। আমি সেখানে মাঝে মাঝে বসি। তারা বলে, যার কাছে চাবি আছে তাকে ফোন দেন। আমি সরল বিশ্বাসে অফিসের মালিককে ফোন করে বাড়ীতে থাকতে বলি। তারা আমাকে ফেরারী আসামীর মতো অফিসের মালিকের বাড়ী আমাদের পাশের গ্রাম কোর্টপাড়া নিয়ে যায়। সেখানে অফিসের অফিসের মালিককে ডেকে ঘুম থেকে তুলে আমাকে সহ কুমিরা মাজার গেইটস্থ সে অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। অফিস খোলার পর আমি নিজেই আমার ফেসবুক আইডি লগইন করে তাদের দেখাই। তারা অনেকক্ষণ যাবৎ আমার আইডি’র সব পোস্ট তন্নতন্ন করে দেখতে থাকে। আমি দীর্ঘদিন যাবৎ জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখি করছি। আমি দৈনিক দিনকালের একজন জনপ্রিয় কলাম লেখক। আমার পরিচয় দেয়ার পরও তারা আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে। গালাগাল থেকে শুরু করে শরীরিক নির্যাতনসহ কোন কিছুই তারা বাকী রাখেনি। আমি জীবনে কোনোদিন এ ধরণের নির্যাতন ও অপমানের শিকার হইনি। তাদের নির্যাতনে আমি হতভম্ভ হয়ে যাই। তখন আর কিছুই বলতে পারবো না। এরপর আমি ও অফিসের মালিক নিশানকে মাইক্রোবাসে করে দক্ষিণ দিকে নিয়ে যায়। এরপরের ঘটনাগুলো আমি আর কিছুই বলতে পারবো না। এরপর আমাকে কোর্টে চালান করা হয়। কোর্ট থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে যাবার পর আমি কিছুটা স্বাভাবিক হই। কারাগারে যাবার পর লোকজনকে জিজ্ঞাসা করি আজ কত তারিখ? তারা বলে ১৫ ডিসেম্বর। পরদিন ১৬ ডিসেম্বর কারাগারের ওয়ার্ডে গিয়ে দেখি আমাদের এলাকার অনেক রাজনৈতিক নেতা—কর্মী সেখানে বন্দী আছে। সেখানে তাদের দেখে আমার মনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে। আমাকে যেদিন ফেরারী আসামীর মতো ধরে নিয়ে যাওয়া হয় সেদিন ছিল ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ইং। সে ওয়ার্ডে গিয়ে অনেকের মুখে শুনি আমার নামে সংবাদপত্রে নিউজ প্রকাশিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তি করার জন্য নাকি আমাকে আটক করা হয়েছে। আমার নামে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দিয়ে কারাগারে চালান করা হয়েছে। লোকজনের মুখে এসব কথা শুনে আমি একেবারে ভেঙ্গে পড়ি। জীবনে কোনো ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে কটুক্তি করে কিছু লিখলাম না। আমি কিনা প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তি করে পোস্ট করেছি! হায় আল্লাহ! কার আইডি থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটুক্তি করা হয়েছে আজ পর্যন্ত আমি সেটাও জানতে পারিনি। কেন—কি অপরাধে আমাকে একে একে তিনটি মামলায় জড়ানো হলো? ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মামলায় আমাকে ১নং অভিযুক্ত ও অফিসের মালিক দুই ভাই আজাদ কামাল নিশান ও আবু বক্কর ছিদ্দিককে দুই ও তিন নম্বর অভিযুক্ত করা হয়। তারা দুই ভাই আর্থিক ভাবে অনেক স্বচ্ছল। তাই মামলার কষ্ট থেকে বাঁচার জন্য তারা অনেক টাকা খরচ করে আইওকে ম্যানেজ করে চার্জশিট থেকে নিজেদের নাম বাদ দেয়ার ব্যবস্থা করে। আমার তো টাকা—পয়সা বলতে কিছুই নেই। আমি তো জীবনে কারো ক্ষতি করিনি। এসব মামলার ভার কি বহন করার ক্ষমতা আমার আছে? এসব মামলায় জড়িয়ে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাবার পর আমি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছি। এখন শুধু একা একা মহান আল্লাহকে ডাকছি—যেন তিনি আমাকে এসব ষড়যন্দ্রমূলক মামলা থেকে মুক্তি দেন।