সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়ন অপরিহার্য
- আপডেট টাইম : ১০:১৭:১৫ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২১
- / ২২৯ ৫০০০.০ বার পাঠক
সময়ের কন্ঠ রিপোর্ট।।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, সংবিধানের আলোকে বিচারপতি নিয়োগসংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা বাস্তবতার নিরিখে অপরিহার্য। এতে বিচারপতি নিয়োগের কাজ আরও স্বচ্ছ ও দ্রুততর হবে। জনগণের মধ্যে বিচারপতি নিয়োগের স্বচ্ছতা সম্পর্কে ভিত্তিহীন ধারণা দূরীভূত হবে।আজ বুধবার এক বিদায়ী সংবর্ধনায় এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। মহান বিজয় দিবস, সাপ্তাহিক ছুটিসহ কাল বৃহস্পতিবার থেকে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরু হচ্ছে। এ হিসাবে আজ তাঁর বিচারিক জীবনের শেষ কার্যদিবস।
প্রথা অনুসারে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বিদায়ী প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা দিয়ে থাকে। প্রধান বিচারপতির ১ নম্বর এজলাসকক্ষে আজ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এতে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিচারকের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে দ্বিগুণ করা প্রয়োজন
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘এ কথা অনস্বীকার্য যে মামলার সংখ্যা বিবেচনায় আমাদের বিচারকের সংখ্যা অপ্রতুল। মামলাজট নিরসনে দেশের অধস্তন আদালত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত বিচারকের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে দ্বিগুণ করা প্রয়োজন। জেনে খুশি হয়েছি যে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগসংক্রান্ত আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকার কাজ শুরু করেছে।’
বিচার বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকার নিরন্তর কাজ করলেও অনেক জেলায় এখনো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল ও ভার্চ্যুয়াল কোর্ট যুগপৎভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করলে বিচার নিষ্পত্তি আরও দ্রুততর হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
বিচারব্যবস্থার শক্তির উৎস জনগণের আস্থাবিচারকদের উদ্দেশে বিদায়ী সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, একটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থার অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস হলো জনগণের আস্থা। এটি হলো বিচারকের সততা, সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতার প্রতি গণমানুষের অবিচল বিশ্বাস। সাধারণ মানুষের এ আস্থা অর্জনের জন্য বিচারকদের একদিকে যেমন উঁচু নৈতিক মূল্যবোধ ও চরিত্রের অধিকারী হতে হবে, তেমনি অন্যদিকে সদা বিকাশমান ও পরিবর্তনশীল আইন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও সামাজিক মূল্যবোধ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। এটি অর্জন কেবল নিয়মিত অধ্যয়ন, সময়মতো ও আইনানুগভাবে বিচারিক কাজ সম্পন্নের মাধ্যমে হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এ কথা অনস্বীকার্য যে বিপুলসংখ্যক মামলাজট আমাদের জন্য গ্রেট চ্যালেঞ্জ। মামলাজট হ্রাস ও মানুষের আস্থা ধরে রাখতে হলে বিচারকদের আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’
বিচারপ্রার্থীদের প্রতি গভীর মমত্ববোধসহ বিচারকার্য পরিচালনার জন্য সব স্তরের বিচারকদের অনুরোধ জানান সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।অনিয়মের বিরুদ্ধে বার ও বেঞ্চকে সোচ্চার থাকতে হবে
আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, একজন আইনজীবীর জীবন কখনোই মসৃণ নয়। বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে প্রয়োজন একাগ্র নিষ্ঠা, সময়ানুবর্তিতা, ধৈর্য, সততা, পরিশ্রম ও নিরন্তর অধ্যয়ন। প্রতিটি মামলা পরিচালনায় তাঁর শিক্ষা, মেধা ও বিচক্ষণতার প্রয়োগ হতে হবে। জেনেশুনে মামলার ঘটনার বিকৃত উপস্থাপনা করা একজন আইনজীবীর কখনোই উচিত নয়। সঠিক সাক্ষ্য-প্রমাণ ও আইনি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে আদালতকে সহায়তা করা তাঁদের মূল উদ্দেশ্য। আইন পেশার সুমহান মর্যাদা রক্ষা করতে সব অনিয়মের বিরুদ্ধে বার ও বেঞ্চকে সোচ্চার থাকতে হবে।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আইনজীবী ও বিচারকেরা হচ্ছেন একটি পাখির দুটি পাখার মতো। বাঁ হাত ও ডান হাতের মতো। তাঁদের পরস্পরের প্রতি আস্থার সম্পর্কে বিচারব্যবস্থার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে।’
সংবর্ধনার শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্যা বিদায়ী প্রধান বিচারপতির কর্মময় জীবন নিয়ে বক্তব্য দেন। এ সময় আইনজীবীদের উপস্থিতিতে এজলাসকক্ষ পরিপূর্ণ ছিল।জীবনবৃত্তান্ত
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সৈয়দ মুস্তফা আলী। মা বেগম কাওছার জাহান। তাঁর বাবা কুমিল্লা জেলা আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ছিলেন। তাঁর শ্বশুর আবদুল খালেক পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক।
বিএসসি ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ১৯৮১ সালে জেলা জজ আদালতে আইনজীবী হিসেবে পেশা শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি।
লন্ডন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ওরিয়েন্টাল আফ্রিকান স্টাডিজ এবং ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড লিগ্যাল স্টাডিজ থেকে ছয় মাসের ‘কমনওয়েলথ ইয়াং ল ইয়ার্স কোর্স’ করেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। এ দায়িত্ব পালনকালে ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই বছরের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান।
২০০৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হন।২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। পরদিন তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন।