ঢাকা ১১:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
সংবাদ শিরোনাম ::
Create lasting connections: join the interracial dating scene in dallas now HSV Singles Assessment February 2023: good or tricky relationship? – DatingScout Enjoying safe & secure bi curious dating experiences জলসুখায় চায়ের দোকানে সিনেমার, আড়ালে চলছে শিলং নামক খেলা ও মাদক, ইয়াবা মুর্তির মান্ডব ঘরে দেশীয় তৈরি মদ ব্যাবসা। নেই কোন প্রশাসনের তৎপরতা ফুলবাড়ী উপজেলার খাজাপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক ম্যানেজিং কমিটি বাতিলের দাবিতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ ও মানববন্ধন আউশ ধানের চাষ বেশি হওযায় চাল আমদানির প্রয়োজন হবেনা: খাদ্যমন্ত্রী চট্টগ্রামে প্রথমবারের মত শুরু কলেরার টিকা কার্যক্রমের চতুর্থ দিনে উপস্থিতির সংখ্যা বেড়েই চলছে কাশিমপুর প্রেসক্লাবের ৭ সাংবাদিকের পদত্যাগ হোমনায় ইয়াবা ট্যাবলেট সহ একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ পশ্চিম বাংলা র রাজ্যপালের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন ডায়মন্ডহারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে

বিজয়ের স্বাদ পূর্ণতা পেয়েছিল সেদিন বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

  • সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৯:২৩:৩২ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ১০ জানুয়ারি ২০২১
  • ২৩৪ ০.০০০০ বার পাঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

ওই মহামানব আসে, দিকে দিকে রোমাঞ্চ জাগে’ শিরোনামে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাক-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘আজ বহু প্রতীক্ষিত সেই শুভ দিন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির আস্থা ও ভালোবাসা, ত্যাগ-তিতিক্ষার স্বর্ণসিঁড়িতে হাঁটিয়া হাঁটিয়া স্বাধীন বাংলা ও বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুদীর্ঘ নয় মাস পরে আবার জননী বাংলার কোলে ফিরিয়া আসিতেছেন।’ ওইদিন সংবাদ-এর প্রধান শিরোনাম ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর অপেক্ষায় ঢাকা নগরী’। পূর্বদেশ, আজাদী থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব পত্রিকায় প্রধান প্রতিবেদনই ছিল বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা নিয়ে, বঙ্গবন্ধুর অবদান নিয়ে। পূর্বদেশ-এর প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে তখনকার পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়েছিল। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও তার পূর্ণ স্বাদ থেকে তখনও বঞ্চিত ছিল জাতি। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ পায়।

জাতির জনক পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি শেষ রাতে খ্রিস্টীয় পঞ্জিকার হিসাবে ৮ জানুয়ারি। সেদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়েছিল। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে। সকাল ১০টার পর থেকে তিনি কথা বলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন। ১০ তারিখ সকালেই তিনি নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ দেশটির সব মন্ত্রী, রাজনীতিক, তিন বাহিনীর প্রধান এবং সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জনক শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ভারতের সরকার ও জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে’।

বঙ্গবন্ধু ঢাকা এসে পৌঁছান ১০ জানুয়ারিই। বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিল জনগণ। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানায়। বিকাল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে ভাষণ দেন জাতির মহানায়ক। পরের দিন পত্রিকার পাতায় লেখা হয়, ‘স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামল তার দুচোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ বাতাস। জনগণ-মন-নন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তার ঐতিহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারব কি না। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন’।’

জাতির জনকের আগমনের দিনটি এখনো অনেকের মনে আনন্দের স্মৃতি হয়ে আছে। সেদিন বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন বরিশালের তখনকার তরুণ ছাত্রনেতা আ স ম ফিরোজ। ঐতিহাসিক সেই মুহূর্তগুলোর স্মৃতি স্মরণ করে জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আসলে সে দিনের ঘটনা আমার কাছে এখনো স্বপ্নের মতো। আমার কাঁধে হাত দিয়ে বঙ্গবন্ধু গাড়িতে উঠেছিলেন। তেজগাঁও বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করার পর খোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে জনসমুদ্রের ভেতর দিয়ে রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছাতে আড়াই ঘণ্টা লেগেছিল। ওই সময় আমি ওনার গাড়িতে ছিলাম। সে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আসলে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের পুনর্গঠন ও প্রশাসনিক কাঠামো তৈরির মাধ্যমে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বঙ্গবন্ধুর শারীরিক উপস্থিতি ছিল অনিবার্য। বাংলাদেশের জনগণ এদিনই প্রাণভরে বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করে। তাই ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হলেও প্রকৃতপক্ষে ১০ জানুয়ারি ছিল বাঙালির জন্য পরিপূর্ণভাবে স্বাধীনতা অর্জনের দিন। এ দিন বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রবেশ করে গণতন্ত্রের এক আলোকিত অভিযাত্রায়।’

আ স ম ফিরোজ আরো বলেন, “১০ জানুয়ারি সকাল থেকেই তেজগাঁও বিমানবন্দরগামী রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে সারিবদ্ধ মানুষ। বাংলাদেশ বেতার থেকে ধারা বিবরণী দেওয়া হচ্ছিল। বিমানবন্দর ও রাস্তার দুপাশে অপেক্ষমাণ জনতা। অন্যরকম উত্তেজনা সবার চোখে-মুখে। বাঙালির মহান নেতা আসছেন। লাখো মানুষের ভিড় রাজপথজুড়ে। কণ্ঠে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ। বঙ্গবন্ধু এলেন। যে দেশ এবং যে স্বাধীনতার জন্য জীবনবাজি রেখেছিলেন, সেই মাটিতে পা দিয়েই আবেগে কেঁদে ফেলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’

সেদিন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১৭ মিনিট ভাষণ দেন। সেটি ছিল জাতির জন্য দিকনির্দেশনা। বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তি কী হবে, রাষ্ট্র কাঠামো কী ধরনের হবে, পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে যারা দালালি ও সহযোগিতা করেছে তাদের কী হবে, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বহির্বিশ্বের প্রতি অনুরোধসহ সামগ্রিক দিকনির্দেশনা ছিল ভাষণে। রেসকোর্সে জনসমুদ্রে তিনি মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে শিশুর মতো কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকবি তুমি বলেছিলে ‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ কর নি।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তুমি দেখে যাও, তোমার আক্ষেপকে আমরা মোচন করেছি। তোমার কথা মিথ্যা প্রমাণিত করে আজ ৭ কোটি বাঙালি যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছে। হে বিশ্বকবি তুমি আজ জীবিত থাকলে বাঙালির বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে নতুন কবিতা সৃষ্টি করতে।’

ভাষণের এক পর্যায়ে মহানায়ক বলেন ‘আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছিল। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু এসে থাকে যদি আমি হাসতে হাসতে যাব। আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাব না। তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইব না এবং যাবার সময় বলে যাব, জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’

কর্মসূচি : বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আজ রবিবার সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে এবং সারা দেশে দলের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন; সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন; বিকাল সাড়ে ৩টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এবং সংগঠনের সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দিবসের সব কর্মসূচি স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে ও যথাযথ মর্যাদায় পালন করার জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আরো খবর.......
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

Create lasting connections: join the interracial dating scene in dallas now

বিজয়ের স্বাদ পূর্ণতা পেয়েছিল সেদিন বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

আপডেট টাইম : ০৯:২৩:৩২ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ১০ জানুয়ারি ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

ওই মহামানব আসে, দিকে দিকে রোমাঞ্চ জাগে’ শিরোনামে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাক-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘আজ বহু প্রতীক্ষিত সেই শুভ দিন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির আস্থা ও ভালোবাসা, ত্যাগ-তিতিক্ষার স্বর্ণসিঁড়িতে হাঁটিয়া হাঁটিয়া স্বাধীন বাংলা ও বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুদীর্ঘ নয় মাস পরে আবার জননী বাংলার কোলে ফিরিয়া আসিতেছেন।’ ওইদিন সংবাদ-এর প্রধান শিরোনাম ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর অপেক্ষায় ঢাকা নগরী’। পূর্বদেশ, আজাদী থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব পত্রিকায় প্রধান প্রতিবেদনই ছিল বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা নিয়ে, বঙ্গবন্ধুর অবদান নিয়ে। পূর্বদেশ-এর প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে তখনকার পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়েছিল। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও তার পূর্ণ স্বাদ থেকে তখনও বঞ্চিত ছিল জাতি। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ পায়।

জাতির জনক পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি শেষ রাতে খ্রিস্টীয় পঞ্জিকার হিসাবে ৮ জানুয়ারি। সেদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়েছিল। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে। সকাল ১০টার পর থেকে তিনি কথা বলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন। ১০ তারিখ সকালেই তিনি নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ দেশটির সব মন্ত্রী, রাজনীতিক, তিন বাহিনীর প্রধান এবং সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জনক শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ভারতের সরকার ও জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে’।

বঙ্গবন্ধু ঢাকা এসে পৌঁছান ১০ জানুয়ারিই। বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিল জনগণ। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানায়। বিকাল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে ভাষণ দেন জাতির মহানায়ক। পরের দিন পত্রিকার পাতায় লেখা হয়, ‘স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামল তার দুচোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ বাতাস। জনগণ-মন-নন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তার ঐতিহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারব কি না। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন’।’

জাতির জনকের আগমনের দিনটি এখনো অনেকের মনে আনন্দের স্মৃতি হয়ে আছে। সেদিন বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন বরিশালের তখনকার তরুণ ছাত্রনেতা আ স ম ফিরোজ। ঐতিহাসিক সেই মুহূর্তগুলোর স্মৃতি স্মরণ করে জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আসলে সে দিনের ঘটনা আমার কাছে এখনো স্বপ্নের মতো। আমার কাঁধে হাত দিয়ে বঙ্গবন্ধু গাড়িতে উঠেছিলেন। তেজগাঁও বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করার পর খোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে জনসমুদ্রের ভেতর দিয়ে রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছাতে আড়াই ঘণ্টা লেগেছিল। ওই সময় আমি ওনার গাড়িতে ছিলাম। সে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আসলে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের পুনর্গঠন ও প্রশাসনিক কাঠামো তৈরির মাধ্যমে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বঙ্গবন্ধুর শারীরিক উপস্থিতি ছিল অনিবার্য। বাংলাদেশের জনগণ এদিনই প্রাণভরে বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করে। তাই ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হলেও প্রকৃতপক্ষে ১০ জানুয়ারি ছিল বাঙালির জন্য পরিপূর্ণভাবে স্বাধীনতা অর্জনের দিন। এ দিন বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রবেশ করে গণতন্ত্রের এক আলোকিত অভিযাত্রায়।’

আ স ম ফিরোজ আরো বলেন, “১০ জানুয়ারি সকাল থেকেই তেজগাঁও বিমানবন্দরগামী রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে সারিবদ্ধ মানুষ। বাংলাদেশ বেতার থেকে ধারা বিবরণী দেওয়া হচ্ছিল। বিমানবন্দর ও রাস্তার দুপাশে অপেক্ষমাণ জনতা। অন্যরকম উত্তেজনা সবার চোখে-মুখে। বাঙালির মহান নেতা আসছেন। লাখো মানুষের ভিড় রাজপথজুড়ে। কণ্ঠে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ। বঙ্গবন্ধু এলেন। যে দেশ এবং যে স্বাধীনতার জন্য জীবনবাজি রেখেছিলেন, সেই মাটিতে পা দিয়েই আবেগে কেঁদে ফেলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’

সেদিন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১৭ মিনিট ভাষণ দেন। সেটি ছিল জাতির জন্য দিকনির্দেশনা। বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তি কী হবে, রাষ্ট্র কাঠামো কী ধরনের হবে, পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে যারা দালালি ও সহযোগিতা করেছে তাদের কী হবে, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বহির্বিশ্বের প্রতি অনুরোধসহ সামগ্রিক দিকনির্দেশনা ছিল ভাষণে। রেসকোর্সে জনসমুদ্রে তিনি মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে শিশুর মতো কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকবি তুমি বলেছিলে ‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ কর নি।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তুমি দেখে যাও, তোমার আক্ষেপকে আমরা মোচন করেছি। তোমার কথা মিথ্যা প্রমাণিত করে আজ ৭ কোটি বাঙালি যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছে। হে বিশ্বকবি তুমি আজ জীবিত থাকলে বাঙালির বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে নতুন কবিতা সৃষ্টি করতে।’

ভাষণের এক পর্যায়ে মহানায়ক বলেন ‘আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছিল। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু এসে থাকে যদি আমি হাসতে হাসতে যাব। আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাব না। তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইব না এবং যাবার সময় বলে যাব, জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’

কর্মসূচি : বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আজ রবিবার সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে এবং সারা দেশে দলের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন; সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন; বিকাল সাড়ে ৩টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এবং সংগঠনের সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দিবসের সব কর্মসূচি স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে ও যথাযথ মর্যাদায় পালন করার জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।