ঢাকা ০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::

মাস্টারমাইন্ডের ছাত্রী ধর্ষণের পর হত্যা তিন বন্ধুকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

  • সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৭:০৪:৫০ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ১০ জানুয়ারি ২০২১
  • ৩৬২ ০.০০০ বার পাঠক

সময়ের কন্ঠ রিপোর্টার।।

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মোমবাতি হাতে আলোর মিছিল। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আব্দুল গনি
Nogod

রাজধানীর কলাবাগানে ‘ও’ লেভেলের ছাত্রী আনুশকা নূর আমিনকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ধর্ষক ইফতেখার ফারদিন দিহানের সঙ্গে আটক তিন বন্ধুকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, বাদী মামলায় এক জনকে আসামি করায় এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে মামলার তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এদিকে, ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে নিহত শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির ২৭ নম্বরে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের সামনে মোমবাতি প্রজ্বাল করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। গতকাল সকালে আনুশকার দাফন তার কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে ভোরে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা। তারা হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। পরে তাকে দাদা-দাদির কবরের পাশে চিরশায়িত করা হয়। ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জয়পুরহাটের পাঁচুর মোড়ে জেলা ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

অন্যদিকে নিহত শিক্ষার্থীর বয়স বেশি দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার মা। কুষ্টিয়ায় লাশ দাফনের পর তার মা বলেন, “হাসপাতালে নেওয়ার পর দিহান আমার মেয়ের বয়স ‘১৯ বছর’ উল্লেখ করেছিল। পুলিশ সেটাই ধরে নিয়েছিল। পরে সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করা বয়স নিয়ে আমরা আপত্তি তুললে পুলিশ ক্ষুব্ধ হয়। ফলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মর্গে লাশ ফেলে রাখে এবং মেয়ের বয়সের প্রমাণপত্র দেখালেও পুলিশ তা আমলে নিচ্ছিল না। তার মেয়ের জন্মের পর ইস্যুকৃত টিকা কার্ড, স্কুল কার্ড এবং সর্বশেষ পাসপোর্টে তার মেয়ের জন্ম তারিখ ২০০৩ সালের ৯ অক্টোবর লেখা আছে। সে হিসেবে মৃত্যুর সময় বয়স হয় ১৭ বছর ৩ মাস। কিন্তু পুলিশ সুরতহাল রিপোর্টে ১৯ বছর বয়স কোথায় পেল?”

কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘হাসপাতালে নেওয়ার সময় তার বয়স উল্লেখ করা হয়েছিল ১৯ বছর। সুরতহাল রিপোর্ট করা হয় ওই বয়স ধরে। পরে নিহতের মা-বাবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মামলায় মেয়েটির বয়স ১৭ বছর উল্লেখ করা হয়। এর পরও বয়স নিশ্চিত হতে আমরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগকে অনুরোধ করেছি। মামলার তদন্তে এই বয়স মুখ্য বিষয় নয়। ধর্ষণের শিকার এবং পরবর্তীতে তার মৃত্যু এবং ঐ বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য ১৭ বছর বা ১৯ বছর বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে গ্রেফতারকৃতের সঙ্গে আরো কেউ জড়িত আছে কি না, সে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দিহানের তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মোবাইল ডিভাইসগুলো তদন্ত করা হচ্ছে।’

গতকাল পর্যন্ত কলাবাগানের লেকসার্কাসের ৬৩/৪, পান্থনিবাস-২ অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তা প্রহরী দুলাল হোসেন পলাতক রয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে দিহানের বাসায় ধর্ষণের ঘটনার পর দুলাল হোসেন পালিয়ে যান। পুলিশ বলছে, ঘটনার পর মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দোতলার ফ্ল্যাট থেকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে আনতে সহায়তা করেন দুলাল হোসেন।

এদিকে, লেকসার্কাস এলাকার বেশ কয়েক জন বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, ছোট বেলা থেকেই দিহান বখাটে ছিল। ১৩-১৪ বছর বয়স থেকেই সে এলাকায় মোটরবাইকার হিসেবে পরিচিতি পায়। লেকসার্কাস এলাকায় দিহান একটি গ্যাং গ্রুপ পরিচালনা করে। সে ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে ইডেক্সেল এ-লেভেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। যে গাড়িটিতে করে ঐ শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, সেটি তার বাবা ২০১৯ সালে তাকে কিনে দিয়েছেন।

জয়পুরহাটে মানববন্ধন

গতকাল শনিবার দুপুরে শহরের পাঁচুর মোড়ে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করে জেলা ছাত্র ইউনিয়ন। ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সভাপতি রিফাত আমিন রিয়নের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা সাধারণ সম্পাদক তাসরিন সুলতানা, সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল হোসেন, ছাত্র ফ্রন্টের জেলা সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রাশেদ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ধর্ষকদের শুধু গ্রেফতার করাই সমাধান নয়, গ্রেফতারের পরে তাদের দ্রুত ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে হবে।

আরো খবর.......

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রচন্ড খড়া রোদে ডিএমপি কমিশনারের স্বস্থির উদ্যোগ

মাস্টারমাইন্ডের ছাত্রী ধর্ষণের পর হত্যা তিন বন্ধুকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

আপডেট টাইম : ০৭:০৪:৫০ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ১০ জানুয়ারি ২০২১

সময়ের কন্ঠ রিপোর্টার।।

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মোমবাতি হাতে আলোর মিছিল। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আব্দুল গনি
Nogod

রাজধানীর কলাবাগানে ‘ও’ লেভেলের ছাত্রী আনুশকা নূর আমিনকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ধর্ষক ইফতেখার ফারদিন দিহানের সঙ্গে আটক তিন বন্ধুকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, বাদী মামলায় এক জনকে আসামি করায় এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে মামলার তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এদিকে, ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে নিহত শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির ২৭ নম্বরে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের সামনে মোমবাতি প্রজ্বাল করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। গতকাল সকালে আনুশকার দাফন তার কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে ভোরে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা। তারা হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। পরে তাকে দাদা-দাদির কবরের পাশে চিরশায়িত করা হয়। ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জয়পুরহাটের পাঁচুর মোড়ে জেলা ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

অন্যদিকে নিহত শিক্ষার্থীর বয়স বেশি দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার মা। কুষ্টিয়ায় লাশ দাফনের পর তার মা বলেন, “হাসপাতালে নেওয়ার পর দিহান আমার মেয়ের বয়স ‘১৯ বছর’ উল্লেখ করেছিল। পুলিশ সেটাই ধরে নিয়েছিল। পরে সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করা বয়স নিয়ে আমরা আপত্তি তুললে পুলিশ ক্ষুব্ধ হয়। ফলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মর্গে লাশ ফেলে রাখে এবং মেয়ের বয়সের প্রমাণপত্র দেখালেও পুলিশ তা আমলে নিচ্ছিল না। তার মেয়ের জন্মের পর ইস্যুকৃত টিকা কার্ড, স্কুল কার্ড এবং সর্বশেষ পাসপোর্টে তার মেয়ের জন্ম তারিখ ২০০৩ সালের ৯ অক্টোবর লেখা আছে। সে হিসেবে মৃত্যুর সময় বয়স হয় ১৭ বছর ৩ মাস। কিন্তু পুলিশ সুরতহাল রিপোর্টে ১৯ বছর বয়স কোথায় পেল?”

কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘হাসপাতালে নেওয়ার সময় তার বয়স উল্লেখ করা হয়েছিল ১৯ বছর। সুরতহাল রিপোর্ট করা হয় ওই বয়স ধরে। পরে নিহতের মা-বাবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মামলায় মেয়েটির বয়স ১৭ বছর উল্লেখ করা হয়। এর পরও বয়স নিশ্চিত হতে আমরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগকে অনুরোধ করেছি। মামলার তদন্তে এই বয়স মুখ্য বিষয় নয়। ধর্ষণের শিকার এবং পরবর্তীতে তার মৃত্যু এবং ঐ বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য ১৭ বছর বা ১৯ বছর বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে গ্রেফতারকৃতের সঙ্গে আরো কেউ জড়িত আছে কি না, সে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দিহানের তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মোবাইল ডিভাইসগুলো তদন্ত করা হচ্ছে।’

গতকাল পর্যন্ত কলাবাগানের লেকসার্কাসের ৬৩/৪, পান্থনিবাস-২ অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তা প্রহরী দুলাল হোসেন পলাতক রয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে দিহানের বাসায় ধর্ষণের ঘটনার পর দুলাল হোসেন পালিয়ে যান। পুলিশ বলছে, ঘটনার পর মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দোতলার ফ্ল্যাট থেকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে আনতে সহায়তা করেন দুলাল হোসেন।

এদিকে, লেকসার্কাস এলাকার বেশ কয়েক জন বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, ছোট বেলা থেকেই দিহান বখাটে ছিল। ১৩-১৪ বছর বয়স থেকেই সে এলাকায় মোটরবাইকার হিসেবে পরিচিতি পায়। লেকসার্কাস এলাকায় দিহান একটি গ্যাং গ্রুপ পরিচালনা করে। সে ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে ইডেক্সেল এ-লেভেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। যে গাড়িটিতে করে ঐ শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, সেটি তার বাবা ২০১৯ সালে তাকে কিনে দিয়েছেন।

জয়পুরহাটে মানববন্ধন

গতকাল শনিবার দুপুরে শহরের পাঁচুর মোড়ে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করে জেলা ছাত্র ইউনিয়ন। ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সভাপতি রিফাত আমিন রিয়নের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা সাধারণ সম্পাদক তাসরিন সুলতানা, সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল হোসেন, ছাত্র ফ্রন্টের জেলা সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রাশেদ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ধর্ষকদের শুধু গ্রেফতার করাই সমাধান নয়, গ্রেফতারের পরে তাদের দ্রুত ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে হবে।