করোনার থাবা: গত বছর রফতানি কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ
- আপডেট টাইম : ০৯:৩৭:০৯ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারি ২০২১
- / ৩০৮ ৫০০০.০ বার পাঠক
অর্থনীতি রিপোর্টার।।
করোনা ভাইরাসের আঘাতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া ২০২০ সালের শেষে এসেও একই রূপ দেখা গেল। এর ধাক্কায় ব্যাপকভাবে রফতানি কমতে শুরু করে গত মার্চ থেকে। মধ্যে কিছুটা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও শেষ দিকে ভাইরাসটির দ্বিতীয় ঢেউয়ের হানা রপ্তানিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয়নি। ফলে ২০২০ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরও শেষ হলো রফতানি কমার মধ্য দিয়েই।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সদ্য সমাপ্ত ২০২০ পঞ্জিকা বর্ষে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের রফতানি কমেছে ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে পণ্য রফতানি করেছে ৩ হাজার ৩৬০ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। এর আগের বছর ২০১৯ সালে রফতানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৯৩৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের। অর্থাৎ সদ্য সমাপ্ত বছরে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি কমেছে প্রায় ৫৭৩ কোটি ডলারের। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সূত্র জানিয়েছে, সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বরে রফতানি কমেছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। এছাড়া চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের হিসাব বলছে, এই সময়ে সার্বিকভাবে রফতানি কমেছে শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় দফা ধাক্কার ফলে ফের রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারও প্রত্যাশিত সময়ের চেয়ে পিছিয়ে যাবে। অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ইত্তেফককে বলেন, প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে শুরু করলে গত জুলাই থেকে রফতানিতে যে ইতিবাচক ধারা দেখা যাচ্ছিল, তাতে মনে হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া আগামী মার্চ থেকে দেখা যাবে। কিন্তু দ্বিতীয় দফার ঢেউ শুরু হওয়ার পর ফের কমতে শুরু করেছে। এর ফলে পুনরুদ্ধার বা ২০২০-এর আগের মতো পরিস্থিতি (স্বাভাবিক অর্থনৈতিক পরিবেশ) মার্চ থেকে আর সম্ভব হচ্ছে না। এটি চলতি বছরের শেষ নাগাদ চলে যাবে।
এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী মাসগুলো নিয়ে পরিষ্কার কিছু বলতে পারছেন না রফতানিকারকরাও। বাংলাদেশে রফতানি পণ্যের প্রায় ৮৩ শতাংশই তৈরি পোশাক। আবার আমাদের রফতানির প্রায় ৮০ শতাংশ যায় ইউরোপ ও আমেরিকার বড় বাজারগুলোতে। করোনার দ্বিতীয় প্রবাহে এই দুটি অঞ্চলের বেশকিছু দেশ ফের লকডাউনে চলে গেছে। ফলে কতদিনে পরিস্থিতির উন্নতি হয়, মানুষের কর্মচাঞ্চল্য তৈরি হয় এবং ফের পোশাকের চাহিদা বাড়ে—তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ইত্তেফাককে বলেন, বিদেশি ক্রেতারাও পরিস্থিতি দেখতে চাইছেন। এজন্য তাদের অনেকেই ক্রয়াদেশ নিয়ে আলোচনা পিছিয়ে দিচ্ছেন। এর ফল দেখা গেল ডিসেম্বরের রফতানির পরিসংখ্যানে।
অবশ্য বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা এতটা হতাশ হতে রাজি নন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি পোশাক আমদানিকারক ব্র্যান্ডের ঢাকা অফিসের শীর্ষ পর্যায়ের একজন প্রতিনিধি ইত্তেফাককে বলেন, বিশ্বব্যাপী চাহিদা কিছুটা কমতির দিকে। ফলে বাংলাদেশের বাইরে অন্যান্য দেশ থেকেও পোশাক আমদানি কমছে। তবে অন্য অনেক দেশের চেয়েও বাংলাদেশে রফতানি আদেশ অপেক্ষাকৃত বেশি। করোনায় মানুষের আয় কমে যাওয়া ও বেসিক পোশাক পণ্যের (ট্রাউজার, টি শার্ট বা পোলো শার্ট জাতীয় পোশাক) চাহিদা ছিল। এতে সুবিধা নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ দরাদরিতে এগিয়ে থাকতে হলে অবশ্যই উচ্চমূল্যের পোশাকে মনোযোগ বাড়াতে হবে।
ইপিবির সূত্র জানায়, ২০২০ সালের শেষ ছয় মাস গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশের প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের। ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে তৈরি পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬০২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। তৈরি পোশাক ছাড়াও গত ছয় মাসে রফতানি কমার তালিকায় রয়েছে হিমায়িদ খাদ্য ও মাছ ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্য ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ, বিশেষায়িত টেক্সটাইল ৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ ও সমুদ্রগামী জাহাজ ৫৯ শতাংশ। গত ছয় মাসে রফতানিতে সবচেয়ে ভালো করেছে পাট ও পাটজাত পণ্য। আলোচ্য সময়ে এ পণ্য রফতানি বেড়েছে প্রায় ৩১ শতাংশ। এছাড়া আলোচ্য সময়ে রফতানি বাড়ার তালিকায় রয়েছে কৃষিজাত পণ্য, কেমিকেল পণ্য, হস্তশিল্প পণ্য, হোম টেক্সটাইল ও অন্যান্য খাতের পণ্য।