বিক্রয় কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করতে আইন সংশোধন প্রয়োজন
- আপডেট টাইম : ০৫:২০:০৬ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারি ২০২১
- / ৪৫৯ ৫০০০.০ বার পাঠক
সময়ের কন্ঠ রিপোর্টার।।
তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় এবং বিক্রয় কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্যের খুচরা বিক্রয় নিষিদ্ধ করতে আইন সংশোধন জরুরি।
৪ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টর আয়োজিত ’তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন সর্ম্পকিত জরিপের ফলাফল প্রকাশ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল এক আলোচনা সভায় এ দাবী জানান বক্তারা।
তামাকজাতদ্রব্যের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে তামাক কোম্পানীগুলো যে সকল কৌশলসমূহ অবলম্বন করছে সে সক্রান্ত ‘বিগ টোব্যাকো টাইনি টার্গেট বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি জরিপ পরিচালনা করে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন। সহযোগিতায় ছিল ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্।
জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহকারী পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, জরিপ অনুযায়ী বিদ্যালয় ও খেলার মাঠের ১০০ গজের মধ্যে ৯০% বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় হয় এবং ৮২% বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য শিশুদের দৃষ্টি সীমানার মধ্যে প্রদর্শিত হয়। ৬৪% বিক্রয়কেন্দ্রে চকলেট, ক্যান্ডি, খেলনা, মিষ্টি বা অন্যান্য সামগ্রীর পাশে/সাথে তামাকজাত দ্র্রব্যের প্রদর্শন দেখা যায়।
অন্যদিকে, তামাকবিরোধী সংস্থা এসিডি ও বিটা কর্তৃক পরিচালিত দেশের অন্যতম ০৩টি প্রধান শহরে (চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও রংপুর) জরিপেও ৮৪% পয়েন্ট অব সেলে তামাকজাত দ্র্রব্যের প্রদর্শন দেখা গিয়েছে। যার মধ্যে রংপুরে (৯২%), চট্টগ্রামে (৮৬%) এবং রাজশাহীতে (৭৩%)। এই দ্রব্যগুলো এমনভাবে প্রদর্শিত হয় বিক্রয়কেন্দ্রের সামনের দিকে সোকেজের ভিতরে বা উপরে অন্যান্য আকর্ষনীয়ও দ্রব্যের সাথে বা পাশে স্তরে স্তরে সাজানো থাকে। আর তামাকজাত দ্রব্যের এধরনের প্রদর্শন শিশু-কিশোরদের তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি আকৃষ্ট করছে প্রতিনিয়ত
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন ও পরবর্তীতে এর যথাযথ সংশোধন করে সরকার। বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ আবারো আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এক্ষেত্রে এ ধরনের জরিপের ফলাফল আইন সংশোধনে সহযোগিতা করবে। যদি সকলের সমান ইচ্ছ শক্তি ও সহযোগিতা থাকে তাহলে ২০৪০ সালের পূর্বেই আমরা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব।
বিশেষ অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম বলেন কোনো আইন যখন প্রণয়ন করা হয় তখন আইনে অনেক বিষয় বলা থাকে এবং অনেক বিষয় বলা থাকে না কিন্ত ঊহ্য থাকে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনেও তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শনের বিষয় সরাসরি উল্লেখ না থাকায় তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শিত হচ্ছে। সুতরাং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল আইন সংশোধনের সময় এই বিষয়টি লক্ষ্য রাখবে।
এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধূরী ও বাংলাদেশ ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশনের,প্রাক্তন চেয়ারম্যান, মো. মোস্তফিজুর রহমান। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন হেল্থ ও ওয়াস সেক্টর এর পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব, রেজাউল করিম সরকার রবিন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ইপিডিমিলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধূরী ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্সের কর্মসূচী কর্মকর্তা আতাউর রহমান মাসুদ, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কায্যুম তালুকদার, বাংলাদেশ গ্রোসারি বিজনেস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন খান, বাংলাদেশ ফ্রি ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন ও ইব্রাহিম খলিল, চেয়ারম্যান, ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সহ অন্যান খুচরা বিক্রেতা এসোসিয়েশন, তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ ও সাংবাদিকগণ। বক্তারা বলেন বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন, খুচরা বিক্রয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় ইত্যাদি বিষয়ে ষ্পষ্টভাবে কিছু বলা নেই। আর আইনের এই দূবলতার সুযোগ নিচ্ছে তামাক কোম্পানীগুলো এবং চালিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রপাগান্ডা। যেহেতু স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল আইনটি সংশোধনের কাজ শুরু করেছেন সেক্ষেত্রে আজকের আলোচ্য বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার জনস্বাস্থ্যের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এফসিটিসির আলোকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ প্রণয়ন করে। ২০১৩ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। এছাড়াও ২০১৬ সালে “সাউথ এশিয়ান স্পীকার্স সামিট”-এর সমাপনি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন।