ঢাকা ০৬:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
নাহিদসহ তিন জন সমন্বয়ককে হাসপাতাল থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে আহতদের দেখতে ঢামেক হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কার সিলেট: ১৮-২৩ জুলাইয়ের ঘটনাপ্রবাহ রক্তাক্ত জুলাই থেকে কি কোনো শিক্ষা হবে? সব দল নিয়ে জাতীয় ঐক্যের মাঠে নামছেন বিএনপি শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে দেশের মানুষ: নৌবাহিনী প্রধান মেট্রোরেল স্টেশনের ধ্বংসলীলা দেখে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী রুশ এমআই-২৮ সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত মস্কোর দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত কালুগা অঞ্চলে আজ বৃহস্পতিবার হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয় কে হামলা চালাবে—বিএনপির নীল নকশা আগেই প্রস্তুত ছিল: কাদের

ফেসবুকে দেখে রিকশাচালক মুক্তিযোদ্ধার সহায়তায় শামীম ওসমানপুত্র

  • আপডেট টাইম : ০৪:২২:৪২ অপরাহ্ণ, রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ১৮৬ ৫০০.০০০ বার পাঠক

রফিকুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ।।

বয়সের ভারে ন্যুব্জ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরশ চন্দ্র দে ভাবতেই পারেননি রোববারের দুপুরটি তার জন্য একটি বিস্ময়ের অপেক্ষা করছিল। প্রতিদিনের মতো রোববার সকালেও জীবিকার তাগিদে রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন তিনি।

নগরীর নিতাইগঞ্জ এলাকায় যাত্রী নামিয়ে ক্লান্ত পরশ চন্দ্র একটু ছায়ায় যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই কয়েকজন যুবক নতুন একটি অটোরিকশায় চড়ে এসে তার সামনে দাঁড়ান। সঙ্গে তার ছেলে কিংকর চন্দ্রও রয়েছে।

যুবকরা সালাম দিয়ে জানাল, তাকে ওই অটোরিকশায় বসে বাসার দিকে যেতে হবে। ঘটনার কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি। শেষতক জানতে পারলেন এই অটোরিকশাটি তার জন্যই নিয়ে এসেছেন যুবকরা।

একজন মুক্তিযোদ্ধার জীবিকার এই করুণ হাল দেখে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন অপর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ইমতিনান ওসমান। যিনি অয়ন ওসমান নামেই পরিচিত। যার দাদা প্রয়াত একেএম সামসুজ্জোহা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আর বাবা দেশের প্রভাবশালী এমপিদের একজন শামীম ওসমান।

এই অকস্মাৎ সৌজন্যে মুক্তিযোদ্ধা পরশ চন্দ্র দে ছিলেন অশ্রুসজল, বাকহীন। পরশ চন্দ্রের জীবনের বর্তমান পরিস্থিতি উঠে এসেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেটি দেখার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার জন্য অপেক্ষা করছিল এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগের নেতারা অয়ন ওসমানের দেওয়া সেই অটোরিকশাটি পৌঁছে দেন তাকে। এই অটোরিকশাটি ভাড়া দেবেন তিনি; যাতে আর রিকশা চালাতে না হয়।

জানা গেছে, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানী পরশ চন্দ্র দে। থাকেন নগরীর ১৮নং ওয়ার্ডের ভগবানগঞ্জ এলাকার একটি ঝুপড়ি ঘরে। একমাত্র ছেলে কিংকরকে (২০) অর্থের অভাবে লেখাপড়া করাতে পারেননি। কিংকর কাজ করেন একটি দোকানে। অভাবের সংসার, তাই বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই বীর মুক্তিযোদ্ধা জীবিকার তাগিদে এখনো রিকশা চালান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা পরশের ছেলে কিংকর জানান, আমার বাবা দেশ স্বাধীনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেন। তালিকায় নামের ভুল আসায় সরকারের দেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা পাননি তিনি। পরশ চন্দ্র দে’র স্থলে নাম আসে পরশ চন্দ্র দেব। সংশোধনের জন্য জমা দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে; যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমাদের সংসার অসচ্ছলভাবে চলতো। আমার বাবার কথা শুনে অয়ন ওসমান এভাবে এগিয়ে আসবেন ভাবতে পারিনি। এই অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে আমরা সচ্ছলভাবে চলতে পারব।

বীর মুক্তিযোদ্ধা পরশ চন্দ্র দে তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, আমার কষ্টের কথা শুনে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান আরেক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য এগিয়ে এসেছেন। অয়ন ওসমান এই প্রজন্মের ছেলে, আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এটার নামই স্বাধীনতা, এটার নামই বাংলাদেশ। এখন মনে হচ্ছে যুদ্ধ করা সার্থক হয়েছে। আমার মতো বহু অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন এ দেশে। সব জেলায় যদি এমন অয়ন ওসমান থাকতো তবে জাতীয় বীরেরা কষ্টে দিন কাটাতো না। আমি অয়ন ওসমানকে ধন্যবাদ জানাই এবং তার পরিবারের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

অটোরিকশার কাগজপত্র ও চাবি তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন- মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসমাইল রাফেল, যুবলীগ নেতা আহাম্মেদ কাউছার, তোলারাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান প্রমুখ।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ফেসবুকে দেখে রিকশাচালক মুক্তিযোদ্ধার সহায়তায় শামীম ওসমানপুত্র

আপডেট টাইম : ০৪:২২:৪২ অপরাহ্ণ, রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

রফিকুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ।।

বয়সের ভারে ন্যুব্জ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরশ চন্দ্র দে ভাবতেই পারেননি রোববারের দুপুরটি তার জন্য একটি বিস্ময়ের অপেক্ষা করছিল। প্রতিদিনের মতো রোববার সকালেও জীবিকার তাগিদে রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন তিনি।

নগরীর নিতাইগঞ্জ এলাকায় যাত্রী নামিয়ে ক্লান্ত পরশ চন্দ্র একটু ছায়ায় যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই কয়েকজন যুবক নতুন একটি অটোরিকশায় চড়ে এসে তার সামনে দাঁড়ান। সঙ্গে তার ছেলে কিংকর চন্দ্রও রয়েছে।

যুবকরা সালাম দিয়ে জানাল, তাকে ওই অটোরিকশায় বসে বাসার দিকে যেতে হবে। ঘটনার কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি। শেষতক জানতে পারলেন এই অটোরিকশাটি তার জন্যই নিয়ে এসেছেন যুবকরা।

একজন মুক্তিযোদ্ধার জীবিকার এই করুণ হাল দেখে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন অপর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ইমতিনান ওসমান। যিনি অয়ন ওসমান নামেই পরিচিত। যার দাদা প্রয়াত একেএম সামসুজ্জোহা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আর বাবা দেশের প্রভাবশালী এমপিদের একজন শামীম ওসমান।

এই অকস্মাৎ সৌজন্যে মুক্তিযোদ্ধা পরশ চন্দ্র দে ছিলেন অশ্রুসজল, বাকহীন। পরশ চন্দ্রের জীবনের বর্তমান পরিস্থিতি উঠে এসেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেটি দেখার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার জন্য অপেক্ষা করছিল এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগের নেতারা অয়ন ওসমানের দেওয়া সেই অটোরিকশাটি পৌঁছে দেন তাকে। এই অটোরিকশাটি ভাড়া দেবেন তিনি; যাতে আর রিকশা চালাতে না হয়।

জানা গেছে, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানী পরশ চন্দ্র দে। থাকেন নগরীর ১৮নং ওয়ার্ডের ভগবানগঞ্জ এলাকার একটি ঝুপড়ি ঘরে। একমাত্র ছেলে কিংকরকে (২০) অর্থের অভাবে লেখাপড়া করাতে পারেননি। কিংকর কাজ করেন একটি দোকানে। অভাবের সংসার, তাই বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই বীর মুক্তিযোদ্ধা জীবিকার তাগিদে এখনো রিকশা চালান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা পরশের ছেলে কিংকর জানান, আমার বাবা দেশ স্বাধীনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেন। তালিকায় নামের ভুল আসায় সরকারের দেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা পাননি তিনি। পরশ চন্দ্র দে’র স্থলে নাম আসে পরশ চন্দ্র দেব। সংশোধনের জন্য জমা দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে; যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমাদের সংসার অসচ্ছলভাবে চলতো। আমার বাবার কথা শুনে অয়ন ওসমান এভাবে এগিয়ে আসবেন ভাবতে পারিনি। এই অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে আমরা সচ্ছলভাবে চলতে পারব।

বীর মুক্তিযোদ্ধা পরশ চন্দ্র দে তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, আমার কষ্টের কথা শুনে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান আরেক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য এগিয়ে এসেছেন। অয়ন ওসমান এই প্রজন্মের ছেলে, আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এটার নামই স্বাধীনতা, এটার নামই বাংলাদেশ। এখন মনে হচ্ছে যুদ্ধ করা সার্থক হয়েছে। আমার মতো বহু অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন এ দেশে। সব জেলায় যদি এমন অয়ন ওসমান থাকতো তবে জাতীয় বীরেরা কষ্টে দিন কাটাতো না। আমি অয়ন ওসমানকে ধন্যবাদ জানাই এবং তার পরিবারের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

অটোরিকশার কাগজপত্র ও চাবি তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন- মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসমাইল রাফেল, যুবলীগ নেতা আহাম্মেদ কাউছার, তোলারাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান প্রমুখ।