জয়যাত্রায় আড়াই বছর কাজ করেছি, মাসে দিয়েছি ৩ হাজার আমার নিয়োগপত্র আছে, আমি প্রায় আড়াই বছরের মতো ছিলাম।
- আপডেট টাইম : ০৫:০৭:২৮ অপরাহ্ণ, রবিবার, ১ আগস্ট ২০২১
- / ৪০০ ৫০০০.০ বার পাঠক
সময়ের কন্ঠ রিপোর্ট।।
আমাদের ৩ মাস পর্যন্ত পরীক্ষামূলক কাজ করলে ওয়েজবোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী ভালো একটা বেতন দেবে বলেছে। আড়াই বছর কাজ করে মাসে ৩ হাজার টাকা করে দিয়ে আসছি ও উপজেলা প্রতিনিধিরা ২ হাজার টাকা করে দিয়ে আসছে।
আলোচিত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরের আইপি টিভি জয়যাত্রা এক অদ্ভুত নিয়মে চলত। জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে তাদের বেতন তো দিতই না, উল্টো প্রতি মাসে তাদেরকেই টাকা পাঠাতে হতো অফিসে।
নিয়োগের সময়ও দিতে হতো জামানতের টাকা। আর নানা সময় নানা ত্রাণ বিতরণ, প্রতিনিধি সম্মেলন, পিকনিকসহ নানা কথা বলে নেয়া হতো টাকা।
ভোলায় জেলা প্রতিনিধি হিসেবে ২০১৮ সালে নিয়োগ পান তুহিন খন্দকার। কয়েক মাস আগে তিনি অফিসে ফোন করে জামানতের টাকা ফেরত চান। সেই ফোনালাপ ফাঁসের পর বিষয়টি সামনে আসে।
তুহিনের ফাঁস হওয়া ফোনালাপ থেকে জানা যায়, প্রতিনিধিরা লাইভ করবেন, তাদের পাঠানো সংবাদ প্রচার হবে, এই শর্তে টাকা নেয়া হতো। তিনি এক মাসে টাকা না দেয়ার পর তাকে লাইভ করতে দেয়া হয়নি। গ্রুপের ফেসবুক পেজ থেকেও রিমুভ করা হয়েছে।
তুহিন বলেন, ‘জেলা প্রতিনিধির কাছ থেকে ৩ হাজার ও উপজেলা প্রতিনিধির কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে নিত। সব উপজেলায় না নিলেও জেলাগুলোতে প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে টাকা নিত।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে জয়যাত্রা প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে তাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নিয়েছে। জেলা প্রতিনিধি যার কাছ থেকে যা পেত তাই নিত।’
জয়যাত্রা টিভি থেকে তুহিনকে দেয়া নিয়োগপত্র
তুহিন বলেন, ‘আমার কাছ থেকে একবার ২০ হাজার ও পরে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। ওদের ডিমান্ট ছিল ১ লাখ ও ৫০ হাজার টাকা।’
কী জন্য টাকা নিত- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যে আমাদের ক্যামেরা দেয়ার কথা বলে জামানতের টাকা নিত। যেহেতু ক্যামেরা দেবে, সে জন্য আমরা টাকা দিয়েছি।
‘পরে দেখা যাচ্ছে প্রতিনিধি সম্মেলনের কথা বলে ৫ হাজার টাকা করে নিয়েছে। এ ছাড়াও পিকনিকসহ একেক সময় একেক অজুহাতে টাকা নিত।
‘জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের কথা বলে হেলেনা জাহাঙ্গীর বিভিন্ন দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় ত্রাণ দেয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে নিয়েছে।’
এই টাকার জন্য প্রতিনিধি কো-অর্ডিনেটর ছানাউল্লাহ নূরী চাপ দিতেন বলে জানিয়েছেন আইপি টিভির একসময়ের ভোলা প্রতিনিধি। বলেন, ‘হাজেরা নামের একজন আমাদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকাগুলো কালেকশন করত।’
তিনি বলেন, ‘আমার নিয়োগপত্র আছে, আমি প্রায় আড়াই বছরের মতো ছিলাম। আমাদের ৩ মাস পর্যন্ত পরীক্ষামূলক কাজ করলে ওয়েজবোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী ভালো একটা বেতন দেবে বলছে।
‘আড়াই বছর কাজ করে মাসে ৩ হাজার টাকা করে দিয়ে আসছি এবং উপজেলা প্রতিনিধিরা ২ হাজার টাকা করে দিয়ে আসছে।’
আবুল খায়ের নামে একজন জানান, তিনি উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পেতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু জয়যাত্রা টাকা চাওয়ার পর আর আগাননি।
তিনি বলেন, ‘আমার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা চেয়েছে। পরবর্তী সময়ে ১০ হাজার টাকা মাইনাস করে ১৫ হাজার টাকা চেয়েছে।
‘আমি জিজ্ঞাসা করলাম যে আমাদের প্রতি মাসে সম্মানী ভাতা হিসেবে কী দেবে। তারা বলেছে, উপজেলা প্রতিনিধিদের সম্মানী ভাতা দেয় না। পরে আমি আর তাদের সঙ্গে আগ্রহী হলাম না।’
তিনি বলেন, ‘তাদের এই প্রক্রিয়াকে আমি নৈতিকভাবে সমর্থন করি না। আমি কাজ করব টিভিতে। আমাকে মাসিক সম্মানী ভাতা দেবে না। তাই তাদের সঙ্গে একমত হইনি।’
জয়যাত্রায় অভিযান চালানো ম্যাজিস্ট্রেটও বলেছেন একই কথা
হেলেনা জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তার হওয়ার পর মিরপুর ১১ নম্বরের ৩ নম্বর সড়কের ১৪ নম্বর বাড়ির জয়যাত্রা টেলিভিশনের অফিসে তল্লাশি অভিযান শুরু করে র্যাব।
ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির শাহ জানান, জয়যাত্রা টেলিভিশনের কোনো বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘অভিযোগ রয়েছে, জয়যাত্রা টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশে এবং দেশের বাইরে প্রতিনিধি নিয়োগের নামে অর্থ আদায় করে নিয়েছেন হেলেনা জাহাঙ্গীর।
এসব বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি।’