প্রতারকদের বেড়াজালে প্রবাসীরা নিঃস্ব
- আপডেট টাইম : ০৬:২১:১৬ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ২৫ জুলাই ২০২১
- / ১৪৫৪ ৫০০০.০ বার পাঠক
মো আলম সরকার, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি।।
কখনো কি শুনেছেন টাকা পাল্লায় ওজন হয়? কতো টাকা হলে পাল্লায় ওজন করা যায়?
এইতো কিছুদিন আগে এইতো ৮/৯ মাস আগে যারা রিক্সা চালাতো, বাদাম বিক্রি করতো, মাছ বিক্রি করতো,পাড়ায় মহল্লায় হকারি করতো চুল তুলে বেড়াতো, দিন মজুরের কাজ করতো, তারা এখন বিভিন্ন ব্যান্ডের বাইক ও মোবাইল ব্যবহার করেন, তারা ব্যবহার করে বিদেশী সাবান পারফিউম ।
তাদের টাকার পরিমাণ এতোটাই হয়েছে যে তারা একে অপরের সাথে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে যে কার টাকার পরিমাণ কতো? তারা টাকা ওজন করে পাল্লায় দুই জনের টাকা পাল্লার দুপাশে রাখে দেখেন কার টাকার ওজন বেশি?তারা একটা বাইক ২/৩ মাসের বেশি ব্যবহার করেনা। গড়ে তুলছে রাজকীয় বাড়ি গাড়ি যা শিল্পপতিদেরকেও হার মানিয়েছেন। ৫০/৬০ বিঘে জমির মালিকরাও যেনো তাদের কাছে কিছুইনা। সকালের নাস্তা, মধ্যভোজ ও রাতের খাবার আসে নামিদামি হোটেল থেকে, এবং তারা হেয়ার কাটিং করে ঢাকার নামি দামি জেন্স পার্লারে, যাতায়াত করেন বিমানে।
সময়ের কন্ঠ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। মোঃ মতিয়ার (৪৫)
নীলফামারী, কিশোরগঞ্জ উপজেলার,নিতাই ইউনিয়নের, আঁকালি–বেচা টারী গ্রামের মৃত্যু: রহমানের ছেলে যাকে এলাকায় সবাই মতিয়ার গাইড কাটা নামে চিনেন জানেন। সে কিছুদিন আগেও পেশাদার পকেটেমার ছিলেন, সে এখন কোটিপতি গড়ে তুলছেন রাজকীয় বাড়ি,গাড়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কিনেছেন ও বন্ধক নিয়েছেন জায়গা জমি সে তার টাকা পাল্লায় ওজন করেন আর এক জনের সাথে বাজি ধরেন যে কার টাকার পরিমাণ বেশি, তার আয়ের উৎস কি? কোথায় পেলেন উনি এতো টাকা
প্রতি মাসে নামি দামি ব্যান্ডের বাইক পরিবর্তন করেন।
নীলফামারী সদর উপজেলার চাপড়া কাছারী গহের পাড়া গ্রামের, মোঃ আজিমের পুত্র,
মোঃ শরিফুল ইসলাম(১৬) দশম শ্রেণির ছাত্র, তার বাবা একজন হোটেলের কর্মচারী ২৫০/৩০০ টাকা তার বাবার প্রতিদিনের উপার্জন কোনো রকম তাদের সংসার চলতো কয়েকমাস আগেও, শরিফুল এখন ব্যবহার করেন নানা ব্যান্ডের বাইক ও মোবাইল ফোন, একটা বাইক ১/২ মাসের বেশি ব্যবহার করেন না, তার সকালের নাস্তা আসে নামকরা হোটেল আহার থেকে। আলাদিনের চেরাগের দৈত্যকেও হারমানিয়েছেন তিনি।
সুমন ইসলাম(১৯)নীলফামারী সদর উপজেলার চাপড়া ঢিং ঢিং পাড়া গ্রামের আতাবুল ইসলামের পুত্র, উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র। ব্যবহার করেন সুজুকি কোম্পানির বাইক যার মুল্য প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। সকাল হইতে রাত পর্যন্ত খাবার আসে সৈয়দপুরের নামি-দামি হোটেল থেকে। একজন দিনমজুরের সন্তান কি করে সম্ভব এই জীবন যাপন?
রিকতাজুল ইসলাম(১৪) নবম শ্রেণির ছাত্র, চাপড়া ঢিং ঢিং পাড়া গ্রামের নুর ইসলামের পুত্র তার জীবন যাপন ও তাদের মতোই। এ রকম হাজারো যুবক রয়েছে ওই সব এলাকায়। যাদের রয়েছে আলিসান বাড়ি গাড়ি ব্যাংক ব্যালেন্স, কিনেছে জায়গা জমি একজন ছাত্র জীবনে যদি এতো কিছু করতে পারে? তাহলে কর্মজীবনে আরও কি করতে পারে?
নীলফামারীর সদর উপজেলার চাপড়া সরমজানী ইউনিয়নে,ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের আরও অনেক প্রতারকের নাম আমাদের প্রতিবেদকের হাতে এসেছে যা লিখতে গেলে কলমের কালি ফুরিয়ে যাবে তবুও লেখা শেষ হবেনা।
মোঃ বিপুল ওরফে(ভেলসা)নীলফামারীর সদর উপজেলার চাপড়া সরমজানী ইউনিয়নের চাপড়া কাছারী আদর্শপাড়া গ্রামের মোঃ ছোবেদুলের ছেলে,যে তিন মাস আগেও ভ্যান চালাতেন এখন ব্যবহার করছেন নামি-দামি মোবাইল, বাইক, চুল কাটাতে যান ঢাকার জেন্স পার্লারে যাতায়াত করেন বিমানে।
লিটন(৩২) নীলফামারী সদর উপজেলার চাপড়া সরমজানী ঢিং ঢিং পাড়া গ্রামের, আতাবুল ইসলামের পুত্র, কয়েক মাস আগেও পাড়ায় মহল্লায় মহিলাদের চুল তুলে বেড়াতো এখন সে কয়েক লক্ষ টাকার মালিক, ব্যবহার করছেন নামি-দামি সুগন্ধি-সাবান, বিভিন্ন ব্যান্ডের বাইক বাড়ী ইত্যাদি।
মাসুদ,আনাম,সজল,আতোয়ার,
সোহেল এরকম হাজার খানেক যুবক রয়েছে যারা রাতারাতি কোটিপতি হয়েছেন, এই প্রতারক চক্র বেশিরভাগই নীলফামারী সদর উপজেলার চাপড়া সরমজানীর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের।
থাইল্যান্ডের বহুল আলোচিত একটি লটারি। যা থাইল্যান্ড থেকে ছড়িয়ে সৌদি, কুয়েত, কাতার, বাহারাইন ইত্যাদি ও মালাশিয়ার বহুল আলোচিত লটারি মেঘনাম, টোটো, রাজধানী, ড্রাগন,কোটা, ও আরও বেশ কিছু,বিভিন্ন দেশ থেকে সারাসরি অংশগ্রহণ করা যায়। এবং অনলাইনে আরো অনেক দেশ থেকে অংশ গ্রহণ করা সম্ভব। এই দেশগুলোতে এই লটারিকে একনামে সবাই চিনে জানে। যা থাই গেম বা থাই লটারি নামে পরিচিত। মালাশিয়ার মেঘনাম, টোটো, রাজধানী ইত্যাদি এই গেমে অংশ গ্রহণ করতে হলে একটা ফাঁকা টোকেন নিদিষ্ট কিছু সংখ্যা বসিয়ে থাই অনুমোদিত সদস্য (ডিলার) কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। আর এটা সংগ্রহ করতে ডিলারের কাছে কিছু টাকা প্রদান করতে হয় (যার যত ইচ্ছা)। এই লটারি দুই ভাবে ড্র হয়ে থাকে। একটি ৩ সংখ্য অন্যটি ২ সংখ্যা। এই গেম মাসে দুইবার ড্র হয়ে থাকে। প্রতিমাসের ১ তারিখ এবং ১৬ তারিখে। আর মালোশিয়ার টোটো, মেঘনাম, রাজধানী সপ্তাহে দুই তিন দিন ড্র হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ থেকে সরাসরি এই গেমে অংশ গ্রহণ করা সম্ভব না। তবুও বাংলাদেশের মানুষ এই গেম খেলে কিন্তু কিভাবে…?
এখন বাংলাদেশের কিছু মানুষ ওই যে টোকন এর নাম্বার দেয়ার কথা বলে প্রবাসীদের কাছে থেকে বিপুল পরিমানে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কেউ যদি এই নাম্বার নিতে চাইতেছে না বা বিশ্বাস করতেছে না তাদের কে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করা হচ্ছে।অনেকে নিজেদের বাড়িতে বানিয়েছেন থাইল্যান্ড, মালোশিয়ার লটারির অফিস যা দেখে প্রবাসীরা বিশ্বাস করতে বাধ্য যে তারা অফিসিয়াল স্টাফ। বলা হইতেছে তাদের পরিচিত থাই অফিসে জব করে। তারা নিজেরা প্রবাসী বলে দাবি করে। বিভিন্ন ভাবে ধর্মের দোহাই দিয়ে আসছে।আল্লাহ কসম, বাবা, মায়ের কসম কাটতাছে। জীবিত বাবা,মাকে মৃত ঘোষণা তাদের সাথে প্রতারণা করতেছে। এখন তারা এমন একপর্যায়ে চলে গেছে পবিত্র কুরআন শরীফ এর উপর সেই কাগজ রেখে ভিডিও করে তাদের কে দেখাইতেছে।
তারা এগুলা দেখে বিশ্বাস করে নিজের উপার্জিত টাকা তুলে দিচ্ছে প্রতারকদের হাতে। এতে প্রবাসীদের পারিবারিক সমস্যা সম্মুখিন হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রবাসীরা এইদেশ গুলোতে টাকা উপার্জন করতে গেছে। বাবা, মা, বউ,বাচ্চাকে দুই বেলা ভাত খাওয়াবে বলে।
অনেকে এই দেনার দায়ে বেছে নিচ্ছে মৃত্যুর পথ। আর এই প্রবাসীদের লক্ষ লক্ষ টাকার স্বপ্ন দেখিয়ে নিঃশ্ব করে দিচ্ছে। প্রবাসীদের দুই ভাবে টাকা ব্যায় করতে হয় এই প্রতারণায়। প্রথমত এই প্রতারকরা তিন সংখ্যার নাম্বার দেয়ার কথা বলে অনেক বেশি টাকা হাতিয়ে নেয় আর ২য় হচ্ছে টোকেন সংগ্রহ করতে ব্যায় করতে হয়। তাদের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় কেউ যদি বাংলাদেশ টাকায় ৫০০০/১০০০০ টাকা দিয়ে টোকেন সংগ্রহ করে সে পাবে ২০ লক্ষ হইতে ৫০ লক্ষ টাকা।সেই স্বপ্ন পূরনে তাদের হাতে তুলেদেয় তাদের অর্জিত সম্পদ। বিনিময়ে তারা পায় ধোকা। এই রকম প্রতিদিন প্রতারণা শিক্ষার হচ্ছে হাজার হাজার প্রবাসী।
বাংলাদেশ সরকার তাদের নাম দিয়েছে তারা আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তারা যদি এভাবে প্রতিনিয়ত প্রতারকদের খপ্পরে পরে। তাহলে মনে হয় না আমরা দেশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মানুষ গুলোকে বাচাতে পরবো।
এই প্রতারকদের রয়েছে একাধিক বিকাশ একাউন্ট ও একাধিক ব্যাংক একাউন্ট সে সব একাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকেন।প্রতারকদের স্ত্রী সন্তানের নামে রয়েছে ব্যাংক ব্যালেন্স এফডিআর। এই প্রতারকরা বিভিন্ন দেশের ভাষায় কথা বলে, এবং বিভিন্ন দেশের নাম্বার দিয়ে তাদের ইমু একাউন্ট ও হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্ট খুলেছে যা দেখে প্রবাসীদের বোকা বানানো হচ্ছে।
এই প্রতারকরা লাক্সারি জীবন যাপন করে, এই প্রতারকরা বেশির ভাগে ১৫ থেকে ৩০ বছরের বয়সি,নামি দামি সব ব্রান্ডের বাইক প্রতিমাসে তারা কয়েকটা পরিবর্তন করে।তাদের তিন বেলার খাবার আসে নামি–দামি কোন রেষ্টুরেন্ট থেকে তাদের হাতে শোভা পায় আপেলের ১১/১২ মতো বিশ্বসেরা ব্রান্ডের ফোন। তাদের ৭ দিনের পকেটে খরচ হলে একটা মধ্যেবিত্ত পরিবারের ২/৩ মাস অনায়াসে চলতে পারবে। শুধু তাই না তারা এই টাকার পিছনে ছুটতে গিয়ে তাদের পড়া লেখা উঠেছে তুঙ্গে। জরিয়ে পরেছে বিভিন্ন মাদক ও নেশার সাথে। এই প্রতারকদের মুল অস্ত্র হচ্ছে মোবাইল আর বিভিন্ন অ্যাপ। ফেসবুক আইডি খুলে লটারির অফিসিয়াল পেপার অবিকল নকল করে বিভিন্ন লটারি গ্রুপে এড করে যেমন লটারি গ্রুপ গুলোর নাম
১.থ্যাইল্যান্ড লটারি উইন টিপস
২. টোটো মেঘনাম 4D অল লটারি,
এই রকম অনেক গ্রুপ আছে সেখানে পোস্ট করে, ও পেজ আইডিতে পোস্ট করে বুস্ট করেন যা দূরত্ব ছড়িয়ে পড়ে প্রবাসীদের নজরে আসে। যা দিয়ে প্রবাসীদের বোকা বানানো হয়। তথ্য সুত্রে নীলফামারীর সদর উপজেলা সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুরের পারবতীপুর, রংপুরের তারাগঞ্জ, এইসব এলাকায় ব্যপক আকার ধারন করেছে।
এলাকার সচেতন মহল বলছে এভাবে চলতে থাকলে যুবসমাজ ধংস হয়ে যাবে।
জামালপুরের মিনা খান সময়ের কন্ঠ কে বলেন, জীবিকার তাগিদে ঢাকায় এসেছে ৪ মাস হলো এখনো কোনো চাকুরী পাননি বাড়িতে মায়ের কাছে রেখে এসেছেন আড়াই বছরের কন্যা সন্তান! স্বামী মালোশিয়া প্রবাসী ৩ বছর হলো স্বামী সংসারের খরচ দেয় না তাই সংসার ও সন্তানের খরচ যোগাতে নিজেই চলে আসছেন ঢাকায়! তার স্বামী এই থাই, মেঘনাম, টোটো, ড্রাগন রাজধানী এসব লটারি পাওয়ার আশায় প্রতারিত হয়ে আজ নিঃশ্ব সেখানে নাকি সে নিজেই অনেক টাকা ঋন করেছেন। ঈদ আসছে মিনা খান সন্তানের জন্য বাড়িতে যাবে কয়েক মাস হলো সন্তানের মুখ দেখেনি কিন্তু যাওয়ার ভাড়া টাকা নেই তার কাছে আমাদের প্রতিবেদকের সহযোগিতায় তার বাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
গাজীপুরের লিসা চৌধুরী নামে একজন প্রবাসীর স্ত্রী প্রতিবেদকের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, তার স্বামী ৫ বছর থেকে দুবাই থাকেন অনলাইনে এই লটারি পাওয়ার আশায় প্রতারকের পাল্লায় পড়ে আজকে উনি নিঃশ্ব স্ত্রী সন্তানের খরচ পর্যন্ত চালাতে ব্যর্থ।
মিনা ও লিসার মতো হাজার হাজার প্রবাসীর স্ত্রী সন্তানের খেয়ে না খেয়ে দূর দশায় দিন কাটাচ্ছেন ।
এলাকার সচেতন মহলের দাবি, নীলফামারী জেলা প্রশাসক, রংপুর জেলা প্রশাসক, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক এবং প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয়ের কাছে বিনীত অনুরোধ, বিভিন্ন গ্রুপ গুলো দেখে প্রতারকদের সনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিন। আপনারা পারেন এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বাঁচাতে। নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অফিসার ইনচার্জ) আঃ রউফ মুঠো ফোনে বলেন, এই সব বিষয় শুনেছি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ও তথ্য প্রমাণ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। চেষ্টায় আছি সঠিক তথ্য প্রমাণ ও অভিযোগ পেলে প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।
বিস্তারিত সময়ের কন্ঠ অনুসন্ধানের চোখ রাখুন