লকডাউন মানাতে প্রশাসন দিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায়।। বলছেন সাধারণ জনগণ
- আপডেট টাইম : ০৯:৩৮:১৪ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১
- / ২৬৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
- মাঠে সক্রিয় ভ্রাম্যমাণ আদালত
সময়ের কন্ঠ রিপোর্টার।।
সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর বিধি নিষেধের ৮ম দিনেও রাজধানীতে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন। সড়কগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি। আজ সকাল থেকে রাজধানীর প্রবেশ পথগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে তদারকি করেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। রাজধানীতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অপ্রয়োজনে বাইরে আসা ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের জরিমানা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সরকার ঘোষিত কঠোর ‘লকডাউনে’র ৮ম দিনে রাজধানীর সড়কগুলোতে জনসাধারণের বাড়তি চাপ দেখা গেছে। গত কয়েকদিনের তুলনায় সড়কে বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও রিকশা চলাচল। দেশে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের ৮ম দিনে রাস্তায় গাড়ি ও মানুষের চলাচল অন্যদিনের থেকে বেড়ে গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ভ্রাম্যমান আদালত, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ছাড়াও সার্বক্ষণিক টহলরত রয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। এরপরেও কোনোভাবেই মানুষের ঘর থেকে বের হওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না।
করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার নির্দেশিত বিধিনিষেধ অমান্য করে ‘লকডাউনে’র সপ্তম দিন বুধবার (৭ জুলাই) রাজধানীজুড়ে শুধুমাত্র পুলিশের হাতেই গ্রেফতার হন ১১০০ এর বেশি মানুষ। তারপরও অষ্টম দিনে এসে সড়কজুড়ে প্রায় একই পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
দেখা যাচ্ছে, ‘লকডাউনে’ সবকিছু বন্ধ থাকার কথা থাকলেও মানুষকে কোনোভাবেই আটকানো যাচ্ছে না। কোনো না কোনো অজুহাতে অনেকেই বাইরে বের হচ্ছেন। দেখা গেছে, একই সড়কের এক পাশে এক বাহিনীর চেকপোস্টে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়ে আরেক পাশে অন্য বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদ।
অফিসগামী একজন বলেন, প্রতিদিনই রেকর্ডসংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছেন। তারপরও বাধ্য হয়ে কাজ বাঁচাতে বাইরে বের হতেই হচ্ছে। ঘরে থাকতে গেলে চাকরি থাকবে না, চাকরি না থাকলে খাব কি? করোনার ভয় থাকলেও জীবনের তাগিদে বাইরে বের হতেই হচ্ছে।
রায়ের বাজার এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেত্বত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে দেখা গেছে। ওই সড়কেও গত কয়েকদিনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ি, মালবাহী গাড়ি, রিকশা ও পথচারীদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা গেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে।
এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি সড়কে সড়কে ট্রাফিক পুলিশের চেকপোস্টেও যানবাহন ও মোটরসাইকেল থামানো হচ্ছে। উপযুক্ত কারণ দেখাতে না পারলেও মামলাসহ জরিমানাও করা হচ্ছে।
কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে ছাড় দিচ্ছেন না প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কঠোর লকডাউনের ৮ম দিনে কড়া নজরদারি চলছে রাজধানীর বিভিন্ন চেকপোস্টে। ভ্রাম্যমাণ আদালত, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। কড়া নজরদারির মধ্যেও লোকজন বাইরে বেরিয়ে আসছে। লোকজনকে ঘরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। নানা অজুহাতে তারা ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন। বাইরে এসে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। তারপরও থেমে নেই ঘর থেকে বের হওয়া।
রাজধানীর রায়েরবাজার, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, পান্থপথ, বাংলামোটর, শাহবাগসহ বেশ কয়েকটি স্থানে দেখা যায় সকাল থেকেই বাড়তে থাকে প্রাইভেটকার, মাইক্রো ও রিক্সার চলাচল। কয়েকটি স্থানে কিছু সময়ের জন্য যানজটও দেখা যায়।
ছোট ছোট গলিগুলোতেও দেখা গেছে মানুষের আনাগোনা। কেউ কেউ দোকান অর্ধেক খুলে বিক্রি করছেন। এছাড়া হোটেলগুলোর সামনে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়।
দেখা গেছে, রাস্তায় আগের তুলনায় বেড়েছে মানুষের চলাচল। সেই সঙ্গে বিভিন্ন যান চলাচলও । সারাদেশের মত রাজধানীতে প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করছে। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি লক্ষ্য করা গেছে। সড়কে সড়কে সক্রিয় আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকবৃন্দ। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মামলা দায়ের ও জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।
লকডাউনের ৮ম দিনে রাজধানীতে রাস্তাঘাট চলাচল কমেনি। অধিকাংশ মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে আসছেন বিভিন্ন অজুহাতে। নিত্যপণ্যের দোকান ও বাজারে মানুষের ভিড় দেখা যায়। বিধিনিষেধ মানাতে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের টিমসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন প্রতিদিন।
বেলা ১২টায় রায়েরবাজার এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হতে দেখা যায়। কিন্তু পথে রিকশা-ব্যক্তিগত গাড়ি ও পথচারীর এতো চাপ রয়েছে, যেখানে সবাইকে চেকপোস্টে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বেগ পেতে হচ্ছে দায়িত্বরতদের। তারপরও সাধ্যমতো গাড়ি কিংবা রিকশা থামিয়ে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাচ্ছেন দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আশানুরূপ জবাব না পেলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
রায়েরবাজার এলাকায় দায়িত্বরত ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সংযুক্ত মো: আরিফুল ইসলাম জানান, সরকারী বিধিনিষেধ অমান্য করে দোকানপাট খোলা রাখাসহ বিভিন্ন অপরাধে ক্ষেত্রবিশেষে মামলা করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন জনকে জরিমানা করা হচ্ছে। অন্য দিনের থেকে আজ গাড়ির চাপ বেশি বলেও জানান তিনি।
কঠোর লকডাউনের মধ্যেও বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে মানুষ নানা অজুহাতে বাইরে চলাচল করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হলেও সরকারের বিধিনিষেধ মানছেন না অনেকেই। লকডাউন বাস্তবায়ন করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়নসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনসহ টহল অব্যাহত রেখেছে। এরপরও মানুষ ব্যাংকে কাজসহ নানা অজুহাতে বাইরে চলাচল করছেন। মাস্ক ব্যবহারেও দেখা যাচ্ছে নানা অনীহা। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও সড়ক মহাসড়কগুলোতে রিক্সা, প্রাইভেটকারের ছড়াছড়ি লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে পাড়া মহল্লা ও অলিগলির প্রায় সকল দোকানপাটই খোলা রয়েছে।
লকডাউন বাস্তবায়নে রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইড কাজ করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করোনা আক্রান্ত ও অন্য শ^াসকষ্ট রোগীদের বাসায় নাম মূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও কাউকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করছে। সেনাবাহিনী শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে। অকারণে রাস্তায় বের হওয়া মানুষকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি র্যাব, পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়ন বাহিনী জেলার বিভিন্ন স্থানে টহল দিচ্ছে। লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও সরকারী নির্দেশনা অমান্য করায় অর্থদণ্ড করছে সেই সাথে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।