শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে মানুষের ঢল ॥ উপেক্ষিত স্বাস্থবিধি
- আপডেট টাইম : ০৭:৩৪:৫০ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ২৮ জুন ২০২১
- / ২৪৯ ৫০০০.০ বার পাঠক
মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি।।।
তিন দিনের সীমিত লকডাউনের সুযোগে সোমবার সকাল থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে মানুষের ঢল নেমেছে। কোনো কিছুতেই থামছে না মানুষের স্রোত। একদিকে ঢাকা থেকে শিমুলিয়া এসে ফেরিতে পদ্মা নদী পার হয়ে বাংলাবাজার আসছে দক্ষিনাঞ্চলমুখী হাজার হাজার মানুষ। অন্যদিকে দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী মানুষ ছুটছে। করোনার মহামারীর ভ্রুক্ষেপ নেই কারো মধ্যে।
স্বাস্থবিধি একেবারে উপেক্ষিত অসচেতন মানুষের কাছে। করোনা সংক্রমন রোধে সরকার যখন কঠোর অবস্থানে, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী যখন লকডাউন বাস্তবায়নে হিমশিম খাচ্ছে, সাধারণ মানুষ তখন মনের আনন্দে স্বাস্থবিধি উপেক্ষা করে ইচ্ছে মতো ছুটছে গন্তব্যে। পথে পথে পুলিশের বেরিকেড ভেঙ্গে বা ডিঙ্গিয়ে বানের স্রোতের মতো মানুষ ছুটছে যে যার মতো। এতে করোনা সংক্রমন আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
১ জুলাই থেকে আসছে সারা দেশে ৭দিনের কঠোর লকডাউন। তাই কঠোর লকডাউনের আগে বাড়ি যেতে হবে। এ কারণে সাধারণ মানুষ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রবিবার সন্ধা পর্যন্ত বাংলাবাজার ফেরি ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক, প্রাইভেট গাড়ি ও মানুষের ভিড় ছিলো লক্ষনীয়। সকাল থেকে উভয়মুখী যাত্রী চাপ শুরু হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মানুষের চাপ। তবে যাত্রীর চেয়ে যানবাহনের চাপ কম রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে এবং যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আজ থেকে তিন দিনের সীমিত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার ১ জুলাই থেকে আসতে পারে সারা দেশে ৭দিনের সর্বাত্বক কঠোর লকডাউনের ঘোষণা। করোনা সংক্রমন নিয়ন্ত্রনে না এলে এ লকডাউনের সময় আরো বাড়তে পারে অথবা আরো কঠোর হতে পারে এমন আশঙ্কায় এবং কর্মস্থলে আটকে পড়ার ভয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা দিয়েছে সাধারণ মানুষ। অপ্রতিরোধ্য ছোটাছুটির পরিণতি যে আরো ভয়াবহ হতে পারে সেদিকে কারো খেয়াল নেই। তাই পথে পথে নানা বাধা উপেক্ষা করে স্বাস্থবিধির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মানুষ ছুটতে গন্তব্যে। সোমবার সকাল থেকেই শিমুলিয়া ঘাট হয়ে ফেরিতে গাদাগাদি করে হাজার হাজার মানুষ বাংলাবাজার ঘাটে এসে নামছে।
এই নৌপথে চলাচলরত প্রতিটি ফেরিতে উভয়মুখী যাত্রী চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। শিমুলিয়া থেকে দক্ষিনাঞ্চলগামী যাত্রী চাপ বেশি। শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরি দেখা গেছে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় ফেরিতে যাত্রীরা গাদাগাদি করে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। ফলে ঘাট এলাকা ও ফেরিতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। অনেককেই দেখা গেছে মাস্কবিহীন।
দূরপাল্লার এবং আভ্যন্তরীন রুটের যাত্রীবাহী যানবাহন বন্ধ থাকলেও বরিশাল, খুলনাসহ দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে মোটরসাইকেল, থ্রী হুইলার, ইজিবাইকসহ হালকা যানবাহনে ৩-৪ গুণ ভাড়া গুণে যাত্রীরা বাংলাবাজার ঘাটে পৌছে। অপরদিকে একই চিত্র ঢাকা থেকে দক্ষিনাঞ্চলগামী যাত্রীদের ক্ষেত্রেও। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা হালকা যানবাহনে ৩-৪ গুণ ভাড়া দিয়ে ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিয়ে আবারও ভোগান্তিতে পড়ছে ঘাটে। বাংলাবাজার থেকে ইজিবাইক, সিএনজি, মোটরসাইকেলে বরিশালে ৫‘শ থেকে ৬‘শ টাকা, গোপালগঞ্জ ৫‘শ টাকা, খুলনা ৭‘শ টাকা, মাদারীপুর ২‘শ টাকা, বাগেরহাট ৬৫০ টাকাসহ প্রতিটি যানবাহনেই কয়েকগুন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহাসড়ক ও আভ্যন্তরিন সড়কের বিভিন্ন স্থানে বেড়িকেড দিলেও বিভিন্ন অযুহাতে যাত্রীরা গন্তব্যে পৌছাচ্ছেন। পণ্যবাহী ট্রাকের সাথে সাথে অন্যান্য ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে। ঘাটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী তৎপর রয়েছে।
ঢাকা থেকে বরিশালগামী যাত্রী জয়নাল আবেদীন পদ্মা পার হয়ে বাংলাবাজার নেমে বলেন, ‘ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে খুব কষ্ট করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে এ পর্যন্ত এসেছি। বাবুগঞ্জ যেতে হবে তাই ইজিবাইক বা অন্য কোনো যানবাহন খোঁজ করছি। যেটা পাই তাতেই যাবো। না হলে বেশি ভাড়া দিয়ে মোটরসাইকেলে যেতে হবে। কারখানা বন্ধ, কাজ নেই, মালিক বেতন দিতে পারে না,তাই গ্রামে ফিরে যাচ্ছি।’
ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জগামী যাত্রী আয়েশা আক্তার বলেন, ‘কঠোর লকডাউনের আগেই বাড়ি যাচ্ছি। এই লকডাউন কতো দিন থাকবে বলা তো যায় না। আর তা ছাড়া সামনে কোরবানী তখন তো এমনিই বাড়ি যেতে হবে। তাই আগেভাগেই যাচ্ছি।’
বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ঘাটের ম্যানেজার সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফেরিতে উভয়মুখী যাত্রী চাপ রয়েছে। ৪টি র বেশি ফেরিসহ ১৬টি চালু থাকায় পারাপারে কোন সমস্যা হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা যাত্রীদের বলা হলেও বেশির ভাগ যাত্রীই তা মানছেন না। আর অনেকে তো মাস্কও ব্যবহার করছেন না। ফেরিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ফেরির মধ্যে গায়ে গা লাগিয়ে মানুষ পারাপার হচ্ছে।