সংবাদ শিরোনাম ::
দেশে খুন ও হামলার শিকারের তালিকায় ৪ নারী সাংবাদিক

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
- আপডেট টাইম : ১১:৩৯:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ মে ২০২১
- / ৭১০ ৫০০০.০ বার পাঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
যুগ যুগ বছর ধরে সারা বিশ্বে চলে আসছে সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও চলছে নির্যাতনের ঘটনা। গত এক যুগে বাংলাদেশে বহু সাংবাদিক নির্যাতনে ঘটনা ঘটেছে। তার ভিতর খুন ও হামলার শিকারের আলোচিত-বহুল আলোচিত’র তালিকায় রয়েছে ৪ (চার) নারী সাংবাদিকের নাম। এদের মধ্যে ১ (এক) জন সুবর্ণা নদী পারিবারিক দ্বন্ধের জেরে খুন হলেও বাকি ৪ (চার) জন সাংবাদিক রাষ্ট্রীয় দূর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী প্রতিবেদক প্রকাশ করায় তাদের তারা খুন এবং হামলার শিকার হয়েছেন।
১) সাগর-রুনি (ঢাকা)
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি নিজেদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শের-ই বাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ হত্যা মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আসামি আটজন। অন্য আসামিরা হলেন- বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ। কিন্তু আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আজও পর্যন্ত দাখিল করতে পারেনি। এক এক করে এ নিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৭৯ বার সময় পেছাল।
২) সুবর্ণা নদী (পাবনা)
২০১৮ সালের আগষ্টে পাবনায় সুবর্না নদী নামে এক নারী সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নদী বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘আনন্দ টিভি’র পাবনা প্রতিনিধি এবং স্থানীয় একটি পত্রিকাতে কাজ করতেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পাবনা পৌর সদরের রাধানগর মহল্লায় আদর্শ গার্লস হাইস্কুলের পাশের গলিতে বসবাস করতেন তিনি। ঘটনার আগে মোটরসাইকেলে আসা মুখ বাঁধা অজ্ঞাতনামা কয়েকজন দুর্বৃত্ত বাসার কলিং বেল টিপে। এ সময় সুবর্ণা নদী নিজে গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে অতর্কিত এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। একপর্যায়ে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় নদীর মা মর্জিনা বেগম বাদী হয়ে নদীর সাবেক শশুর ও তার স্বামী যুবলীগ রাজীবকে আসামী করে পাবনা সদর থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নং ৯৩ তারিখ ২৯শে আগস্ট ১৮। এরপর পুলিশ মামলার প্রধান আসামি শিল্পপতি আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তারও করে। নদী মৃত্যুর আগে সাবেক স্বামী রাজিবের বিরুদ্ধে একটি যৌতুক মামলা করেছিলেন মামলা নং-সিআর ২৯৭/১৭ (পাবনা) এরপর থেকেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে রাজীব।
৩) সাবরিন জেরিন (মাদারীপুর)
গেল বছর (২০২০) সালের মার্চ মাসে মাদারীপুর এলজিইডি অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে সাবরিন জেরিন নামের এক নারী সাংবাদিকের ওপর হামলা করে। এতে ঐ নারী সাংবাদিক সাবরিন জেরিন (২৫) আহত হন। খবর পেয়ে তার স্বামী আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৬) উদ্ধার করতে গেলে তার উপরও হামলা করেন। এতে স্বামী -স্ত্রী দুজনেই আহত হন। সাবরিন জেরিন আজকের বিজনেস বাংলাদেশ’ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এবং আমাদের নতুন সময় পত্রিকার মাদারীপুর প্রতিনিধি ও আব্দুল্লাহ আল মামুন দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার মাদারীপুর প্রতিনিধি। এরপর ঐ ঘটনার পর সন্ধ্যায় মাদারীপুর সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন।
যা ঘটেছিল সেদিন
সাবরিন জেরিন বিজ্ঞাপন সংগ্রহের জন্য এলজিইডি অফিসে গিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করেন। বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতার। সন্ধ্যা ৭টার পর ওই অফিসের উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন বিজ্ঞাপন নেওয়ার জন্য সাবরিন জেরিনকে অফিসে ডেকে অনেক্ষন বসিয়ে রাখার পর বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না বলে জানান। কেন দিবেননা সাবরিন জেরিনের এমন কথার পরিপেক্ষিতে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করেন। পরে জেরিন ঘটনাটি তার স্বামী মামুনকে জানালে মামুন তৎক্ষনাৎ এলজিইডি অফিসে উপস্থিত হলে জেরিন কাঁদতে থাকেন। এর পর এককথায় দুইকথায় অফিসের ঠিকাদার ও তাদের সহযোগীরা ১২ থেকে ১৫ জন মিলে সাংবাদিক দম্পতিকে বেদম মারধর করে। শেষ পর্যন্ত মাদারীপুরের প্রভাবশালীদের কারনে থানায় মামলা নেননি পুলিশ। এর আগে জেরিন এলজিইডি অফিসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেন বলে জেরিন দাবী করেন।
৪) রোজিনা ইসলাম (ঢাকা)
রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গত সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তাঁকে সেখানে একটি কক্ষে ৫ ঘন্টা আটকে রাখা হয় এবং তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাকে মানষিকও শারিরীক নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই ভবনে যান। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানাননি। পরে বিকেলে সাংবাদিকেরা সচিবালয়ের বাইরে জড়ো হয়ে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও আটকে রাখার প্রতিবাদ করেন। সর্ব শেষ গত বৃহস্পতিবার আদালেত তার জামিন শুনানী শেষে আজ রোববার জামিন আদেশের দিন ধার্য করেন।
আরো খবর.......