মিয়ানমারে সেনা হেলিকপ্টার ভূপাতিতের দাবি বিদ্রোহীদের ॥ জান্তাপন্থি কর্মকর্তা খুন
- আপডেট টাইম : ০৮:৪১:৫৪ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ৪ মে ২০২১
- / ২২৯ ৫০০০.০ বার পাঠক
আন্তর্জাতিক রিপোর্ট।।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান-পরবর্তী টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাড়ছে সহিংসতা। জাতিগত বিদ্রোহী এবং জান্তা-বিরোধীদের রোষে পড়ছে সামরিক বাহিনী।
এরই লক্ষণ স্পষ্ট হয়েছে বিদ্রোহীদের হাতে সামরিক হেলিকপ্টার ভূপাতিত হওয়া এবং ছুরিকাঘাতে এক জান্তাপন্থি কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনায়।
মিয়ানমারের অন্যতম শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ) সোমবার সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেছে।
সেনাবাহিনীর বিমান হামলার পাল্টা জবাব দিতে তারা গুলি চালায় বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান কেআইএ-র একজন কর্মকর্তা।
অন্যদিকে, স্থানীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যম মিয়ানমারের বাণিজ্য নগরী ইয়াংগনে জান্তাপন্থি স্থানীয় একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যার খবর দিয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। তারপর থেকে দেশজুড়ে জান্তা শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে অন্তত ৭৬৬ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছে।
মিয়ানমারের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো একজোট হয়ে ক্ষমতা দখলকারী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন শহর ও শহরতলীতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই-সংঘাত বাড়ছে।
কেআইএ-র তথ্য বিভাগের প্রধান নও বু বলেছেন, কাচিন প্রদেশের মোয়েমাউক শহরের নিকটবর্তী একটি গ্রামে স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে তারা সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করে।
টেলিফোনে রয়টার্সকে তিনি বলেন, “সামরিক কাউন্সিল সকাল ৮টা বা ৯টা থেকে ওই এলাকায় বিমান হামলা শুরু করেছিল। তারা জঙ্গি বিমান ব্যবহার করার পাশাপাশি একটি হেলিকপ্টার থেকে গুলি করছিল, তাই আমরা তাদের দিকে পাল্টা গুলি ছুড়েছিলাম।”
তবে তারা কী অস্ত্র ব্যবহার করেছিল তা জানাতে রাজি হননি তিনি। নিউজ পোর্টাল মিজ্জিমাডেইলি এবং কাচিনওয়েভস ভূমি থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডুলি ওঠার কয়েকটি ছবি দিয়ে হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার খবর দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গ্রামের একজন বাসিন্দা টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেছেন, গ্রামের একটি মঠে কামানের গোলার আঘাতে গুরুতর আহত চার ব্যক্তি হাসপাতালে মারা গেছেন।
রয়টার্স এসব প্রতিবেদন স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি এবং এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্রকে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি বলে জানিয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাবমতে, মিয়ানমারের উত্তর ও পূর্বের প্রত্যন্ত সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহীদের লড়াইয়ের কারণে লাখো বেসামরিক তাদের বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
মিয়ানমারে অনিরাপত্তা বাড়তে থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছে জান্তাপন্থি কর্মকর্তা খুনের ঘটনা।
খিট থিক মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, ইয়াংগনের থারকেটা জেলায় জান্তা সরকারের নিয়োগ দেওয়া ওয়ার্ড প্রশাসনের প্রধান কর্মকর্তাকে তার কার্যালয়ের ভেতর ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে তিনি মারা যান। স্থানীয় দুই বাসিন্দা খিট থিক মিডিয়াকে এখবর নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এর আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সেনাঅভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তাবাহিনীর অন্তত ২৫ সদস্য নিহত হয়েছেন।