৩৫ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে একযোগে দুদকের অভিযান দলিল রেজিস্ট্রেশন

- আপডেট টাইম : ০৫:২৬:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
- / ১৩ ৫০০০.০ বার পাঠক
তল্লাশি ও নকল উত্তোলনসহ বিভিন্ন কাজে সেবা প্রার্থীদের হয়রানি এবং ঘুস দাবিসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগে দেশের ৩৫টি সাবরেজিস্ট্রি অফিসে একযোগে অভিযান চালিয়েছে দুদক। বুধবার দুদকের বিভিন্ন অফিস থেকে এনফোর্সমেন্ট টিম এই অভিযান পরিচালনা করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুপুরে তিনি বলেন, বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে দেশের ৩৫টি সাবরেজিস্ট্রি অফিসে অভিযান পরিচালনা করছে দুদক। অভিযান শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
যেসব অফিসে অভিযান চালানো হয়েছে সেগুলো হলো- বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের অফিস, বরিশাল সদর সাবরেজিস্ট্রারের অফিস, বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস, লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস, কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস, চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রারের অফিস, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের অফিস।
এছাড়া কুমিল্লার লাঙ্গলকোট উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস, ঢাকার আশুলিয়া ও মিরপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিস, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা, গাজীপুর জেলার সদর উপজেলা, গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলা, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা, যশোর সদর উপজেলা, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা, খুলনা জেলা ও খুলনা সদর উপজেলা, কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলা, কুড়িগ্রাম জেলা, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা। আরও রয়েছে শরীয়তপুর সদর উপজেলা, ময়মনসিংহের গৌরিপুর, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা, নোয়াখালী সদর উপজেলা, নওগাঁ সদর উপজেলা, পাবনা সদর উপজেলা, পটুয়াখালীর বাউফল, ঝালকাঠির রাজাপুর, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, রংপুর জেলা, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট, টাঙ্গাইলের কালিহাতী, ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী ও জামালপুলের সরিষাবাড়ী সাবরেজিস্ট্রি অফিস।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিস ও চন্দনাইশ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে অভিযান চালিয়েছে দুদক। দুদকের টিম সাবরেজিস্ট্রি অফিসে সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি দুদক কর্মকর্তারা বিভিন্ন নথি জব্দ করেন।
দুদক সূত্র জানায়, সাবরেজিস্ট্রি অফিসে অনিয়ম ও দুর্নীতি ওপেন সিক্রেট। দলিল রেজিস্ট্রেশন, তল্লাশি, নকল উত্তোলনসহ বিভিন্ন কাজে সেবা প্রার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করা হয়। এ কারণে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রামের একটি টিম সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে এবং চন্দনাইশ সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ে যান। তারা সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ড্রয়ার তল্লাশি করেন। বিভিন্ন সেবাপ্রার্থীর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চান। জেলা রেজিস্ট্রেশন অফিসের আওতাধীন স›দ্বীপ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ১৯ জন নকলনবিশ নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়ার কাগজপত্র খতিয়ে দেখেন। দুদক টিম দলিল লেখক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অর্থ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেন। কার্যালয়টির পরিবেশ নিয়ে তাদের কাছ থেকে লিখিত জবানবন্দি নেন।
খুলনা : খুলনা ব্যুরো জানায়, সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে অভিযান চালিয়েছেন দুদক খুলনা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। বুধবার দুপুর ১টায় অভিযান শুরু করেন তারা। এ সময় সাবরেজিস্ট্রার তন্ময় কুমার মন্ডল, অফিস সহকারী ফারুক হোসেনসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় তারা সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে ঘুস গ্রহণের প্রমাণ পান বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা।
দুদকের খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাকিবুল ইসলাম জানান, ছদ্মবেশে অভিযানে গেলে দালালরা দলিল রেজিস্ট্রিতে তাদের কাছে ঘুস দাবি করেন। পরে দালালদের নিয়ে বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও নকলনবিশকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অভিযানে নকলনবিশ রাসেল শিকদারের ব্যাগে নগদ ৭০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। এই টাকার উৎস নিয়ে তিনি বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন। এছাড়া অফিসের মোহরার অরুণ কুমার বিকাশে লেনদেন করেছেন। এরও সঠিক ব্যাখ্যা তারা দিতে পারেননি। মিতা নামের আরেক নকলনবিশের ব্যাগে ব্যাংকে টাকা জমার তথ্য ও এফডিআরের কাগজ পাওয়া গেছে। টাকার উৎস সম্পর্কে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।
গোদাগাড়ী : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, জেলার গোদাগাড়ী সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে বুধবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালিয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন ৩ সদস্যের টিমের নেতৃত্ব দেন। গোদাগাড়ী সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে এক কর্মচারী প্রকাশ্যে টাকা আদায় করে থাকেন। সাবরেজিস্ট্রার সাদেকুল ইসলাম টাকা ছাড়া একটি দলিলেও সই করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের এই টিম এ দিন অফিসে সাবরেজিস্ট্রার সাদেকুল ইসলামকে পায়নি। অফিসে ছিলেন অফিস সহকারী লাইলুন নাহার। তার কাছ থেকেই নানা তথ্য নেন দুদক কর্মকর্তারা। এ দিন দলিলের সার্টিফায়েড কপি সরবরাহ করতে সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের চিত্র দেখতে পেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা।