ঢাকা ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড ধারী দালাল এখন বিগত রাতে কমপক্ষে ১০০জামাত বিএনপি ধরে হাজত দেওয়ার পরও এখনো কর্মগত অবস্থায় কিভাবে আকবেন নির্বাচনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বোয়ালমারীত আসামি ধরতে গিয়ে পুলিশের এসআই নিহত আবারও ইরানে ইসরাইলের হামলা শুরু আজমিরীগঞ্জে ব্রজপাতে নিহত ১ আহত ১ ঠাকুরগাঁও সীমান্তে ২৩ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ চাঁদা না দেওয়ায় বসতবাড়িতে হামলা ও লুটপাট: নারীসহ আহত ৬, মামলা নিতে গড়িমসি থানার ওসি কোরবানির গরু কাটা কে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা,পারিশ্রমিক পেয়েও কসাই সাইফুলের ২০ কেজি মাংসের দাবি। এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি বরিশালে মেলা ও যাত্রার প্যান্ডেল ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ পুলিশের কাছে ভারি ‘মারণাস্ত্র’ থাকবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছাত্রলীগ ও জাসদ থেকে যেভাবে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর

নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট টাইম : ১১:১৮:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ১৬৪ ১৫০.০০০ বার পাঠক

দেশের বৃহত্তম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা ডা. শফিকুর রহমান। স্কুলে পড়ার সময় ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করলেও সময়ের পরিক্রমায় হয়ে উঠেছেন দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা। যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তার জাসদ ছাত্রলীগ থেকে জামায়াতের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সেই গল্প।

জীবনের প্রথম দিকে ছাত্রলীগ ও জাসদ, পরে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কীভাবে— প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, আসলে জাসদ-ছাত্রলীগ না। প্রকৃতপক্ষে যখন ‘৭০-এর নির্বাচন হয়, তখন আমরা স্কুলের ছাত্র। তখন ছিল লেটারপ্রেস, ওই অক্ষরগুলো বসিয়ে বসিয়ে ছাপাখানায় ছাপত; তখন পোস্টারগুলিও ছাপা হতো। এটা পর্যাপ্ত ছিল না, এটা ছিল শুধু থানা হেডকোয়ার্টারে ছিল। ’৭০-এর নির্বাচনের সময় নৌকার সিল বানিয়ে আনা হয়, আর পোস্টারগুলো আমরা হাতে লিখতাম। আমাদের চেয়ে যারা সিনিয়র তারা সেগুলো লাগাই তো। সেই অর্থে আমি ছাত্রলীগের ‘৭০-এর হাতে লেখা পোস্টারের কর্মী। তখন ছাত্রলীগ কী আর রাজনীতি সে অর্থে বুঝিই না। সবার সঙ্গে স্রোতের তালেই এটা করেছি। আমার বাপ-চাচারা দুজন ছিলেন। চাচা আমার আব্বার ছোট। সেকেন্ড কাজিন যিনি তিনি ইপিআরের তরুণ অফিসার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং শাহাদাতবরণ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক দিন পর নিশ্চিত হয়েছি উনি আর নেই। পাকিস্তান থেকে যখন বন্দি সবাই চলে আসেন, তখন বুঝতে পারলাম উনি আর নেই। শেষ পর্যন্ত আমরা খবর পেয়েছি মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় দিনেই ইপিআর আর্মির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের হালেশ্বর এলাকায় মারা যান। স্বাভাবিকভাবে এ পরিবারের সঙ্গে আমাদের রক্তের সর্ম্পক হয়ে যায়। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগ— এই তিনটা লীগই মূলত ছিল। তাদের আর কোনো দল ছিল না। হয়তো কৃষক লীগ ছিল কিন্তু আমরা জানতাম না। এর তখন ব্যাপক লুটপাট ও ধ্বংযজ্ঞ শুরু করে তারা।

ডা. শফিকুর আরও বলেন, আমাদের বাড়ির একদিকে হাওড় আরেক দিকে পাহাড়। আমরা দেখেছি— পাহাড়ের বড় বড় গাছ কেটে তারা নিয়ে যাচ্ছে; মা-বোনদের ইজ্জিত নষ্ট করছে। এগুলো জবারদিহির কোনো জায়গা ছিল না। এ ধরনের অবস্থায় যখন জাসদ জন্ম নিল, তখন স্বাভাবিকভাবেই দেশের তরুণ প্রতিবাদী মানসিকতার যারা ছিল, তারা ব্যাপকভাবে জাসদ-ছাত্রলীগে যোগ দিতে লাগল। আমি তাদের স্রোতেই যোগ দিয়েছি।

জামায়াত আমির বলেন, এমসি কলেজে থাকার সময় দেখলাম এরাও (জাসদ ছাত্রলীগ) আবার ব্যাংক লুট করা আরম্ভ করল। এরাও আবার থানা ও অস্ত্র লুট করা আরম্ভ করল এবং বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম শুরু করল। তখন এদের ওপরও বিতৃষ্ণা এসে পড়ল। কিছু দিন অফ হয়ে গেলাম, কিন্তু আমি তাদের কিছু জানতাম। এই জানান কারণে আমার জীবন ঝুঁকিতে ছিল। তাদের দৃষ্টিতে যাকে বিশ্বাসঘাতক মনে হতো, তাকে তারা মেরে ফেলত। কিন্তু আমি তো বিশ্বাসঘাতক নই। আমি তো ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলেছি এ রাজনীতিতে। এ রাজনীতি আমি করব না। তো শেষ পর্যন্ত আমি কিছু দিন বাড়িতে চলে গেলাম হোস্টেল থেকে। বড় ভাইদের পরামর্শে এমসি কলেজের হোস্টেলে আর থাকলাম না। তারপর উনারা আলাপ-আলোচনা করে আশ্বস্ত করলেন তারা তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। উনারাই নিয়ে গেলেন, আবার আমার ক্লাস শুরু হলো। এ অবস্থায় জাসদও আমার ছেড়ে দেওয়া। শিশু মন বা কিশোর মন তো চঞ্চল থাকে, তাই মানসিক প্রশান্তির জন্য আমি অটোমেটিকেলি কলেজ লাইব্রেরি থেকে কুরআন নিয়ে পড়া শুরু করলাম অর্থসহকারে। এরপর তফসিরে আফসারের ছোট ছোট পড়া শুরু করলাম। শেষ পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহতালার মেহেবানিতে টের পেলাম; আমি যে রুমে থাকি সে রুমের লোকেরা কোনো একটি ইসলামি সংগঠন করে। কিন্তু এটা তারা গোপন রেখে চলতেন। তারা খুবই গোপনীয়তা রক্ষা করতেন। পরে আমি জানতে পেরেছি, তারা একটি ইসলামি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে ছিলেন। তাদের কাছ থেকে আমি আবদার করে দাওয়াত গ্রহণ করেছিলাম। তাদের তখন সতর্কতার প্রয়োজনও ছিল, এর রকমও যারা ছিলেন তাদের জীবনও ঝুঁকির মুখে ছিল। এভাবেই আমার ইসলামি সংগঠনের দিকে ঢোকা।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ছাত্রলীগ ও জাসদ থেকে যেভাবে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর

আপডেট টাইম : ১১:১৮:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দেশের বৃহত্তম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা ডা. শফিকুর রহমান। স্কুলে পড়ার সময় ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করলেও সময়ের পরিক্রমায় হয়ে উঠেছেন দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা। যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তার জাসদ ছাত্রলীগ থেকে জামায়াতের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সেই গল্প।

জীবনের প্রথম দিকে ছাত্রলীগ ও জাসদ, পরে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কীভাবে— প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, আসলে জাসদ-ছাত্রলীগ না। প্রকৃতপক্ষে যখন ‘৭০-এর নির্বাচন হয়, তখন আমরা স্কুলের ছাত্র। তখন ছিল লেটারপ্রেস, ওই অক্ষরগুলো বসিয়ে বসিয়ে ছাপাখানায় ছাপত; তখন পোস্টারগুলিও ছাপা হতো। এটা পর্যাপ্ত ছিল না, এটা ছিল শুধু থানা হেডকোয়ার্টারে ছিল। ’৭০-এর নির্বাচনের সময় নৌকার সিল বানিয়ে আনা হয়, আর পোস্টারগুলো আমরা হাতে লিখতাম। আমাদের চেয়ে যারা সিনিয়র তারা সেগুলো লাগাই তো। সেই অর্থে আমি ছাত্রলীগের ‘৭০-এর হাতে লেখা পোস্টারের কর্মী। তখন ছাত্রলীগ কী আর রাজনীতি সে অর্থে বুঝিই না। সবার সঙ্গে স্রোতের তালেই এটা করেছি। আমার বাপ-চাচারা দুজন ছিলেন। চাচা আমার আব্বার ছোট। সেকেন্ড কাজিন যিনি তিনি ইপিআরের তরুণ অফিসার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং শাহাদাতবরণ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক দিন পর নিশ্চিত হয়েছি উনি আর নেই। পাকিস্তান থেকে যখন বন্দি সবাই চলে আসেন, তখন বুঝতে পারলাম উনি আর নেই। শেষ পর্যন্ত আমরা খবর পেয়েছি মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় দিনেই ইপিআর আর্মির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের হালেশ্বর এলাকায় মারা যান। স্বাভাবিকভাবে এ পরিবারের সঙ্গে আমাদের রক্তের সর্ম্পক হয়ে যায়। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগ— এই তিনটা লীগই মূলত ছিল। তাদের আর কোনো দল ছিল না। হয়তো কৃষক লীগ ছিল কিন্তু আমরা জানতাম না। এর তখন ব্যাপক লুটপাট ও ধ্বংযজ্ঞ শুরু করে তারা।

ডা. শফিকুর আরও বলেন, আমাদের বাড়ির একদিকে হাওড় আরেক দিকে পাহাড়। আমরা দেখেছি— পাহাড়ের বড় বড় গাছ কেটে তারা নিয়ে যাচ্ছে; মা-বোনদের ইজ্জিত নষ্ট করছে। এগুলো জবারদিহির কোনো জায়গা ছিল না। এ ধরনের অবস্থায় যখন জাসদ জন্ম নিল, তখন স্বাভাবিকভাবেই দেশের তরুণ প্রতিবাদী মানসিকতার যারা ছিল, তারা ব্যাপকভাবে জাসদ-ছাত্রলীগে যোগ দিতে লাগল। আমি তাদের স্রোতেই যোগ দিয়েছি।

জামায়াত আমির বলেন, এমসি কলেজে থাকার সময় দেখলাম এরাও (জাসদ ছাত্রলীগ) আবার ব্যাংক লুট করা আরম্ভ করল। এরাও আবার থানা ও অস্ত্র লুট করা আরম্ভ করল এবং বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম শুরু করল। তখন এদের ওপরও বিতৃষ্ণা এসে পড়ল। কিছু দিন অফ হয়ে গেলাম, কিন্তু আমি তাদের কিছু জানতাম। এই জানান কারণে আমার জীবন ঝুঁকিতে ছিল। তাদের দৃষ্টিতে যাকে বিশ্বাসঘাতক মনে হতো, তাকে তারা মেরে ফেলত। কিন্তু আমি তো বিশ্বাসঘাতক নই। আমি তো ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলেছি এ রাজনীতিতে। এ রাজনীতি আমি করব না। তো শেষ পর্যন্ত আমি কিছু দিন বাড়িতে চলে গেলাম হোস্টেল থেকে। বড় ভাইদের পরামর্শে এমসি কলেজের হোস্টেলে আর থাকলাম না। তারপর উনারা আলাপ-আলোচনা করে আশ্বস্ত করলেন তারা তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। উনারাই নিয়ে গেলেন, আবার আমার ক্লাস শুরু হলো। এ অবস্থায় জাসদও আমার ছেড়ে দেওয়া। শিশু মন বা কিশোর মন তো চঞ্চল থাকে, তাই মানসিক প্রশান্তির জন্য আমি অটোমেটিকেলি কলেজ লাইব্রেরি থেকে কুরআন নিয়ে পড়া শুরু করলাম অর্থসহকারে। এরপর তফসিরে আফসারের ছোট ছোট পড়া শুরু করলাম। শেষ পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহতালার মেহেবানিতে টের পেলাম; আমি যে রুমে থাকি সে রুমের লোকেরা কোনো একটি ইসলামি সংগঠন করে। কিন্তু এটা তারা গোপন রেখে চলতেন। তারা খুবই গোপনীয়তা রক্ষা করতেন। পরে আমি জানতে পেরেছি, তারা একটি ইসলামি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে ছিলেন। তাদের কাছ থেকে আমি আবদার করে দাওয়াত গ্রহণ করেছিলাম। তাদের তখন সতর্কতার প্রয়োজনও ছিল, এর রকমও যারা ছিলেন তাদের জীবনও ঝুঁকির মুখে ছিল। এভাবেই আমার ইসলামি সংগঠনের দিকে ঢোকা।