মুশতাকের মৃত্যুর কারণ জানতে প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
- আপডেট টাইম : ০৪:২৮:২০ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১
- / ২৭২ ৫০০০.০ বার পাঠক
স্টাফ রিপোর্টার।।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর কারণ ময়না তদন্তের পর জানা যাবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেছেন, এই মৃত্যুর কারণ জানতে প্রয়োজনে তদন্ত কমিটিও হতে পারে।
শুক্রবার দুপুরে ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় নবনির্মিত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যু কিভাবে হল, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে কিনা?
জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, প্রথম কথা হল, যে লেখকের কথা বললেন, মুশতাক আহমেদ। তিনি আগেও দুই-একবার তার লেখনিতে আইনশৃঙ্খলা কিংবা অন্যের বিশ্বাসের প্রতি আঘাত করেছিলেন। সেজন্য অনেকেই মামলা করেছিলেন। সম্প্রতি ২০২০ সালে যে মামলাটি হয়েছিল সেই মামলার জন্য তিনি কাশিমপুর জেলখানায় অন্তরীণ ছিলেন। হঠাৎ করেই আমাদের আইজি প্রিজন থেকে আমি যে সংবাদটা পেয়েছি, তিনি হঠাৎ করে অসুস্থ বোধ করলে কারাগারে যে হাসপাতাল আছে সেখানে চিকিসাৎ সেবা পান। তারপরে অবস্থা আরেকটু খারাপ দিকে গেলে গাজীপুর তাজউদ্দিন মেমোরিয়াল হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মৃত্যুবরণ করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সব মৃত্যুর এগেইনস্টে এনকোয়ারি হয়। একটা অস্বাভাবিক মৃত্যু বলুন বা স্বাভাবিক মৃত্যু বলুন। নানা প্রশ্ন আসে। আমরা সেজন্য যেকোনো মৃত্যুর ঘটনায় কারাগারে হোক বা এক্সিডেন্ট হোক, একটা পোস্টমর্টেম হয়। পোস্টমর্টেমের পর সঠিকভাবে আমরা বলতে পারব কেন এই মৃত্যুটা হয়েছে। এনকোয়ারি কমিটি প্রয়োজন বোধে করব। কালকে তো হল, নিশ্চয় এটার ব্যবস্থা আমরা করতে পারব।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় বিচারের মুখে থাকা মুশতাক আহমেদ কারাবন্দি অবস্থায় বৃহস্পতিবার মারা যান।
কী কারণে ৫৩ বছর বয়সী মুশতাকের মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে কুমির চাষের অন্যতম উদ্যোক্তা মুশতাকের হাত দিয়েই কুমির রপ্তানি শুরু হয়। এ বিষয়ে একটি বইও লিখেছেন তিনি।
মুশতাক অনলাইনে লেখালেখিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন। সেটি কেন্দ্র করেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় পড়েন তিনি।
করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে গত বছরের ৬ মে র্যাব তাকে গ্রেফতার করে। তার সঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকেও গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করা হয়।
এই মামলায় রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠন দিদারুল ভূইয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে পরে এ দুজন জামিনে মুক্তি পান। মুশতাক ও কিশোরের পক্ষে বেশ কয়েকবার জামিনের আবেদন হলেও তা আদালতে নামঞ্জুর হয়।
এই মামলায় আসামির তালিকায় আরও ছিলেন নেত্র নিউজের সম্পাদক সুইডেন প্রবাসী তাসনিম খলিল, জার্মানিতে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম, হাঙ্গেরি প্রবাসী জুলকারনাইন সায়ের খান (আল জাজিরার প্রতিবেদনের স্যামি), আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখারও ছিলেন।
তবে তদন্তের পর পুলিশ শুধু মুশতাক, কিশোর ও দিদারকে আসামি করে এই মাসের শুরুতে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। বাকি আট আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
র্যাবের করা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ফেসবুক ব্যবহার করে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস মহামারী সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র/সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়ে অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ানো, অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগ আনা হয়েছিল। হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে কিশোর ও মুশতাকের সঙ্গে তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন সায়ের খান, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের ‘ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ’ পাওয়ার দাবিও করেছিল র্যাব।
এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি করার জন্য অনেকে অনেক রকম কাজ করে যাচ্ছে। আল-জাজিরা যে নিউজ দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ তা বিশ্বাস করেনি। এদেশের মানুষ আল-জাজিরা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সবগুলোই আমরা খতিয়ে দেখব। কেন এই মিথ্যা সংবাদ, কেন এই মিথ্যা নিউজ প্রচার করেছে তা তদন্ত করে দেখছি। এর সাথে দেশের কেউ জড়িত কিনা তাও তদন্ত করে দেখা হবে।
এর আগে নবনির্মিত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দক্ষতার সঙ্গে সমগ্র চট্টগ্রাম জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত অফিস এখানে স্থাপিত হল। বাংলাদেশের পুলিশ অনেক সক্ষম। তাদের দক্ষতা অভিজ্ঞতায় যেকোনো চ্যালেঞ্জ আজকে আমরা মোকাবেলা করি। বাংলাদেশে একটা শান্তির ফয়সালা আমরা করে যাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। তার সাথে সমান্তরালভাবে যদি আইনশঙ্খলা যদি রক্ষা না করতে পারি সেই উন্নতিটাও থমকে যাবে। সেজন্য যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত। জঙ্গি দমন সন্ত্রাস দমন বা বনদস্যু স্যারেন্ডার, চরমপন্থী স্যারেন্ডার বলুন। পুলিশ ভূমিকা রেখেছে বলেই আমরা সে জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রামের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান ও আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভী, চট্টগ্রামের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর প্রমুখ।