নাজিরপুরে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে পরিবেশ
- আপডেট টাইম : ০৯:৪০:৫২ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৪ জুন ২০২৩
- / ২৬৮ ৫০০০.০ বার পাঠক
পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার বিলাঞ্চলে নদী ও খালে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে ফলে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধসে যাচ্ছে এবং হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। স্থানীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এসব ড্রেজার দিয়ে গ্রামাঞ্চলের নদী,খাল,ও বিল থেকে যত্রতত্র ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করায় আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। দীর্ঘ দিন ধরে পুলিশ প্রশাসনের যোগসাজসে ড্রেজার মালিকরা এ অবৈধ কাজটি করে আসছে।
স্থানীয় ভাবে অনেকে কম খরচে নিচু জমি ভিটা তৈরীর ক্ষেত্রে সরকারি নদী ও খাল থেকে এ বালু উত্তোলন করে। তাছাড়া কম খরচে ও সহজ পদ্ধতিতে বালু পাওয়ায় বিধ্বংসী এই ড্রেজার ব্যবহার করছে।
এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি জানালেও তা কোনো কাজে আসছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এভাবে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কাজ চলমান রয়েছে। অবৈধ মেশিনগুলোর মালিকরা ঘুরে ঘুরে গ্রামের সরকারি রেকর্ডভুক্ত নদী ও খাল থেকে বালু উত্তোলন করছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকিতে পড়েছে সরকারি সড়ক,স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মস্জিদ, মন্দির সহ বসতবাড়ী।
বিলডুমুরিয়া গ্রামের শাহাবুদ্দিন মেম্বারের বাড়ীর দক্ষিণ পার্শ্বে মাহাবুব অবৈধ বাংলা ড্রেজার ভাড়া করে সরকারি খাল থেকে বালু উত্তোলন করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
ড্রেজার মালিক মোঃ আল-আমিন (৩৫) সাংবাদিকদের জানান, আমরা বর্তমান চেয়ারম্যানের অনুমতিতে চেয়ারম্যানের কর্মী মনির বালির মাধ্যমে ড্রেজার প্রতি ৩ হাজার টাকা নাজিরপুর থানার পুলিশ অফিসার এস আই নাজমুলকে দেই, তবে আগে টাকা দেওয়া লাগত না, এখন টাকা দেওয়া লাগে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ইউনিয়নে ১৫-২০ টি ড্রেজার রয়েছে। ডাক পড়লেই মেশিনপত্র নিয়ে গ্রামের আনাচে কানাছে ছুঁটে যাচ্ছে ড্রেজার মালিক-শ্রমিকরা। বেশ কিছু দিন আগে স্থানীয় ইউপি সদস্যরা ৪০ দিনের কর্মসূচীর কাজে সরকারি খাল থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন করে রাস্তার কাজে ব্যবহার করছে। তা বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হওয়ার পরেও কোন ভাবেই থামছে না এ অবৈধ রামরমা বানিজ্য। ড্রেজার মালিকদের মন্তব্য সরকারি কাজে এ ড্রেজার ব্যবহারের ফলে দু’মাস বন্ধ ছিল আমাদের ড্রেজার, তবে আমাদের আগে কেউকে টাকা দেওয়া লাগত না ড্রেজার বন্ধ হওয়ার পরে আবার চালু করার সময় স্থানীয় লোকজনদের টাকা দিয়ে আমরা আবার পুনরায় ড্রেজার চালানর অনুমতি পেয়েছি।
এবিষয়ে মনির বালির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, পুলিশ অবৈধ ড্রেজার ধরে তার জন্য জানুয়ারী মাসে আমার কাছে ওরা আসছিল চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করাইয়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে। ওরা আদৌ থানায় টাকা পয়সা দেয় কি বা না দেয় তা আমি জানি না, তবে ওরা কেউ’ই আমার কাছে কোন টাকা দেয় না, এবিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এবিষয়ে ৩ নং দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল আলম বাবুল জানান, আমি এবিষয়ে কিছু জানি না আমাকে ফাঁসানের জন্য এমন গুজব রটানো হচ্ছে, আমি এ ড্রেজার বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করছি।
নাজিরপুর থানার এস আই নাজমুল হোসেন বলেন, এবিষয়ে আমি কিছুই জানি না, আর মনির বালি নামে কোন ব্যক্তিকে আমি চিনি না।
এবিষয়ে নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্জীব দাশ জানান, আমি বিষয়টি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দেখব এবং ড্রেজার চলন্ত অবস্থায় আমাকে তাৎক্ষনিক তথ্য দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করব।
এবিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান (পি পি এম সেবা) তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসন এবং চেয়ারম্যন যদি অর্থের বিনিময় এমন কাজ করে থাকে আমি তদন্ত করে বিষয়টি দেখব।