নাজিরপুরে তীব্র তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ট
- আপডেট টাইম : ১১:৪৩:০৫ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩
- / ২০০ ৫০০০.০ বার পাঠক
বৈশখের তাপমাত্রা যেন আর কোনোভাবেই কমছে না। সূর্য ওঠার পরপরই চড়চড় করে বাড়ছে তাপমাত্রা। কাঠফাটা রোদে জনজীবন বিপর্যস্ত। তীব্র রোদ আর ভ্যাপসা গরমের বাতাস সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিপাকে পড়েছে রোজাদাররা। ৪০°,৪১° তাপমাত্রায় পিরোজপুরের নাজিরপুরে এবছর রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে শুরু হয়েছে বোরো ধানকাটার মৌসুম। গ্রীষ্মের শুরুতে সমগ্র দেশজুড়ে চলমান তীব্র কাঠফাঁটা রোদে অতিষ্ঠ জনজীবন। রোদে পুড়ছে প্রকৃতি, বইছে তাপপ্রবাহ, স্বস্তির নিঃশ্বাস নেই কোথাও। সর্বত্র মানুষের পাশাপাশি প্রাণিকূলের মধ্যে ও তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে। কোথাও আকাশে বিক্ষিপ্ত মেঘের আনাগোনা ও দেখা মেলছেনা ।
প্রখর রোদে বোরো ধান কাঁটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। ঘরে ধান তুলতে বিপাকে পড়ে উপজেলা কৃষি অফিসে ছুটে চলছে র্ভতুকি মুল্যে ধান কাটা মেশিন ক্রয়ের জন্য। আবহাওয়া ভাল থাকতে থাকতে যেন তাদের স্বপ্ন সোনালী ফসল ঘড়ে তুলতে পারে। কিন্তু প্রচন্ড গরমের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। বৃষ্টিহীন এই প্রখর রোদের সাথে সাথে তাপমাত্রা বাড়ার কারণে শিশু শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। তীব্র খড়তাপে দিন মজুর অটোভ্যান ও ভ্যানচালকরা কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছে। কোথাও স্বস্তির বাতাস নেই। গতকাল কয়েকদিন থেকে বাতাস বইলেও তা গরম বাতাস।
এমনিতেই গা ঘেমে যায়। সর্বত্র গরম আর গরম, কখনও তীব্র, আবার কখনও ভ্যাপসা গরম। প্রশান্তির বৃষ্টির জন্য চারিদিকে এখন হাহাকার পড়ে গেছে। নেট থেকে তথ্য পাওয়া গত দুই-সপ্তাহ ধরে উপজেলায় তাপমাত্রা গড়ে ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রী ওঠানামা করছে। সামনে আরো তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জীব-বৈচিত্রের উপরও। এমন প্রচন্ড গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে গোটা নাজিরপুর উপজেলাবাসীর।
উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রোদের প্রখরতায় সদরে ছিল না তেমন কোন মানুষজন। চলাচল করতে কম দেখা গেছে বিভিন্ন যানবাহন। পথচারীরা কলের পানিতে মুখ ভিজিয়ে আগ্নিকুন্ড থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে।
সেখানেও স্বস্তি নেই, কল দিয়েও গরম পানিই বের হচ্ছে। গরমে একটু জিরিয়ে নিতে কেউবা গাছের তলা, কেউবা ভবনের নিচে আবার কাউকে ডাবের পানি, লেবুর শরবত খেতে দেখা গেছে। প্রচন্ড গরমে অনেকই রোজা রাখতে পারছেন না, একটু শীতলতার জন্য শিশু-কিশোর সকলেই পুকুর ও খালে ছোটাছুটি করছে। তীব্র তাপদাহে কয়েকদিনে হাট-বাজারে মানুষের সমাগম কমে গেছে।
এদিকে তীব্র গরমে বেড়েছে সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধা-বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দাম বেড়েছে ডাব ও তরল জাতীয় খাবার। প্রতিটি ডাবের দাম বেড়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা, প্রতি কেজি তরমুজের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা, লেবুর শরবতের গ্লাসের দাম বেড়েছে ১০টাকা।
ভ্যান চালক আলমগীর হোসেন বলেন, রোজা তো রাখতেই পারিনি কয়েক দিন থেকে যে তাপ উঠছে ভ্যান নিয়ে পাকা রাস্তায় বের হওয়া যাচ্ছে না। গরমে চাকা বার বার পানচার হচ্ছে। জানি না এ রকম প্রখর রোদ আর কত দিন থাকবে। কিভাবে জীবিকা নির্বাহ করব।
উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের ভীমকাঠী গ্রামের মাঈনুল ইসলাম নামে এক দিনমজুরি বলেন, জীবন-বাঁচার তাগিতে আমি অন্যের বাড়িতে দিনমজুরি দিয়ে ৪ সদস্যর সংসার চালাই। গত কয়েকদিন ধরে এত তাপদাহ সহ্য করার মত নয়। পেটে খেলে সব কিছুই সহ্য করতে হয়। তাই প্রচন্ড গরমেই সারাদিন ধান কাটছি ।
উপজেলার মধ্যজয়পুর গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী আব্দুল মালেক নামে এক বৃদ্ধা বলেন, গরম প্রতি বছর কম বেশি হয়ে থাকে কিন্তু এবার গরম আমার বুদ্ধি বয়সে এ রকম গরম আগে কখনো অনুভব হয়নি। তবে এত গরমেও রোজা রাখতে পারতেছি এটাই শুকরিয়া।
কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, প্রখর এই খড়ায় আমাদের জীবন বিপর্যস্ত তারপরেও কিছু করার নাই, খেতে হলে কাজ করতে হবে এই খড়ায় যদি ইরী ধান ঘড়ে তুলতে না পারি তা হলে বন্যা বৃষ্টি হলে আর রেহাই নাই, স্বপ্নের ফসল ঘড়ে তুলতে পারব না, তাই হাজার ও কষ্টের মাঝেও ধান ঘড়ে তুলতেই হবে, তবে এমন গরম আমার এই ৪০ বছরের জীবনে দেখি নাই। গত বছর প্রতি বিঘা জমির ধান কাঁটতে আমার ১০/১১ জন করে শ্রমিক লাগতো। কিন্তু এবার ১২/১৪ জন শ্রমিকে ও সেই কাজ শেষ করতে পারবে বলে মনে হচ্ছেনা। কৃষি অফিস থেকে আমাদের কে ভর্তুকি মূল্যে ধান কাটার মেশিন দিলে খুবই উপকৃত হতাম।
উপজেলা কৃষি অফিসার ইশরাতুন্নেছা এশা জানান,নাজিরপুরে ১৩৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে, অধিকাংশ ধান প্রায় কাটার উপযোগী, তাই পোকামাকড় বা রোগ ধানের ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না, তবে অতিরিক্ত গরমে ও তীব্র তাপদাহ কৃষকদের ধান কাটায় প্রভাব ফেলছে, এতে কৃষকরা যন্ত্রের ওপর নির্ভর করছে এবং উপজেলা কৃষি অফিসে ছুটে আসছে ভর্তুকি মূল্যে ধান কাটা মেশিন ক্রয়ের জন্য, এঅবস্থায় প্রকল্প অফিসে কথা বলে কৃষকদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে ধান কাটা মেশিন ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।