বস্তুনিষ্ঠ লেখনিতেই ছড়িয়ে পড়ে পরিচিতি, গড়ে ওঠে পাঠকের আস্থা
- আপডেট টাইম : ০৫:১৪:২৩ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩
- / ৩২৬ ৫০০০.০ বার পাঠক
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সাংবাদিক সমাজে মূলধারার সাংবাদিকতা, ছোট বড় গণমাধ্যম, জুনিয়ন সিনিয়র সাংবাদিকতা সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে পেশাদার সাংবাদিকদের অনেককেও বেশ ম্রিয়মান থাকতে দেখা যায়, অনেকে নিজেই নিজেকে গৌণ ভাবেন। সহকর্মি ভাই বোনদের নিজের মেধা ও বস্তুনিষ্ঠ লেখনির ব্যাপারে নিজেদেরই এমন আস্থাহীনতায় বেশ অবাক হই বৈ কি!
বহুল প্রচারিত অনেক মিডিয়াতেও বিতর্কিত লেখালেখির কারণে দাপুটে অনেক সাংবাদিক আস্তাকুড়ে নিক্ষেপিত হওয়ার ভূড়ি ভূড়ি প্রমান রয়েছে। আবার কম প্রচলিত সংবাদপত্রে দায়িত্বশীল রিপোর্টিংয়ের কারণে সেরাদের সেরা হওয়া সাংবাদিকের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। আপনি সর্বাধিক প্রচারিত মিডিয়ায় সাংবাদিকতা পারছেন না বলে নিজেকে অযোগ্য ভেবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। বরং আপনার লেখনিতে মেধার সাক্ষর আছে কি না, আপনার সংবাদটি অধিকতর বস্তুনিষ্ঠ কি না সেটাই মূল বিবেচ্য বিষয়।
এক্ষেত্রে আমি বরাবরই মনে করি, বেশি প্রচারিত প্রধান প্রধান মিডিয়ায় আপনার নিজস্ব আবিস্কার ও মেধার সাক্ষর রাখার সুযোগ খুবই সীমিত। সেখানে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের নিজস্ব মতামতই বেশি বেশি প্রতিফলিত হয়ে থাকে। সকল ক্ষেত্রে তাদের দায়বদ্ধতাও অতিমাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। যেমন সরকারের বিরাগভাজনের শিকার হওয়ার শঙ্কা, বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানগুলোর অসন্তষ্টি, অমুক এমপি, মন্ত্রী বেজার হন কি না, স্বগোত্রীয় শিল্প বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো সংবাদে মাইন্ড করেন কি না…ইত্যাদি শতেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে প্রকৃত ঘটনা আর অবিকল সংবাদ হিসেবে প্রকাশের সুযোগ থাকে না বললেই চলে। তবে বড় বড় মিডিয়া হাউজে কর্মরত মেধাবী কিছু সাংবাদিক নানা কৌশলে ইনিয়ে বিনিয়ে হলেও প্রকৃত ঘটনাটি পাঠককে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হন। যা ‘চাকুরিজীবী সাংবাদিকদের’ দ্বারা কখনই সম্ভব হয় না। বড় আকারের প্রভাবশালী মিডিয়ায় যেসব সাংবাদিক প্রকৃতই জনস্বার্থে লিখেন তাদের গোপনে জিজ্ঞাসা করে জানুন, কত খড় কাঠ পুড়িয়ে তাদেরকে জনস্বার্থে লেখার সুযোগ তৈরি করতে হয়। কত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে তবেই তাদের লেখনি প্রকাশের সুযোগ ঘটে।
অল্প প্রচারিত, কম পরিচিত মিডিয়াও যে ‘ফ্যাক্টর’ তা প্রমাণ করার জন্য ছোট্ট একটা বিষয় পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আপনার এলাকার সংসদ সদস্য কর্তৃক বিগত ৫/১০ বছরে উন্নয়নের বিস্তৃত বর্ণনা একাধিক ছবিসহ আপনার পত্রিকায় প্রকাশ করলেও তা এমপি সাহেব ও তার নিকটজনরা দেখা বা পাঠ করার কথা স্বীকারও করতে চাইবেন না। কিন্তু তার ব্যর্থতার খতিয়ানগুলো বিশ্লেষণ আকারে তুলে ধরে প্রতিবেদন করে দেখুন কিভাবে আপনাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তখন কেউ বলবে না পত্রিকাটি কম প্রচারিত, এটা পাঠ করিনি, এতে কিছু যায় আসে না। সবাই শুধু বলবে নৌকাকে ধ্বংস করার জন্য জামায়াত বিএনপির পেইড সাংবাদিক মিথ্যা ভিত্তিহীন কথাবার্তা লিখেছে, তাকে সাইজ করাই যেন জাতীয় দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়।
অতএব, মিডিয়া ছোট বড় কোনো বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে লেখনি, আপনার সত্যনিষ্ঠ লেখনি। এর আরো বড় প্রমান হচ্ছে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রচারিত বিষয়াদি। সামাজিক এসব মাধ্যম তো কখনই গণমাধ্যমের স্বীকৃতি পায় না। তবু সেখানে তুলে ধরা প্রকৃত ঘটনাবলীর ব্যাপারে সকল মহল কেন এতো সরব হয়ে উঠেন? কেন সরকার, প্রশাসন সেসব ব্যাপার সুরাহা করতে ব্যস্ততা দেখান? এর মূলে একটাই বিষয় তা হলো আপনার লেখনিতে সত্যতা রয়েছে, বস্তুনিষ্ঠতা রয়েছে। সেসব লেখা হজম করার ক্ষমতা কারো নেই।
আমাকে পছন্দ করেন এমন অনেক সাংবাদিকের মধ্যেই নিজ নিজ মিডিয়ার বিষয় নিয়ে হতাশা প্রকাশ করতে দেখি; মূলত: তাদের উদ্দেশ্যেই আমার এ লেখা। তাদের প্রতি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, বড় মিডিয়ায় চাকুরির সুযোগ পাওয়াটা আপনার পদোন্নতি নয়, বরং আপনার লেখনি আরো বেশি সংখ্যক মানুষের আস্থা কুড়ায় এটাই হলো প্রাপ্তি। গেল বছর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের বার্ষিক পুরস্কার প্রতিােগিতাতেও অপেক্ষাকৃত কম প্রচলিত মিডিয়ার সাংবাদিকগণই সেরা সাংবাদিকতার পুরস্কারগুলো আদায় করে নিয়েছেন। সেখানে মূলধারা কিংবা কম প্রচলিত মিডিয়া হিসেবে আলাদা মূল্যায়ন হয়নি, মূল্যায়ন হয়েছে কেবলই ভাল লেখনির, ভাল অনুসন্ধানের।
আমরা ঢাকায় শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও কক্সবাজারের ফজলুল কাদের চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, দিনাজপুরের শাহ আলম শাহী, বরিশালের রাহাত খান, পাবনা সাথীয়ার হাবিবুর রহমান স্বপণ, রাজশাহীর সাইদুর রহমান, শাহ আনিসুর রহমান, শ্রীমঙ্গলের ইসমাইল মাহমুদ, সুনামগঞ্জের সরোয়ার আজাদ, টেকনাফের আব্দুল কুদ্দুস রানা, বগুড়া শিবগঞ্জের প্রদীপ কুমার মোহন্ত, সাভার মানিকগঞ্জ এলাকার অরুপ রায়, পাবনার বি এম ফজলুর রহমান, কুষ্টিয়ার শামসুল আলম স্বপন, ঝিনাইদহের এম রায়হান, টাঙ্গাইল মধুপুরের অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, হাবিবুর রহমান, নেত্রকোণার আলপনা বেগম, সাতক্ষীরার কল্যাণ ব্যানার্জিদের চিনি, জানি! তারা প্রত্যেকেই স্বনামে, স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। তারা কেউ আমাদের স্বজন নন, সবাই বড় বড় মিডিয়ার কর্মি নন। শুধু সাংবাদিকতার মাধ্যমেই তারা সারাদেশের পরিচিতজন হয়ে আছেন। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অপেক্ষাকৃত কম লেখনির সাংবাদিকগণই বড় বড় মিডিয়া হাউজের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেকে সমহারে মূল্যবান ভাবতে চায়, ভাবাতে চায়। অন্যদিকে ছোট মিডিয়া হাউজগুলোর সাংবাদিককে বাস্তবেই নিজের যোগ্যতায় জায়গা করে নিতে হয়। অতএব, আপনার লেখনি, সত্য প্রকাশের সাহসী কৌশল, বস্তুনিষ্ঠতাতেই ছড়িয়ে পড়ুক ইতিবাচক পরিচিতি, গড়ে উঠুক পাঠকের আস্থাশীলতা। সেখানেই আপনার সাংবাদিকতার যাবতীয় স্বার্থকতা। তথ্যটি সংগ্রহ হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে