কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গবে কখন ( ২য় পর্ব )
- আপডেট টাইম : ১০:৪৬:২৯ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২২
- / ২৯৬ ৫০০০.০ বার পাঠক
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বাঙ্গালী জাতির মুক্তির পথিকৃত হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের আপামর জনগন দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য আন্দোলন সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। দেশমাতৃকা পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত হয় লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধার আত্বত্যাগে ও লক্ষ মা বোনের সম্ভমের বিনিময়ে। দেশ পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্তি লাভ করার পর যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশটিকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং দেশের উন্নয়ন অবকাঠামো ত্বরান্বিত করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ শুরু করেন ঠিক সেই সময়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট দেশের মাঝে উচ্চাভিলাষী, সুবিধালোভি, যখন যেমন তখন তেমন চরিত্রের কিছু হাইব্রিড নেতা চরম চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেন সুধু বঙ্গবন্ধু কে হত্যা করেই থেমে থাকেননি তারা দেশের শীর্ষস্থানিয় জাতীয় চার নেতাকেও কারাবন্দী অবস্থায় হত্যা করেন সেই হাইব্রিডরা। বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তৎকালীন হাইব্রিডরা তখন দল গঠন করেন এবং আওয়ামীলীগের লোকজনের উপর বিভিন্ন ভাবে জুলুম ও অত্যাচার চালান। জোর করে রাস্টের ক্ষমতা দখল করে সেচ্ছাচারি মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নামক দলটিকে দেশের ইতিহাস থেকে চিরতরে মুছে ফেলার চেস্টা করেন। সেই সময় থেকে দলের চরম দুর্দিনেও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কে অন্তরে ধারন করে হাইব্রিডদের অন্যায় অত্যাচার শয্য করে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে ১৯৯৬ সালে স্বপ্নের আওয়ামীলীগ কে রাস্টের ক্ষমতায় আনার পর ঠিক তারাই এখন পর্যন্ত সবথেকে অবহেলিত। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাদের আশপাসে এখন সুবিধালোভি হাইব্রিডে পরিপুর্ণ। দলের দুর্দিনের নেতা কর্মীরা এখন হাইব্রিডের সুবিধা লাভের আনন্দমিছিলে পদদলিত। দলের দুর্দিনে তারা যেমন অত্যাচারির ও অবহেলিত হয়ে ছিল ঠিক দলের সুসময়েও তারা অবহেলিত। চমৎকার বর্তমান আওয়ামীলীগের নেতাদের বইশিস্টপুর্ণ রাজনীতি। দলের সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন দলের দুর্দিনের দুঃসমের লোকজনকে নিয়ে ভাবছেন, এবং তাদেরকে যথাযথ ভাবে মুল্যায়ন করে দলের তৃনমুল হতে সব জায়গায় পদায়ন করার কথা বলছেন, দলের কিছু কিছু নেতারা দলিয় প্রধানের কথাকে তোয়াক্কা না করে এখনো সুবিধালোভী হাইব্রিডদেরকেই মুল্যায়ন করে যাচ্ছেন। মনে হয় এটা দলের জন্য শুভ নয়। আসলে দলের এই নেতাগন কতটা দলের মঙ্গল চায় এবং দলিয় প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনার কতটা অনুগত তা বড় ভাবার বিসয়।
৭৫ পরবর্তী সময়ে যারা আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদেরকে ঘর ছাড়া করে তাড়াকরে ঘুরিয়েছেন এবং পরতে পরতে অত্যাচার করেছেন ঠিক তারাই আজ আওয়ামীলীগের নেতাদের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে সকল সুবিধা নিচ্ছেন। যারা জীবনে কোন দিন দেয়নি নৌকায় ভোট, তারা এখন পরে মুজিব কোট। কি চমৎকার হাইব্রিডদের কৌশল। সেই সাথে আওয়ামীলীগের নেতা, কর্নধার ও আওয়ামী দলিয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগনরাও তাদেরকেই আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন ও মুল্যায়ন করছেন অনেক বেশি। যার কারনে তৃণমুলের অনেক নেতা কর্মীগন হতাশ হয়ে দলের সকল কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ড থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আছেন। শুধু দলের পদ পদবি নিয়ে আছে এবং নির্বাচিত প্রতিনিধি বলে কেউ মুখ ফুটিয়ে কিছু বলেনা, তাছাড়া অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারী কোনো কর্মে প্রতিবাদ করলে বা কোনো ভুল ধরিয়ে দিলে অনেক সময় অপমানিত ও হেনোস্তাও হতে হয়েছে অনেককে। তৃনমুলের কোনো মিটিংয়ে স্থানীয় কোনো নেতা কর্মীকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়না, তাদের সুখ দুখের এবং তাদের রাগ অভিমানের কথা প্রকাশ করার সুযোগ দেওয়া হয়না বা শোনার সময় হয়না আপনাদের। নির্ধারিত দিনে সময় মোতাবেক আপনারা মিটিংয়ে উপস্থিত হয়ে স্ব দলের নেতা কর্মীগনের উদ্দেশ্যে শাসিয়ে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে চলে যান। মনে হয় কোনো কারখানার মালিক বছর ছয়মাস পর কারখানায় এসে সকল শ্রমিকদেরকে একত্রিত করে কড়া ভাষায় কারখানায় কাজ করার দিকনির্দেশনা দিয়ে চলে গেলেন। যারা আপনাদেরকে আজ নেতা বানিয়েছে, আপনাদেরকে আজ প্রতিনিধি বানিয়েছে তারা আজ আপনাদের চোখরাঙ্গানি শাসানো বক্তব্য শোনার আমজনতা মাত্র। দেখা গেছে সারাজীবন দলের কাজ করে অনেক হতভাগা নেতা কর্মী মারা গেছেন, পরবর্তীতে তার স্ত্রী সন্তান কিভাবে জীবনযাপন করছেন আপনারা তাদের খোজখবর রাখেননা। হ্যা একমাত্র কর্মীবান্ধব দলিয়প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের আপামর কর্মীদের খোজ খবর রাখেন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাতা, বিভিন্ন অনুদানের কার্ড ইত্যাদি দিয়ে থাকেন, আপনারা সেখানেও হস্তক্ষেপ করেন স্বজনপ্রীতি করেন। বর্তমানে তারা অনেকে অপেক্ষায় আছে সময় মতো সাংগঠনিকভাবে সকল কৃতকর্মের জবাব নেওয়ার জন্য। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও দলের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা ছাড়া মনে হয় আর কেউ দেশ ও জনগনকে নিয়ে ভাবেনা এমনটাই মনেকরেন তৃমমুলের অনেক কর্মী, সমর্থক ও ভোটাররা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধারনকৃত এক ভাষনে বলতে শুনেছিলাম, আমি বিদেশ থেকে সাহায্য করে নিয়ে আসি আর এদেশের চাটায়ের দল সব চাইটা খেয়ে ফেলায়। তেমনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জনগনের উন্নয়নের জন্য এবং দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সমৃদ্ধ,সুখী বাংলাদেশ উপহার দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন আর দলের মধ্যবর্তী কিছু নেতা নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছেন। ঠিক এই শ্রেণির নেতাগনই দলের পরীক্ষিত ও দুর্দিনের নেতা, কর্মী,সমর্থকদের কে দুরে সরিয়ে দিয়ে হাইব্রিড প্রতিপালন করছেন। যাদের কারনে দলিয় প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনার অর্জন আজ হুমকির সম্মুখীন। দলীয় এই নেতাদের হাইব্রিড প্রতিপালনের কারনে আজ আওয়ামী বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলো সরকার বিরোধী আন্দোলন বেগবান করার সুযোগ পাচ্ছে বলে মনে করি। আওয়ামীলীগের শত্রু অন্য কেউ নয়, আওয়ামীলীগের শত্রু আওয়ামীলীগের একশ্রেণির নেতারা। আমার এই লেখনির মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ দলের নীতিনির্ধারক গনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, এখনি দলের এই শ্রেণী ও প্রকৃতির হাইব্রিড প্রতিপালনকারী নেতাগনের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন নাকরলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর বিরুপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন দলের অনেক নেতা কর্মীগন। এখনো হাতে অনেক সময় আছে, দলের মধ্যে ক্ষোভ ও অভিমান করে পিছিয়ে থাকা ত্যাগী নেতা কর্মী ও ভোটার সমর্থকদের কে ডেকে নিয়ে তাদেরকে দলের কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করা যেতে পারে। কারন তারা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নামক দলটিকে অনেক ভালবাসে। তাদের নিকট গিয়ে তাদেরকে ডাকলে তারা সকল ক্ষোভ,অভিমান ভুলে দলের জন্য জান বাজি রেখে আবারো ঝাপিয়ে পড়বে এবং নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করবে বলে মনে করি। নইলে এভাবে পিছিয়ে পড়তে পড়তে একসময় দেখা যাবে শুধু নেতাই দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু সামনে পেছনে কোন কর্মী সমর্থক নেই। তখন ঢাল তলোয়ার বিহিন নীধুরাম সর্দার হয়ে থাকতে হবে। কারন ঐ প্রকৃতির নেতাগন হাইব্রিড প্রতিপালন করে,হাইব্রিডদের কে ব্যবহার করে, হাইব্রিডদের মাধ্যমে নিজের স্বপ্ন পুরন করেছেন। আর যাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আপনি আজ বড় নেতা, তাদেরকেই অবমুল্যায়ন করে দুরে সরে রেখেছেন। একটা কথা ভুলে গেলে চলবেনা, পৃথিবীর যত নেতাদের পতন হয়েছে, তার কারন একটায়, দুর্দিনের পরিক্ষীত ত্যাগী নেতা কর্মী, সমর্থকদের কে সুসময়ে অবমুল্যায়ন করে দুরে সরে দিয়ে হাইব্রিডদের কে মুল্যায়ন করে পথ চলার কারন। এই প্রকৃতির অনেক নেতাদেরকে বলতে চাই , স্বার্থের মোহে উর্ধে রাখা দৃস্টি নিম্নে দিয়ে চেয়ে দেখুন, আগের তুলনায় বর্তমানে অনেক ফাঁকা। আশপাশ থেকে অনেকে সরে গেছে। এভাবে সরতে সরতে যখন সবায় সরে যাবে তখন আপনাদের পোষা হাইব্রিডরাই আপনাদেরকে একসময় ধরাশায়ী করবে। তখন দলিয় প্রধান দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার অর্জন আপনার জন্যই ম্লান হবে, তখন জবাব দেবার ভাষা খুজে পাবেননা। আমি আমার আগের লেখা থেকে আবারো পুনরাবৃত্তি করতে চাই যে, সুযোগ সন্ধানী ও সুবিধা ভোগীরা কখনো কারো আপন হয়না। তারা যে পাতে খায় সেই পাত ফুটো করতে দ্বিধা বোধ করেনা । আর বর্তমানে তাদের কে নিয়েই আপনাদের চলাফেরা। প্রকৃতি ও সময় ছাড় দেয়,ছেড়ে দেয়না। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দুর্দিনের পরীক্ষিত ত্যাগী কর্মী, সমর্থক ও ভোটাররা আপনাদেরকে এভাবে কামনা বা কল্পনা করেননি কখনো। আপনি যাদের প্রচেষ্টায় আজ নেতা হয়েছেন, যাদের পরিশ্রমে আজ দলিয় জনপ্রতিনিধি হয়েছেন, তাদেরকেই আজ অবহেলা ও অবজ্ঞা করছেন? কিসের মোহে রঙ্গিন স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন আপনারা? এভাবেই চলতে থাকলে মুখ লুকানোর যায়গা থাকবেনা। অনেক বিষয়ে পরীলক্ষিত হয়েছে আপনারা মুখে বলেন একটা বাস্তবে করেন আরেকটা। এটা কোনো জনপ্রতিনিধির ও নেতার বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত নয়। অনেক স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন, দলের ভবিষ্যত মঙ্গল কামনা করে স্বেচ্ছাচারী মনোভাব থেকে সরে আসেন। দলের দুর্দিনের ত্যাগী লোকজনকে ভালবেসে কাছে টেনে নেন, সব কিছুর মাঝে সাভাবিকতা ফিরে আসবে। মাঝে মাঝে মনে হয় বর্তমানে দলের অনেক নেতাদের মাঝে খন্দকার মোস্তাকের চরিত্রের বা বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব ঘটেছে। এখনো সময় আছে এহেন বৈশিষ্ট্য ও কর্মকাণ্ড পরিহার করে নিজেকে সংশোধন করে দলিয়প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনার চরিত্র, বৈশিষ্ট্য অনুসরন করুন এবং দেশ ও জনগনের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করুন। এবং পাশাপাশি দলের দুর্দিনের ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতা কর্মীদের কে কাছে ডেকে দলের কর্মকান্ডে নিয়োজিত করুন তবেই সবকুল ঠিক থাকবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।। (চলবে)