পাইকগাছায় অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি মালিক প্রফেসর এনামুল হককে জরিমানা, উচ্ছেদ না করায় ক্ষোভ
- আপডেট টাইম : ০৪:১০:১৫ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ ২০২২
- / ২৮২ ৫০০০.০ বার পাঠক
শেখ সিরাজুল ইসলাম।।
পাইকগাছায় পরিবেশ বিধ্বংসী অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি মালিক প্রফেসর এনামুল হক-কে দশ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল (৯ মার্চ) বুধবার বিকালে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহি অফিসার মমতাজ বেগম এই ভ্রাম্যমান ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। এসময় উপজেলা নির্বাহি অফিসারের সাথে উপস্থিত ছিলেন একজন পেশকার ও চাঁদখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাদা আবু ইলিয়াস। চাঁদখালী এলাকায় অসংখ্য পরিবেশ বিধ্বংসী অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি উচ্ছেদ না করে চলমান রেখে একজন চুল্লি মালিককে সীমিত অর্থ দণ্ড দেয়ায় এলাকায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে পরিবেশ বিধ্বংসী অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি বাঁচিয়ে দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। পুনরায় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি উচ্ছেদসহ এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ভুক্তভোগীদের। অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি উচ্ছেদসহ এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। কিছুদিন পুর্বে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি আবেদন করা হয়েছিল বলে জানান একজন ভুক্তভোগী। পরিবেশ বিধ্বংসী অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি উচ্ছেদের জন্য উচ্চ আদালতে রিট করা হতে পারে এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, সম্প্রতি চাঁদখালী এলাকার পরিবেশ বিধ্বংসী অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লির বিরুদ্ধে একাধিক পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে চুল্লি মালিকরা, তারা আরো বলেন চুল্লি ব্যবসায়ীরা গোপনে চুল্লি প্রতি দুই হাজার করে টাকা উঠিয়েছেন চুল্লি বাচানোর জন্য। উল্লেখ্য, খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের চাঁদখালী বাজার হতে পার্শ্ববর্তী কয়রার নকশা পর্যন্ত বীরদর্পে চলছে শতাধিক কাঠ কয়লার চুল্লি। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাশে ও জনবসতি এলাকায় এই অবৈধ চুল্লি চালানো হচ্ছে। একেকটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ মন থেকে ৩০০ মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। প্রতিমাসে প্রত্যেকটি চুল্লিতে তিন থেকে চারবার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করা হয়। প্রতিমাসে এসব চুল্লিতে লক্ষাধিক মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ফলে ধ্বংস হচ্ছে গাছগাছালি, উজাড় হচ্ছে বন, মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। অধিক লাভজনক হওয়ায় সব দিক ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসায় নেমে পড়েছেন এলাকার প্রভাবশালীরা। পাইকগাছার চাঁদখালী বাজারের পর থেকে সারিবদ্ধ ভাবে অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালাচ্ছেন , মিন্টু , মিঠু, দিপু, জিয়া ,লাচু , হাবিব , খোকন মেম্বার, সাঈদ, শাহাদাত এনামুল মাষ্টার, আইয়ুব, জিল্লু সহ কয়েকজন। পার্শ্ববর্তী কয়রা উপজেলার নকশা এলাকায় অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালাচ্ছেন মোঃ ইকরামিন সহ কয়েকজন। অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালানোর জন্য চুল্লি মালিকদের রয়েছে একটি কমিটি। এই কমিটি অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সবদিক ম্যানেজ করে থাকেন। জানা গেছে কমিটির নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি ব্যবসায়ী খোকন মেম্বার। জানতে চাইলে সাবেক এই মেম্বার অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, কাঠ-কয়লার চুল্লির কারণে রাস্তা দিয়ে চলা যায় না, চোখ জ্বালা করতে থাকে, দম বন্ধ হয়ে আসে। এলাকাবাসী আরও বলেন, এসকল কাঠ কয়লার চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তারা আরো বলেন, এসব কয়লার চুল্লি মালিকরা এলাকার প্রভাবশালী মহল সহ বিভিন্ন মহল ম্যানেজ করে এই অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন, যে কারণে তাদের এই অবৈধ কাজে তেমন কোনো বাধা আসে না এবং কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতে সাহস পায় না। এলাকাবাসী আরও বলেন, এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের উপরে বড় বড় নেতাদের ছায়া রয়েছে। এখান থেকে আয়ের একটি বড় অংশ গোপনে বিভিন্ন মহলে চলে যায়। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এ এলাকাটি অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লির নগরীতে পরিণত হয়েছে। পাইকগাছা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছগাছালি ও বন উজাড় করে সারিবদ্ধ ভাবে বিভিন্ন যানবাহনে তাজা কাচা কাঠ গিয়ে পৌছাচ্ছে এসব কাঠ-কয়লা চুল্লিতে। কোন প্রকার বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই বীরদর্পে কাঠ কয়লার চুল্লি চালানো হচ্ছে। কাঠ কয়লার চুল্লি চালানোর জন্য বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জিল্লু, খোকন মেম্বার, এনামুল মাষ্টার ও মিঠু নামের চুল্লি মালিক বলেন, আমাদের কোনো কাগজপত্র নাই, বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে এটা চালাতে হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে চুল্লি মালিক জিল্লু বলেন, বছরে একবার খুলনা থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন আসেন, কিন্তু আসার আগে ফোনে জানিয়ে দেয় তখন সবাই কয়েকদিন চুল্লি বন্ধ রাখে। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি কয়েকটি ইট ভাটায় সমানতালে বিপুল পরিমাণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। পরিবেশ বিধ্বংসী অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি উচ্ছেদসহ এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য ভুক্তভোগী এলাকাবাসী উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।