পাইকগাছায় পরিবেশ বিধ্বংসী অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালাচ্ছেন কলেজ শিক্ষক, নিয়ন্ত্রক সাবেক মেম্বার
- আপডেট টাইম : ০৭:২৬:১৭ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ২ মার্চ ২০২২
- / ২৯৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
শেখ সিরাজুল ইসলাম।।
খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী কালিদাসপুর গ্রামে অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালাচ্ছেন একই গ্রামের মৃত মাওলানা নুরুল ইসলাম গাজীর ছেলে বড়দল কলেজের প্রভাষক এনামুল হক গাজী। মানুষ ও পরিবেশ গড়ার কারিগর হয়ে তিনি মানুষ ও পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড করায় বিষয়টি নিয়ে নিন্দার ঝড় বইছে। এলাকায় অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লির ব্যবসা তিনি একা করছেন তা নয়। তবে একজন শিক্ষক হয়ে এত বড় ক্ষতিকর বেআইনি কাজ করায় বিষয়টি এখন সকলের মুখে মুখে। এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, এনামুল মাষ্টার ওয়াপদার জায়গা দখল নিয়ে পাঁচালী দিয়ে অবৈধ ভাবে কাঠ কয়লার চুল্লি সহ বিল্ডিং বানিয়েছেন, রাস্তার ধারে বালু মজুদ রেখে ব্যবসা করছেন। জানতে চাইলে এনামুল মাষ্টার বলেন, জায়গা আমার একজনের কাছ থেকে কেনা। একজন শিক্ষক হয়ে বেআইনি কাজ কেন করছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বিভিন্ন ভাবে এড়িয়ে যান। এছাড়াও পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের চাঁদখালী বাজার হতে পার্শ্ববর্তী কয়রার নকশা পর্যন্ত বীরদর্পে চলছে শতাধিক কাঠ কয়লার চুল্লি। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাশে ও জনবসতি এলাকায় এই অবৈধ চুল্লি চালানো হচ্ছে। একেকটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ মন থেকে ৩০০ মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। প্রতিমাসে প্রত্যেকটি চুল্লিতে তিন থেকে চারবার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করা হয়। প্রতিমাসে এসব চুল্লিতে লক্ষাধিক মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ফলে ধ্বংস হচ্ছে গাছগাছালি, উজাড় হচ্ছে বন, মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। অধিক লাভজনক হওয়ায় সব দিক ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসায় নেমে পড়েছেন এলাকার প্রভাবশালীরা। পাইকগাছার চাঁদখালী বাজারের পর থেকে সারিবদ্ধ ভাবে অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালাচ্ছেন , মিন্টু , মিঠু, দিপু, জিয়া ,লাচু , হাবিব , খোকন মেম্বার, সাঈদ, শাহাদাত এনামুল মাষ্টার, আইয়ুব, জিল্লু সহ কয়েকজন। পার্শ্ববর্তী কয়রা উপজেলার নকশা এলাকায় অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালাচ্ছেন মোঃ ইকরামিন সহ কয়েকজন। অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালানোর জন্য চুল্লি মালিকদের রয়েছে একটি কমিটি। এই কমিটি অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সবদিক ম্যানেজ করে থাকেন। জানা গেছে কমিটির নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি ব্যবসায়ী খোকন মেম্বার। কথিত এই খোকন মেম্বারের রয়েছে ইটভাটা। এই ইটভাটার কাজে ব্যবহৃত বেশিরভাগ জমি সরকারি এবং সরকারি জায়গার মাটি কেটে ভাটায় ইট তৈরীর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। একই সাথে এই ইটভাটায় অবৈধভাবে পোড়ানো হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কাঠ। জানতে চাইলে সাবেক এই মেম্বার অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমরা যে যার মত চুল্লি চালায়। তিনি আরো বলেন, আমি সরকারি দল করি, এমপি মানে উপজেলা যুবলীগ মানে ইউনিয়ন যুবলীগের সেক্রেটারি আমি, সবাই আমার দোহাই দিয়ে পার পেয়ে যাবে তা হবে না। কথা বলার সময় সাবেক এই মেম্বারের কথাগুলো জড়িয়ে ওলট পালট হয়ে যাচ্ছিল। তবে খোকন মেম্বার অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও চুল্লি মালিক মিঠু সহ দূই চুল্লি মালিক ও এলাকার অনেকেই সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, কাঠ-কয়লার চুল্লির কারণে রাস্তা দিয়ে চলা যায় না, চোখ জ্বালা করতে থাকে, দম বন্ধ হয়ে আসে। এলাকাবাসী আরও বলেন, এসকল কাঠ কয়লার চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তারা আরো বলেন, এসব কয়লার চুল্লি মালিকরা এলাকার প্রভাবশালী মহল সহ বিভিন্ন মহল ম্যানেজ করে এই অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন, যে কারণে তাদের এই অবৈধ কাজে তেমন কোনো বাধা আসে না এবং কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতে সাহস পায় না। এলাকাবাসী আরও বলেন, এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের উপরে বড় বড় নেতাদের ছায়া রয়েছে। এখান থেকে আয়ের একটি বড় অংশ গোপনে বিভিন্ন মহলে চলে যায়। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এ এলাকাটি অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লির নগরীতে পরিণত হয়েছে। পাইকগাছা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছগাছালি ও বন উজাড় করে সারিবদ্ধ ভাবে বিভিন্ন যানবাহনে তাজা কাচা কাঠ গিয়ে পৌছাচ্ছে এসব কাঠ-কয়লা চুল্লিতে। কোন প্রকার বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই বীরদর্পে কাঠ কয়লার চুল্লি চালানো হচ্ছে। কাঠ কয়লার চুল্লি চালানোর জন্য বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জিল্লু, খোকন মেম্বার, এনামুল মাষ্টার ও মিঠু নামের চুল্লি মালিক বলেন, আমাদের কোনো কাগজপত্র নাই, বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে এটা চালাতে হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে চুল্লি মালিক জিল্লু বলেন, বছরে একবার খুলনা থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন আসেন, কিন্তু আসার আগে ফোনে জানিয়ে দেয় তখন সবাই কয়েকদিন চুল্লি বন্ধ রাখে। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি কয়েকটি ইট ভাটায় সমানতালে বিপুল পরিমাণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাদা আবু ইলিয়াস বলেন, আমি অল্প কিছুদিন হলো চেয়ারম্যান হয়েছি, কয়লার চুল্লির বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। তবে এলাকার অনেকে বলছেন, চেয়ারম্যানের এক আপনজন এই অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লির ব্যবসা করছেন যে কারণে তিনি কোন ব্যবস্থা নিবেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় পরিচালক সাইফুর রহমান খান বলেন, আমরা যেখানে এ ধরনের অভিযোগ পাচ্ছি সেখানেই অভিযান চালাচ্ছি, ম্যাজিস্ট্রেট পেলেই চাঁদখালী ও নাকশা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। জানতে চাইলে খুলনা বিভাগীয় বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।