বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি শিবিরে একটি ছেলে প্লাস্টিকের বোতলে পানি ভরছে। ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় পুরো এলাকা ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবারগুলো বহুবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো তছনছ হয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রভাব দেখা দিয়েছে মাটির ও পানির উপর, যা স্থানীয়দের জীবনধারার প্রধান উৎস।
চার সপ্তাহের এক ভঙ্গুর স্থগিত যুদ্ধের পর পরিবেশগত ক্ষতির চিত্র ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যদিও ইসরায়েল প্রতিদিন এই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে।
গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকায় আগে যেখানে এক জীবনোজ্জ্বল সম্প্রদায় বসবাস করত, আজ সেখানে ধ্বংসস্তূপ আর দূষিত জল ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। একসময় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য তৈরি পুকুরটি এখন ময়লা ও ফ্লুয়ের পানিতে ভরা। বহু পরিবার এই পুকুরকে বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করলেও এটি জীবন বিপন্ন করছে।
প্রসূত মহিলা উম্ম হিশাম তার সন্তানদের সঙ্গে দূষিত পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। তিনি জানান, ‘আমরা শেখ রাদওয়ান পুকুরের আশেপাশে আশ্রয় নিয়েছি। মশা, দূষিত পানি, চারপাশের ধ্বংস—সবই আমাদের জীবন ও সন্তানদের জীবনের জন্য বিপজ্জনক।’
পুকুরটি মূলত বৃষ্টির পানি সংগ্রহ এবং সাগরে ছাড়ার জন্য তৈরি হয়েছিল। তবে ইসরায়েলের বিমান হামলায় পাম্পগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এখন সেখানে কাঁচা ময়লা ও ময়লা পানি জমছে। বিদ্যুৎ ও নিকাশি ব্যবস্থাও ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায় পানির স্তর ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে এবং আশেপাশের ঘর ও টেন্ট ডুবতে পারে।
গাজা সিটি মিউনিসিপ্যাল কর্মকর্তা মাহের সালেম জানান, ‘দূষিত পানি ছড়িয়ে দিচ্ছে দুর্গন্ধ, পোকামাকড় ও মশা। পানি ৬ মিটার পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, বেড়া ধ্বংসপ্রাপ্ত। কোনো শিশু, নারী বা বৃদ্ধও পুকুরে পড়ে যেতে পারে।’
স্থানীয় কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, স্থির জল সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। তবু অনেকের কাছে বিকল্প নেই। আল জাজিরার হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘পরিবারগুলো জানে যে কূপ, জলবাহী ট্রাক বা পাত্রের পানি দূষিত, কিন্তু অন্য কোনো বিকল্প নেই।’
পানির অব্যবস্থাপনা ও ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামোতে আরও একটি উদ্বেগজনক বিষয় যোগ হয়েছে। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত COP30 জলবায়ু সম্মেলনে প্যালেস্টাইন দূত ইব্রাহিম আল-জেবেন বলেন, ‘গাজায় পরিবেশগত দুর্যোগ চলছে, যা ইসরায়েলের গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত। প্রায় ২.৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ ৬১ মিলিয়ন টনের বেশি, যার অনেক অংশে হুমকিস্বরূপ বর্জ্য রয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘স্যানিটেশন ও পানির নেটওয়ার্ক ধ্বংস হওয়ায় ভূ-জল ও উপকূলীয় পানি দূষিত হয়েছে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি বেড়ে গেছে।’ ইসরায়েলের হামলায় গাজার কৃষিজমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা সেখানে খাদ্য নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।
একই সময়, জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় মিঠাপানি সরবরাহ সীমিত এবং বাকি অনেকটাই দূষিত”। স্যানিটেশন অবকাঠামোর ধ্বংস ও পাইপের ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন ভূ-গভীর পানি দূষণে প্রভাব ফেলেছে।
শেখ রাদওয়ানে ফিরে দেখা যায়, বাতাসে ঘোর বিষাদ ও দুর্গন্ধ ভাসছে। আল জাজিরার মাহমুদ বলেন, ‘প্রতিদিন পানি, খাবার ও রুটি খুঁজে বের করার জন্য লড়াই করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা দ্বিতীয় পর্যায়ে চলে আসে।’
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ বোরহান হাওলাদার জসিম, সহ-সম্পাদক মোসাম্মৎ সাথী আক্তার, নির্বাহী সম্পাদক, সরকার জামাল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, মাহফুজুর রহমান দীপ্ত, অতিরিক্ত মফস্বল, সম্পাদক জসীমউদ্দীন রাজিব বার্তা সম্পাদক মোঃ ফোরকান কাজী
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয় : ৪৩, হাটখোলা রোড চৌধুরী মল), টিকাটুলী, ঢাকা-১২০৩
সম্পাদকীয় কার্যালয় :১৯০,সি জামে মসজিদ রোড ফকিরাপুল মতিঝিল ঢাকা -১০০০
ইমেইলঃ-D[email protected]
© SomoyerKonthaNewspaper@