জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত
মাত্র এক বছর আগেও জোহরান মামদানি ছিলেন রাজনীতির অচেনা মুখ। এখন তিনি ৩৪ বছর বয়সে নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় মেয়র—যার প্রভাব শহর ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো আমেরিকায়, এমনকি বিশ্বজুড়ে।
ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট হিসেবে তার উত্থান ছিল বজ্রগতির। তরুণ ভোটারদের সক্রিয়তা, তৃণমূলভিত্তিক প্রচারণা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাস্যরসাত্মক কিন্তু মানবিক বার্তার মধ্য দিয়ে তিনি তৈরি করেছেন এক নতুন রাজনৈতিক ধারা।
তার জনপ্রিয় স্লোগান ‘জীবন এত কঠিন হতে হবে না’ দ্রুত ভাইরাল হয়। কখনও ‘হালালফ্লেশন’ শব্দের উদ্ভাবন, কখনও কনি আইল্যান্ডের ঠান্ডা ঢেউয়ে ঝাঁপ দেওয়ার অঙ্গীকার বা ভাড়া স্থিতিশীল রাখার প্রতিশ্রুতি—এসব তাকে তরুণ প্রজন্মের রাজনীতির প্রতীক করে তোলে।
সাবওয়ে ট্রেনে আকস্মিক বিয়ের দৃশ্য বা ম্যারাথনে দৌড়ানোর সময় ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে মন্তব্য—এসব মুহূর্তে তিনি হয়ে ওঠেন সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি। গত বছর তিনি কর্মজীবী কৃষ্ণাঙ্গ ও অভিবাসী ভোটারদের নিয়ে একটি আলোচিত ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে তারা ব্যাখ্যা করেছিলেন কেন কেউ ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন বা ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন।
অন্যদিকে, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর মতো রাজনীতিকরা যখন ধনকুবের দাতাদের টাকায় প্রচারণা চালান, তখন মামদানি ছিলেন মানুষের মাঝে—নিজের সমালোচকদের সঙ্গেও মুখোমুখি আলোচনা করেছেন। ফলে তিনি হয়ে ওঠেন ‘পুরনো রাজনীতি’র বিপরীতে এক তরুণ বিকল্প।
উগান্ডার কাম্পালায় জন্ম নেওয়া মামদানি সাত বছর বয়সে পরিবারসহ নিউইয়র্কে আসেন। তার মা মিরা নায়ার একজন খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা, বাবা মাহমুদ মামদানি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ব্রঙ্কস হাই স্কুল অব সায়েন্সে পড়ার সময় তিনি স্কুলের প্রথম ক্রিকেট দল গঠন করেন। পরে বোডউইন কলেজে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং সেখানেই প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন’ অধ্যায়। ২০১৮ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব অর্জন করেন।
রাজনীতিতে আসার আগে মামদানি কাজ করেছেন কমিউনিটি অর্গানাইজার ও বন্ধক জব্দ প্রতিরোধ পরামর্শক হিসেবে। ২০২০ সালে তিনি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ৩৬তম জেলা থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে প্রথম দক্ষিণ এশীয়, প্রথম উগান্ডান ও তৃতীয় মুসলিম হিসেবে ইতিহাস গড়েন।
২০২১ সালে তিনি সিরীয় বংশোদ্ভূত শিল্পী রামা দুয়াজির সঙ্গে পরিচিত হন এবং চলতি বছরের শুরুতে সিটি হলে বিয়ে করেন।
গত জুনে ডেমোক্রেটিক মেয়র প্রাইমারিতে ব্যাপক ব্যবধানে জয়ের পর তিনি ধীরে ধীরে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস, গভর্নর ক্যাথি হোচুল ও কংগ্রেস নেতা হাকিম জেফরিসসহ শীর্ষ ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন পান। ছোট ছোট তৃণমূল অনুদানেও গতি পায় তার প্রচারণা।
টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে নীতিগত বার্তাভিত্তিক কনটেন্টের মাধ্যমে তিনি তরুণ ও প্রথমবারের ভোটারদের রাজনীতিতে টেনে এনেছেন। তার অঙ্গীকার—ভাড়ার লাগাম টানা, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, সাশ্রয়ী শিশু যত্ন, সহজলভ্য মুদি বাজার ও গণপরিবহন। পাশাপাশি তিনি ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধি, করপোরেট ট্যাক্স বাড়ানো এবং সিটি-মালিকানাধীন মুদি দোকানের প্রস্তাব দিয়েছেন।
বর্ণবাদ ও ইসলামোফোবিয়ায় ভরা বিরোধী প্রচারণার মুখেও মামদানি প্রচারণা চালিয়েছেন উর্দু, হিন্দি ও স্প্যানিশ ভাষায়—মসজিদ থেকে নাইট শিফটের কারখানা পর্যন্ত গিয়ে। মুসলিম পরিচয়ের গর্ব, গাজা ইস্যুতে অবস্থান ও অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার ভূমিকা তাকে করে তুলেছে নতুন প্রজন্মের প্রেরণার প্রতীক।
রিপাবলিকানদের কাছে তিনি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু, আর ডেমোক্র্যাটিক মূলধারার কাছে ঝুঁকিপূর্ণ এক নতুন ধারার প্রতীক। তবে তার নীতিগুলো হাজারো নিউইয়র্কবাসীর সঙ্গে গভীর সাড়া ফেলেছে—বিশেষত তরুণদের মধ্যে, যারা জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি ও স্থবির রাজনীতিতে ক্লান্ত।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের হুমকি, ফেডারেল তহবিল বন্ধের আশঙ্কা এমনকি মামদানিকে ‘দেশ থেকে বহিষ্কার’ করার হুমকি—সব মিলিয়ে এই নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক মোড় তৈরি করেছে।
৯/১১-পরবর্তী প্রজন্মের এক তরুণ মুসলিম হিসেবে মামদানির উত্থান ঘটেছে এমন এক সময়ে, যখন শ্বেত জাতীয়তাবাদ ও কর্তৃত্ববাদ আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে আমেরিকায়। তবু তিনি দৃঢ় থেকেছেন নিজের মূল বার্তায়—‘নিউইয়র্কের জীবনকে আরও সাশ্রয়ী ও ন্যায্য করতে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে।’
এখন নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় মেয়র হিসেবে জোহরান মামদানি আমেরিকান রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায় সূচনা করছেন। তার সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক, কিন্তু শহরটি তাকিয়ে আছে—এক নতুন সূর্যোদয়ের দিকে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ বোরহান হাওলাদার জসিম, সহ-সম্পাদক মোসাম্মৎ সাথী আক্তার, নির্বাহী সম্পাদক, সরকার জামাল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, মাহফুজুর রহমান দীপ্ত, অতিরিক্ত মফস্বল, সম্পাদক জসীমউদ্দীন রাজিব বার্তা সম্পাদক মোঃ ফোরকান কাজী
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয় : ৪৩, হাটখোলা রোড চৌধুরী মল), টিকাটুলী, ঢাকা-১২০৩
সম্পাদকীয় কার্যালয় :১৯০,সি জামে মসজিদ রোড ফকিরাপুল মতিঝিল ঢাকা -১০০০
ইমেইলঃ-D[email protected]
© SomoyerKonthaNewspaper@