সিলেট | বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সিলেট নগরীর দীর্ঘদিনের যানজট, অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাত দখল সমস্যার সমাধানে একযোগে মাঠে নেমেছেন সদ্য যোগ দেওয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সারোয়ার আলম এবং সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) নতুন কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দুজনের কঠোর পদক্ষেপে নগরে শৃঙ্খলা ফেরার পথ তৈরি হয়েছে। এতে স্বস্তি ফিরছে সাধারণ মানুষের জীবনে এবং নগরবাসী তাদের প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন।
হকার পুনর্বাসন ও ফুটপাত উন্মুক্ত
গত ২২ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর ডিসি মো. সারোয়ার আলম নগরীর ফুটপাত ও রাজপথ দখলমুক্ত করতে হকার পুনর্বাসন কার্যক্রম হাতে নেন। লালদিঘীরপারে হকার্স মার্কেটকে প্রস্তুত করে সেখানে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিসি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—“রাজপথে কোনোভাবেই হকার বসতে পারবে না।” বাজার পুরোপুরি প্রস্তুত হলে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে।
অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান
১০ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব নেওয়ার পরই পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি ও অন্যান্য যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু করেছেন।
সাম্প্রতিক তিন দিনের অভিযানে আটক ও মামলার হিসাব—
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (সোমবার):
আটক ৮৭টি যানবাহন → ব্যাটারিচালিত রিকশা ৬৫, সিএনজি ৫, লেগুনা ১, মোটরসাইকেল ১৪, ট্রাক ১, পিকআপ ১।
মামলা ১৭টি → সিএনজি ২, মোটরসাইকেল ১১, কার ২, পিকআপ ১, ট্রাক ১টি।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (মঙ্গলবার – বিশেষ অভিযান):
আটক ১০৫টি যানবাহন → ব্যাটারিচালিত রিকশা ৬৬, সিএনজি ৫, লেগুনা ৩, মোটরসাইকেল ২৮, ট্রাক ২, পিকআপ ১।
মামলা ৩২টি → সিএনজি ১০, মোটরসাইকেল ১৭, মাইক্রোবাস ১, ট্রাক ৩, পিকআপ ১।
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বুধবার):
আটক ৬৯টি যানবাহন → ব্যাটারিচালিত রিকশা ৪৪, সিএনজি ২, মোটরসাইকেল ২২, পিকআপ ১।
মামলা ৩১টি → সিএনজি ৪, মোটরসাইকেল ১৮, ট্রাক ২, মাইক্রোবাস ২, কার ৩, পিকআপ ২।
নগরের যানজট কমাতে এসএমপি ও সিটি করপোরেশন যৌথভাবে ৩০টি বৈধ সিএনজি ও লেগুনা স্ট্যান্ড নির্ধারণ করেছে। এসব স্ট্যান্ডের বাইরে কোনো যানবাহন দাঁড়ালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ডিসি সারোয়ার আলম বলেন, “নগরীর উন্নয়ন হবে, তবে তা হবে টেকসই। রাস্তা-ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করার সুযোগ আর দেওয়া হবে না।”
পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী বলেন “অবৈধ যানবাহন সড়ক থেকে সরাতে সময় দেওয়া হয়েছিল। এখন আর ছাড় নয়—শৃঙ্খলা ফেরাতেই কঠোর অভিযান চলছে।”
ডিসি ও পুলিশ কমিশনারের এমন উদ্যোগে নগরবাসীর মাঝে স্বস্তির প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
নগরের ফুটপাত উন্মুক্ত হওয়া এবং সড়কে অবৈধ যানবাহন কমে আসায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। তাদের মতে, নতুন ডিসি ও পুলিশ কমিশনারের উদ্যোগে সিলেট ধীরে ধীরে হকারমুক্ত ও যানজটমুক্ত হয়ে উঠছে। এ দৃঢ় পদক্ষেপ নগরবাসীর মনে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে।
প্রবীণ সাংবাদিক আফতাব চৌধুরী জানিয়েছেন—
“দীর্ঘদিনের যানজট, অবৈধ পার্কিং আর ফুটপাত দখলের সমস্যায় নগরবাসী ভুগছিলেন। নতুন ডিসি ও কমিশনার দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগে সিলেট নগরীতে সত্যিই ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে নগরবাসী আবারও একটি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও চলাচলযোগ্য নগরী ফিরে পাবে এবং এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাব।”
সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলজার আহমদ হেলাল জানান “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া নগরে শৃঙ্খলা ফিরবে না। এই পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই এবং এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আশা করি।”
সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারের ব্যবসায়ী মোঃ মাসুক মিয়া বলেন “এখন ফুটপাত দিয়ে নির্বিঘ্নে হাঁটা যায়, এটা সত্যিই স্বস্তির।"
উপশহর ব্যবসায়ী সমিতি (ইএফ) সাধারণ সম্পাদক ফলুর রহমান বলেছেন “দীর্ঘদিনের সমস্যায় নগরবাসী ভুগছিল। নতুন ডিসি ও কমিশনারের উদ্যোগ সিলেট নগরবাসির ভালোবাসায় ভাসছেন প্রশাসন।”
সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী জানিয়েছেন “আগে স্কুলে যাওয়া-আসায় প্রচুর কষ্ট হতো, এখন অনেকটা সহজ হয়েছে।”
চাকরিজীবী আনোয়ার হোসেন বলেন “অবৈধ সিএনজি আর ব্যাটারিচালিত রিকশার ভিড়ে সড়ক অচল হয়ে যেত। অভিযান চালানোর পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।”
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ বোরহান হাওলাদার জসিম, সহ-সম্পাদক মোসাম্মৎ সাথী আক্তার, নির্বাহী সম্পাদক, সরকার জামাল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, মাহফুজুর রহমান দীপ্ত, অতিরিক্ত মফস্বল, সম্পাদক জসীমউদ্দীন রাজিব বার্তা সম্পাদক মোঃ ফোরকান কাজী
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয় : ৪৩, হাটখোলা রোড চৌধুরী মল), টিকাটুলী, ঢাকা-১২০৩
সম্পাদকীয় কার্যালয় :১৯০,সি জামে মসজিদ রোড ফকিরাপুল মতিঝিল ঢাকা -১০০০