যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-সিক্স এবং স্পেশাল ফোর্সের সদস্যসহ ১০০ জনেরও বেশি ব্রিটিশ কর্মকর্তার গোপনীয় তথ্য চুরির ঘটনা ঘটেছে। হাজার হাজার আফগান নাগরিকের তথ্যের সঙ্গে এসব কর্মকর্তাদের নাম-পরিচয়ও ফাঁস হয়ে গেছে।
এ ঘটনার ফলে সৃষ্ট বিপর্যয় এবং তার সর্বশেষ পরিণতি সম্পর্কে তথ্য একটি নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে গোপন রাখা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের একজন বিচারক আংশিকভাবে ওই আদেশটি প্রত্যাহার করেন। খবর বিবিসি বাংলার।
যার ফলে মিডিয়া সংস্থাগুলোও ঘটনাটি প্রকাশ করতে পেরেছে। যেখানে বলা হয়, ডাটাবেসে থাকা বিস্তারিত কেসনোটগুলোয় বিশেষ বাহিনী এবং গুপ্তচরদের গোপন ব্যক্তিগত তথ্য রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের সরকার ইতোমধ্যে স্বীকার করেছে, আফগানিস্তানে ২০ বছর ধরে চলা যুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের সঙ্গে কাজ করা এবং যুক্তরাজ্যে পুনর্বাসনের জন্য আবেদনকারী প্রায় ১৯ হাজার আফগানের তথ্য অসাবধানতাবশত ফাঁস হয়ে গেছে।
সংঘাতের সময় ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে কাজ করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার দাবি জানিয়েছিল তালেবানরা, তাই অনেকেরই গুরুতর ক্ষতি এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল বলেৃও জানানো হয়েছিল।
এই কারণেই তাদের তথ্যভাণ্ডার তথাকথিত ‘সুপার-ইনজাংশন’ বা বিশেষ নিষেধাজ্ঞা দ্বারা সুরক্ষিত ছিল। এটি এমন এক ধরনের আদেশ যা এর অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রতিবেদন করতেও বাধা দেয়।
তথ্যটি জানতে পেরে আফগানিস্তানের একজন ব্যক্তি এর কিছু অংশ ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন এবং ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তিনি বাকিগুলোও প্রকাশ করতে পারেন। অথচ তথ্য ফাঁসের এই ঘটনাটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘটলেও ২০২৩ সালের অগাস্ট পর্যন্ত সরকার তা বুঝতেই পারেনি।
বুধবার বিবিসি জানতে পেরেছে যে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ওই ব্যক্তির আবেদন পর্যালোচনা করার কাজটি দ্রুত নিষ্পন্ন করার প্রস্তাব দিয়েছে এবং তথ্য পোস্ট করার পরে তাকে দেশে নিয়ে এসেছে।
এমন ধারাবাহিক কয়েকটি ঘটনাকে মূলত ‘ব্ল্যাকমেইল’ বলে দাবি করেছে সরকারি সূত্রগুলো।
ওই ব্যক্তির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে তারা এটি বলেছে, আফগান নাগরিকদের স্থানান্তর প্রকল্পের অধীনে যদি কেউ যুক্তরাজ্যে আসে তাহলে তাকে প্রবেশের জন্য কঠোর নিরাপত্তা পরীক্ষা দিতে হবে।
২০২৩ সালে এই তথ্য ফাঁসের ঘটনা সামনে আসার পর যুক্তরাজ্য সরকার গোপনে আফগানিস্তান রেসপন্স রুট (এআরআর) প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য হয় - যা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য একটি পুনর্বাসন প্রকল্প, যাদের নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তথ্য ফাঁসের বিষয়ে জানানো হয়নি।
এই প্রকল্পটি ইতোমধ্যে চার হাজার ৫০০ আফগান এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাজ্যে স্থানান্তরের অনুমতি দিয়েছে এবং আরও দুই হাজার ৪০০ জনকে যুক্তরাজ্যে স্থানান্তরিত করার সম্ভাবনা রয়েছে, যাতে আনুমানিক ব্যয় হবে ৮৫০ মিলিয়ন পাউন্ড।
লন্ডনে যুক্তরাজ্যের বিশেষ বাহিনীর সদর দপ্তরে কর্মরত একজন ব্যক্তি অসাবধানতাবশত ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের পুনর্বাসনের আবেদন ইমেইল করার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে, তিনি ভেবেছিলেন যে তিনি মাত্র ১৫০ জনের তথ্যই পাঠাচ্ছেন।
মঙ্গলবার কঠোর-নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহারের পর, একটি দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বিশেষ বাহিনী এবং নিরাপত্তা পরিষেবার ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ রোধ করা সম্ভব হয়েছিল।
কিন্তু বৃহস্পতিবার এটিও প্রত্যাহার করা হয়। এর ফলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং গণমাধ্যম সংস্থার একটি গ্রুপের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীরা একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন যার অর্থ হলো- সাংবাদিকরা এই ঘটনার কিছু তথ্য নিয়ে রিপোর্ট করতে পারবেন।
মঙ্গলবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি পার্লামেন্টে বলেন যে, এই তথ্য ফাঁসের ঘটনাটি একটি ‘গুরুতর বিভাগীয় ত্রুটি’ এবং স্বীকার করেছেন যে এটি আফগান স্থানান্তর প্রকল্প সম্পর্কিত ‘অনেক তথ্য ক্ষতির মধ্যে একটি’।
সাবেক কনজারভেটিভ সরকার, যারা এই তথ্য ফাঁসের সময় ক্ষমতায় ছিলেন, তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়েছেন যুক্তরাজ্যের ছায়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস কার্টলিজ।
তথ্য ফাঁসের ফলে আফগানিস্তানের কতজন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তালেবান সরকার বৃহস্পতিবার জানিয়েছে যে তারা তথ্য ফাঁসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত আফগানদের গ্রেফতার বা নজরদারি করেনি।
তবে তথ্য ফাঁসের ঘটনায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের আত্মীয়স্বজনরা বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, পরিবার এখনো ওই দেশে থাকায় তাদের জন্য ভয় পাচ্ছেন।
একজন বলেছেন, তথ্য ফাঁসের পর তালেবানরা তাদের নাম উল্লেখিত আত্মীয়কে খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা জোরদার করেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিশেষ বাহিনী সম্পর্কে মন্তব্য না করা একের পর এক সরকারের দীর্ঘদিনের নীতি।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের কর্মীদের নিরাপত্তাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখি, বিশেষ করে সংবেদনশীল পদে থাকা ব্যক্তিদের, এবং তাদের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সব সময় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ বোরহান হাওলাদার জসিম, সহ-সম্পাদক মোসাম্মৎ সাথী আক্তার, নির্বাহী সম্পাদক, সরকার জামাল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, মাহফুজুর রহমান দীপ্ত, অতিরিক্ত মফস্বল, সম্পাদক জসীমউদ্দীন রাজিব বার্তা সম্পাদক মোঃ ফোরকান কাজী
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয় : ৪৩, হাটখোলা রোড চৌধুরী মল), টিকাটুলী, ঢাকা-১২০৩
সম্পাদকীয় কার্যালয় :১৯০,সি জামে মসজিদ রোড ফকিরাপুল মতিঝিল ঢাকা -১০০০