৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে শেখ হাসিনা ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা পালিয়ে গেলেও এখনও গণপূর্তে বহাল তবিয়তে রয়েছে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ ঠিকাদার সিন্ডিকেট। বিশেষ করে গণপূর্তের ইএম ডিভিশনগুলোতে একচেটিয়া দাপট চলছে সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত মো. সাইদুল ইসলাম সোরাব। যিনি ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টির মহাসচিব মামুনুর রহমানের মেয়ের জামাই।
৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পরও দাপটের সঙ্গে ব্যাবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন এই সাইদুল ইসলাম। বয়সে তরুণ হলেও সিনিয়র অফিসার ও ঠিকাদারদের পাত্তা দেননা তিনি। আওয়ামী লীগ আমলে ঠিকাদারী লাইসেন্স নিয়ে এককভাবে কাজ করে তার ঠিকাদারী ফার্মের এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট তৈরি করেছেন অনেক। আর এ কারনেই সে অনেক বড় বড় টেন্ডারে অংশ নিয়ে মেট্রিক্সের কারনে কাজ পেয়ে যায়।
ফ্যাসিবাদের দোসর হয়ে এই সময়েও এতো বিপুল সংখ্যক কাজ পাওয়ার পেছনে রয়েছে গণপূর্তের একজন বিতর্কিত কর্মকর্তা। যার বদৌলতে সে একের পর এক কাজ বাগিয়ে নিচ্ছেন। আর এসব কাজ বাগিয়ে নিতে তিনি প্রায়ই অসততার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। মো. নজরুল ইসলাম সচিব হিসেবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে যোগদান করার পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এই সাইদুল ইসলাম। সচিবের কথিত ভাই ‘প্রফেসর মনির’কে নিয়ে সিন্ডিকেট করে ব্যবসা বাগিয়ে নিচ্ছেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রফেসর মনিরকে কাজ দেয়ার জন্য সচিব কাউকে ফোন না করলেও এই সাইদুল তাকে বিভিন্ন অফিসারের কাছে ‘সচিবের ভাই’ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন কাজে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেন। গণপূর্ত অধিদপ্তরের লাইসেন্সিং শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৬ বছর আগেও সাইদুলের কোন লাইসেন্স ছিল না। বিভিন্ন ব্যাক্তির ঠিকাদারী লাইসেন্সে কাজ করতেন। পরে তিনি আল মদিনা ট্রেডার্স নামে একটি লাইসেন্স করে বিপুল কাজ বাগিয়ে নেন।
এসব কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন ইএম এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন, আশরাফ হোসেন, মো. কায়কোবাদ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তৈমুর আলম, মাহবুবুল হক চৌধুরী, হুমায়রা, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, পবিত্র কুমার দাস, ছাত্রলীগ নেতা আবু সুফিয়ান লিমন, ইসকনের সদস্য সমীরণ মিস্ত্রী, আব্দুল হালিম, আবু তালেব, আনোয়ার হোসেনসহ অনেক কর্মকর্তা। তাদের কর্মএলাকায় খোঁজ নিলেও পাওয়া যাবে সাইদুলের দৌরাত্ম্যের খবর।
এই সাইদুল ইসলাম মিরপুরের সরকারি আবাসন প্রকল্পে কাজ, সংসদ ভবন, মন্ত্রিপাড়া ও সচিবালয়ে এককভাবে কাজ করে আসছেন। সম্প্রতি কুমিল্লায় ইএম এর একটি টেন্ডারে ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে কাজ নেয়ার চেষ্টা করেছিল সাইদুল ইসলাম। যাতে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও কাজ নিতে সচিবের ভাইসহ গণপূর্তের এক বিতর্কিত কর্মকর্তাকে দিয়ে চাপ সৃষ্টি করেছিল। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করা হলে এই টেন্ডার নিষ্পত্তির জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. কায়কোবাদ ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল কাইয়ুমের সমন্বয়ে এই কমিটিকে কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সংশ্লিস্ট নির্বাহী প্রকৌশলী প্রথমে ভুয়া সার্টিফিকেট দিলেও পরে তা সংশোধন করে দেন। শর্ত অনুযায়ী এই টেন্ডারে সাইদুলের প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়ার যোগ্য না হলেও রহস্যজনক কারনে এখনো টেন্ডারটি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাইদুলের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। গণপূর্তের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী এ প্রতিবেদককে বলেন, সে অফিসারদের ফোনই ঠিক মতো ধরে না, আবার আপনার ফোন ধরবে।’ এই সাইদুল ইসলাম আওয়ামী লীগ আমলে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ‘জি কে শামীম’ গড়ার কারিগর মো. রফিকুল ইসলামের আত্মীয় পরিচয় দিয়েও অফিসারদের সঙ্গে দাপট দেখাতেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই সাইদুল ইসলাম সোরাব ব্রাম্মণবাড়িয়ার স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক। সে মোহনা টেলিভিশনের নবীনগর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী কামাল মজুমদারের টেলিভিশন চ্যানেলে কাজ করা সাইদুল ইসলাম ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে এলাকা থেকে বিতাড়িত হলেও গণপূর্তে বহাল তবিয়তেই রয়েছেন।
ইতিমধ্যে তার শ্বশুর মামুনুর রশিদ গ্রেফতার হয়ে জুলাই হত্যা মামলায় জেলে রয়েছেন। সাইদুলের নামে ব্রাম্মণবাড়িয়ায় মামলা থাকলেও ঢাকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যেই। আর তার দাপট চলছে গণপূর্ত ইএম বিভাগগুলোতে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ বোরহান হাওলাদার জসিম, সহ-সম্পাদক মোসাম্মৎ সাথী আক্তার, বার্তা সম্পাদক মোঃ ফোরকান কাজী
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয় : ৪৩, হাটখোলা রোড চৌধুরী মল), টিকাটুলী, ঢাকা-১২০৩
সম্পাদকীয় কার্যালয় :১৯০,সি জামে মসজিদ রোড ফকিরাপুল মতিঝিল ঢাকা -১০০০
ইমেইলঃ-D[email protected]
© SomoyerKonthaNewspaper@