ছবি: সংগৃহীত
খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান বড়দিনের ২৪ ঘণ্টাও আর বাকী নেই। যখন সারাবিশ্বের খ্রিস্টানরা আনন্দ আয়োজনে ব্যস্ত, তখন ভারতে বড়দিনের আনন্দে নেমে এসেছে কালো মেঘের ছায়া।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা হামলা চালাচ্ছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর। মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর থেকে শুরু করে ওড়িষ্যা, হরিদ্বার, এমনকি রাজধানী দিল্লিতে বজরংদলসহ বিভিন্ন উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের হামলার শিকার হচ্ছে খ্রিস্টানরা। কোনো কোনো সময় তাদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে সান্তাক্লজ ক্যাপ খুলে ফেলতে। আবার কোনো স্থানে তাদেরকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে ধর্মান্তরের।
সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে ক্ষমতাসীন বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি অঞ্জু ভার্গবের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায়, গির্জার একটি অনুষ্ঠানে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারী ও তার সন্তানদের ওপর চড়াও হয়েছেন অঞ্জু। তিনি ওই নারীকে লাঞ্চিত করেন। ওই নারীকে উদ্দেশ্য করে অঞ্জুকে বলতে শোনা যায়, তিনি এই জন্মেও দৃষ্টিহীন, আগামী জন্মেও দৃষ্টিহীনই থাকবেন। এমনকি চার্চে সিঁদুর পরে বাচ্চাদের নিয়ে কেন এসেছেন সে প্রশ্নও করেন অঞ্জু।
লিবিয়ায় সেনা প্রধানের মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকলিবিয়ায় সেনা প্রধানের মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক
অবশ্য অঞ্জুর দল দাবি করেছে, দৃষ্টিহীন ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জোর করে ধর্মান্তকরণ করা হতো ওই গির্জায়। সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি। তবে ভুক্তভোগী এবং গির্জা প্রশাসন উভয়ই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা জানান, গির্জার অনুষ্ঠানটি ছিল প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি দাতব্য সমাবেশ। পুলিশ এখনো বিজেপির এই নেতার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এটাই একমাত্র ঘটনা নয়। ভারতের ছত্তিসগড় রাজ্যে খ্রিস্টানদের বাড়িঘর ও গির্জায় আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাজ্যের কানকের জেলায় শেষকৃত্যকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের একটি বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। এছাড়া গির্জায় ভাঙচুর ও প্রার্থনাকক্ষে আগুন দেয় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। এ ঘটনায় পুলিশের ওপর পাথর নিক্ষেপে অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
ছত্তিশগড়ের কাঁকের জেলার বাদেতেভদা গ্রামে কয়েকদিন ধরে একটি খ্রিস্টান পরিবার, স্থানীয় গ্রামবাসী এবং হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধের কারণে উত্তেজনা চলছিল। এক খ্রিস্টান ব্যক্তির বাবার সমাধিস্থলকে কেন্দ্র করে এ বিরোধের সূত্রপাত।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যার জানায়, একটি বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে এবং সম্পত্তি ভাঙচুর হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতে ধনুক-তির নিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা গীর্জার প্রার্থনা কক্ষে তাণ্ডব চালায়।
যুদ্ধের আশঙ্কায় দেশ, বড়দিনের আনন্দে স্বস্তির খোঁজে ভেনেজুয়েলাবাসীযুদ্ধের আশঙ্কায় দেশ, বড়দিনের আনন্দে স্বস্তির খোঁজে ভেনেজুয়েলাবাসী
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৫ ডিসেম্বর। বাদেতেভদা গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রধান রাজমান সালাম তার ৭০ বছর বয়সী অসুস্থ বাবা চামরা রাম সালামকে কানকের জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার বাবা মারা যান। রাজমান বহু বছর আগে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
রাজমান সালাম দ্য ওয়্যারকে জানান, প্রথমে তিনি স্থানীয় হিন্দু রীতিতে বাবার শেষকৃত্য করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খ্রিস্টান হওয়ায় তাকে সেই অনুমতি দেয়া হয়নি।
এরপর ১৬ ডিসেম্বর পরিবারটি নিজেদের ব্যক্তিগত জমিতে খ্রিস্টান রীতি অনুযায়ী শেষকৃত্যের সিদ্ধান্ত নেয়। রাজমানের ভাষ্য অনুযায়ী, শেষকৃত্যের সময় স্থানীয়রা আপত্তি জানালে প্রথমে কথাকাটাকাটি হয়। পরে আরএসএস ও বজরং দলের মতো হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো জড়িত হলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় রাজমানের পরিবার ও বন্ধুদের কয়েকজন আহত হন।
রাজমানের অভিযোগ, পুলিশ তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা নেয়নি, বরং তার পরিবারকে চাপ দিয়ে পিছু হটতে বলে।
মস্কোয় ইউক্রেনের ড্রোন হামলা, তুলা অঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডমস্কোয় ইউক্রেনের ড্রোন হামলা, তুলা অঞ্চলে অগ্নিকাণ্ড
ইউনাইটেড ক্রিশ্চিয়ান ফোরাম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাদেতেভদার ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়। ২০২৫ সালে ভারতজুড়ে শেষকৃত্য সংক্রান্ত অন্তত ২৩টি ঘটনায় খ্রিষ্টানদের ওপর হামলার তথ্য তারা নথিভুক্ত করেছে। এর মধ্যে ছত্তীসগড়েই ঘটেছে ১৯টি ঘটনা। এছাড়া ঝাড়খণ্ডে দুইটি, ওড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গে একটি করে। ২০২৪ সালে প্রায় ৪০টি এ ধরণের ঘটনা ঘটে, ছত্তিশগড়ে ৩০টি, ঝাড়খণ্ডে ৬টি এবং বাকিগুলো বিহার ও কর্ণাটকে।
গত ২০ এপ্রিল গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদ শহরে ইস্টার প্রার্থনা চলাকালে খ্রিষ্টানদের সমাবেশে হামলা চালায় বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) সদস্যরা। তারা প্রার্থনাস্থলে ঢুকে লাঠি হাতে স্লোগান দিতে দিতে হট্টগোল করে।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের খ্রিস্টান সম্প্রদায় ভয় আর আতঙ্কের পরিবেশে বড়দিন উদযাপন করতে যাচ্ছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ বোরহান হাওলাদার জসিম, সহ-সম্পাদক মোসাম্মৎ সাথী আক্তার, বার্তা সম্পাদক মোঃ ফোরকান কাজী
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয় : ৪৩, হাটখোলা রোড চৌধুরী মল), টিকাটুলী, ঢাকা-১২০৩
সম্পাদকীয় কার্যালয় :১৯০,সি জামে মসজিদ রোড ফকিরাপুল মতিঝিল ঢাকা -১০০০
ইমেইলঃ-D[email protected]
© SomoyerKonthaNewspaper@