এদিকে সেবাপ্রার্থীদের ব্যাপক ভোগান্তি ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন জমির নামজারি ও জমাভাগ এবং ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করে নাগরিকরা সরকারের রাজস্ব তহবিলে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। কিন্তু নির্ধারিত ফি দিয়েও যখন ঘুষ প্রদানে বাধ্য হতে হয়, ঘুষ না দিলে হয়রানি করা হয়, তখন সেবাপ্রার্থীরা ক্ষুব্ধ হন, প্রতিকার দাবি করেন। গাজীপুর শহরের রাজবাড়ি সড়বেনা সুরমা রেস্তোরাঁর পাশে অবস্থিত টঙ্গী রাজস্ব সার্কেলে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির সংঘবদ্ধ চর্চা চলছে। ঘুষ ছাড়া মিলছে না সেবা। অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারি না থাকায় অফিসটিতে অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ঘুষের রেট। ফলে ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়েছেন জনসাধারণ। অনুসন্ধানে জানা যায়, ভূমি সংক্রান্ত সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ তিনটি তহশিল অফিস নিয়ে পৃথক টঙ্গী রাজস্ব সার্কেল গঠিত হয়। অফিসগুলো হল টঙ্গী পৌর ভূমি অফিস, গাছা ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও কাশিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কাঙ্ক্ষিত সেবা মেলেনি। যখন যারা দায়িত্বে বসেন, তারা নিজেদের মতো বাণিজ্যের ছক কষেন। তাই সেবাদান কার্যক্রম সহজ না হয়ে ক্রমান্বয়ে জটিল হচ্ছে। বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক গত ২৫ আগস্ট টঙ্গী রাজস্ব সার্কেলে যোগদান করেন। তার যোগদানের পরই ঘুষের রেট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। যা অন্যান্য এসিল্যান্ড অফিসের তুলনায় সর্বোচ্চ। বেশির ভাগ সেবাপ্রার্থী খারিজ সংক্রান্ত বিষয়ে কম বুঝেন। তারা খারিজের জন্য তহশিল অফিসে গেলে ভূমি কর্মকর্তারা দালালদের দেখিয়ে কথা বলতে বলেন। পরে দালালরা চুক্তি করে অনলাইনে আবেদন ও এসিল্যান্ড অফিসে অনুমোদন করানো পর্যন্ত দায়িত্ব নেন। তবে কিছু দালাল এলাকাভিত্তিক বেশি পরিচিত। তারা এলাকা থেকে অনেক খারিজের কাজ পান। আবার উমেদার নামধারী কিছু দালাল অফিসের ভেতরে সরকারি কর্মচারীর মতো নিয়মিত কাজ করেন। বর্তমানে টঙ্গী রাজস্ব সার্কেলে জমির মূল জোতের খারিজপ্রতি ২ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশ পর্যন্ত ঘুষের রেট ১৫ হাজার টাকা, ২০ শতাংশ থেকে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত ৩০ স্বাগতম সহকারী কমিশনার (ভূমি) টাকা, অবমুক্ত হওয়া অর্পিত সম্পত্তির 'খ' তফসিলভুক্ত জমির ক্ষেত্রে মূলের খারিজে ১৯ শতাংশ পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকা, ২০ শতাংশ বা এর বেশি হলে ৬০ হাজার টাকা, খারিজ থেকে খারিজে ১৯ শতাংশ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা এবং ২০ শতাংশ বা এর বেশি হলে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। জমির পরিমাণ আরও বেশি হলে বা কাগজপত্রে কোন ত্রুটি থাকলে মোটা অঙ্কের টাকার চুক্তি ছাড়া কাজ হয়য় না। অফিসের সার্ভেয়ার, নাজির ও তহশিল অফিস সহকারীরা উমেদার বা দালালদের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আদায় করেন। পরে তা পদ অনুযায়ী ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়। তবে বড় অংশ বুঝে নেন এসিল্যান্ড। যা ওপেন সিক্রেট। টঙ্গীর পাগাড় মৌজায় সোয়া ৮ শতাংশ জমির নামজারির জন্য গত ২৮ জুলাই আবেদন করেন মো. মনিরুজ্জামান ও মোছা, কামরুন্নাহার। নথি নম্বর ১৮৭৯/২৫-২৬। টঙ্গী পৌর ভূমি অফিস থেকে নামজারির সুপারিশ করে প্রতিবেদন পাঠানোর পর এসিল্যান্ড মোজাহেরুল হক তা নামঞ্জুর করে দেন। নামঞ্জুরের কারণ হিসেবে মালিকানা স্বত্ব প্রমাণিত না হওয়া ও অসম্পূর্ণ আবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়। পরে গত ২৬ অক্টোবর একই তফসিলের দ্বিতীয়বার আবেদন করা হয়। নথি নম্বর ৭৭১১/২৫-২৬। এবার দাবিকৃত ৩০ হাজার টাকা লেনদেন করায় নামজারিটি দ্রুত অনুমোদন হয়ে যায় বলে অভিযোগ। নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, আবেদিত জমির রেকর্ডীয় শ্রেণি হালিচারা। নামজারির আবেদন, রেজিস্ট্রি দলিল ও পরচায় বর্ণিত দাগের শ্রেণি হালিচারা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এসিল্যান্ড মোজাহেরুল হক স্বাক্ষরিত খতিয়ানে শ্রেণি বদলে গেছে। হালিচারার ছলে উল্লেখ করা হয়েছে অকৃষি শ্রেণির বাড়ি। টঙ্গীর আরিচপুর মৌজায় আড়াই শতাংশ জমির নামজারির জন্য গত ১৪ অক্টোবর আবেদন করেন দিলরুবা আক্তার সুমা ও তার বোন দিলবাহার খানম রুমা। নথি নম্বর ৬৯৫৯/২৫-২৬। টঙ্গী পৌর ভূমি অফিস থেকে নামজারির সুপারিশ করে প্রতিবেদন পাঠানোর পর এসিল্যান্ড গত ৫ ডিসেম্বর তা নামঞ্জুর করেন। নামঞ্জুরের কারণ হিসেবে পূর্বের নামজারি অস্পষ্ট থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। পরে আবেদনকারীরা গত ১৪ ডিসেম্বর রিভিউ আবেদন করেন। আবেদনকারী পক্ষ জানায়, তাদের নামজারি থেকে নামজারির আবেদনটি নামঞ্জুরের আগে কোন কারণ জানানো হয়নি। দাখিলকৃত কাগজপত্র স্পষ্ট থাকার পরও প্রথম আদেশেই অস্পষ্ট দেখিয়ে নামঞ্জুর করা হয়। ৩-এর পাতায় দেখুন হাজার টাকা, ৪০ শতাংশের বেশি হলে ৫০ হাজার টাকা, খারিজ থেকে খারিজে ৬ শতাংশ পর্যন্ত দুই হাজার টাকা, ১৯ শতাংশ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা, ২০ শতাংশ থেকে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা, ৪০ শতাংশ যা এর বেশি হলে ৪০-৫০,ঘুষের উচ্চ রেট, এসিল্যান্ড এতে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অথচ ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পরিপত্রে বলা হয়েছে, কোন তথ্যের ঘাটতি থাকলেই বা তুচ্ছ কারণে নামজারি আবেদন নামঞ্জুর করা যাবে না। আবেদনকারীকে যুক্তিসংগত সময় দিতে হবে। উক্ত সময়ের মধ্যে আবেদনকারী তথ্য বা কাগজপত্র দাখিলে ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় আদেশে নামঞ্জুর করা যাবে। পরবর্তীকালে চাহিত তথ্য বা দলিলপত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে পুনরায় কার্যক্রম চালু করতে হবে। সেবাপ্রার্থীরা জানান, টঙ্গী রাজস্ব সার্কেলে টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না। টাকা না দিলে তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। মিসকেস ও জমির সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত ডিমারকেশনেও বাণিজ্য বেশ। এসব প্রতিকারে জেলা প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরি। এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মোজাহেরুল হকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কল ধরেননি। বিষয়টি উল্লেখ করে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ বোরহান হাওলাদার জসিম, সহ-সম্পাদক মোসাম্মৎ সাথী আক্তার, বার্তা সম্পাদক মোঃ ফোরকান কাজী
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয় : ৪৩, হাটখোলা রোড চৌধুরী মল), টিকাটুলী, ঢাকা-১২০৩
সম্পাদকীয় কার্যালয় :১৯০,সি জামে মসজিদ রোড ফকিরাপুল মতিঝিল ঢাকা -১০০০
ইমেইলঃ-D[email protected]
© SomoyerKonthaNewspaper@