ঢাকা ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি কালিয়াকৈরে পালিত হলো প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪ দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী মেলা অনুষ্ঠিত রায়পুরে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত সেভ দ্য রোডের ১৫ দিনব্যাপী সচেতনতা ক্যাম্পেইন সমাপ্ত জামালপুরে কৃষককূল লাউ চাষে স্বাবম্বিতা অর্জন করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অস্ত্রাগারের ভিডিও সম্প্রচার এক পুলিশ সুপারকে বাধ্যতামূলক অবসর মাদক কারবার-মানি লন্ডারিংয়ে বদির দুই ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে ঠাকুরগাঁওয়ে চেতনা নাশক স্প্রে ব্যবহার করে চুরি এলাকায় আতঙ্ক পরিবারের সংবাদ সম্মেলন মামলা সুষ্ঠু তদন্তের দাবি কলেজ ছাত্রকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর দাবি

“চিনি নিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা শুরু করেছে ইঁদুর-বিড়াল খেলা”

আমরা ইঁদুর-বিড়াল খেলা’র ব্যাখ্যা আমরা খুঁজে পাই বই পুস্তকে। এটিকে আমি সংজ্ঞা হিসেবে বলছি, আমাদের শুরুতর কোনো বিষয়কে হালকাভাবে নেয়ার মানসিকতা অনেকের মাঝে রয়েছে,

আজ আমাদের বাজার ব্যবস্থায়ও বর্তমানে এই ইঁদুর বিড়াল খেলার উদাহরণের সাথে হুবাহু মিলে যায়।
যেমন চিনির মতো একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ন্যায় গুরুতর বিষয়টিকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা মিলে-ইতোমধ্যে অনেক মামুলি বানিয়ে ফেলেছেন।

এই বিষয়টিকে আপনি যখন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন তবে আপনাদের কাছে মনে হতে পারে বাংলাদেশটা যেন এই ইঁদুর বিড়ালের খেলার জায়গা।
তবে এ খেলায় ব্যবসায়ী ইঁদুরেরা,
তারা কখনোই এবং কিছুতেই যেনো বিড়ালের হাতে ধরা পড়ছে না এবং তা সহসা ধরা পড়বে বলেও মনে হচ্ছে না।

আর এই খেলা যেহেতু সহসা বন্ধ হচ্ছে না, সেহেতু এ পরিস্থিতিতে যে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে যে আরও কিছু সময় অসহায় দর্শক হিসেবেই কাটাতে হবে,
সেটি প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়।
বস্তুত ওই চিনি ব্যবসায়ী ও সরকারের সংশ্লিষ্টরা যতদিন পর্যন্ত চলমান ধারায় একই বণিক শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে টিকে থাকবেন, ততদিন পর্যন্ত দেশের জনগণের পক্ষে এ অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর তেমন কিছু করার বলার বা প্রতিবাদ করার ভাষা থাকবে না, আর থাকবে বলেও মনে হয় না।

অন্যদিকে জনগণের পক্ষে নিয়ে এগিয়ে আসার যে ভোক্তা অধিকার সংস্থাকে দেখতে পাই তারা কেবল জরিমানা করেই এবং জরিমানার অর্থ নিয়ে চলে যায়।
এই স্থানটিতে ভোক্তার লাভের চেয়ে ক্ষতি পরিমানটা সবচেয়ে বেশি হয়, পরবর্তীতে জরিমানার টাকা গুলো ভোক্তার কাছ থেকেই ব্যবসায়ীরা আদায় করে থাকেন।
সাধারণ বক্তাদের সাথে আলাপ করে এমনটি অভিযোগগুলো আমরা খুঁজে পাই।

অন্যদিকে তথ্যর হিসেবে প্রথমেই আমাদের সামনে আসতে পারে এটি যে, এখন থেকে ঠিক এক বছর আগে বাজারে চিনির খুচরা মূল্য ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। এটি রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলারের সাথে টাকার অবমূল্যায়নজনিত পরিস্থিতিতে সবকিছুর মূল্য বেড়ে যাওয়ার অনেক পরের ঘটনা।

অর্থাৎ এটি ছিল উক্ত ঘটনাদ্বয়-পরবর্তী বর্ধিত মূল্য, যার পরে দেশে বা বিদেশে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যার প্রেক্ষিতে চিনির দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

অথচ এ লেখা তৈরির দিনে ২৪ মে পর্যন্ত ঢাকার বাজারে কেজিপ্রতি চিনির মূল্য ছিল ১৪০ টাকা- বৃদ্ধির হার ৮৭ বর্তমানে শতাংশ, এটি তাও আবার দুষ্প্রাপ্য।
অবশ্য আমাদের ব্যবসায়ীরা যদি এই বিষয় বলেন যে, ঈদ, রোজা, নববর্ষ ইত্যাদি উপলক্ষে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা তাদের ঐতিহ্যের অংশ এবং গত এক বছরে এ জাতীয় যত উপলক্ষ পার হয়েছে তারা, সবগুলো হিসাবে নিলে মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ আরো বেশি হওয়া উচিৎ ছিল,

তাহলে তো ঐতিহ্য অনুযায়ী সেটিও তারা বলতেই পারেন বৈকি! আসলে ব্যবসায়ীরা বর্তমানে চিনির মূল্য বৃদ্ধির যে আকাঙ্খা মনে লালন করছেন, তাতে উল্লিখিত যুক্তি ছাড়া আর কিছুইতো আমাদের দৃষ্টিতে পড়ছে না।

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে গত ৬ এপ্রিল চিনি ব্যবসায়ীদের মুখ্য সংগঠন-যে নামটি আমাদের নিকট পরিচিত- বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে,
তার সাথে পরামর্শ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল যথাক্রমে ১০৪ টাকা ও ১০৯ টাকা। এরপর মাত্র ৩৬ দিনের ব্যবধানে দেশে এমন কি ঘটে গেল, যাতে চিনির মূল্য বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট চিনি আমদানিকারক ও মজুদকারীরা নতুন করে ফন্দি ও কৌশল আঁটছেন?
এদিকে শোনা যাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রী কে আমেরিকা থেকে টিসি বির মাধ্যমে সরকারিভাবে চিনি আমদানি করার কথা।

আসলে আমাদের ব্যবসায়ীদের বিদ্যমান ইঁদুর-বিড়াল খেলার চলমান ধারা বহাল রেখে সেই সুযোগে আরেক দফা অন্যায্য মুনাফা হাতিয়ে নেয়া ছাড়া এ ক্ষেত্রে আর কোনোই কারণ আছে বলে প্রতীয়মান হয় না।

আর এ খেলায় ব্যবসায়ীরা-যে অবশ্যই সফল হবেন, তার ইঙ্গিতও আমাদের নিকট ইতোমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্যসচিব উভয়ের অভিন্ন সুর ও আঙ্গিকের কথা থেকে।

বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয় গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘নির্ধারিত মূল্যে বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে কিনা, তা যাচাই করতে আগামী সপ্তাহ থেকে তদারক করা হবে’ (১২ মে ২০২৩)।

অর্থাৎ তিনি বা তার মন্ত্রণালয় এখনো জানেই না বাজারে কী মূল্যে চিনি বিক্রি হচ্ছে অথবা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে তা বিক্রি হচ্ছে কিনা।
তার এ বক্তব্য প্রমাণ করে যে,
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় যথাযথ কোনো বাজার তদারকি ব্যবস্থা নেই, যে কারণে বাজারে কী দরে চিনি বিক্রি হচ্ছে, তা তারা জানেন না এবং সে কারণে আগামী সপ্তাহ থেকে তদারকিতে নামার কথা বলা হলেও সিটি কতদূর কার্যকর হয়েছে দেশের সাধারণ মানুষ এমনিতে বুঝতে পারেন।

আর তিনি যদি দাবি করতে চান যে, যথাযথ বাজার তদারকি ব্যবস্থা চালু আছে, তাহলেতো বাজারে কী দরে চিনি বিক্রি হচ্ছে, সে তথ্য তাদের নিজেদের হাতেই থাকার কথা এবং তজ্জন্যতো নতুন করে বাজার তদারকিতে নামার প্রয়োজন করে না!

এখন তিনি যদি তার এ দাবিতে অটল থাকতে চান যে বাজার তদারকি বহাল আছে, তাহলে যুক্তির বিচারে মানতেই হবে যে, বাজারমূল্যের তথ্য হাতে থাকা সত্ত্বেও (আসলে যা আছেও) নতুন করে তদারকিতে নামার কথা বলে তিনি আসলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে সময় ক্ষেপণ করে তাদের অবৈধ মুনাফা লোটার সুযোগ করে দিতে চাচ্ছেন।

মন্ত্রী মহোদয়ের সময় নেয়ার বিষয়টাকে অনেকেই মনে করছে ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যবসায়ীদের প্রতি সহযোগিতা হিসেবে। সে হিসেবে জনগণের স্বার্থের আগেতো স্বগোত্রীয়দের স্বার্থ!

আর এরূপ গোত্রসেবার বিপদের কথা ভেবেইতো জাতীয় সংসদের ৬২ শতাংশ সদস্য ব্যবসায়ী শ্রেণি থেকে আসার কারণে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ প্রকাশ। আর সে উদ্বেগ-যে খুবই যথার্থ, তার প্রমাণতো এটাই যে, চিনির মূল্য বাড়ানোর প্রচেষ্টার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের পক্ষে রাষ্ট্রও যুক্ত হয়ে পড়েছে।

চিনি ব্যবসায়ীদের স্বার্থের সাথে একাত্ম হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বাণিজ্যসচিবও কম যাননি। তিনিতো প্রকাশ্যেই বলে দিয়েছেন যে, রোজা উপলক্ষে চিনির ওপর যেসব শুল্ক ও কর ছাড় দেয়া হয়েছিল, সেগুলো বহাল রাখতে বা আরো কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে যদি প্রশ্ন করা যায়, রোজা উপলক্ষে কর-শুল্ক ছাড় দেয়ার পর চিনির দাম কি কমেছিল? যদি না কমে থাকে তাহলেতো এটাই প্রমাণ হয় যে, ঐ ছাড় শুধু সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের স্বার্থকেই রক্ষা করেছে-সাধারণ ভোক্তাদের তাতে কোনোই উপকার হয়নি। মাঝখান থেকে রাষ্ট্রই কেবল বঞ্চিত হয়েছে ন্যায্য রাজস্বপ্রাপ্তি থেকে। তা, চিনির উপর প্রদত্ত সর্বসাম্প্রতিক (যার মেয়াদ এখনও বহাল আছে– ৩০ মে ২০২৩ পর্যন্ত)

কর-শুল্ক রেয়াত যদি চিনির বাজারমূল্য হ্রাসে কোনো ভূমিকাই না রাখতে পেরে থাকে, তাহলে সেটি বহালের পাশাপাশি তা হ্রাসের সুপারিশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোন যুক্তিতে এনবিআরের কাছে পাঠাতে চাচ্ছে? এ সূত্রে জিজ্ঞাস্য, রোজা ছিল এপ্রিল-জুনে, যার জন্য সর্বশেষ আমদানি এপ্রিলেই শেষ হয়ে গেছে, সে ক্ষেত্রে উল্লিখিত শুল্ক-কর ছাড়ের মেয়াদ দু’মাস বাড়িয়ে ৩০ মে ২০২৩ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল কোন যুক্তিতে, কাদের প্রয়োজনে? এতে কিসের গন্ধ পাওয়া যায়?

বাজারে যেয়ে ক্রেতা যত বিরক্তিই প্রকাশ করুন না কেন বা এ নিয়ে তার যত হতাশাই থাকুক কিংবা মূল্যবৃদ্ধির চাপে তার যতো নাভিশ্বাসই তার ওঠুক না কেন, আমলা ও ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রিত এ রাষ্ট্রে চিনি কেন, আপাতত কোনো পণ্যের মূল্যই হ্রাস পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর এ নিয়ে হাজার লেখালেখিতেও সংশ্লিষ্টদের কিছু যায়-আসে না। কারণ এসব চুনোপুঁটি লেখা রাষ্ট্রকে এতটুকুও প্রভাবিত করতে পারবে বলে মনে হয় না। তবু একান্ত মানবিক কারণে রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারক ব্যবসায়ী, বৃহৎ উৎপাদক ও আমদানিকারক ও রাষ্ট্রের মূল নিয়ন্ত্রণকারী আমলাগণের কাছে সনির্বন্ধ নিবেদন,পণ্যমূল্য নিয়ে মানুষ সত্যি খুব কষ্টে আছে। এমনকি এ কষ্ট গত ৫২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ কিনা, সে প্রশ্নও ওঠছে।

এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের কষ্টের দিকে চেয়ে কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনাদের ইঁদুর-বিড়াল খেলা বন্ধ রেখে নিত্যপণ্যের মূল্য হ্রাসের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিন, যা আপনাদের পক্ষে খুবই সম্ভব। নইলে অসহায় সাধারণ মানুষের অভিশাপ কখন-যে কাকে কিভাবে ঘায়েল করবে, আমরা কেউই তা জানি না।

আরো খবর.......

জনপ্রিয় সংবাদ

ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি

“চিনি নিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা শুরু করেছে ইঁদুর-বিড়াল খেলা”

আপডেট টাইম : ০৫:১৮:০৪ অপরাহ্ণ, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩

আমরা ইঁদুর-বিড়াল খেলা’র ব্যাখ্যা আমরা খুঁজে পাই বই পুস্তকে। এটিকে আমি সংজ্ঞা হিসেবে বলছি, আমাদের শুরুতর কোনো বিষয়কে হালকাভাবে নেয়ার মানসিকতা অনেকের মাঝে রয়েছে,

আজ আমাদের বাজার ব্যবস্থায়ও বর্তমানে এই ইঁদুর বিড়াল খেলার উদাহরণের সাথে হুবাহু মিলে যায়।
যেমন চিনির মতো একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ন্যায় গুরুতর বিষয়টিকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা মিলে-ইতোমধ্যে অনেক মামুলি বানিয়ে ফেলেছেন।

এই বিষয়টিকে আপনি যখন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন তবে আপনাদের কাছে মনে হতে পারে বাংলাদেশটা যেন এই ইঁদুর বিড়ালের খেলার জায়গা।
তবে এ খেলায় ব্যবসায়ী ইঁদুরেরা,
তারা কখনোই এবং কিছুতেই যেনো বিড়ালের হাতে ধরা পড়ছে না এবং তা সহসা ধরা পড়বে বলেও মনে হচ্ছে না।

আর এই খেলা যেহেতু সহসা বন্ধ হচ্ছে না, সেহেতু এ পরিস্থিতিতে যে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে যে আরও কিছু সময় অসহায় দর্শক হিসেবেই কাটাতে হবে,
সেটি প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়।
বস্তুত ওই চিনি ব্যবসায়ী ও সরকারের সংশ্লিষ্টরা যতদিন পর্যন্ত চলমান ধারায় একই বণিক শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে টিকে থাকবেন, ততদিন পর্যন্ত দেশের জনগণের পক্ষে এ অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর তেমন কিছু করার বলার বা প্রতিবাদ করার ভাষা থাকবে না, আর থাকবে বলেও মনে হয় না।

অন্যদিকে জনগণের পক্ষে নিয়ে এগিয়ে আসার যে ভোক্তা অধিকার সংস্থাকে দেখতে পাই তারা কেবল জরিমানা করেই এবং জরিমানার অর্থ নিয়ে চলে যায়।
এই স্থানটিতে ভোক্তার লাভের চেয়ে ক্ষতি পরিমানটা সবচেয়ে বেশি হয়, পরবর্তীতে জরিমানার টাকা গুলো ভোক্তার কাছ থেকেই ব্যবসায়ীরা আদায় করে থাকেন।
সাধারণ বক্তাদের সাথে আলাপ করে এমনটি অভিযোগগুলো আমরা খুঁজে পাই।

অন্যদিকে তথ্যর হিসেবে প্রথমেই আমাদের সামনে আসতে পারে এটি যে, এখন থেকে ঠিক এক বছর আগে বাজারে চিনির খুচরা মূল্য ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। এটি রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলারের সাথে টাকার অবমূল্যায়নজনিত পরিস্থিতিতে সবকিছুর মূল্য বেড়ে যাওয়ার অনেক পরের ঘটনা।

অর্থাৎ এটি ছিল উক্ত ঘটনাদ্বয়-পরবর্তী বর্ধিত মূল্য, যার পরে দেশে বা বিদেশে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যার প্রেক্ষিতে চিনির দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

অথচ এ লেখা তৈরির দিনে ২৪ মে পর্যন্ত ঢাকার বাজারে কেজিপ্রতি চিনির মূল্য ছিল ১৪০ টাকা- বৃদ্ধির হার ৮৭ বর্তমানে শতাংশ, এটি তাও আবার দুষ্প্রাপ্য।
অবশ্য আমাদের ব্যবসায়ীরা যদি এই বিষয় বলেন যে, ঈদ, রোজা, নববর্ষ ইত্যাদি উপলক্ষে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা তাদের ঐতিহ্যের অংশ এবং গত এক বছরে এ জাতীয় যত উপলক্ষ পার হয়েছে তারা, সবগুলো হিসাবে নিলে মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ আরো বেশি হওয়া উচিৎ ছিল,

তাহলে তো ঐতিহ্য অনুযায়ী সেটিও তারা বলতেই পারেন বৈকি! আসলে ব্যবসায়ীরা বর্তমানে চিনির মূল্য বৃদ্ধির যে আকাঙ্খা মনে লালন করছেন, তাতে উল্লিখিত যুক্তি ছাড়া আর কিছুইতো আমাদের দৃষ্টিতে পড়ছে না।

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে গত ৬ এপ্রিল চিনি ব্যবসায়ীদের মুখ্য সংগঠন-যে নামটি আমাদের নিকট পরিচিত- বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে,
তার সাথে পরামর্শ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল যথাক্রমে ১০৪ টাকা ও ১০৯ টাকা। এরপর মাত্র ৩৬ দিনের ব্যবধানে দেশে এমন কি ঘটে গেল, যাতে চিনির মূল্য বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট চিনি আমদানিকারক ও মজুদকারীরা নতুন করে ফন্দি ও কৌশল আঁটছেন?
এদিকে শোনা যাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রী কে আমেরিকা থেকে টিসি বির মাধ্যমে সরকারিভাবে চিনি আমদানি করার কথা।

আসলে আমাদের ব্যবসায়ীদের বিদ্যমান ইঁদুর-বিড়াল খেলার চলমান ধারা বহাল রেখে সেই সুযোগে আরেক দফা অন্যায্য মুনাফা হাতিয়ে নেয়া ছাড়া এ ক্ষেত্রে আর কোনোই কারণ আছে বলে প্রতীয়মান হয় না।

আর এ খেলায় ব্যবসায়ীরা-যে অবশ্যই সফল হবেন, তার ইঙ্গিতও আমাদের নিকট ইতোমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্যসচিব উভয়ের অভিন্ন সুর ও আঙ্গিকের কথা থেকে।

বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয় গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘নির্ধারিত মূল্যে বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে কিনা, তা যাচাই করতে আগামী সপ্তাহ থেকে তদারক করা হবে’ (১২ মে ২০২৩)।

অর্থাৎ তিনি বা তার মন্ত্রণালয় এখনো জানেই না বাজারে কী মূল্যে চিনি বিক্রি হচ্ছে অথবা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে তা বিক্রি হচ্ছে কিনা।
তার এ বক্তব্য প্রমাণ করে যে,
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় যথাযথ কোনো বাজার তদারকি ব্যবস্থা নেই, যে কারণে বাজারে কী দরে চিনি বিক্রি হচ্ছে, তা তারা জানেন না এবং সে কারণে আগামী সপ্তাহ থেকে তদারকিতে নামার কথা বলা হলেও সিটি কতদূর কার্যকর হয়েছে দেশের সাধারণ মানুষ এমনিতে বুঝতে পারেন।

আর তিনি যদি দাবি করতে চান যে, যথাযথ বাজার তদারকি ব্যবস্থা চালু আছে, তাহলেতো বাজারে কী দরে চিনি বিক্রি হচ্ছে, সে তথ্য তাদের নিজেদের হাতেই থাকার কথা এবং তজ্জন্যতো নতুন করে বাজার তদারকিতে নামার প্রয়োজন করে না!

এখন তিনি যদি তার এ দাবিতে অটল থাকতে চান যে বাজার তদারকি বহাল আছে, তাহলে যুক্তির বিচারে মানতেই হবে যে, বাজারমূল্যের তথ্য হাতে থাকা সত্ত্বেও (আসলে যা আছেও) নতুন করে তদারকিতে নামার কথা বলে তিনি আসলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে সময় ক্ষেপণ করে তাদের অবৈধ মুনাফা লোটার সুযোগ করে দিতে চাচ্ছেন।

মন্ত্রী মহোদয়ের সময় নেয়ার বিষয়টাকে অনেকেই মনে করছে ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যবসায়ীদের প্রতি সহযোগিতা হিসেবে। সে হিসেবে জনগণের স্বার্থের আগেতো স্বগোত্রীয়দের স্বার্থ!

আর এরূপ গোত্রসেবার বিপদের কথা ভেবেইতো জাতীয় সংসদের ৬২ শতাংশ সদস্য ব্যবসায়ী শ্রেণি থেকে আসার কারণে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ প্রকাশ। আর সে উদ্বেগ-যে খুবই যথার্থ, তার প্রমাণতো এটাই যে, চিনির মূল্য বাড়ানোর প্রচেষ্টার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের পক্ষে রাষ্ট্রও যুক্ত হয়ে পড়েছে।

চিনি ব্যবসায়ীদের স্বার্থের সাথে একাত্ম হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বাণিজ্যসচিবও কম যাননি। তিনিতো প্রকাশ্যেই বলে দিয়েছেন যে, রোজা উপলক্ষে চিনির ওপর যেসব শুল্ক ও কর ছাড় দেয়া হয়েছিল, সেগুলো বহাল রাখতে বা আরো কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে যদি প্রশ্ন করা যায়, রোজা উপলক্ষে কর-শুল্ক ছাড় দেয়ার পর চিনির দাম কি কমেছিল? যদি না কমে থাকে তাহলেতো এটাই প্রমাণ হয় যে, ঐ ছাড় শুধু সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের স্বার্থকেই রক্ষা করেছে-সাধারণ ভোক্তাদের তাতে কোনোই উপকার হয়নি। মাঝখান থেকে রাষ্ট্রই কেবল বঞ্চিত হয়েছে ন্যায্য রাজস্বপ্রাপ্তি থেকে। তা, চিনির উপর প্রদত্ত সর্বসাম্প্রতিক (যার মেয়াদ এখনও বহাল আছে– ৩০ মে ২০২৩ পর্যন্ত)

কর-শুল্ক রেয়াত যদি চিনির বাজারমূল্য হ্রাসে কোনো ভূমিকাই না রাখতে পেরে থাকে, তাহলে সেটি বহালের পাশাপাশি তা হ্রাসের সুপারিশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোন যুক্তিতে এনবিআরের কাছে পাঠাতে চাচ্ছে? এ সূত্রে জিজ্ঞাস্য, রোজা ছিল এপ্রিল-জুনে, যার জন্য সর্বশেষ আমদানি এপ্রিলেই শেষ হয়ে গেছে, সে ক্ষেত্রে উল্লিখিত শুল্ক-কর ছাড়ের মেয়াদ দু’মাস বাড়িয়ে ৩০ মে ২০২৩ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল কোন যুক্তিতে, কাদের প্রয়োজনে? এতে কিসের গন্ধ পাওয়া যায়?

বাজারে যেয়ে ক্রেতা যত বিরক্তিই প্রকাশ করুন না কেন বা এ নিয়ে তার যত হতাশাই থাকুক কিংবা মূল্যবৃদ্ধির চাপে তার যতো নাভিশ্বাসই তার ওঠুক না কেন, আমলা ও ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রিত এ রাষ্ট্রে চিনি কেন, আপাতত কোনো পণ্যের মূল্যই হ্রাস পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর এ নিয়ে হাজার লেখালেখিতেও সংশ্লিষ্টদের কিছু যায়-আসে না। কারণ এসব চুনোপুঁটি লেখা রাষ্ট্রকে এতটুকুও প্রভাবিত করতে পারবে বলে মনে হয় না। তবু একান্ত মানবিক কারণে রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারক ব্যবসায়ী, বৃহৎ উৎপাদক ও আমদানিকারক ও রাষ্ট্রের মূল নিয়ন্ত্রণকারী আমলাগণের কাছে সনির্বন্ধ নিবেদন,পণ্যমূল্য নিয়ে মানুষ সত্যি খুব কষ্টে আছে। এমনকি এ কষ্ট গত ৫২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ কিনা, সে প্রশ্নও ওঠছে।

এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের কষ্টের দিকে চেয়ে কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনাদের ইঁদুর-বিড়াল খেলা বন্ধ রেখে নিত্যপণ্যের মূল্য হ্রাসের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিন, যা আপনাদের পক্ষে খুবই সম্ভব। নইলে অসহায় সাধারণ মানুষের অভিশাপ কখন-যে কাকে কিভাবে ঘায়েল করবে, আমরা কেউই তা জানি না।