বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণের সম্মানে জামায়াতে ইসলামীর ইফতার মাহফিল

- আপডেট টাইম : ০৬:০০:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫
- / ৫ ৫০০০.০ বার পাঠক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ৮ মার্চ বিকাল ৫টায় রাজধানী ঢাকার গুলশানস্থ হোটেল ওয়েস্টিন-এ বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, চ্যার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্সসহ কূটনীতিকগণের সম্মানে এক ইফতার পার্টির আয়োজন করেন।
এ ইফতার পার্টিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার মিস. সারাহ কুক, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মিসেস মেরি মাসদুপি, চীনের রাষ্ট্রদূত মি. ইয়ো ওয়েন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার গিরি গোরিওভিস কোজিন, অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনার মিস. সুসান রেলি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মিকায়েল মিলার, ইরানের রাষ্ট্রদূত মি. মানসুর চাভোশি, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মি. রমিস সেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পলিটিক্যাল এ্যাফেয়ার্স জেমস এ. স্টুয়ার্ট ,পাকিস্তানের হাইকমিশনার কামরান ধাংগল, জাপানের ডেপুটি চিফ অব মিশন তাকাহাসি নাওকি ও ফার্স্ট সেক্রেটারি মিনামি তোমো, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত, মরক্কো, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, ভারত, ভুটান, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, ইরাক, ভ্যাটিকান সিটি, কানাডা, ব্রাজিল, আলজেরিয়া, কসোভো, জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার প্রতিনিধি, আইআরআই এবং এনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকবৃন্দ শরীক হন।
ইফতার পার্টিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের ও মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, জনাব হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, এডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এড. এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব সাইফুল আলম খান মিলন, জনাব আবদুর রব ও অধ্যক্ষ মোঃ ইজ্জত উল্লাহ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এড. মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব মোঃ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও অফিস সেক্রেটারি মাওলানা আফম আব্দুস সাত্তার, আমীরে জামায়াতের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জনাব নূরুল ইসলাম সাদ্দাম প্রমুখ।
ইফতারির পূর্ব মুহূর্তে ডা. শফিকুর রহমান ইফতার পার্টিতে উপস্থিত কূটনীতিকগণকে মুবারকবাদ জানিয়ে প্রদত্ত সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, “আমরা সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, যিনি আমাদের দীর্ঘ ১১ বছর পর এই ইফতার পার্টি আয়োজন করার সুযোগ করে দিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বিদেশি বন্ধুদের সম্মানে ইফতার পার্টির ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের ইফতার পার্টি আয়োজন করতে দেয়নি। এমনকি কিছু অনুষ্ঠানের জন্য ভেন্যু বুকিং ও অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও, শেষ পর্যন্ত সরকারের বাধার কারণে আমাদের সেইসব আয়োজন বাতিল করতে হয়েছে। আজ আমরা আবারও আপনাদের এই মর্যাদাপূর্ণ ইফতার মাহফিলে স্বাগত জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আমরা জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদ ও নির্যাতিতদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি, যাঁদের আত্মত্যাগের ফলে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত হয়েছে।
আমরা এমন এক সময়ে একত্রিত হয়েছি, যখন সমগ্র মুসলিম বিশ্ব পবিত্র রমজানের মাহাত্ম্য উপভোগ করছে। রমজান শুধুমাত্র সিয়াম সাধনার মাস নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, আত্মসংযম ও আত্মনিবেদন করার মাস। রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা নিঃস্ব ও অভাবগ্রস্ত মানুষের কষ্ট অনুধাবন করি যাতে আমাদের হৃদয়ে সহমর্মিতার বীজ বপন হয়। সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা শুধু শারীরিক অনুশীলন নয়; বরং এটি আত্মার পরিশুদ্ধি, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা এবং ন্যায়পরায়ণতার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমাদেরকে সাহায্য করে।
পবিত্র কুরআনুল কারিম এই মাসে নাজিল হয়েছে। মানবতার মুক্তির দিশারী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী এই কিতাব। এই মাসে আমরা ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা ও উদারতার সর্বোচ্চ গুণ অর্জনের চেষ্টা করি। তারাবির নামাজ আদায়, কুরআন তেলাওয়াত ও দান-সদকা করার মাধ্যমে আমাদের মাঝে দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে সহনশীলতা ও পারস্পরিক স¤প্রীতি বজায় থাকে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ৯০-এর দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জামায়াত অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাব দেয় এবং এর পক্ষে জনমত তৈরি করেছে। কিন্তু গত ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতকে দমন করার সব ধরনের অপচেষ্টা চালিয়েছে। জামায়াতের পাঁচজন শীর্ষ নেতাকে ফাঁসি দিয়েছে। ছয়জন নেতাকে কারাগারে বা পুলিশের হেফাজতে নির্মমভাবে হত্যা করাসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, অনেকে গুমের শিকার হয়েছেন এবং অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন। এই নিষ্ঠুরতা সত্ত্বেও জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির জুলাই বিপ্লবে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর নিরাপত্তা এবং সাধারণ মানুষের জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
বাংলাদেশ যেন আর কখনো পথ হারিয়ে না ফেলে সে জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী এই সংস্কার উদ্যোগকে স্বাগত জানায় এবং ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদান করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বশীল (পিআর) নির্বাচনব্যবস্থা চালুর পক্ষে আমরা জোরালো মতামত ব্যক্ত করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, এই ব্যবস্থায় জনগণের মতামত সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে এবং ফ্যাসিবাদী শাসন পুনরায় ফিরে আসার পথও রুদ্ধ হবে। এ ছাড়া লক্ষ লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবিও আমরা তুলে ধরেছি। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের এই আহ্বানে সাড়া দেবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
আমরা মনে করি, একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক ব্যবস্থা টেকসই শান্তি ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। আমাদের দায়িত্ব হলো প্রত্যেক নাগরিকের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া, প্রতিটি সম্পপ্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং দেশ গঠনে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া। জামায়াতে ইসলামী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু বলে কিছু নেই। এদেশের প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে।
আপনাদের ইফতার পার্টিতে উপস্থিত হওয়ার জন্য আমি আপনাদের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জাানাচ্ছি। আপনাদের এই ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণে আমরা উৎসাহিত হয়েছি। আসুন, আমরা আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করি এবং সারা বিশ্বে শান্তি, ন্যায়বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করি।
এই পবিত্র রমজান মাস আমাদের সবার জন্য বরকতময় হোক। আল্লাহ আপনাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।