নামাজ পরতে যাওয়ার পথে বিএনপি নেতাকে কুপিয়েছে ছাত্রলীগ নেতা
- আপডেট টাইম : ০৯:৩০:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ১ ৫০০০.০ বার পাঠক
বরগুনার পাথরঘাটায় আসরের নামাজ পড়তে যাওয়ার পথে কাকচিড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন ফুয়াদ (৪৫) কুপিয়ে রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে।
গত রোববার বেলা চারটার দিকে পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের জোমাদ্দার বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ মেহেদী হাসান।
আহত আবুল হোসেন ফুয়াদ কাকচিড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল হালিম জোমাদ্দারের ছেলে। অভিযুক্ত গোলাম মাওলা কাকচিড়া ইউনিয়নের ইউসুফ জোমাদ্দারের ছেলে ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা।
ফুয়াদের স্ত্রী শিউলি বেগম জানান, বাড়ি থেকে আসরের নামাজ পড়তে মসজিদের দিকে যায় ফুয়াদ। বাড়ি থেকে কিছুটাদুরে গেলেই গোলাম মাওলা সহ বেশ কয়েকজন ফুয়াদকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ফুয়াদের বোন মর্জিনা জানান, ঘটনা দেখে আমি দৌড়ে গিয়ে গোলাম মাওলার পা ধরে আমার ভাইয়ের জীবনটা ভিক্ষা চাইলে আমাকেও লাথি দিয়ে ফেলে দিয়ে আমার উপরেও কোপ দিতে আসে। এসময় আমি সরে যাই।
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার সময় ফুয়াদ সময়ের কন্ঠকে জানায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কাকচিড়ার বিভিন্ন স্থানে “শেখ হাসিনাতেই আস্থা, বিজয় আসবেই” এমন শ্লোগানের পোস্টার লাগালে সেগুলো শুক্রবার সকালে আমরা ছিঁড়ে ফেলি। এর জেরে আমার উপর হামলা করে ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মাওলা, রুমন, রাশেদ, ওমর, ইউসুফ সহ আট থেকে দশজন।
কাকচিড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন সময়ের কন্ঠকে জানান, ফুয়াদ বিএনপির সক্রিয় কর্মী হওয়ার গোলাম মাওলা সহ ছাত্রলীগের সমর্থকদের সাথে রাজনৈতিক বিরোধ ছিল। এর জেরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ফুয়াদের উপর হামলা করেছে। তিনি জানান, জানান গোলাম মাওলা ছাত্রলীগের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকলেও কাকচিড়া সাংগঠনিক থানা ছাত্রলীগের সভাপতি তুহিন পহলানের একান্ত সহচর।
পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ ফারুক বলেন, প্রকাশ্যে আসতে না পেরে আ’লীগ ও এর সাঙ্গোপাঙ্গরা গুপ্ত হামলা চালাচ্ছে। আছরের নামাজ আদায় করতে যাওয়ার পথে ফুয়াদের উপর নেক্কারজনক হামলা হয়েছে। এর একমাস আগে পাথরঘাটা উপজেলা যুবদল নেতা নাসিরকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। নাসির হত্যাকাণ্ডের আসামিদেরকেও পুলিশ আটক করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়াও এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
অভিযোগের ভিত্তিতে গোলাম মাওলার ফুফু তাসলিমা বেগম সময়ের কন্ঠকে বলেন, ফুয়াদ ও গোলাম মাওলার বাবা ইউসুফের সাথে বিদেশে লোক পাঠানোর জন্য টাকা ও জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। ৫ আগষ্টের পর ফুয়াদ জোমাদ্দার গ্রাম্য বাজারের চায়ের দোকানে বসে গোলাম মাওলা ও তার বাবা ইউসুফকে চরথাপ্পর মারছিল। ধারনা করা হচ্ছে এর জেরে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, ফুয়াদের শরীরে পাঁচটির মতো গুরুতর কোপ রয়েছে। কোপ গুলো অনেক গভীর। এছাড়াও প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আহত ফুয়াদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান সময়ের কন্ঠকে জানান, ফুয়াদ ও গোলাম মাওলাদের মধ্যে বিদেশে লোক পাঠানোর বিষয়ে টাকা পয়সা লেনদেন ছিল। ঘটনার পরপরই আমি ঘটনাস্থলে রয়েছি। ঘাতকদের আটকের জন্য অভিযান চলছে। এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়ছে।
এছাড়াও যুবদল নেতা নাসির হত্যার আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো জানান নাসির হত্যা মামলায় একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের কে আটক করতে অভিযান চলছে।