অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করা প্রতিবেদন প্রত্যাহার ব্রিটিশ এমপিদের
- আপডেট টাইম : ০৪:৫৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫
- / ১ ৫০০০.০ বার পাঠক
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে যুক্তরাজ্যের একদল এমপির দেওয়া প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ নিয়ে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠার পর এই পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথবিষয়ক অল–পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এএপিজি) গত নভেম্বরে ওই প্রতিবেদন দেয়। তাতে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করা হয়। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখিত অনেক তথ্য সঠিক নয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
যুক্তরাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা বলেছেন, হাউস অব কমন্সে একজন এমপি অভিযোগ দেওয়ার পর ওই প্রতিবেদন আর বিতরণ করা হচ্ছে না এবং সেটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। একজন মুখপাত্র বলেছেন, প্রতিবেদনটি পর্যালোচনার আওতায় একটি অভ্যন্তরীণ নথি হিসেবে রয়েছে। এটা আর বিতরণ করা হচ্ছে না।
বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকার পতনের তিন মাস পর গত নভেম্বরে ‘বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করা হয়। ওই আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক দমন–পীড়ন চালায়, যাতে আনুমানিক এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের (এএপিজি) ওই প্রতিবেদনে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করা হয়। এএপিজির চেয়ার কনজারভেটিভ পার্টির অ্যান্ড্রু রোসিনডেল একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লিখেছিলেন, বাংলাদেশের একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ হওয়া উচিত, যেখানে শুধু ক্ষমতাসীনদের সমর্থকদের জন্য নয় বরং সবার জন্য সুযোগ থাকবে। অবিলম্বে এই ধারার পরিবর্তন না হলে নতুন সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে আশা করছে, তা উধাও হয়ে বিপদ তৈরি করবে।
প্রতিবেদনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের বিরুদ্ধে ‘আইনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার এবং ‘উগ্রপন্থী ইসলামিস্টদের’ পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা, এমপি, সাবেক বিচারক, পণ্ডিতজন, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এত বেশি সংখ্যায় হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে যে সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
প্রতিবেদনটি মূলত নয়াদিল্লিভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান রাইটস অ্যান্ড রিস্ক অ্যানালাইসিস গ্রুপের তথ্য–প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মিথ্যা তথ্যে ভরপুর এবং ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট উল্লেখ করে লেখা এই রিপোর্টের সমালোচনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ঘুরে যাওয়া লেবার পার্টির এমপি রূপা হক হাউস অব কমন্সে প্রতিবেদনটির কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং এটিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে কুচক্রী কাজ বলে অভিহিত করেছেন।
রূপা হক বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে বিতর্কিত এই প্রতিবেদনটির বিষয় উত্থাপন করেছিলেন এবং জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আপনার সরকার কী করছে, পার্লামেন্টের নামে এই মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে?’
লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক নাওমি হোসেন বলেছেন, প্রতিবেদনে মৌলিক ত্রুটি রয়েছে… এটি মারাত্মকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট বা অত্যন্ত খারাপ বিশ্লেষণ। জবাবদিহিতার হাতিয়ার হিসেবে এটি সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ।