ওরিয়ানা ফালাচির দিনলিপি ও শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাতকার
- আপডেট টাইম : ০৭:১২:৫০ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ২ ৫০০০.০ বার পাঠক
১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ শাহাদাত বরন করেন শহীদ মোস্তফা শওকত ইমরান ইসলামী ছাত্র সংঘের ঢাকা মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।
ভারতীয় আধিপত্যবাদের দালালেরা তাকে পল্টনে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছিল।
খালেদ মোশাররফ ও কাদের সিদ্দিকীরা নেতৃত্ব দিয়েছিল।
ওরিয়ানা ফালাসির ডায়রি থেকে স্মৃতি তুলে
১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ বেয়নেট হত্যাকান্ড
(১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী নেতৃত্বে ঢাকা স্টেডিয়ামে ৫০ জন বিহারিকে জীবন্ত অবস্থায় বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছিল )
একজন বিদেশী মহিলা সাংবাদিক ওরিয়ানা ফালাসি তা এভাবে তুলে ধরেন।
রোববার সন্ধ্যাঃ আমি কোলকাতা হয়ে ঢাকার পথে যাত্রা করেছি। সত্যি বলতে কি, ১৮ই ডিসেম্বর মুক্তি বাহিনী তাদের বেয়োনেট দিয়ে যে হত্যা যজ্ঞ চালিয়েছে তা প্রত্যক্ষ করার পর পৃথিবীতে আমার অন্তিম ইচ্ছা এটাই ছিল যে, এই ঘৃন্য নগরীতে আমি আর পা ফেলবো না- এরকম সিদ্ধান্ত আমি নিয়েই ফেলেছিলাম। কিন্তু আমার সম্পাদকের ইচ্ছা যে, আমি মুজিব সাহেবের সাক্ষাতকার গ্রহণ করি। ভুট্টো তাকে মুক্তি দেবার পর আমার সম্পাদকের এই সিদ্ধান্ত যথার্থ ছিল। লোকজন মুজিবের সাহেবের কথা বলাবলি করছিল। তিনি কি ধরনের মানুষ? আমার সহকর্মীরা স্বীকৃতি দিলো, তিনি মহান ব্যক্তি, সুপারম্যান। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি দেশকে সমস্যা মুক্ত করে গণতন্ত্রের পথে পরিচালিত করতে পারেন। আমার স্মরণ হলো, ১৮ই ডিসেম্বর আমি যখন ঢাকায় ছিলাম, তখন লোকজন বলছিল, “মুজিব থাকলে সেই নির্মম, ভয়ংকর ঘটনা কখনোই ঘটতো না। মুজিব প্রত্যাবর্তন করলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।” কিন্তু গতকাল মুক্তিবাহিনী কেন আরো ৫০ জন নিরীহ বিহারীকে হত্যা করেছে?
টাইম” ম্যাগাজিন কেন বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে হেডলাইন করেছে “মহান ব্যক্তি না বিশৃংখলার নায়ক?”
সাক্ষাৎকার এর চুম্বক অংশঃ
১৮ই ডিসেম্বর হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি রাগে ফেটে পড়লেন। নীচের অংশটুকু আমার টেপ থেকে নেয়াঃ
-ম্যাসাকার? হোয়াট ম্যাসাকার?
-ঢাকা ষ্টেডিয়ামে মুক্তিবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত ঘটনাটি।
-ঢাকা ষ্টেডিয়ামে কোন ম্যাসাকার হয়নি। তুমি মিথ্যে বলছো।
-মিঃ প্রাইম মিনিষ্টার, আমি মিথ্যেবাদী নই। সেখানে আরো সাংবাদিক ও পনের হাজার লোকের সাথে আমি হত্যাকান্ড প্রত্যক্ষ করেছি। আপনি চাইলে আমি আপনাকে তার ছবিও দেখাবো। আমার পত্রিকায় সে ছবি প্রকাশিত হয়েছে।
-মিথ্যেবাদী, ওরা মুক্তিবাহিনী নয়।
-মিঃ প্রাইম মিনিষ্টার, দয়া করে “মিথ্যাবাদী” শব্দটি আর উচ্চারণ করবেন না। তারা মুক্তি বাহিনী। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল আব্দুল কাদের সিদ্দিকী এবং তারা ইউনিফর্ম পরাছিল।
-“তাহলে ওরা হয়তো রাজাকার ছিল, যারা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিল এবং কাদের সিদ্দিকী তাদের নির্মূল করতে বাধ্য হয়েছে।”।
-মিঃ প্রাইম মিনিষ্টার, কেউ প্রমাণ করেনি যে, লোকগুলি রাজাকার ছিল। এবং কেউই প্রতিরোধের বিরোধিতা করেনি। তারা ভীত সন্ত্রস্ত ছিল। হাত পা বাঁধা থাকায় তারা নড়া চড়াও করতে পারছিল না।
-“মিথ্যে বাদী”
-“শেষবারের মত বলছি, আমাকে ‘মিথ্যে বাদী’ বলার অনুমতি আপনাকে দিবো না।”
-আচ্ছা সে অবস্থায় তুমি কি করতে?
-আমি নিশ্চিত হতাম যে, তারা রাজাকার ও অপরাধী। ফায়ারিং স্কোয়াডে দিতাম এবং এভাবে এই ঘৃন্য হত্যাকান্ড এড়াতাম।
-“ওরা সেভাবে করেনি। হয়তো আমার লোকদের কাছে বুলেট ছিলনা”।
-“হ্যাঁ, তাদের কাছে বুলেট ছিল। প্রচুর বুলেট ছিল। এখনো তাদের কাছে প্রচুর বুলেট রয়েছে। তা দিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গুলি ছোড়ে। ওরা গাছে, মেঘে, আকাশে, মানুষের প্রতি গুলি ছোড়ে শুধু আনন্দ করার জন্যে।
*সর্বশেষ মহিলা সাংবাদিক কে এই প্রশ্ন করার কারনে প্রধানমন্ত্রী হোয়াইট হাউস থেকে পালিয়ে আসতে হয়েছিল, হোটেলে তাকে মুক্তিবাহিনী ঘেরাও করেছিল।
তিনি লিখেন ।
এয়ার পোর্টে দু’জন ভারতীয় কর্মকর্তা আমাকে বিমানে নিলেন এবং আমি নিরাপদ হলাম।
(২৪ শে ফেব্রুয়ারী ১৯৭২)
সাক্ষাৎকারটি “ঢাকা ডাইজেস্ট পত্রিকা -নভেম্বর ১৯৮৯ সংখ্যায়” অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
বাড়ির পুরোনো আলমারিতে খুজে পেলাম বইটি