দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় শেখ রাসেল ক্রিয়া চক্রের পরিচালক লাঞ্চিত
- আপডেট টাইম : ০৪:৩৫:২০ অপরাহ্ণ, সোমবার, ১০ জুন ২০২৪
- / ১১৪ ৫০০০.০ বার পাঠক
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও নামজারীতে ৩০০০/(তিন হাজার) টাকা, ডিসিআর এ ২৫০০/ (পঁচিশশত) টাকা ঘুষ দিতে হয় জয়কে। জয় যদি কাউকে ঠান্ডা বুদ্ধির প্যাঁচে আটকাতে পারে সেক্ষেত্রে ঘুসের কোন লিমিট নেই।
আরো বিস্তারিত জানুন।।
মজিবুর রহমান জয় “থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব, বের হও এখান থেকে ” এভাবেই তার নিজের অফিস কক্ষে লাঞ্চিত করলেন শেখ রাসেল ক্রিয়া চক্রের পরিচালককে। হ্যাঁ, সেবা নিতে আসা শেখ রাসেল ক্রিয়া চক্রের একজন পরিচালক এমন অভিযোগই করেছেন ঢাকা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ের নাজির কাম ক্যাশিয়ার মজিবুর রহমান জয়ের বিরুদ্ধে। সূত্রে জানা যায়, শেখ রাসেল ক্রিয়া চক্রের পরিচালক কেরানীগঞ্জে ২(দুই) শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন মোসাম্মৎ কামেরুন নেছা নামক একজন ভদ্র মহিলার নিকট থেকে। তিনি জমিটির মালিক হয়েছেন তার স্বামীর মৃত্যুর পর ওয়ারিশ সূত্রে। একই দাগে তার স্বামী ২৫(পঁচিশ) শতাংশ জমির মালিক। রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী স্ত্রী দুই আনা হিসাবে ৩(তিন) শতাংশের কিছু বেশি ওয়ারিশ সূত্রে জমিটির মালিক হয়ে ভোগ-দখলরত অবস্থায় ২(দুই) শতাংশ জমি শেখ রাসেল ক্রিয়া চক্রের একজন পরিচালকের নিকট বিক্রয় করেছেন। তিনিও বর্তমানে ২(দুই) শতাংশ জমির স্বত্ব ও ভোগদখলরত অবস্থায় রয়েছেন। এমতাবস্থায় জমিটির ২(দুই) শতাংশ তার ক্রয়কৃত অংশটুকু নামজারী করার উদ্দেশ্য অনলাইনে নামজারির জন্য আবেদন করেন। নামজারির আবেদন নং ৯১২৬৩৩৫ ও কেস নং ১৪৫৪৬। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী একজন পরিচিত জনের রেফারেন্সে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিজা খাতুনের সাথে স্বাক্ষাত করলে তিনি মজিবুর রহমান জয়ের সাথে স্বাক্ষাত করতে বলেন। জয়ের সাথে স্বাক্ষাত করলে জয় ভুক্তভোগীকে বলেন, আপনি এসিল্যান্ডের রুমে কিভাবে প্রবেশ করলেন? উত্তরে তিনি একটি ভিজিটিং কার্ড জয়কে দিয়ে বলেন, এই স্যারের সুপারিশে আমি এসিল্যান্ড স্যারের রুমে প্রবেশ করেছি। জয় কার্ডটি হাতে নিয়ে কার্ডধারী ব্যক্তি সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করলে ভুক্তভোগী জয়কে বিসিএস এডমিনের কোন বড় কর্মকর্তার ভেবে স্যার সম্বোধন করেন। তখন জয় বলেন, আপনার ওয়ারেশন সার্টিফিকেট লাগবে। আপনাকে তিন দিনের সময় দিলাম। তবে তিনি সার্টিফিকেটটি আনতে এক সপ্তাহ সময় দেয়ার অনুরোধ করেন। জয় তাকে এক সপ্তাহ সময় দিয়ে ঠান্ডা বুদ্ধির মার প্যাঁচে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ওয়ারেশন সার্টিফিকেট তো আনতে পারবেন না চেয়ারম্যান অফিস থেকে। এমন প্রশ্নের মার প্যাঁচে তিনি সরল মনে উত্তর দেন, স্যার চেষ্টা করবো। কিন্তু ঔ দিন রাতে তার মোবাইলে একটি এসএমএস আসে “আগামীকাল কাগজপত্র নিয়ে এসিল্যান্ড অফিসে আসবেন “। পরের দিন তিনি সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে এসিল্যান্ড অফিসে এসে জয়কে কাগজপত্রগুলো দেখালে তিনি আবারও ওয়ারিশন সার্টিফিকেটের কথা জিজ্ঞেস করেন। তখন ভুক্তভোগী জয়ের নিকট সহযোগিতা চাইলে তিনি আবারও ঠান্ডা বুদ্ধির প্যাঁচে তাকে বলেন, আপনি যার নিকট থেকে জায়গা ক্রয় করেছেন তাকে জর্জ কোর্টে মামলা করে রায় নিয়ে নামজারী করতে হবে। আপনার মামলার রায় নিতে ৭/৮ বছর সময় লাগবে বলে কানুনগো আমিনুল ইসলামের কাছে পাঠান। আমিনুল ইসলাম কাগজপত্র দেখে আপনার নামজারী হবে বলে তহসিলদার আলাউদ্দিনের সাথে ফোনে কথা বলেন ও ভুক্তভোগীকে কাগজপত্রগুলো আলাউদ্দিনকে দেখাতে বলেন। ঔ দিন আলাউদ্দিন অফিসে না থাকায় পরের দিন কাগজপত্রগুলো আলাউদ্দিনকে দেখালে তিনও নামজারী হবে বলে জানান। এছাড়া ভুক্তভোগীকে জয়ের নিকট থেকে ফাইলটি তার কম্পিউটারে পাঠানোর জন্য বলতে বলেন। তখন ভুক্তভোগী জয়ের রুমে গিয়ে তার ফাইলের বিষয়ে কানুনগো ও তহসিলদারের বক্তব্য তুলে ধরে ফাইলটি তহসিলদার আলাউদ্দিনের কম্পিউটারে পাঠানোর অনুরোধ করলে ভেস্তে যায় জয়ের অপকৌশল। সাথে সাথে জয় তহসিলদার আলাউদ্দিনকে ফোন করে বলেন, এটার নামজারী আপনার দেয়ার ক্ষমতা আছে? টেলিফোন রেখেই “এই ব্যাটা তুই কে? তুই ফাইল চাওয়ার কে?” ভুক্তভোগী ঘাবড়ে গিয়ে বলেন, স্যার আপনিই তো আমাকে কানুনগো কাছে যেতে বলেছিলেন। স্যার আমার অপরাধ কি? প্রথমদিন আপনি আমাকে যিনি রেফারেন্স দিয়েছেন তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন। কাজের স্বার্থে আমি কোন প্রতিবাদ করিনি। একথা বলার পরেই ” থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব, বের হও এখান থেকে।” এভাবেই অপমান, অপদস্ত ও লাঞ্চনার ইতিহাস সৃষ্টি করলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের নাজির কাম ক্যাশিয়ার মজিবুর রহমান জয়। ইতিমধ্যে অন্যান্য অফিসার জয়ের রুমে চলে আসলে তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। বিষয়টি ডিসি অফিসে অভিযোগ করেও কোন বিচার না পাওয়ায় ভুক্তভোগী বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আরও একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এখানেও তিনি বিচার না পাওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জয় দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে তিনি অত্যাধিক প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। তার হাত অনেক লম্বা। এছাড়া বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে তদন্ত কর্মকর্তা কাউসার হামিদ যখন শুনানি করছিলেন তখন একজন ভদ্রলোক উপস্থিত হলে কাউসার হামিদ তাকে দেখে স্যার সম্মোধন করে উঠে দাঁড়িয়ে যান। তখন ঔ ভদ্রলোক জয়ের সাথে কথা বলে চলে যান। বিষয়টি জয় প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্য এমনটি করেছেন বলে আমার ধারণা। বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করলে একে একে বেরিয়ে আসে মজিবুর রহমান জয়ের বিভিন্ন অপকর্মের ফিরিস্তি। জয় একসময় ডিসি অফিসে কাজের সুবাদে সেখানকার কিছু বড় কর্তার সাথে তার গড়ে উঠেছে ঘনিষ্ঠতা। ফলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ সহকারী কমিশনার কার্যালয়ে তিনি প্রভাব খাটিয়ে ২৫/৩০ জন দালালের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই ঘুসের বিনিময়ে সেবা প্রার্থীরা কোনরূপ হয়রানি ছাড়া সেবা নিতে পারেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ সেবা নিতে আসলে তাকে হতে হয় নানাভাবে হয়রানি ও লাঞ্চনার শিকার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দালালের সাথে কথা বলে জানা যায়, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও নামজারীতে ৩০০০/(তিন হাজার) টাকা, ডিসিআর এ ২৫০০/(পঁচিশশত) টাকা ঘুস দিতে হয় জয়কে। জয় যদি কাউকে ঠান্ডা বুদ্ধির প্যাঁচে আটকাতে পারে সেক্ষেত্রে ঘুসের কোন লিমিট নেই। অভিযোগ ও ঘুস বানিজ্যের বিষয়ে জয়ের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এসব বিষয়ে তহসিলদার আলাউদ্দিনের সাথে কথা বললে, তিনি ঘটনার বিষয়ে শুনেছেন বলে জানান। ওয়ারিশন সার্টিফিকেটের ব্যাপারে তিনি বলেন, যেহেতু মহিলা তার স্বামীর (মৃত্যুর পর) ২৫ (পঁচিশ) শতাংশ জমি থেকে ২ (দুই) শতাংশ বিক্রি করেছেন তাই এক্ষেত্রে ওয়ারিশন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই। অভিযোগের বিষয়ে এসিল্যান্ড মনিজা খাতুনের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বিচারাধীন বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান। তবে জমিটির বিষয়ে সবকিছু শুনে তিনি বলেন, ওয়ারিশন সার্টিফিকেট হলে ভালো হয়। তবে না হলেও চলে। কারণ সাবরেজিস্টার দলিল দিলে আমাদের নামজারী দিতে সমস্যা নেই। অভিযোগের ব্যাপার বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের তদন্ত কর্মকর্তা কাউসার হামিদের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।