কিশোরগঞ্জে নিখোঁজের পর ছাত্রলীগ নেতার গলিত মরদেহ উদ্ধার
- আপডেট টাইম : ০৭:৩২:৫৫ অপরাহ্ণ, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
- / ৬৬ ৫০০০.০ বার পাঠক
কিশোরগঞ্জে নিখোঁজ হওয়ার ২৫ দিন পর মোখলেছ উদ্দিন ভুঁইয়া (২৫) নামের এক ছাত্রলীগ নেতার গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সন্দেহভাজন আটকদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জেলা শহরের নরসুন্দা নদীতে দুদিন ধরে অভিযান চালায় পুলিশ। অবশেষে অভিযানের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (২৩ ই এপ্রিল) বিকাল ৪টায় তার মরদেহটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা নিখোঁজের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ সময় তিনি জানান, মরদেহ উদ্ধারের আগে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের ব্যবহৃত লুঙ্গি, ভাড়া বাসার চাবি ও হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়। বিকাল ৪টার দিকে নরসুন্দা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় অর্ধগলিত মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়। মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহত ছাত্রলীগ নেতা মোখলেছ উদ্দিন ভুঁইয়া কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কেওরজোড় ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেনের ছেলে। মোখলেছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে সম্প্রতি বাংলা বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া জেলা জজ আদালতের একজন পেশকারের সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং জেলা শহরের হারুয়া বৌ বাজার এলাকার ভাড়া বাসায় থাকতেন।
পুলিশ জানায়, ছাত্রলীগ নেতা মোখলেছ নিখোঁজের ঘটনায় তার বন্ধুসহ চার জনকে আটকের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ। প্রাথমিক তথ্যে পুলিশ জানতে পারে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে গলা কেটে হত্যার পর নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এ তথ্যের ভিত্তিতে দুদিন ধরে নরসুন্দা নদীতে নিখোঁজের সন্ধানে অভিযান চালায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
পুলিশ আরও জানায়, মোখলেছ যে এলাকায় ভাড়া থাকতেন সেখানকার আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরায় গত ২৯ মার্চ সর্বশেষ তাকে দেখা গিয়েছিল। সেখানে নিখোঁজের দিনের সিসিটিভি ফুটেজে মোখলেছের বন্ধুকে দেখা যায়। পরে গত ২০ই এপ্রিল বেলা ১১টায় হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এলাকা থেকে মোখলেছের বন্ধু মিঠামইনের কেওয়ারজুর ইউনিয়ন ফুলপুর গ্রামের মিজান শেখ (২৮), তার বাবা শেফুল শেখ (৬৫) ও মিজানের দুই ভাই মারজান শেখ (২৬) ও রায়হান শেখকে (২১) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।
নিখোঁজ মোখলেছের বড় ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত ২৯ মার্চ পাগলা মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে ৩১ মার্চ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। মোখলেছ নিখোঁজের পর ওর বন্ধু মিজানকে জিজ্ঞাসা করেও কোনও সদুত্তর পাইনি। পরে হারুয়া মোড়ে একটি দোকান থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করি। সেখানে দেখা যায়, পাগলা মসজিদ থেকে তারাবির নামাজ পড়ে মোখলেছ বাসায় যাচ্ছিল। আর কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে পেছন থেকে হেঁটে আসছে ওর বন্ধু মিজান। কিন্তু মিজান ওই এলাকায় থাকে না। এতে আমার সন্দেহ হলে গত ১৬ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মিজান ও অজ্ঞাত চার-পাঁচজনকে আসামি করে অপহরণের মামলা করি।’
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘মোখলেছের নিখোঁজের ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার বড় ভাই। এরপর নিখোঁজের সন্ধানে আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করি। কিছুদিন পর নিখোঁজের পরিবার থেকে অপহরণের মামলা করা হয়। এরপর সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে আটক মিজানের বক্তব্য অনুযায়ী মোখলেছকে হত্যা করে নরসুন্দা নদীর ফুটওভার ব্রিজের নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এর সূত্র ধরে দুদিন ওই স্থান ও আশপাশের এলাকায় উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। অবশেষে বিকালে তার গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আটকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’