এলজিইডি’র কর্মকর্তা আশরাফুলের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ
- আপডেট টাইম : ০৫:২২:১১ অপরাহ্ণ, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪
- / ২৪৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের মতো গুরুতর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকেও ধরাছোঁয়ার বাইরে আশরাফুল।
★ অনিশ্চয়তা আর শঙ্কায় চাকুরি করছেন গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত নারীরা।
★ ৯ মাসেও তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেনি এলজিইডি।
এলজিইডি’র গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের উপ সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পটিতে কর্মরত নারী কর্মীদের যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের মতো গুরুতর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা। এসব বিষয়ে একাধিক সূত্র প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। কর্মস্থলে নারী কর্মীকে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে উপ সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল আলমকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এর সদর দপ্তর থেকে রাঙামাটিতে বদলি করা হলেও ক্ষমতার দাপটে বদলীর আদেশ বাতিল করে থেকে যান একই জায়গায়। ফলে একই অফিসে অভিযোগকারী নারীকে কাজ করতে বাধ্য করছে প্রকল্পটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প একটি হরিলুটের প্রকল্প। কয়েকজন প্রভাবশালী পৌরমেয়র ও প্রকল্পের কয়েকজন দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে চলছে লুটপাট। অবসরপ্রাপ্ত সাবেক প্রকল্প পরিচালক কাজী মো. মিজানুর রহমান সীমাহীন ঘুষ দূর্নীতির দূর্গ তৈরি করে দূর্নীতির বরপুত্র হিসেবে খেতাব প্রাপ্ত হয়েছেন। দূর্নীতি দমন কমিশন দফায় দফায় তদন্ত করেও অদৃশ্য শক্তির কারণে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি । তদন্তের দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে এই প্রকল্পের দূর্নীতি ঢাকতে মন্ত্রণালয়ে তদবির করে উপ প্রধান প্রকৌশলীর প্রশ্নবিদ্ধ পদোন্নতি হাতিয়ে নিয়ে নিজেদের পছন্দ মতো সাতক্ষীরায় কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলী সুজায়েতকে পিডি’র দায়িত্বে দিয়েছেন। সুজায়েত সাতক্ষীরায় নির্বাহী প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় নানা আইন বহির্ভূত কাজে যুক্তছিল। প্রকৌশলী সুজায়েত’র আগে এই প্রকল্পে ফরিদপুরে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলীকে মাত্র কয়েক দিনের জন্য প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পূর্বতন প্রকল্প পরিচালক কাজী মিজানুর রহমান এবং তার সিন্ডিকেট বর্তমান পিডিকে নিজেদের অপরাধ লুকাতেই এখানে দায়িত্বে দিতে উলঙ্গ ভুমিকা নিয়েছেন। কারন গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে তরিকুল -রকিবুল -আশরাফুল সিন্ডিকেট কাজী মিজানের অবসরে যাবার পরে আগের লুটপাট আর করতে পারবে না অথবা আগের দূর্নীতি লুকিয়ে রাখতে পারবে না এই ভয়ে তার চেয়েও একধাপ এগিয়ে থাকা মো. সুজায়েত হোসেনকে এই প্রকল্পে কোটি টাকা খরচ করে পুর্নবাসন করেছেন।
এলজিইডি’র প্রধান কার্যালয়ে বেশ কিছুদিন যাবত অনুসন্ধান করলে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। একটি প্রকল্পে একজন পিডি নিয়োগের পরে মাত্র একমাসেরও কম সময়ে কাউকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া এলজিইডি’র একটি বিরল ঘটনা বলে মনে করেন অনেকে। গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (আউট সোর্সিং) লায়লা জানান, বিগত ১৫/১০/২০২১ইং তারিখে ততকালীন প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশে সাইড পরিদর্শনে যাওয়ার পর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফ গল্প করার ছলে হোটেল রুমে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। একজন নারী হিসেবে লোকজ মান সম্মানের ভয়ে বিষয়টি আমি গোপন রাখি। কিন্তু আশরাফ প্রতিনিয়তই আমাকে সাইটে নিয়ে যাওয়ার জন্য মানসিক ভাবে চাপ সৃষ্টি করতো। তাছাড়া আমাকে নানাভাবে তার আশপাশের লোকজন মিলে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে বাসায় অথবা রিসোর্টে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাছাড়া অফিসে আমার সাথে কৃতদাসের মতো আচরণ শুরু করে। পরবর্তীতে আমি উপ সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ জানাই। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে রাঙামাটি ও ফরিদপুরে বদলী করা হলেও তিনি ক্ষমতার দাপটে বদলীর আদেশ দুইবারই বাতিল করে ঢাকায় একই প্রকল্পে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তাই আমি ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশংকা প্রকাশ করছি। কারণ তার ভয়ে প্রকল্পের কেউ কথা বলার সাহস করবেন না। এমনকি বর্তমানে আমিসহ প্রকল্পটিতে কর্মরত নারী কর্মীরা আশরাফুলের ভয়ে অনিশ্চয়তা আর শঙ্কায় চাকরি করছি। বিষয়টিতে পৃথকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুইজন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে অপারগতা প্রকাশ করে তদন্তভার ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শেখ মো. নুরুল ইসলাম বিষয়টি তদন্ত করছেন। বিগত ৯ মাসেও উক্ত ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। এভাবে যদি তদন্তে কালক্ষেপন করা হয় তাহলে আমি ফৌজদারী আইনের সহায়তা নিতে বাধ্য হবো বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন অভিযোগ কারী লায়লা।
এবিষয়ে প্রকল্প পরিচালক সুজায়েত হোসেন বলেন, শুনেছি গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) প্রকল্প পরিচালের দপ্তরে উপ-সহকারী প্রকৌশলী (আউট সোর্সিং) লায়লা প্রধান প্রকৌশলীর কাছে উপ সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ করেছে। তবে এ বিষয়ে বেশ জটিতলা দেখা যাচ্ছে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ততকালীন দায়িত্বশীল সহকারী প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম বলেন, আশরাফুলের বিরুদ্ধে লায়লার যে অভিযোগ আমি তার প্রত্যক্ষদর্শী। এ ধরনের অভিযোগ আশরাফুলের বিরুদ্ধে আরও রয়েছে। তাসরুফা নামের একটি মেয়ে আশরাফুলের ভয়ে চাকুরি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। পিডি হিসেবে সুজায়েত সাহেব দায়িত্ব গ্রহনের পরই আমার সামনেই আশরাফ গং লায়লাকে মারধোর করে জামা কাপড়ও ছিড়ে ফেলে এ বিষয়টা অফিসের সবাই প্রত্যক্ষ করেছেন। এ বিষয়ে প্রকৌশলী প্রশাসন (তদন্ত) শরীফ উদ্দিন বলেন, আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে তিনি সেই কারণ দর্শানোর লিখিত জবাব দিয়েছেন। এখন বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত দেবেন। তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন বলেছেন, অভিযোগের বিষয়টি আমি প্রশাসন বিভাগে যোগদানের পূর্বের ঘটনা। তবুও যেহেতু শ্লীলতাহানীর অভিযোগ রয়েছে তাই শীঘ্রই তদন্তের কাজটা সমাধান হওয়া উচিত ছিল। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে দুইজন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করতে অস্বীকার করায় এখন তৃতীয় দফায় সুপারেন্টেন্ড ইঞ্জিনিয়ার শেখ মো.নুরুল ইসলাম বিষয়টি তদন্ত করছেন। শীঘ্রই এর তদন্ত সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন তিনি। উক্ত অভিযোগের বিষয়ে উপ সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে লিখিত জবাব দিয়েছি। এই বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এসব বিষয়ে চেষ্টা করেও এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী আলি আখতার হোসেনের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।দৈনিক সময়ের কন্ঠ পত্রিকায় চোখ রাখুন