বরগুনা প্রেস ক্লাবে আটকে সাংবাদিককে পিটিয়ে হত্যা সুষ্ঠু বিচারের দাবি করছেন পরিবার
- আপডেট টাইম : ০৬:২২:৫৭ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৩ মার্চ ২০২৪
- / ১৭০ ৫০০০.০ বার পাঠক
নিহত সাংবাদিক মাসুদ তালুকদার। ছবি : সংগৃহীত
বরগুনার প্রেস ক্লাবে আটকে রেখে মারধরের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাসুদ তালুকদার নামে এক সাংবাদিক মারা গেছেন। প্রেস ক্লাবে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। নিহত মাসুদ দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকা ও রাজধানী টেলিভিশন নামে একটি আইপি টিভির বরগুনা জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি সদর উপজেলার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য, বরগুনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্য ও বরগুনা রেড ক্রিসেন্টের জীবন সদস্য ছিলেন।
মাসুদ আহত হওয়ার পর এক ভিডিওবার্তায় বলেছেন, বরগুনা প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ (এনটিভি বরগুনা জেলা প্রতিনিধি) প্রেস ক্লাবকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। তিনি শুধু তার অনুসারীদের প্রেস ক্লাবের সদস্য বানান। আবার অনেক সদস্যকে বিনা কারণে বহিষ্কার করেছেন। মাসুদসহ বহিষ্কৃত সদস্যরা চেয়েছিলেন, প্রেস ক্লাব সকল সাংবাদিকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সেই অধিকার ও সকল সাংবাদিকের জন্য উন্মুক্ত প্রেস ক্লাব করার লক্ষ্যে মাসুদ বরগুনা জেলা প্রেস ক্লাব নামে সংগঠন গড়ে তোলেন। এর জেরে তাকে মারধর করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
নিহত মাসুদের স্ত্রী সাজেদা জানান, ১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে বরগুনা প্রেস ক্লাবের অভ্যন্তরে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে তর্কের একপর্যায়ে এনটিভির বরগুনা প্রতিনিধি সোহেল হাফিজ ও তার ১০-১২ জন সহযোগী মিলে হামলা চালিয়ে আহত করেন মাসুদকে। পরে তাকে তারা আহত অবস্থায় প্রেস ক্লাবের একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বরগুনার হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাপসাতালে পাঠায়। ঘটনার ১১ দিন পর শনিবার (২ মার্চ রাত ১১ টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মারধরের প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে মাছরাঙা টেলিভিশনের বরগুনা প্রতিনিধি মুশফিক আরিফ বলেন, ‘প্রেস ক্লাবে ক্যারম খেলা নিয়ে দ্বন্দ্ব বাঁধে। একপর্যায়ে প্রেস ক্লাবের তৃতীয় তলার অফিসরুমে বসে এনটিভির জেলা প্রতিনিধি সোহেল হাফিজের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন মিলে হামলা চালিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখে তাকে। সেখানে তাকে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করা হয়। পরে বরগুনা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) একেএম মিজানুর রহমান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মাসুদকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠান।’
ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে খবর পেয়ে বরগুনা প্রেস ক্লাবের তৃতীয় তলায় গিয়ে মাসুদ তালুকদারকে আহত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ। আমরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছিলাম। শনিবার রাত ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। মামলা হওয়ার পর আমরা যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
বরগুনা প্রেস ক্লাবের বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট সজীব দাস ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর হোসেন হাওলাদারকে শনিবারের পর বরগুনা শহরে দেখা যায়নি। বাড়িতে বা প্রেস ক্লাবে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। অন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তাদের সবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বাড়িতে বা প্রেস ক্লাবে তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়া গেছে।
প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, ‘প্রেস ক্লাবে বসে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটানো হয়েছে তার পুরো সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। ফুটেজ দেখে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হোক। তবে বিষয়টি পুরোপুরি ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এর সাথে প্রেস ক্লাবের কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই।’
শনিবার বিকালে জানাজা শেষে মাসুদের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। তার এই অকালমৃত্যুতে বরগুনাবাসী নিস্তব্ধ। স্ত্রী-সন্তান, বৃদ্ধ বাবা-মা ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে আছে বাড়ির আকাশ। স্থানীয় সাংবাদিকরা এ ঘটনায় হতবাক হয়েছেন। সুশীল সমাজ, সাংবাদিকবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন।