সিলেট-৫ দুই বন্ধুর ভোটযুদ্ধে ফায়দা নিতে চান হুছামুদ্দীন চৌধুরী-শাব্বির আহমদ
- আপডেট টাইম : ০৩:০৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ১৯৪ ৫০০০.০ বার পাঠক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে এবার দু’জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও এক হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটারদের আলোচনায় স্থান করে নিয়েছেন। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। আর দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির। অন্যদিকে আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেবের কনিষ্ঠপুত্র সাবেক মহাজোট নেতা বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ’র সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এই তিন প্রার্থীকে ঘিরে সিলেট-৫ আসনে বেশি আলোচনা হচ্ছে। মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী এবার প্রতিদ্ব›িদ্বতা করায় সিলেট বিভাগের সকল দলের মানুষের চোখ সিলেট-৫ আসনের দিকে। এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শাব্বির আহমদ, তৃণমূল বিএনপি থেকে ব্যারিস্টার কুতুব উদ্দিন শিকদার, কংগ্রেস থেকে বদরুল আলম, মুসলিম লীগ প্রার্থী মো. খায়রুল ইসলাম প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। কিন্তু সাধারণ ভোটারের মুখে তাদের তেমন আলোচনা নেই। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ব্যারিস্টার কুতুব উদ্দিন শিকদার ছাড়া সকল প্রার্থীই নতুন মুখ। তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার কুতুব উদ্দিন শিকদার আগে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জামানত হারিয়েছিলেন। প্রার্থীদের মধ্যে আর কেউ আগে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেননি।
সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থেকে জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনে পাশে ছিলেন। নির্বাচনী এলাকায় তাঁর নিয়মিত যাতায়াত আছে। স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বেশি সময় দেওয়ার কারণে তিনি জয় পাবেন বলে আশা করছেন। এলাকায় তাঁর রাজনৈতিক পৃথক পৃথক বলয় রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিনের সাথে এবার কয়েকজন নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু ভোটের মাঠে নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে তাদেরকে দেখা যাচ্ছেনা। মনোনয়ন না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। নৌকা বিজয়ে ড. আহমদ আল কবির এখন বড় বাঁধা বলে কেউ কেউ মনে করছেন। তবে সিলেট-৫ আসনে নৌকার বড় একটি ভোট ব্যাংক থাকায় শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে বূর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নৌকা বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ট্রাক প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠ গরম করে তুলেছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ তাঁর সঙ্গে মাঠে কাজ করছেন। রাজনীতির পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে ড. আহমদ আল কবিরের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি কাজ করে থাকেন। জকিগঞ্জ-কানাইঘাট উপজেলায় যুবলীগের কমিটি দিয়ে তিনি আলাদা একটি গ্রæপ আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর থেকে স্থানীয় রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব বাড়তে থাকে। নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবার পর থেকে দলের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীর একটি অংশ পক্ষে থাকায় ও নিজের সামাজিক কর্মকান্ডের জন্য তিনিও ভোটের মাঠে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। দলীয় প্রার্থীর সাথে তাঁকেও শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে ধরে নিচ্ছেন ভোটাররা।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর হঠাৎ করেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক মহাজোট নেতা আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী। তিনি কেটলি প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে নতুন সমীকরণ সৃষ্ঠি করেছেন। পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই ভোটের মাঠে নেমে সাধারণ মানুষের বেশ সাড়া পাচ্ছেন। বিভিন্ন মতের সব আলেমদেরকে নিজের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্ঠা চালাচ্ছেন। প্রতিটি মাদ্রাসায় উপস্থিত হয়ে ক্বওমী আলেমদের দোয়া নিয়েছেন। ভোটার দিন ঘনিয়ে আসায় কোথাও কোথাও ক্বওমী ঘরানো আলেমরা তাঁর পক্ষে ভোট চাইতেও দেখা গেছে। বির্তকিত শিক্ষানীতি নিয়ে তফসিলের কয়েকমাস আগে আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে সফল হয়েছিলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ভোটের মাঠে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তাঁর অনুসারী নেতাকর্মীরা মনে করেন তফসিলের পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ একটি শুভ বার্তা।
আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীর দল বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে মহাজোটকে সমর্থন দিয়েছে। গত সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. হাফিজ আহমদ মজুমদারের নির্বাচনী সমাবেশে প্রকাশ্যে ভোট চেয়েছেন। তাছাড়াও সম্প্রতি জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীর কেটলী মার্কায় ভোট চেয়ে শহরে লিফলেট বিতরণ করেছেন। এতে নির্বাচনী মাঠে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, অতীতের সমর্থন ও বর্তমানে ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে প্রচার প্রচারণা শুরু করার ফলে তিনি আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশের ভোট নিজের দখলে নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন। সাধারণ ভোটারদের ধারণা, ভোটের শেষ লড়াইয়ে আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীর মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতায় চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। দুজনই একই দলের রাজনীতি করেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দৌড়ে বন্ধু মাসুক উদ্দিনের কাছে হেরে গিয়ে বন্ধু ড. আহমদ আল কবির স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। ভোটের মাঠে দু’জনই শক্তিশালী প্রার্থী। তবে এই দুই বন্ধুর প্রতিদ্ব›িদ্বতার কারণে আওয়ামী ঘরানো ভোট ভাগ হয়ে গেছে। সেই সুযোগে ফয়দা নিতে চান সাবেক মহাজোট নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী। এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাব্বির আহমদ আলোচনায় না তেমন স্থান না পেলেও পার্টির নেতাকর্মীরা শেষ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ হলে তিনিও টক্কর দিতে পারেন। আওয়ামী লীগের দুই নেতা মাসুক উদ্দিন ও ড. আহমদ আল কবির এবং স্বতন্ত্র আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীর ভোট ভাগাভাগিকে তিনি তাঁর জন্য সুবিধাজনক বলে মনে করছেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, অতীতের নির্বাচনে আমি মনোনয়ন না পেলেও নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। এবার আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা মার্কা দিয়ে পাঠিয়েছেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে ভোটাররা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবেন। সাধারণ মানুষের জন্য আমি অতীতে অনেক কাজ করেছি। নির্বাচিত হয়ে জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে চাই।
স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির বলেন, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। জননেত্রী শেখ হাসিনা এবার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের যে কাউকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন এবং নেতাকর্মীরাও প্রকাশ্যে কাজ করতে পারছেন। সাধারণ মানুষের জন্য আমি অনেক কাজ করেছি। সেই মূল্যায়ন ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ দেবেন। বিশ্বাস করি উন্নয়নের জন্য জকিগঞ্জ-কানাইঘাটবাসী ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করবেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী বলেন, আমি নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা না করলেও কাউকে সমর্থন দিতে হয়। সর্বদলীয় মানুষ আমাকে সম্মান করে তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে অনেক দিন ধরে নির্বাচনে আসার জন্য বলে আসছিলেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সকল পদ পদবীর উর্ধ্বে ওঠে বিচক্ষণ একজন দেশ প্রেমিক মানুষ। তিনি জাতীয় সংসদে ভালো মানুষ দেখতে চান। জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের সর্বমহল আমাকে ভালোবাসে তাই ঐক্যবদ্ধভাবে আলেম উলামাসহ সাধারণ মানুষ শিক্ষানীতির কারণে ও উন্নয়নের জন্য বিজয়ী করবেন। আমি সংসদে গেলে অসহায় বঞ্চিত মানুষের পক্ষে কথা বলবো এবং এলাকার উন্নয়ন সবাইকে নিয়েই কাজ করবো।