ঢাকা ১০:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বৃষ্টির আশায় ইসতিসকার নামাজ আদায় রুহিয়ায় পুলিশের অভিযানে আটক ২  কোস্টগার্ডের অভিযানে ১টি দেশীয় স্যুটার গান সহ ৩ জন আটক কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানা পুলিশের অভিযানে জুয়া খেলার সরঞ্জামাদি, নগদ টাকা সহ ৬জন আসামী গ্রেপ্তার শান্তি নিবিড় সেবা ফাউন্ডেশন ও শান্তি নিবিড় পাঠাগার এর পক্ষ থেকে সম্মাননা পদক প্রদান করা হলো পাথরঘাটায় শূন্য থেকে কোটিপতি ফ্রিল্যান্সার বেলাল হোসেন, করছেন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ফুলবাড়ী অনলাইন প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি গঠন সড়কে ঝরলো যুবকের প্রান

জীবন সংগ্রামী এক নারীর গল্প

সময়ের অনুসন্ধান রিপোর্ট।।

হকারি করে নানা জায়গায় পান-সিগারেট বিক্রি করতে হরহামেশাই পুরুষদের দেখি আমরা। পুরুষদের পাশাপাশি এখন নারীদেরও সিগারেট-পান বিক্রি করতে দেখা যায়। সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এসব সাহসী নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন দুরন্ত গতিতে।

এমনি এক সাহসী নারী আঁখি আক্তার। ১৯ বছরের এ নারী তার পেশা শিশুকালেই আখিঁর মা আরেকটি বিয়ে করে অন্য ঘরে চলে যান। বাবাও দ্বিতীয় বিয়ে করার পর সেই সৎ মায়ের সঙ্গে বসবাস করছেন। ৩য় শ্রেণি পাড় হওয়ার আগেই ১১ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল তার। বিয়ের পর ১৪ বছর বয়সে জন্ম দেন এক কন্যা সন্তানও। পেটে দু’মুঠো ভাত দিতে কখনো কখনো সিদ্ধ ডিম আবার কখনো পান-সিগারেট বিক্রি করছেন আঁখি আক্তার। ঢাকা মেডিক্যালে কলেজের জরুরি বিভাগের প্রধান ফটকের ডান পাশে দেখা মিলবে সংগ্রামী আঁখির।

সংগ্রামী এ নারী জীবনের গল্প শুনান ইত্তেফাক অনলাইনকে। তিনি জানান, বিয়ের পর মাঝেমধ্যে তার স্বামী কাজ করলেও প্রায়ই নেশাপানি করে ঘরে ফিরত। স্বামীর অস্বাভাবিক চলাচলে সংসারে অভাব-অনটন শুরু হয়। পরে দুই বছর আগে একজনের অনুপ্রেরণায় ধার দেনা করে ১৫শ টাকা পুঁজি নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালের সামনে পান-সিগারেট এর ব্যবসা শুরু করে। সারাদিন যা উপার্জন হতো তা দিয়ে তিন জনের সংসারের খরচ যোগায় আঁখি। তার মেয়ের যখন দুই মাস তখন এমনও দিন গেছে মেয়েকে রাস্তায় ঝুড়ির মধ্যে রেখে ব্যবসা চালিয়ে গেছে। সকাল হলেই রাজধানীর কামড়াঙ্গীচড়ের সেকশন চড় এলাকা থেকে এসে ঢাকা মেডিক্যালের সামনে বসে পড়ে সে। ঘরে ফিরতে ফিরতে রাত হয়।হিসেবে বেছে নিয়েছেন পান-সিগারেট বিক্রির কাজ।

পড়ালেখা কতটুকু বলতেই মিনিট খানেক চুপ থেকে আঁখি আক্তার বলেন, শিশুকালেই আমার মা আরেকটা বিয়ে করে বাবাকে ছেড়ে চলে যান। এরপর বাবাও আরেকটা বিয়ে করেন। তারপর থেকে আমার জন্য নেমে আসে অন্ধকার। আমার পড়ালেখাও অনিশ্চিত হয়ে যায়। ৩য় শ্রেণিতে উঠার পরে আর স্কুলে যেতে পারিনি।

সারাদিন বিক্রি শেষে কেমন উপার্জন হয় জানতে চাইলে আঁখি বলেন, সব খরচ বাদ দিয়ে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করা যায় একদিনে। বৃষ্টির সময় ব্যবসা খুব একটা ভালো হয় না।

সংগ্রামী এ নারী ঋণের বেড়াজালেও আটকে আছেন জানান। তিনি বলেন, করোনায় লক ডাউনে অনেক দিন বসে বসে খাওয়ায় কিছু টাকা ঋণ হয়ে গেছে। ঋণগুলো পরিশোধ করতে পারলে আর যদি ব্যবসা ঠিকঠাক থাকে তাহলে হয়ত চলতে সমস্যা হবে না।

আঁখি আরও বলেন, যদিও সিগারেট-পানের ব্যবসা করি তবে আমি নিজে সিগারেট পান কোন কিছুই খাই না শুধু বেচি। অনেক মানুষ অনেক রকম কথা বলে এসবকে কানে দেই না। চাইলে মানুষের বাড়িতে কাজ করতে পারতাম। সেটা না করে আমি নিজের কাজ করে খাচ্ছি। আমি চাইলে সহজে বিভিন্ন পথে গিয়ে টাকা ইনকাম করতে পারতাম কিন্তু তা কখনো করিনি। আমার মেয়ে এখন বড় হচ্ছে স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। আমি চাই না আমার মেয়ের জীবনও যেন আমার মতো হয়।

আরো খবর.......

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

জীবন সংগ্রামী এক নারীর গল্প

আপডেট টাইম : ০৮:৪৪:১৭ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ৮ মার্চ ২০২১

সময়ের অনুসন্ধান রিপোর্ট।।

হকারি করে নানা জায়গায় পান-সিগারেট বিক্রি করতে হরহামেশাই পুরুষদের দেখি আমরা। পুরুষদের পাশাপাশি এখন নারীদেরও সিগারেট-পান বিক্রি করতে দেখা যায়। সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এসব সাহসী নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন দুরন্ত গতিতে।

এমনি এক সাহসী নারী আঁখি আক্তার। ১৯ বছরের এ নারী তার পেশা শিশুকালেই আখিঁর মা আরেকটি বিয়ে করে অন্য ঘরে চলে যান। বাবাও দ্বিতীয় বিয়ে করার পর সেই সৎ মায়ের সঙ্গে বসবাস করছেন। ৩য় শ্রেণি পাড় হওয়ার আগেই ১১ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল তার। বিয়ের পর ১৪ বছর বয়সে জন্ম দেন এক কন্যা সন্তানও। পেটে দু’মুঠো ভাত দিতে কখনো কখনো সিদ্ধ ডিম আবার কখনো পান-সিগারেট বিক্রি করছেন আঁখি আক্তার। ঢাকা মেডিক্যালে কলেজের জরুরি বিভাগের প্রধান ফটকের ডান পাশে দেখা মিলবে সংগ্রামী আঁখির।

সংগ্রামী এ নারী জীবনের গল্প শুনান ইত্তেফাক অনলাইনকে। তিনি জানান, বিয়ের পর মাঝেমধ্যে তার স্বামী কাজ করলেও প্রায়ই নেশাপানি করে ঘরে ফিরত। স্বামীর অস্বাভাবিক চলাচলে সংসারে অভাব-অনটন শুরু হয়। পরে দুই বছর আগে একজনের অনুপ্রেরণায় ধার দেনা করে ১৫শ টাকা পুঁজি নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালের সামনে পান-সিগারেট এর ব্যবসা শুরু করে। সারাদিন যা উপার্জন হতো তা দিয়ে তিন জনের সংসারের খরচ যোগায় আঁখি। তার মেয়ের যখন দুই মাস তখন এমনও দিন গেছে মেয়েকে রাস্তায় ঝুড়ির মধ্যে রেখে ব্যবসা চালিয়ে গেছে। সকাল হলেই রাজধানীর কামড়াঙ্গীচড়ের সেকশন চড় এলাকা থেকে এসে ঢাকা মেডিক্যালের সামনে বসে পড়ে সে। ঘরে ফিরতে ফিরতে রাত হয়।হিসেবে বেছে নিয়েছেন পান-সিগারেট বিক্রির কাজ।

পড়ালেখা কতটুকু বলতেই মিনিট খানেক চুপ থেকে আঁখি আক্তার বলেন, শিশুকালেই আমার মা আরেকটা বিয়ে করে বাবাকে ছেড়ে চলে যান। এরপর বাবাও আরেকটা বিয়ে করেন। তারপর থেকে আমার জন্য নেমে আসে অন্ধকার। আমার পড়ালেখাও অনিশ্চিত হয়ে যায়। ৩য় শ্রেণিতে উঠার পরে আর স্কুলে যেতে পারিনি।

সারাদিন বিক্রি শেষে কেমন উপার্জন হয় জানতে চাইলে আঁখি বলেন, সব খরচ বাদ দিয়ে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করা যায় একদিনে। বৃষ্টির সময় ব্যবসা খুব একটা ভালো হয় না।

সংগ্রামী এ নারী ঋণের বেড়াজালেও আটকে আছেন জানান। তিনি বলেন, করোনায় লক ডাউনে অনেক দিন বসে বসে খাওয়ায় কিছু টাকা ঋণ হয়ে গেছে। ঋণগুলো পরিশোধ করতে পারলে আর যদি ব্যবসা ঠিকঠাক থাকে তাহলে হয়ত চলতে সমস্যা হবে না।

আঁখি আরও বলেন, যদিও সিগারেট-পানের ব্যবসা করি তবে আমি নিজে সিগারেট পান কোন কিছুই খাই না শুধু বেচি। অনেক মানুষ অনেক রকম কথা বলে এসবকে কানে দেই না। চাইলে মানুষের বাড়িতে কাজ করতে পারতাম। সেটা না করে আমি নিজের কাজ করে খাচ্ছি। আমি চাইলে সহজে বিভিন্ন পথে গিয়ে টাকা ইনকাম করতে পারতাম কিন্তু তা কখনো করিনি। আমার মেয়ে এখন বড় হচ্ছে স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। আমি চাই না আমার মেয়ের জীবনও যেন আমার মতো হয়।