ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন সার্ভিসের ভারতীয় ইঞ্জিনের লার্নিং রোড
- আপডেট টাইম : ০৯:৩১:১৬ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ৬ মার্চ ২০২১
- / ৭৩৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
সময়ের কন্ঠ রিপোর্টার।।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি সুর্বণজয়ন্তীর দিন আগামী ২৬ মার্চ ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি(শিলিগুড়ি)পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস চালুর আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এর জন্য দুই দেশের রেল মন্ত্রনালয় তৎপরতা শুরু করেছে। অচিরেই চুড়ান্ত ভাবে ঘোষনা করা হবে ট্রেনের নাম, যাত্রী ভাড়া ও সময়সূচীর তালিকা।
এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচলের পূর্বে নীলফামারীর চিলাহাটি সীমান্ত ও ভারতের হলদীবাড়ি সীমান্ত রেলগেট পর্যন্ত লার্নিং রোডের(এলআর) রুট পরিদর্শন করেছে ভারতীয় রেলের প্রস্তাবিত ওই যাত্রীবাহী ট্রেনের ৭ জন লোকো পাইলট ও গার্ডের একটি প্রতিনিধি দল।
আজ শনিবার চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেল লিংক স্থাপনের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুর রহিম বলেন, আগামী ২৬ মার্চ নিউ জলপাইগুড়ি-ঢাকা পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস চালু করবে দুই দেশের সরকার। এ জন্য গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল সারে ১১টা নাগাদ লার্নিং রোডের(এলআর) জন্য ভারতীয় একটি মহড়া ইঞ্জিন নিউজলপাইগুড়ি থেকে ছেড়ে হলদিবাড়ি রেল স্টেশন হয়ে বাংলাদেশের চিলাহাটি সীমান্ত পর্যন্ত আসে। মহড়ার জন্য ভারতীয় ইঞ্জিনটি বাংলাদেশের চিলাহাটি রেলষ্টেশন পর্যন্ত আসার কথা ছিল। আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে এদিন মহড়া ইঞ্জিন ও ৭জন লোকো পাইলট ও গার্ডের একটি দল বাংলাদেশে যাবেন এমনটা ভারতীয় রেলওয়ের পক্ষে আগে থেকে কাস্টম ও ইমিগ্রেশন দফতরকে জানাননি। ফলে অনুমতি না মেলায় ভারতীয় ইঞ্জিনটি চিলাহাটি পর্যন্ত আর আসতে না পেরে সীমান্ত এলাকা থেকে পুনরায় নিউ জলপাইগুড়ি ফিরে যায়। তবে তিন দফায় এলআর হবে। সে ক্ষেত্রে অচিরেই ভারতীয় রেল ইঞ্জিন বাংলাদেশের চিলাহাটি রেলস্টেশন পর্যন্ত লার্নিং রোড পরিদর্শন করবে।
এদিকে ভারতের উত্তর-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সুভানন্দ চন্দা মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নতুন রুটে ট্রেন চালানোর আগে লার্নিং রোডের(এলআর) করতে হয়। এতে ট্রেনের লোকো পাইলট ও গার্ডরা ওই রুটের সিগন্যাল ব্যবস্থা, লাইনের পরিস্থিতি, রুট নির্দেশিকা স¤পর্কে ধারণা নেয়। এসব জানা থাকলে ওই রুটে ট্রেন চালাতে আর সমস্যা থাকে না। যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে নিউজলপাইগুড়ি থেকে ভারতীয় রেলের লোকো পাইলট ও গার্ডরা বাংলাদেশের চিলাহাটি পর্যন্ত যাবে। চিলাহাটি থেকে বাংলাদেশের লোকো পাইলট ও গার্ডরা ট্রেনটিকে ঢাকা নিয়ে যাবে। আবার বাংলাদেশের লোকো পাইলট ও গার্ডরা ট্রেনটিকে ঢাকা থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত নিয়ে আসবে। এরপর চিলাহাটি থেকে ভারতীয় ইঞ্জিনের লোকো পাইলট ও গার্ডরা ট্রেনটিকে নিউজলপাইগুড়ি নিয়ে যাবেন। ট্রেন চালানোর আগে দুই থেকে তিনদিন লার্নিং রোডের (এলআর) করা প্রয়োজন। কাস্টম ও ইমিগ্রেশন দপ্তরের অনুমতি পেলেই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি ও বাংলাদেশের চিলাহাটি রেলস্টেশন পর্যন্ত লার্নিং রোডের (এলআর) পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সুত্র মতে ভারতের নিউজলপাইগুড়ি (শিলিগুড়ি) থেকে ঢাকার মোট দুরত্ব ৫৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভারতীয় অংশে ৮৪ ও বাংলাদেশ অংশে ৪৪৬ কিলোমিটার। তবে কোন স্টেশনে ট্রেনটি যাত্রী উঠা নামানোর জন্য থামবেনা। যারা এই ট্রেনের যাত্রী হবেন তারা ঢাকায় উঠে নামবেন নিউজলপাইগুড়ি। আবার যে সকল যাত্রী নিউ জলপাইগুড়ি থেকে এই ট্রেনে উঠবেন তারা নামতে পারবেন ঢাকা ক্যান্টনম্যান্ট রেলস্টেশনে।
প্রকাশ থাকে যে,সুদীর্ঘ ৫৫ বছর পর ভারতের হলদিবাড়ি ও বাংলাদেশের চিলাহাটি রেল রুটে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেন পরিষেবার সূচনা করেছিলেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। এরপর যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশের রেলমন্ত্রনালয়। সেই অনুযায়ী চলতি বছরের ২২ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের রেলের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে ভারতের কাটিহার ও শিয়ালদা ডিভিশনের কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চলা আন্তর্জাতিক ট্রেনটি নিউজলপাইগুড়ি (শিলিগুড়ি) থেকে ছেড়ে জলপাইগুড়ি ও হলদিবাড়ি রেল স্টেশনে না থেমেই সীমান্ত গেট পেরিয়ে বাংলাদেশের চিলাহাটি রেলস্টেশনে থাকবে। সেখানে ইঞ্জিন পরিবর্তন করে সরাসরি ঢাকায় গিয়ে থামবে। ওই বৈঠকে খসড়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সপ্তাহে দুইদিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার ট্রেনটি ভারতীয় সময় দুপুর ২টায় নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছেড়ে ৯ ঘন্টায় বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকা ক্যান্টনম্যান রেলস্টেশনে পৌছবে। আবার ওই দিন বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় ছেড়ে পরদিন ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ৯ টায় নিউজলপাইগুড়ি পৌছবে।ট্রেনটিতে মোট ১০টি কোচ থাকবে। ট্রেনটি ভারতীয় রেলকোচে পরিচালিত করা হবে। অচিরেই ট্রেনের নাম ও সময়সুচি ও ভাড়া চুড়ান্ত ভাবে ঘোষনা করা হবে।
উল্লেখ যে, ঢাকা-নিউজলপাইগুড়ি ট্রেন সাভির্সের মাধ্যমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের এটি হবে তৃতীয় যাত্রীবাহী রেল সার্ভিস। ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হয়েছিল ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে। ২০১৭ সালের ৯ নবেম্বর দ্বিতীয় রেলসেবা বন্ধন এক্সপ্রেস চালু হয় খুলনা ও কলকাতার সঙ্গে।