ঢাকা ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
সরকারি রাস্তা আওয়ামী লীগ নেতার দখলের চেষ্টা।এই বিষয়ে সময়ের কন্ঠস্বরে নিউজ প্রকাশের পর এসিল্যান্ডের নিষেধাজ্ঞা ফার্মেসী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (সমগ্র বাংলাদেশ) পাকুন্দিয়া উপজেলা শাখা কমিটির সকলকে সনদ প্রদান ও আলোচনা সভা ২৫২ বছরের ইতিহাসে চট্টগ্রামে এই প্রথম নারী ডিসি ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পদায়ন ফরিদা খানম গাজীপুর জেলা মহানগর কাশিমপুরে স্বাধীন মত প্রকাশের জেরে থানার ওসির নেতৃত্বে একাধিক সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা আজমিরীগঞ্জ পৌর এলাকার গন্জেরহাটি গ্রামের সরকারি রাস্তা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রনব বনিকের দখলের চেষ্টা নরসিংদীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে আহত সাংবাদিকদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চট্টগ্রামে জনতা ব্যাংক সিবিএ নেতা আফসার আ.লীগের আমলে দাপট দেখিয়ে এখন বিএনপি নিয়োগ, বদলি, চাঁদাবাজি করে কামিয়েছেন টাকা মহারাষ্ট্রে ভূমিধস জয়ের পথে বিজেপি জোট, ঝাড়খণ্ডে ‘ইন্ডিয়া’ পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু জুলাই বিপ্লবে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের ছেলে মো. বাবুকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড

৫৫ হাজার তালগাছ লাগিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন ঠাকুরগাঁওয়ের খোরশেদ

আল মামুন, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি
  • আপডেট টাইম : ০১:২১:১৪ অপরাহ্ণ, বুধবার, ২৬ জুলাই ২০২৩
  • / ৩৭৪ ৫০০০.০ বার পাঠক

‘তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে-উঁকি মারে আকাশে’। এই কবিতাটি মনে করিয়ে দেয় আকাশমুখী এই গাছটির কথা। যদিও আজকাল গ্রাম বাংলায় দেখা যায় না অগণতি তাল গাছের সারি। সময়ের পরিক্রমায় তালগাছের সংখ্যাও কমে গিয়ে আজ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। বিলুপ্তির পথ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ৭নং চিলারং ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামের ৬৮ বছর বয়সী ইমাম মোঃ খোরশেদ আলী। আর তাল গাছ লাগিয়ে জেলা, উপজেলা ও রংপুর বিভাগে প্রথম হলেও এবার তিনি তাল গাছ লাগিয়ে সারাদেশেসহ বিশ্ব রেকর্ড গড়তে চান।

পরিবেশ সচেতন এই মানুষটি ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রতি বছর রোপন করেছেন ৫ থেকে ১০ হাজার তালগাছ। বর্তমানে তার পরিচর্যায় প্রায় ৫৫ হাজারেরও বেশি তালগাছ রয়েছে। ইমাম খোরশেদ আলী পেশায় একজন পল্লী-চিকিৎসক।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পল্লীবিদ্যূৎ বাজার থেকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কাদসূকা ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার এবং কাদসূকা ব্রীজ থেকে চৌরঙ্গী বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার, চিলারং ইউনিয়নের রেলঘুন্টি থেকে আখানগড় রেল ষ্টেশন পর্যন্ত, আখানগর থেকে চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ, এছাড়াও তিনি তার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের সরকারি রাস্তার দুই ধারে তাল গাছের বীজ ও চারা রোপণ করেই চলেছেন। সড়কের দু’ধারে এ মহাযজ্ঞ চালিয়ে যেতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে জানতে চাইলে তিনি টাকার হিসাব প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেন। রোপনকৃত তালগাছ গুলোর মধ্যে যেগুলো চারার বয়স পাঁচ থেকে সাত বছর সেগুলো খুব বেশি দৃশ্যমান।

খোরশেদ আলী সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ২০১৪ সাল থেকে খোরশেদ সাহেব বিভিন্ন জায়গায় তাল বীজ রোপন করার যে কর্মকান্ড গুলো করছিল এগুলো দেখে প্রথমত আমরা অনেকেই হাস্যকর মনে করেছিলাম। কিন্তু এখন আমরা তাকে নিয়ে গর্বিত। রাস্তা সহ পরিবেশের সৌন্দর্য ও ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে তার লাগানো তাল গাছগুলো যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে।

ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আরো একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, এই গাছ রোপণ করতে গিয়ে তিনি তার পৈতৃক কৃষিজমি বিক্রি করেছেন। তবুও তিনি থেমে থাকেননি। তালের আঁটি সংগ্রহ করা সহজ ছিল না। বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে তাল বীজ সংগ্রহ করতে এতে অনেক শ্রম ও শ্রমিক লেগেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমাম খোরশেদ আলী বলেন, মানুষের চলার পথে টাকা-পয়সা বড় কথা নয়। মানুষের মধ্যে স্মৃতি হয়ে থাকতে চাই। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গত ৮ বছর ধরে ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন স্থানে ও রাস্তার পাশে তাল বীজ রোপণ করেছি। আমার ইচ্ছে ১ লক্ষ তালগাছ লাগানোর। প্রতি বছর রাস্তায় ৫-১০ হাজার করে তাল বীজ রোপণ করেছি। তাল গাছ রোপন করে পরিবেশের সৌন্দর্য, ভারসাম্য রক্ষা সহ, প্রতি বছর যে হাজার হাজার মানুষ বর্জপাতে মারা যায় সেটাও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু আমি মনে কষ্ট পাই খুব তখন যখন দেখি আমার এই তালগাছগুলোকে কিছু অসাধু লোক বিভিন্নভাবে নষ্ট করছে। আমার আর সামর্থ্য নেই, আমি আর কুলায় উঠতে পারছিনা। এজন্য তিনি সরকারের কাছে গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ সহ তার এক লক্ষ তালগাছ চারা রোপনের ইচ্ছা পূরণে সহযোগিতা কামনা করে আকুল আবেদন করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও জেলার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) আলমগীর কবির জানান, নিজ উদ্যোগে খোরশেদ আলীর এ মহৎ কাজ সারাদেশে অনন্য নজির হয়ে থাকবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল ইসলাম বলেন, বৃক্ষ নিধনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার এ যুগে খোরশেদ আলী যে কাজ করছেন তা একটি সুন্দর পরিবেশের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ রকম শ্রম দিয়ে নিজ উদ্যোগে সমাজ ও দেশের সেবা করার মতো মানুষের আজ খুবই অভাব। ইমাম মোঃ খোরশেদ আলীর এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

৫৫ হাজার তালগাছ লাগিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন ঠাকুরগাঁওয়ের খোরশেদ

আপডেট টাইম : ০১:২১:১৪ অপরাহ্ণ, বুধবার, ২৬ জুলাই ২০২৩

‘তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে-উঁকি মারে আকাশে’। এই কবিতাটি মনে করিয়ে দেয় আকাশমুখী এই গাছটির কথা। যদিও আজকাল গ্রাম বাংলায় দেখা যায় না অগণতি তাল গাছের সারি। সময়ের পরিক্রমায় তালগাছের সংখ্যাও কমে গিয়ে আজ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। বিলুপ্তির পথ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ৭নং চিলারং ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামের ৬৮ বছর বয়সী ইমাম মোঃ খোরশেদ আলী। আর তাল গাছ লাগিয়ে জেলা, উপজেলা ও রংপুর বিভাগে প্রথম হলেও এবার তিনি তাল গাছ লাগিয়ে সারাদেশেসহ বিশ্ব রেকর্ড গড়তে চান।

পরিবেশ সচেতন এই মানুষটি ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রতি বছর রোপন করেছেন ৫ থেকে ১০ হাজার তালগাছ। বর্তমানে তার পরিচর্যায় প্রায় ৫৫ হাজারেরও বেশি তালগাছ রয়েছে। ইমাম খোরশেদ আলী পেশায় একজন পল্লী-চিকিৎসক।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পল্লীবিদ্যূৎ বাজার থেকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কাদসূকা ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার এবং কাদসূকা ব্রীজ থেকে চৌরঙ্গী বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার, চিলারং ইউনিয়নের রেলঘুন্টি থেকে আখানগড় রেল ষ্টেশন পর্যন্ত, আখানগর থেকে চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ, এছাড়াও তিনি তার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের সরকারি রাস্তার দুই ধারে তাল গাছের বীজ ও চারা রোপণ করেই চলেছেন। সড়কের দু’ধারে এ মহাযজ্ঞ চালিয়ে যেতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে জানতে চাইলে তিনি টাকার হিসাব প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেন। রোপনকৃত তালগাছ গুলোর মধ্যে যেগুলো চারার বয়স পাঁচ থেকে সাত বছর সেগুলো খুব বেশি দৃশ্যমান।

খোরশেদ আলী সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ২০১৪ সাল থেকে খোরশেদ সাহেব বিভিন্ন জায়গায় তাল বীজ রোপন করার যে কর্মকান্ড গুলো করছিল এগুলো দেখে প্রথমত আমরা অনেকেই হাস্যকর মনে করেছিলাম। কিন্তু এখন আমরা তাকে নিয়ে গর্বিত। রাস্তা সহ পরিবেশের সৌন্দর্য ও ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে তার লাগানো তাল গাছগুলো যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে।

ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আরো একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, এই গাছ রোপণ করতে গিয়ে তিনি তার পৈতৃক কৃষিজমি বিক্রি করেছেন। তবুও তিনি থেমে থাকেননি। তালের আঁটি সংগ্রহ করা সহজ ছিল না। বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে তাল বীজ সংগ্রহ করতে এতে অনেক শ্রম ও শ্রমিক লেগেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমাম খোরশেদ আলী বলেন, মানুষের চলার পথে টাকা-পয়সা বড় কথা নয়। মানুষের মধ্যে স্মৃতি হয়ে থাকতে চাই। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গত ৮ বছর ধরে ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন স্থানে ও রাস্তার পাশে তাল বীজ রোপণ করেছি। আমার ইচ্ছে ১ লক্ষ তালগাছ লাগানোর। প্রতি বছর রাস্তায় ৫-১০ হাজার করে তাল বীজ রোপণ করেছি। তাল গাছ রোপন করে পরিবেশের সৌন্দর্য, ভারসাম্য রক্ষা সহ, প্রতি বছর যে হাজার হাজার মানুষ বর্জপাতে মারা যায় সেটাও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু আমি মনে কষ্ট পাই খুব তখন যখন দেখি আমার এই তালগাছগুলোকে কিছু অসাধু লোক বিভিন্নভাবে নষ্ট করছে। আমার আর সামর্থ্য নেই, আমি আর কুলায় উঠতে পারছিনা। এজন্য তিনি সরকারের কাছে গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ সহ তার এক লক্ষ তালগাছ চারা রোপনের ইচ্ছা পূরণে সহযোগিতা কামনা করে আকুল আবেদন করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও জেলার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) আলমগীর কবির জানান, নিজ উদ্যোগে খোরশেদ আলীর এ মহৎ কাজ সারাদেশে অনন্য নজির হয়ে থাকবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল ইসলাম বলেন, বৃক্ষ নিধনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার এ যুগে খোরশেদ আলী যে কাজ করছেন তা একটি সুন্দর পরিবেশের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ রকম শ্রম দিয়ে নিজ উদ্যোগে সমাজ ও দেশের সেবা করার মতো মানুষের আজ খুবই অভাব। ইমাম মোঃ খোরশেদ আলীর এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি।